এমন একটা সংকলনে হাত দেওয়া সাহসের কাজ। কবিতাগুলি তাড়াহুড়াতে পড়লাম। কয়েকজন তো আমার অনেকানেক পড়া, আগেই… আরো ক’জনকে পড়লাম যাদেরকে মনে পড়ছে না, তো, সেটা একটা নীট লাভ।
আমি ধরে নিচ্ছি সংকলিত কবিরা সবাই সমকালীন, বা, বড়জোর বছর-পাঁচদশেকের ইতরবিশেষ। ধারণা ঠিক হলে, সংকলনটি রেপ্রেজেন্টেশনালও বটে। হয়তো, তথাকথিত, দ্বিতীয় দশকের? বিধান বলতে পারবে। এবং, তা হলে, ব্যাপারটা বেশ ইন্টরেস্টিংও। কেননা, কোনো একটা `ধারা’ বা তরিকা-কে চিহ্নিত করতে পারা যায় না এখানে। কিছু-কিছু সামান্য, কারু-কারু রচনার ভিতর থাকলেও, সংকলিত কবিবর্গ প্রায় সকলেই নিজের-নিজের মতো (এবং সে-জন্যে তাদেরকে অভিনন্দন)।
এদের (চন্দ্রবিন্দুর অপব্যবহার থেকে বিরত থাকছি, ধরে নিয়ে, যে, এরা সবাই আমার বয়ঃকনিষ্ঠ… শুধু হিজলকে নিয়ে খানিক সংশয় আছে, তার চেহারা আমার ঠাকুরদার মতো কেননা) মাঝে ইমরান, হামেদী, মিছিল, রিমঝিম, এবং, বলা বাহুল্য, হিজল স্বয়ং, আমার বহু-পূর্ব-পঠিত। অনুপম, রোবায়েত আর নুসিনকে আজকাল পড়ছি… সুবর্ণা, অমিত আর উপল-কে পড়েছি বলে মনে করতে পারছি না।
এত কবিতা এক বৈঠকে বহুকাল পড়িনি। আর, এমন দুঃসময়ে পড়তে হবে যে, তাও ভাবি নি। কিন্তু পড়ে অব্দি শান্তি লাগছে। যেন শেষমেস ময়নামতিটা দেখা হয়েই গেল।
উপলের কবিতায় একটা এষণা আছে, নতুন আলোয় দেখবার… ভাষাটাও আস্তে-আস্তে তৈরি হয়ে উঠবে আশা করা যায়।
ইমরানের কথা কী বলি। আমি তার রূপ আর নানা গুণের বিশেষ ভক্ত। তার কবিতায় আর-আর সবই আছে, আর আছে একটা হলমার্ক আন্ডারটোন, যা তাকে চেনায়। যেন কথার আড়ালে লুকিয়ে পড়া— ফ্রস্টেরও, বোধ করি, ছিল এমন।
অমিত চক্রবর্তীকে আগে পড়িনি। উচিত ছিল পড়া। তার কবিতার ঘরানাকে আমি চিনি (হয়তো)। ভঙ্গিটা প্রায় কৌরব— স্মার্ট, আন্তর্জাতিক। কিন্তু লিখছে ছন্দে। আশাজাগানিয়া কম্বিনেশন।
এই সংকলনে অন্ততঃ, নুসিনের কবিতাকে, আমার কাছে সবচেয়ে বেশি হৃদয়সংবেদী মনে হয়েছে। সে কোনো ‘ম্যাশিনারি’ দেখাচ্ছেই না। কেবলই গুঞ্জনটুকু… মনোহর।
রিমঝিমের বারে-মে (হে হে) আগে কখনও বলেছি কি? কী জানি। তো, এবে বলি। সে আমার বড় প্রিয় কবি। ওর তপস্যা আছে, কবিতার মার্গে, এ-কালে বড় দুর্লভ এই গুণ/দোষ। সিদ্ধি এসে গেছে তা বলছি না। বলব কেনই-বা। সিদ্ধি এসে গেল মানে তো শোধবোধ।
হামেদীকেও অনেককাল (বা অল্পকিছুকাল) পড়ছি। অন্তঃকথনের ঢঙে বলে সে। যেন কবিতা নয়, কবিতাকে বরং। যেন তাকে বলছে, দ্যাখো তো মিলছে কিনা।
আর মিছিল তো আর-জন্মের ভাই। কবিতার কাছে যা-যা আমি, এই ব্যক্তি-আমি, চাই। ও হামেশা সেই সবকিছুই জোগায়। সবসময়ই খুব পাক্কা হাতে-যে, হয়তো তা নয়। কিন্তু লাইনের ছেলে। রশিদ বাবুর্চির সাথে খুন্তি নাড়ছে অনেকদিন, বাব্বাহ্।
হিজল? আমার দাদামশাই। ওকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি কী সে পারে না। হয়তো আরেকটুকু খালি অভিনিবেশ আর স্থৈর্য… ও এসে যাবে, বিয়েটা হোক।
রোবায়েত অনেক সম্ভাবনার আকর। ভালো ছাত্র, কবিতার। নানাভাবে নিজের যন্ত্র বাজিয়ে দেখছে… সুর খুঁজে পাবে কবে…
অনুপমের কবিতায় একপ্রকার স্থাপত্য-দার্ঢ্য দেখতে পাই। উৎপলকুমার বসুতে যেমন। এই জিনিসটা এনডেঞ্জার্ড স্পিশিজ হয়ে পড়েছে আজকাল। কেবলি ভাঙো-ভাঙো, ভাঙা-ভাঙা…
পরিশেষে (লাস্ট বাট নট দ্য লীস্ট) সুবর্ণা। তার কবিতা আগে পড়িনি যে, তাতে আমার সন্দেহ নাই, ইমরানের থাকেও যদি। কবিতাই পড়লাম। প্রায় নিরলঙ্কার, নিরহঙ্কার। একটু আগে নুসিনের কবিতা বাবদে যা বললাম, সেসবও বলা যায়। `গল্পটা এখানেই শেষ, নদীও ফুরাল।’
—সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ
বর্ণক্রম অনুসারে
জন্ম ৭ জানুয়ারি, ১৯৬৫; ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। পেশায় আইটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে, সেলজ অ্যান্ড প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। প্রকাশিত বই: কবিতা— তনুমধ্যা , পুলিপোলাও, কবিতাসংগ্রহ, দিগম্বর চম্পূ, গর্দিশে চশমে সিয়া, ঝালিয়া, মর্নিং গ্লোরি, ভেরোনিকার রুমাল , হাওয়া-হরিণের চাঁদমারি, আমাকে ধারণ করো অগ্নিপুচ্ছ মেঘ, Ragatime। উপন্যাস— কালকেতু ও ফুল্লরা । গল্প— মাতৃমূর্তি ক্যাথিড্রাল । অনুবাদ— অন্তউড়ি [পদ্য রূপান্তরে চর্যাপদ] নির্বাচিত ইয়েটস [ডব্ল্যু বি ইয়েটস-এর নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ], এলিয়টের প’ড়ো জমি [টি এস এলিয়ট-এর দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড ও দ্য লাভ সং অব জে অ্যালফ্রেড প্রুফ্রক-এর অনুবাদ], কবিতা ডাউন আন্ডার [অস্ট্রেলিয় কবিতার অনুবাদ, অংকুর সাহা ও সৌম্য দাশগুপ্ত’র সাথে যৌথ] স্বর্ণদ্বীপিতা [বিশ্ব-কবিতার অনুবাদ] ই-মেইল : augustine.gomes@gmail.com