কবিতা হলো অসীমের ধারণা
কিছু প্রশ্ন জন্মের পর উত্তরসঙ্গী পাবার জন্য কোনো কিছুর পরওয়া না করে অনন্তের দিকে হাঁটতে শুরু করে। যেমন প্রাণ কী? কবিতা কী? কবিতা আসলে কিছুই না; নয়ত অনেক কিছু। এই অনেক কিছু বলতে যা বোধ করি তা হলো অসীমের ধারণা। কবিতায় জীবনের প্রতীকী উচ্ছ্বাস, মৌন আবেদন, পোয়েটিক দর্শন, ভাবের গভীরতা, অভিজ্ঞতার খুব কাছে এনে অন্যত্র ছিটকে নেওয়া, বক্তব্য সামনে রেখেও ভাষার ওপারে অনুভুতির রয়ে যাওয়া এরূপ নানান নতুনতর আবিষ্কার মানুষকে বুঁদ করে রাখে। এমনও হয় কোথাও কোয়ান্টাম নির্যাস প্রবেশ করতে না পারলেও একজন কবি ঠিকই সেখানে চাষ করে বিমূর্ত ঘাস। এই বিস্ময় ফসলের স্বাদ নেওয়ার জন্যেই আসলে কবিতা লিখি। বিশ্বাস করি একজন কবির ভবিষ্যত হলো প্রজ্ঞার চরমপথ। সেই পথেই হাঁটছি, কোথায় আছি জানি না। তবে বিশ বছর পর পেছনে তাকানোর সুজোগ পেলে— চাইবো হেঁটে আসা পথে যেন গড়ে ওঠে প্রাচুর্যের অপার ভাষাবন। যার গভীরে বিস্ময় নিয়ে হারাতে পারি আমিসহ এই ইউনিভার্সের যে কেউই; বাদ বাকি বিচার অবশ্য সময়ের হাতে
বিহাইন্ড দেয়ার সোউল ও অন্যান্য কবিতা
প্রেম
সুরের উত্থানকে কখনো পতন শোনাতে নেই
তবু তারে তরঙ্গে বাঁধি
ঢেউয়ের কলঙ্ক লাগে
লোকে বিস্তার ডাকে
কেউ কেউ ভাবে ভেসে গেছি যুবতীর কণ্ঠ রাগে
কিন্তু আবহ তো নই
তুমি কথার মাঝে জেগে ওঠো বালিশের আতঙ্ক
আগুনকে বোঝাও জলের ভাষা
উর্বর ইশকে রুয়ে দাও তাজা সংকেত
উন্নতি কেড়ে নিয়ে তারা ক্রমশ বিকট সংশয়
যদি এই থাকা না থাকাও হয়
এমনকি ফুরিয়ে আসে ঘটনার নির্জাস
ডেন্ডিখোর যুবকের হাতে তবু রয়ে যাবে তীক্ষ্ম ব্লেডের চাষ।
বিহাইন্ড দেয়ার সোউল
উপেক্ষার যত গভীরে নামি
কি যেন মাংস বিতারিত ক্ষত
ডেকে ওঠে বৈদ্য ভাষায়
মনে হয় কোনো তারাই ঘটমান নয়
সবই সংশয়ের গুমনামি
এত যে ক্রিয়াপদে হাঁটি, তার কতটুকুই বা পুনঃশ্চ আমি?
বিস্ময়ে আতঙ্ক করি
হাওয়া সয়ে সয়ে পাথরও নুড়িপথে বরবাদ
কই, মানুষের চোখে তো ফুরালো না অনন্তের চাষাবাদ।
ধর্মের ছায়াতলে
পাখির কুদরতি ডানায়, বাঘের থাবায়
তার চেয়েও দুরন্ত কারিশমা ছিল হরিণের হরিৎ ইশারায়
কেবল মানুষই এমন মহাজন
ধারণার আশ্চর্য প্রদীপে পেল ভাষার তীক্ষ্ম হাতিয়ার
সর্বনামে আত্মা টুকরো করে ফিরে গেল ছিন্ন নামে
সেই থেকে খোদা তার
নদী তার, নবী তার
যিশুর প্রজ্ঞাজলে নাকি তারাই ভগবান
মানবতার বাল ফেলে কতজনে ধরিলো গান
তবু পরম্পরার বিরুদ্ধে মানুষ খুঁজতে গেলে
হেরার আগুন কুমিল্লায় লাগে
ত্রিপুরা ভেসে যায় গঙ্গার জলে।
ঋ-কে-০৩
এই যে মুখে মুখে যৌথ ক্রিয়া
বলা ও না বলার মিথস্ক্রিয়া
এসবের বাইরেও ঠোঁটের ধারণা আছে
তার ইঙ্গিত মিলছে না
বলা যাচ্ছে না ক্যানো চোখে চোখে কেঁপে ওঠে তরঙ্গকূল
হাওয়া সন্ত্রাসে উঠে আসা শব্দমূল
শ্রোতার পরওয়া না করেই উঠে আসে মৌন নিবাসে
একাকী জানালা ভাঙে
জোসনায় আঁকে ধারণার হরিৎ গলি
সেই গলির একান্ত রিকশাটাই তুমি
মনে চায় ডাক দিয়া বলি
এ্যাই খালি যাবা নাকি? অনন্তপুর, ইশকের বাড়ি।
ঋ-কে-০৪
এই নিশুতি নির্বাহে
যে করুণ কেটেছে সুর
তার অনুমানে হাঁটতে গিয়েই
কোরাসে বিপন্ন হয়েছি ঋণ
গানে গানে খোদা নির্মাণাধীন
কণ্ঠে ভেজেনি, গায়নি কেউ
তবু তুমি ভাষার জননী
পরিণত রাগ ফেঁটে রটে গ্যাছো কল্প সন্ত্রাসে
না জানি কার অনুমেয় সুরে
আলতো তৃষ্ণায় সেজেছো অরু
ভেবে ভেবে চৌচির তরু
যতটা শুশ্রূষায় রাখি
সবটুকু পরম নিভে যায়
শুধু ইশকের নির্জাসে তুমি বেজে ওঠো নিরবধি;
ইয়ার খান। ক্ষুরের নিচে চুলের সংশয় নিয়ে দাঁড়াতে পছন্দ করেন। হাঁটছেন কবিতায় নিজস্ব ভাষা নির্মানের পথে। জন্ম ১৯৯৭ যশোরে, বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জে।