ঝরনাধারায় সিক্তরানি
রক্তের ভেতর হাওয়া সিনেমার নৌকাটা দুলছে উত্তাল।
জোয়ার ভাটা বক্ষ জুড়ে তেজনার। উঠছে আর নাবছে।
বাহুতে লাল ভিজে আছে জলে। নাকি অউদ স্রোত—
মোম গলে পড়ছে?
শরীর ফিরেছে স্বরূপে— ভাঁজ পর্বতের চূড়া।
সূর্যালোকের জন্ম আনন্দে ব্যালেরিনা—
কণ্ঠদেশ থেকে পায়ের বিদেশ অবধি।
পাহাড়ি কর্ণফুলী নেমে এসে মিশেছে সাঙ্গু-মাতামুহুরীতে।
প্রবাসীর শবদেহে তখন নৌকা চলে। মাস্তুল দেখা যায়।
পল্লবিত মৃত্তিকা শীতল হাওয়ার প্রত্যাশায়
হাত বাড়ায় মুক্তকেশি মেঘমঞ্জরির দিকে।
কবিতা জুড়ে সাড়ে তিন—সাড়ে তিন জুড়ে কবিতা—
ঝরতেই থাকে চলচ্চিত্র রিল ওপর থেকে নিচে।
শ্রাবণ মাস পৃথিবীর সকল কাল জুড়ে।
আমাকে কেউ বলো
আমাকে কেউ একজন বলো
ওপারে সুশীতল বৃক্ষতল আছে
সাতলা বিল আছে
চড়ুই ফিঙে নাচে ওপারে।
কেউ একজন আমাকে নিশ্চিত করে বলো
ওপারে জ্যাক ড্যানিয়েল না হোক
হাঁড়িয়া আছে। নেমিরফ না হোক দোচোয়ানি আছে।
কেউ একজন কি জানাতে পারে না
ওপারেও চিত্রা আছে তিস্তা আছে
কর্ণফুলী আছে। আছে রবীন্দ্রনাথ। আছে ভাঁটফুল
মেঠো রাস্তার দুপাশ জুড়ে। আছে কলাগাছ সবুজ।
এমন কেউ কি নেই যে আমাকে বলতে পারে
ওপারেও আকাশ আলো করে চাঁদ ওঠে?
ওখানেও সন্ধ্যা আছে আবছায়া?
আছে স্নিগ্ধ কোমল রাত্রি। আছে উজ্জ্বল ভোর।
আমার জন্য কেউ প্ল্যানচেটে বসো প্লিজ।
জেনে দাও ওখানেও মুক্তো দানার মতো ঝরে পড়া
বৃষ্টি আছে কি না।
ওখানেও
উরোলজি
বুকের নদী শুকায়া পড়ে চর।
দক্ষিণ চোখে তোমার ছবি
উত্তরে পঞ্চগড়।
স্মৃতিভাণ্ড
স্মৃতিভাণ্ডের তলা ফুটো হয়ে
সব সঞ্চিত বেরিয়ে পড়ছে। গড়িয়ে ধাক্কা।
পাক্কা মটরখেতে। হারিয়ে
ড্রাম উপচে পড়ছে দেখে মনে হলো
এত কিছু সঞ্চয় ছিল এতটুকু খুলির ভেতর?
জাতিস্মর ছিল নাকি টিভি সেট?
কাশবনেও রঙের রূপান্তর ঘটে—দেখাদেখি আকাশবনেও।
হিপ্পোক্যাম্পাসের দরজা ওয়াইড ওপেন। একে একে।
অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড খুলির ভেতর—কেবল কাকভূশণ্ডি যাতায়াত করতে পারে।
প্রলেতারিয়া বৃষ্টি
যাওয়া যায় এবং যাচ্ছে গোপনে ফোঁটা ফোঁটা
সে ও তারা তারাদের কথা আঁকে পিতাতাপে।
কানের পাশ ঘষে ঘষে যে পথ—পার হতে হতে বলে—
স্নান সেরে নাও।
টুপটাপ শুয়ে দাও শীতল ঘুম—উন্মীলনে।
শার্টের ভেতর দিয়ে আছে গোপন সৃপ—জানো তো?
হরপ্পায় ভেজা সেই চোখকে জলাশয় ভেবে।
ইচ্ছে হলে। ইচ্ছেরা বেদনামর্মর পবনপিঠে।
বিউটি পার্লার থেকে আসা গাছপাতায়
লেখা চকচকে চিঠি নিতে আসে
………………………অঞ্জনাপতি।
জলের দৌড়ে হিত্ররা উড়ে গিয়ে জুড়ে বসে
কালো পতাকা নিয়ে মর্ত্যছাদে।
চিঠির অজস্র অক্ষর
মাকোন্দোর পাহাড়ে অবতার।
যতিহীন বৃষ্টি জাগায় উরসুলার শত বছরের নৈঃসঙ্গ।
জন্ম ২১ মে, ১৯৭৬, রংপুর জেলায়। জাতীয় বিমানসংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে এক বছর লেখাপড়া। ২০১৮ সালে প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘রোদ বুনি ছায়াপথে’ প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘লেখক প্রকাশ’ থেকে। ২০১৯ সালে কবিতাগ্রন্থ ‘বিষাদের সঞ্চয়ী হিসাব’ প্রকাশিত হয় পরিবার প্রকাশনী থেকে। ২০২২ সালে জাগতিক প্রকাশন থেকে কবিতাগ্রন্থ ‘বহুগামী রাস্তার মিমিক্রি’ প্রকাশিত হয়। বেশকিছু মননশীল প্রবন্ধ ও বই-আলোচনা ছাপা হয়েছে মুদ্রিত ও আন্তর্জালিক সাময়িক পত্রে। বেশ কিছু স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন।