উৎসর্গ : আহমেদ স্বপন মাহমুদ
২০০৬-০৭ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হলাম, ইংরেজি বিভাগে। এই বিভাগে ভর্তি হওয়ার পেছনে কারণ অবশ্য আছে। উচ্চমাধ্যমিক আমি সম্পন্ন করেছি কুষ্টিয়া থেকে। এসময় সাহিত্যে নিমগ্ন ও নিমজ্জিত হই। তখনই মনে হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ব। মাধ্যমিকের ছাত্রাবস্থায় আমার সাহিত্যের পাঠ শুরু হয় বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদ দিয়ে। মনে হয়েছিল বাংলার পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের পাঠ জরুরি। সেই চিন্তা থেকে রাবির ইংরেজিতে ভর্তি হওয়া। ভর্তি হওয়ার পরপরই আমার আশাভঙ্গ হলো। সম্ভবত সূচনা ক্লাসেই এক অধ্যাপকের কথার ইঙ্গিতে মনে হলো, এটা (বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইংরেজি বিভাগ) যতটা না সাহিত্যের বিভাগ তার চেয়ে বেশি ইংরেজি ভাষা-শিক্ষার। এক শিক্ষক এসে ইএলটির গুণাগুণ ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করলেন। জাগতিক দিক বিবেচনায় তিনি বা তাঁরা ভুল কিছু বলেননি। আমারই এতদিনের বোঝার ভুল ছিল বলে মেনে নিলাম। প্রত্যাশা ছিল ইংরেজি বিভাগটা হবে বিশ্বসাহিত্য পাঠ ও চর্চার কেন্দ্র। শিক্ষকরা হবেন বিশ্বসাহিত্যের পণ্ডিত, কেউ কেউ লেখক, কেউ সমালোচক। কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যে টের পেলাম বাস্তবতা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই নেই। সাহিত্য পড়ানো হলেও যাঁরা পড়ান তাঁদের সিংহভাগ সাহিত্যিক না, সাহিত্য সম্পর্কে তাঁদের মৌলিক কোনো চিন্তা নেই। সিলেবাসের বাইরে সমকালীন বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের পাঠ নেই।
আমার সেই স্বপ্নভঙ্গের মুহূর্তে এপিফ্যানির মতো আবির্ভূত হলেন একজন কবি, সাহিত্যবোদ্ধা ও ক্রিটিক অসীম কুমার দাস। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী স্যারের নামও সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আমার জীবনের তাঁদের অবদানও আজ শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।
সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে ভাষা শিখতে, সাহিত্য পড়তে না। এইসব কারণে সিলেবাসে সাহিত্য থাকলেও ডিপার্টমেন্টে সাহিত্যের পরিবেশ নেই। লেখালেখি চর্চার জন্য নিয়মিত কোনো পত্রিকা বের হয় না। এসব নানা কারণে বিভাগটির পাঠদান সম্পর্কে আমি আগে থেকে নিজের মতো করে যে আউটলাইন কল্পনা করে নিয়েছিলাম, সেটা মিলল না। আমার সেই স্বপ্নভঙ্গের মুহূর্তে এপিফ্যানির মতো আবির্ভূত হলেন একজন কবি, সাহিত্যবোদ্ধা ও ক্রিটিক অসীম কুমার দাস। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী স্যারের নামও সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আমার জীবনের তাঁদের অবদানও আজ শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। কিন্তু তাঁদের নিয়ে সবিস্তারে অন্য গদ্যে বলা যাবে। অধ্যাপক আলী আরেফুর রহমান স্যারকে নিয়েও বলা যায়। কিন্তু আজ কথা হচ্ছে অসীম স্যারকে নিয়ে। কিন্তু মুশকিল হলো অসীম স্যার এমনই একজন শিক্ষক যাকে নিয়ে দুম করে কিছু বলা যায় না। বলা উচিতও না। এতে হয়তো তাঁকে তুলে ধরতে গিয়ে ছোটো করা হবে। অসীম স্যারকে বোঝার মতো জ্ঞান আমার নেই। আজও হয়নি। একটা মানুষ যতটা মানবিক ও উন্নত হতে পারেন আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি তার একবিন্দু কম না। সে-তো মানুষ হিসেবে— সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে, সাহিত্যিক হিসেবে তিনি কেমন?
এ প্রসঙ্গে আসছি, তার আগে বলে নেয়া উচিত, ভর্তির পরপরই স্যারকে শ্রেণিকক্ষে পাওয়ার আগে তাঁকে পেয়ে যাই কতগুলো মিথের মধ্য দিয়ে। এর সত্যমিথ্যা কখনো যাচাই করতে যাইনি। মিথ তৈরি করা লেজেন্ডের কাজ। আমার চেনা খুব কম মানুষই নিজেকে নিয়ে মিথ তৈরি করতে পেরেছেন। অসীম স্যার তেমনই একজন। তাঁকে নিয়ে ডিপার্টমেন্টে, ডিপার্টমেন্টের বাইরে, শহরে, শহরের বাইরে কত গল্প, কত কাহিনি!!
যেমন স্যারের পিএইচডির কাহিনির কয়েকটা ভার্সন শুনেছি। এর মধ্যে একটা হলো: স্যার ডিপার্টমেন্টে অনেক জুনিয়র শিক্ষকের পর পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। তিনি অনেকের চাপাচাপিতে অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করতে যান। কিন্তু একেবারে শেষ দিকে এসে ডিগ্রি না নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তাঁর বক্তব্য যার তত্ত্বাবধানে গবেষণা করছিলেন তিনি তাঁর চেয়ে কম জানেন। ফলে কম জানা মানুষের আন্ডারে পিএইচডি নেয়ার কোনো মানে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে তো পিএইচডিটাকে দেখা হয় মান দিয়ে নয়, সনদ দিয়ে। তাই অসীম স্যার পিএইচডি অসম্পূর্ণ রেখে দেশে এসে ডিপার্টমেন্টে স্বস্তি বোধ করছিলেন না। ফলে তিনি আবার গেলেন ডিগ্রিটা নিতে, এবার সম্ভবত লন্ডনে। ফিরলেনও ঠিকঠাক, পিএইচডি সম্পন্ন করে। কিন্তু যে পিএইচডিকে তিনি গুরুত্ব দেননি তা নিয়ে অহংবোধ করার তো প্রশ্নই ওঠে না। অসীম স্যার রাবিতে ফিরে শহীদুল্লাহ্ কলাভবনের সামনে শিক্ষক-ছাত্র জড়ো করে পিএইচডি সনদটা ছিঁড়ে ফেললেন।
হুমায়ুন আজাদ বইটি নিয়ে পায়ের কাছে ফেলে বললেন, এসব বই আমার বিছানার নিচেও পড়ে থাকার যোগ্য না। শুনে অসীম স্যার গেলেন ক্ষেপে, হুমায়ুন আজাদকে বললেন, এই বইয়ের একটি কবিতাও আপনার লেখার যোগ্যতা নেই। তর্কাতর্কি থেকে দুজনের হাতাহাতির অবস্থা হলো।
আরেকটি ঘটনা, কারো মুখ থেকে শোনা : বইমেলায় অসীম স্যারের কবিতার বই বের হলো ‘ঝঞ্ঝা ও পুনরুত্থান’। নব্বই দশকের শুরুতে। তিনি একুশে বইমেলায় প্রকাশকের স্টলে বসে আছেন। পাশের স্টলে আছেন হুমায়ুন আজাদ। স্যারের কোনো এক ছাত্র বইটা দিতে গেলেন হুমায়ুন আজাদ স্যারকে। হুমায়ুন আজাদ বইটি নিয়ে পায়ের কাছে ফেলে বললেন, এসব বই আমার বিছানার নিচেও পড়ে থাকার যোগ্য না। শুনে অসীম স্যার গেলেন ক্ষেপে, হুমায়ুন আজাদকে বললেন, এই বইয়ের একটি কবিতাও আপনার লেখার যোগ্যতা নেই। তর্কাতর্কি থেকে দুজনের হাতাহাতির অবস্থা হলো।
একদিন শহরে আজহার ভাইয়ের দোকানে কবি ওয়ালি কিরণ, কবি কামরুল বাহার আরিফ ভাইদের আড্ডা থেকে কেউ বললেন, রাজশাহীতে একসময় ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটা লাইব্রেরি ছিল। বই তোলা যেত না। অসীম স্যার সেখানে এত যেতেন যে কর্তৃপক্ষ তাঁকে আলাদা একটা চাবি বানিয়ে দেয়। রাতদিন তিনি সেই লাইব্রেরিতে কাটাতেন। ধারণা করা হতো, সেখানকার হাজার হাজার বই তিনি পড়ে শেষ করেছিলেন। লাইব্রেরির দায়িত্বরত লোকজন কোনো বই খুঁজতে তাঁর সহযোগিতা নিতেন।
একদিন পদ্মার পাড়ে শাহ মখদুম দরগার সামনে বসে আছি আমি, হিশাম, রাতুল ও মেহেদী। রাতুলই সম্ভবত বলল, ও শুনেছে এই দরগার সামনে রাইসুকে (কবি ব্রাত্য রাইসু) থাপ্পড় মেরেছেন অসীম স্যার। শুনে তো নড়েচড়ে বসলাম। অসীম স্যার অহিংস মানুষ, পারলে পিঁপড়দের পথ ছেড়ে দাঁড়ান। সেই মানুষটা কবি রাইসুকে মারবেন কেন! ঘটনার যতটুকু পাওয়া গেছে, কবি ব্রাত্য রাইসু, কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ ও অসীম স্যার হাঁটছেন পদ্মার পাড় ধরে। গাঁজা তখন তাঁদের বিশ্বস্ত সঙ্গী। এখানে গাঁজা প্রসঙ্গে অসীম স্যারের মূল্যায়নটা বলে নিই। এটাও শোনা কথা। অসীম স্যার একসময় গাঁজায় আসক্তি নিয়ে বলেন, ‘কবিতার উৎকর্ষের জন্য গাঁজা টানা শুরু করেছিলাম, পরে দেখলাম খালি গাঁজাই আছে, কবিতা আর নেই।’ তো সেই রকম একটা সময়, রাইসু নাকি লালন শাহকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু বলেছেন, অসীম কুমার দাস তখন তাকে চড়থাপ্পড় মেরেছেন। এই ঘটনার সত্যমিথ্যা জানি না, তবে এটা ঠিক যে তিনি লালন শাহকে পৃথিবীর গুটিকয়েক মহান শিল্পী ও দার্শনিকদের সঙ্গে বিবেচনা করতেন। রবীন্দ্রনাথ ও লালন সম্পর্কে অনেক নতুন ধরনের কথা তাঁর সামনে বসলেই শোনা যেত। প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বর্ষে আমাদের কবিতার কোর্সটা পড়াতেন। এলিয়ট, পাউন্ড কিংবা ইয়েটস পড়াতে গিয়ে বারবার চলে যেতেন জীবনানন্দে, কখনো বিষ্ণু দে, কখনো বোদলেয়ারে।
আমরা যখন অসীম স্যারকে পেয়েছি ততদিনে তিনি কবিতা লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে জেনে থাকবেন, তিনি আশির দশকের উল্লেখযোগ্য কবি। পরাবাস্তব কবিতার জন্য তিনি স্বকালে কবিতার মহলে আলোচিত ও প্রশংসিত হন। তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘ঝঞ্ঝা ও পুনরুত্থান’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে, ২০১১ সালে এসে বইটির পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
ছাত্রদের যে কোনো বিষয়ে তিনি সহযোগিতা করতেন, এমনকি সেটা অর্থনৈতিক পর্যন্ত। ক্লাস শেষে সন্ধ্যায় ধ্যান করতেন, বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী অংশ নিতেন। সাধনার বিষয় ছিল শ্রী অরবিন্দ, ‘মা’ মিরা। আমি যেহেতু অংশ নিইনি, তাই বিষয়ে বিশেষ কিছু জানি না।
অসীম স্যার সাধারণত দুপুরের পর ক্লাস নিতেন। ডিপার্টমেন্টে আসতেন দেরিতে, রাত পর্যন্ত থাকতেন। স্যার আমাদের বলে দিতেন, ক্লাস ভালো না লাগলে অ্যাটেনডেন্স দিয়ে কোনো শব্দ না করে উঠে যেতে। একটা নির্দিষ্ট পার্সেন্ট উপস্থিতি না থাকলে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যেত না। এই কারণে আমরা পরীক্ষার আগ দিয়ে স্যারের খাতায় অ্যাটেনডেন্স বাড়িয়ে নিতাম। ছাত্রদের যে কোনো বিষয়ে তিনি সহযোগিতা করতেন, এমনকি সেটা অর্থনৈতিক পর্যন্ত। ক্লাস শেষে সন্ধ্যায় ধ্যান করতেন, বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী অংশ নিতেন। সাধনার বিষয় ছিল শ্রী অরবিন্দ, ‘মা’ মিরা। আমি যেহেতু অংশ নিইনি, তাই বিষয়ে বিশেষ কিছু জানি না।
স্যারকে আমি ক্লাসের বাইরে পেয়েছি আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘শাশ্বতিকী’ পত্রিকার পরামর্শদাতা ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে। প্রথম বর্ষের শেষ দিকে ‘শাশ্বতিকী’ যাত্রা শুরু করে। প্রথম থেকেই অসীম স্যার হিশাম, রাতুল ও আমাকে পরামর্শ দিতেন। দুটো সংখ্যাতে স্যারের কবিতাও প্রকাশিত হয়েছে। আমরা পত্রিকা বের করতাম বলে ডিপার্টমেন্টের অধিকাংশ শিক্ষক বিরক্ত হতেন। বছরে তিনটি সংখ্যা বের হতো। পত্রিকা প্রকাশের পর বিভাগের প্রত্যেক স্যারকে দিয়ে আমরা শুভেচ্ছামূল্য হিসেবে ১০০টাকা নিতাম। কোনো কোনো স্যার পত্রিকা রেখে পরে টাকা নিতে বলে আর দেননি। একবার এক সিনিয়র শিক্ষক বললেন, তোমরা পেয়েছ কী! বছরে বছরে পত্রিকা বের করবে আর আমাদের কিনতে হবে? এই ঘটনার পর শিক্ষকদের সৌজন্যকপি দেওয়া শুরু করলাম। অসীম স্যার কখনো সৌজন্য সংখ্যা নেননি। পাঁচশ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন কোনো কোনো সংখ্যাতে।
লেখক হিসেবেও আমি অসীম স্যারের কাছে ঋণী। তখন সবে লিখতে শুরু করেছি। স্যার গুরুত্ব দিয়ে সে সব কাঁচা হাতের লেখা পড়তেন। ‘শাশ্বতিকী’র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হলো আমার গল্প ‘উড়ে যায় শাদা শকুন’। ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী গল্প। এর পরের সংখ্যায় বের হলো আরেকটি গল্প: ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’। আমাদের তরুণদের পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমকে স্যাটায়ার করে লেখা গল্প। স্যার এবার আমাকে তাঁর কক্ষে ডেকে বললেন, ‘তুমি ক্যাম্পাসে আর এ ধরনের গল্প প্রকাশ করো না।’ বলে রাখি, তখন বিএনপি ক্ষমতায়, ছাত্রশিবিরের দাপট ক্যাম্পাসে। স্যার নিজে শিবির দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এই হলেন অসীম স্যার। আমাদের সবদিকেই তিনি খেয়াল রাখতেন। আমি নিজে সিলেবাসভুক্ত টেক্সট নিয়ে স্যারের কাছে কখনো যাইনি। পত্রিকা কিংবা নিজের লেখালেখি নিয়ে যেতাম। একবার অ্যাডগার এলান পোর The Tell-Tale Heart গল্পটি অনুবাদ করলাম। সমস্যা বাধল এর শিরোনাম নিয়ে। স্যারের কাছে গেলাম, স্যার তিনটি অপশন দিলেন। তিনি মোবাইল ব্যবহার করতেন না। প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকতেন। যে কোনো প্রয়োজনে আমরা সন্ধ্যার আগে যেতাম। সন্ধ্যার পর বসে যেতেন ধ্যানে। বিয়ে করেননি। অনেক রাত পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে থাকলেও তাকে নিয়ে কোনো ‘স্ক্যান্ডাল’ হওয়ার সুযোগ দেননি। কখনো কখনো নিজে চা বানিয়ে আমাদের খাওয়াতেন। স্যারের রুমে চিনি থাকত না বলে আমাদের চায়ের সঙ্গে চিনির বিকল্প হিসেবে বিস্কিট দিতেন। খেতে খেতে দেখতাম টেবিলে ‘নার্নিয়া’ অথবা ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ পড়ে আছে। স্যার এগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তেন। স্যারের কারণে আমি নিজেও তখন ‘নার্নিয়া’ পড়া শুরু করি। তিনি বিচিত্র বিষয়ে পড়াশুনা করতেন। স্যারের রুমেই সম্ভবত প্রথম ‘কালি ও কলম’ পত্রিকা দেখি। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের পাঠও তাঁর ছিল।
অসীম স্যারের প্রতি আমার একটা ক্ষোভ দিয়ে এই ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণমূলক গদ্যের ইতি টানছি। বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবির মৃত্যু ঘটেছে তাঁর অন্তর্মুখী ও জনবিচ্ছিন্ন জীবনের কারণে। অসীম কুমার দাস বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি হতে পারতেন। আমাদের কবিতার বাকবদলে তিনি নেতৃত্ব দিতে পারতেন। কিংবা তিনি হতে পারতেন বাংলাদেশের প্রধানতম সাহিত্যসমালোচক কিংবা একাডেমিক। কিন্তু তিনি এসবের কোনো কিছু হতে চাননি। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন সবকিছু থেকে। এই কারণেই তাঁর প্রতি আমার যত ক্ষোভ। আমার অভিযোগ, অনুযোগ, অভিমান।
স্যার, আপনার সঙ্গে অনেক দিন কথা হয় না। কিন্তু আপনি আছেন, আমার সঙ্গে, সবসময়। আপনি আমার অনিঃশেষ প্রেরণা।
জন্ম মেহেরপুরে, ১৯৮৬ সালে। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। পেশাজীবন শুরু করেন সাংবাদিকতা দিয়ে। বর্তমানে বাংলা একাডেমিতে অনুবাদ-কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। প্রধানত কথাসাহিত্যিক। বিশেষ আগ্রহ অনুবাদ এবং সমালোচনা সাহিত্যে। ‘অতীত একটা ভিনদেশ’ গল্পগ্রন্থের জন্য তিনি এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ কথাসাহিত্য পুরস্কার-২০১৭ ও ‘পরাধীন দেশের স্বাধীন মানুষেরা’ গল্পগ্রন্থের জন্য ‘আবুল হাসান সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮’ অর্জন করেন।