‘সুড়ঙ্গ’ গল্পটি মুহাম্মদ খুদাইরের ইংরেজিতে ‘টানেল’ গল্পের অনুবাদ। আরবি ভাষা থেকে গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন জীনা ফক। গল্পটি আরবলিট অনলাইন ম্যাগাজিনে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় এবং সেখান থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।
পুলিশ ঘিরে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা আলাদাভাবে এবং দল বেঁধে পিছু হটতে শুরু করে। কেউ কেউ পেছনের রাস্তায় আশ্রয় নেয়, যা চত্বর থেকে খানিকটা দূরে এবং যেখানে পরবর্তী অক্টোবরের অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার কথা রয়েছে। অন্যরা দৌঁড়ে গিয়ে চত্বরের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি বৃত্তাকার সুড়ঙ্গের মধ্যে আশ্রয় নেয়। পুলিশের হাতে ছিল লাঠি এবং তারা সাঁজোয়া কাচের ঢাল নিয়ে সজ্জিত ছিল । চত্বর থেকে প্রস্থানের চারপাশে তারা তাদের পাহারা কঠিন করেছিল। তখনো যেসব বিক্ষোভকারীরা উপস্থিত ছিল, চিৎকার করে শ্লোগান দিচ্ছিল এবং পুলিশের ঢাল লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করছিল, তাদের পক্ষে শেষ মুহুর্তে পিছু হটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল।
তরুণ বিক্ষোভকারী নিজেকে সুড়ঙ্গের উত্তরদিকের প্রবেশ পথে আবিষ্কার করে, যেখানে সে অন্য আরেকটি সুড়ঙ্গ পথের মধ্যে আটকা পড়েছিল এবং সেই পথটি ভেতরের এক বাগানের দিকে চলে গিয়েছে। তার পরনে ছিল চামড়ার জ্যাকেট এবং সে রাবারের জুতা পরেছিল। সে খাটো নলের গ্যাস মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিল। ইতোমধ্যে ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চত্বরের মূল গোলাকৃতি জায়গা, উঁচু দালানের চূড়া এবং নাসবু আল হুরিয়াহ বা স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের ব্রোঞ্জের বিশাল ভাস্কর্য—যা সুড়ঙ্গের মুখোমুখি স্থাপন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চত্বরের মূল গোলাকৃতি জায়গা, উঁচু দালানের চূড়া এবং নাসবু আল হুরিয়াহ বা স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধের ব্রোঞ্জের বিশাল ভাস্কর্য
সকালের দিকে জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারী এবং কর্মীদের প্রবাহ শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই বিক্ষোভকারী পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের কাঁধ, যা আগে ক্রমবর্ধমান মানব তরঙ্গের মতো একসঙ্গে মিলিত বলে মনে হয়েছিল, এখন পৃথক হয়ে গেছে। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত পুলিশবাহিনী এসেই বিক্ষোভকারীদের বুকে, মুখে ও চোখে সরাসরি কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সফল হয়।
সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে মুখোশপরা দলছুট বিক্ষোভকারী মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। বাইরে কিছু মানুষের হালকা কোলাহল ছাড়া সে আর কিছুই শুনতে পায়নি। ধোঁয়ার মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় লোকগুলো এক ধরনের অদ্ভুত শব্দ করছিল। তারপর সে পাখিদের নিচে নেমে আসার শব্দ শুনতে পায়। কাঁদানে গ্যাসের জন্য পাখিগুলোর দম বন্ধ হয়ে গেছে। সে সুড়ঙ্গের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে আরও গভীরে নেমে যায়। প্রবেশদ্বারে ছিল থরে থরে সাজানো বিভিন্ন চিত্রকর্ম। অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা সেসব চিত্রকর্ম এঁকেছে। সে বুঝতে পেরেছে যে, বাতির জন্য সুড়ঙ্গের ভেতরের সরু পথের সিলিং অস্পষ্ট আলোয় আলোকিত হয়েছে। সে দেওয়ালের গায়ে অঙ্কিত বিশাল চিত্রকর্মের পাশে দাঁড়ায়, যার শিরোনাম ‘শরৎ আবহাওয়া’। সেখানে মাটিতে শোওয়া এক ব্যক্তির দেহের ওপর বিভিন্ন লোকের চিত্র আঁকা রয়েছে। সেই লোকটির কপালের একটি ছিদ্র দিয়ে ধোঁয়ার ভুতুরে পাতলা কুণ্ডলী বের হচ্ছিল।
বিক্ষোভকারীরা ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই মাসে দিনের পর দিন যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা বিশাল চিত্রকর্মের একাংশে তুলে ধরা হয়েছে। শরৎকালে গাছের শুকনো পাতার মতো বিক্ষোভকারীরা ঝরে পড়ছিল। সুড়ঙ্গের গর্ত অবশিষ্ট বিক্ষোভকারীদের প্রলুব্ধ করতে থাকে। তারা সম্পূর্ণ কালো পোশাক পরা সৈনিকদের সাঁজোয়া গাড়ির কাঁচের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জোর দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা নতি স্বীকার না করে নিরলসভাবে তাদের মিছিল চালিয়ে যায়। যাহোক, আজ তারা সবচেয়ে হিংস্র প্রতিবাদ-বিরোধী সৈনিকদের মুখোমুখি হয়, যা আগুন ও কাঁদানে গ্যাসের প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। সৈনিকেরা প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এবং জায়গা ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। বিক্ষোভকারীরা কোথায় অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, সেই সম্পর্কে কোনো ধারণা রেখে যায়নি।
আকাশ থেকে নেমে আসা ধোঁয়ার কম্বলের কাছে চত্বরের মাঝখানে অবস্থিত বর্গাকৃতি বাগানের ঝোপঝাড় ঢেকে যায়। মুখোশপরা বিক্ষোভকারী গতি বাড়িয়ে খোলা বাগানের মধ্য দিয়ে দ্রুত হাঁটতে থাকে এবং দোকানপাটের বন্ধ দরজার পাশ দিয়ে চলে যায়।
সুড়ঙ্গের গোলাকার প্রবেশ পথ দিয়ে সামান্য আলো এবং বাতাস আসছে। আকাশ থেকে নেমে আসা ধোঁয়ার কম্বলের কাছে চত্বরের মাঝখানে অবস্থিত বর্গাকৃতি বাগানের ঝোপঝাড় ঢেকে যায়। মুখোশপরা বিক্ষোভকারী গতি বাড়িয়ে খোলা বাগানের মধ্য দিয়ে দ্রুত হাঁটতে থাকে এবং দোকানপাটের বন্ধ দরজার পাশ দিয়ে চলে যায়। সে অদ্ভুত এমন কিছু আবিষ্কার করে, যা আগে কখনো লক্ষ্য করেনি, বিশেষ করে যখন সে সরু পথে কয়েক রাত কাটিয়েছিল। সেই সময় সে বৃত্তাকার গর্তের মধ্য দিয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো উপভোগ করেছিল। কিন্তু আজ সে শুধু তাদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য দরজা তৈরি করেছে। তার জন্য সে গোপনে সুড়ঙ্গ থেকে নিচের দিকে বৃত্তাকার পরিধিতে প্রস্থান করতে সক্ষম হয়।
হঠাৎ ভূগর্ভে গভীর নিম্নচাপ অনুভূত হয়। এসব ফাঁপা জায়গা চারটি পরিচিত প্রস্থান থেকে আলাদা এবং সেগুলো ধীরে ধীরে উপরিভাগের ফুটপাথের দিকে বিস্তার লাভ করে। এই আবিষ্কারের জন্য বিক্ষোভকারী যুবকটি ভীষণ ভয় পায়। তার অন্যসব ধারণার মধ্যে একটি হলো যে, তার সম্মুখে শীঘ্রই আরও কিছু উন্মোচিত হবে।
বিক্ষোভকারী যুবক ভাবে, এর আগেও অন্য সবাই এই সুড়ঙ্গের ভেতর আরও গভীর ভূগর্ভস্থ জায়গায় গিয়েছিল। সে খুবই বিস্মিত হয় যে, তার সহকর্মী প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এসব ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের মধ্যে কোথাও পদদলিত হয়েছে। সহকর্মীদের খুঁজে পাওয়ার জন্য সে কী প্রথম হবে?
বিক্ষোভকারী যুবক সুড়ঙ্গের পরবর্তী অংশে তার চলার গতি ত্বরান্বিত করে। সে ছায়া থেকে পালিয়ে যায়—সে ভাবে, এমন একজনের ছায়া, যা তাকে অনুসরণ করছে। সে অনুভব করে ছায়ারও মুখোশ রয়েছে। ছায়াটি তাকে সুড়ঙ্গের নিচের দিকে মুখোমুখি ভূগর্ভস্থ প্রস্থানপথের মধ্যে একটির দিকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। সে প্রস্থানপথের অনেক দূরে চলে যায়, যেখানে দেওয়ালে আঁকা একটি তীর ‘নদীর দিক’ শব্দটির দিকে নিশানা করা হয়েছে। তার মনে হয় রাস্তাটি টাইগ্রিসে যাওয়ার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথ। কিন্তু সে পিছু হটে, সরু পথে ফিরে যায় এবং পরবর্তী প্রস্থানের দিকে হাঁটতে থাকে। সেই পথে ‘প্রাসাদ’-এর দিকে নির্দেশনা রয়েছে।
সে সরু পথে প্রবেশ করে। হঠাৎ ভয় তাকে পিছু হটতে বাধ্য করার আগে সে আরও কয়েক পা এগিয়ে যায়। তৃতীয় প্রস্থানপথের দিক-নির্দেশনার তীর এমন এক জায়গার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা সে আগে কখনো শোনেনি: ‘শহরের প্রাচীর’। তার ভেবেছে যে, এই প্রস্থানপথটি অন্যসব প্রস্থানপথের চেয়ে দূরে অবস্থিত এবং সবচেয়ে রহস্যময়। চতুর্থ গোপন প্রস্থানপথের দিকে যাওয়ার আগে সে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বিরতি নেয়। এই শেষ প্রস্থানের দিক-নির্দেশনার তীরটি ‘কবরস্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কেননা কবরস্থানের অবস্থানও অনেক দূরে। সে অনুমান করে যে, সূর্যাস্তের সময় বের হতে পারবে, যখন অন্ধকারে কবর এবং স্মৃতিস্তম্ভ ঢেকে যাবে। সে সেই সময়ের কথা স্মরণ করে, যখন প্রাচীন এক মাজার থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয়েছিল।
কবরস্থানের দিকে যাওয়ার চিন্তা তাকে রীতিমতো আতঙ্কিত করে তোলে। কেননা কবরস্থানের অবস্থানও অনেক দূরে। সে অনুমান করে যে, সূর্যাস্তের সময় বের হতে পারবে, যখন অন্ধকারে কবর এবং স্মৃতিস্তম্ভ ঢেকে যাবে। সে সেই সময়ের কথা স্মরণ করে, যখন প্রাচীন এক মাজার থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয়েছিল। মাজারটি আলোকিত সুফিদের মধ্যে কোনো একজনের বলে ধারণা করা হয়। সেলজুকদের রাজত্বকালে নির্মিত মাজারে একটি ফানেল আকৃতির উঁচু গম্বুজ ছিল। দীর্ঘ সময়ে গম্বুজটি ভেঙে পড়ে এবং কাত হয়ে যায়। কিন্তু শহরের প্রাচীন দেয়ালের ধ্বংসাবশেষের কাছে মাজারের প্রহরী সেই একই জায়গায় রয়ে গেছে।
গত কয়েক দিন ধরে, দূর্নীতি-বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগে, আন্দোলনকারী যুবকটি শহরের অচেনা সীমানা খোঁজার জন্য বাড়ি ছাড়ে। সে কবরস্থানের মাঝখানে মাজার খোঁজার কাজ শেষ করে, যা সুফি উমর সোহরাওয়ার্দীর সম্মানার্থে আল-ওয়ারদিয়া কবরস্থান নামে পরিচিতি লাভ করে। এবার বিক্ষোভকারী বাগদাদের রাস্তা, ভবন এবং বাজারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সরু পথ দিয়ে মাজারে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
সুড়ঙ্গের ফাঁকা গহ্বরের রহস্যময় গর্তের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় সে চিন্তা করে। সে ‘নদীর তীর’ লেখা প্রথম প্রস্থানের দিকে দৌঁড়ে যায়, যেহেতু তা ছিল স্বাধীনতা লাভের সংক্ষিপ্ততম উপায়। সে গর্তের কিনারার দিকে তাকায় এবং কল্পনা করে যে, সে ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে দেখতে পাচ্ছে, যা রাস্তায় পুলিশদের হেলমেটযুক্ত মাথার ওপরে ঘন হয়ে আছে। পুলিশেরা নিচের সরু পথের দিকে উঁকি দেয়। সেখানে তারা অপেক্ষা করে এবং আশা করে যে, বিক্ষোভকারী তাদের অস্ত্র থেকে নির্গত গ্যাসের জন্য শ্বাসরুদ্ধ হবে।
বিক্ষোভকারী কিছুক্ষণের জন্য ‘নদীর তীর’ লেখার সামনে থামে। পরবর্তীতে সে ‘কবরস্থান’-এর দিকে ফিরে যায়। সে ভাবে, দিক-নির্দেশনার তীর অন্য কোনো গোপন অর্থ বহন করে। সে আরও ভাবে যে, সহকর্মী বিক্ষোভকারীরা সুড়ঙ্গের শাখা-প্রশাখায় সম্ভবত কোনো অজানা ভূগর্ভস্থ গহ্বরে গুম হয়েছে। সে বিস্মিত হয়—সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথগুলো হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে লেখা হয়েছে। সে যদি কবরস্থানের প্রস্থানপথ অনুসরণ করে, তবে সে হয়তো নদীতে গিয়ে পড়বে। প্রাসাদের সুড়ঙ্গটি তাকে প্রাচীরের কাছে নিয়ে যেতে পারে। পুলিশ তাকে তাড়িয়ে নিয়ে যেখানে কোনঠাসা করে, সেই ভূগর্ভস্থ গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঠিক পথ জানার কোনো উপায় নেই। সে যদি ‘সত্যিকারের জ্ঞানের মানুষ’ শেখ সোহরাওয়ার্দীর মাজারের কাছাকাছি থাকত, তাহলে সে বিভ্রম ও দিকশূন্যতা থেকে নিরাপদে থাকতে পারত।
কিন্তু এখন সে প্রতারণাপূর্ণ সুড়ঙ্গের শেষে প্রকৃত আলোর সন্ধান করে। সে ভাবে, সম্ভবত কোনো প্রকৌশলী বিখ্যাত তাহরির চত্বরের সুড়ঙ্গের মূল নকশাটি নিজের সুবিধা মতো উপযোগী করে নিয়েছে। এই জঘন্য কাজের মাধ্যমে প্রকৌশলী সন্ত্রাস দমন কর্তৃপক্ষের সেবা করতে পারে। প্রকৌশলী ধরেই নিয়েছে যে, মানুষ তার কাজের জন্য আস্থা রেখেছে। তাই সেই সুযোগে সে জনগণকে বিভ্রান্ত করে একের পর এক শাসনব্যবস্থাকে সাহায্য করে।
সে আলোকিত সোহরাওয়ার্দীর বইয়ে যেভাবে লাইনগুলো পড়া শেষ করেছে, তাতে মুখোশপরা বিক্ষোভকারী তার খোলামেলা ভাবনা-চিন্তার ইতি টানে। সে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা মুক্তি লাভের দিকে ইঙ্গিত করে। তা করার জন্য সে ‘নদীর তীর’ দিক-নির্দেশনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করে। কিন্তু তার মন তাকে বলে যে, সে ‘কবরস্থান’-এর দিকে যাচ্ছে। সুড়ঙ্গের শেষে মাজারের ফানেল-আকৃতির গম্বুজ থেকে আসা ঝলমলে আলো দেখার পরপরই সে সবচেয়ে জটিল ব্যবস্থা বেছে নেয়।
সুড়ঙ্গের শাখা-প্রশাখার সিলিংয়ে বাতি জ্বালিয়ে আলোকিত করা হয়েছে। হাঁটা চলা এবং চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তে তার পা যেন ডানায় রূপান্তরিত হয়। কিছু সময়ের জন্য তার পা জোড়া সিলিং বাতির চারপাশে ঘোরাফেরা করে এবং নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তার সীমাহীন দৌড়ের সময় সে শোনার জন্য থামে। সে আশা করে যে, সামনে অথবা পেছনে ছুটে যাওয়া কোনো কিছুর চিহ্ন খুঁজে পাবে। কিন্তু সেখানে সুনসান নীরবতা বিরাজ করে। পথটি সংকীর্ণ এবং আঁকাবাঁকা। পথটি শত শত বছরের পুরানো সাপের মতো আরও নিচের দিকে চলে গেছে।
তরুণ বাগদাদি বিক্ষোভকারী ভাবে যে, সে তার বিশ বছরের জীবনের পরিসমাপ্তি উৎরে যেতে পারবে, যদি কেবল সে সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে যেত এবং ইতোপূর্বে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের চেয়ে আগে দূরবর্তী আলো প্রত্যক্ষ করত। সংকীর্ণ প্রাচীর এবং ভারী নীরবতা যতটুকু অনুমতি দেয়, সেই অনুযায়ি সে দ্রুততার সঙ্গে দৌঁড়ুতে থাকে। সে সরু পথের মাটিতে তার রাবারের জুতার নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পায়, যেন তীক্ষ্ণ চাবুক কোনো এক বস্ত্রহীন মানুষের পিঠে আঘাত করছে, অথবা আলোর সন্ধানে পাখির ডানা ঝাপটার মতো সেই শব্দ।
ইরাকি কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ খুদাইরের জন্ম বসরা শহরে, ১৯৪২ সালে। তিনি ছোটগল্প লেখক হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত। কর্মজীবনে তিনি ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরবি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। তার প্রথম ছোটগল্প সংকলন (আল আদীব আল ইরাকি) প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। তার বেশ কিছু ছোটগল্প এবং ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত জন্মস্থানের কাল্পনিক স্মৃতিকথা নিয়ে রচিত উপন্যাস (বসরায়থা) ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০৪ সালে ‘সুলতান বিন আলী আল ওয়াইস’ পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে তিনি বসরা শহরে বাস করেন।
গল্পকার, ছড়াকার এবং অনুবাদক। লেখালেখির শুরু সত্তরের মাঝামাঝি। ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাহিত্য পাতায়, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং অনলাইন ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তার মৌলিক এবং অনুবাদ গল্প। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে দুটি গল্পের সংকলন, চন্দ্রপুকুর (২০০৮) ও কতটা পথ পেরোলে তবে (২০১০)। এছাড়া, তার অনুবাদে আফগানিস্তানের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০১৩), নির্বাচিত নোবেল বিজয়ীদের সেরা গল্প (২০১৩), ইরানের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০১৪), চীনের শ্রেষ্ঠ গল্প ও নির্বাচিত ম্যান বুকার বিজয়ীদের সেরা গল্প ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে।