নদীর শাখা
তোমার চোখের ইশারায় নিরাশায়
আমি ফতুর হয়ে গ্যাছি,
ছলকে পড়ে গ্যাছে— সকল দ্রাক্ষারস।
এ-বেলায় এসে আমি ভালোবেসেছি
কার্ল মার্কসের তরিকতি বাণী—
সর্বহারার হারাবার কিছু নাই,
জয় করার জন্য আছে সারা দুনিয়া।
বাতাসে দুলে ওঠে বস্ত্র-বালিকা,
শুকিয়ে যাওয়া মধুমালতী নদীর শাখা প্রশাখা।
খাজুরাহো পয়ার
পূর্ব পশ্চিম দুই মিলে নামে সামনে ঢালের গোপাট
হেলানো খোঁপায় বাঁধা পড়ে রাখালের জুম ললাট।
হাসির এমন খয়েরি গমক খাজুরাহো অঞ্চল
একবার ঢলে ফের সমীরণে মায়া দার্শনিকীর ছল।
ক্ষয়ক্ষতি নাই, না আছে উতালপাতাল যুদ্ধময় বিমান
ধুলা সংরাগ মাঝদুপুরের পূরবী রাগ,বোবা রক্তের ঘ্রাণ।
সময়ের হাতে মন্দিরা বাজে নির্লিপ্ত বাহাসের মর্মর
দখিনা হাওয়ায় পরাগ লাফায় পাখি পুরাণের সমর।
যদি চাও দিও তোমার দেহের আবে জমজম গ্লানি
আমি দিবো তোমায় ভাঙা শস্যের সম্ভ্রম তুলে আনি।
লকডাউন
আমি তো ভুখের কাছে সারাজনমই লকডাউন, আমারে মারতে বন্দুক দাগাও— কিন্তু আমি কই— আমি কেউ না, কিছু না— আমি খালি একটা ক্ষুধার নাম!
আমি ভূমিহীন, আমি রাস্তার ছেলে— হাড়ের ভিতরে মজ্জা।
আমিই নসিব, আমি দগদগে ভাতের পেরেক।
যারা আজ কর্মহীন মধ্যবিত্ত— তাদের মেন্দিপাতার জীবন— কায়ক্লেশে, মানে সম্ভ্রমে, লজ্জায় উপরে টেনে রাখে সবুজ রং, কিন্তু ভিতরে ক্ষরণ— তীব্র গলগলে ক্ষত।
আমি রক্তাক্ত স্নেহ, আমি দিনমজুর মেয়ে—মরতে চাই—
কিন্তু মরি না, আমি সাফা মারওয়া, ক্ষুধার চোটে আল্লার আরশের দিকে দৌড়ে যাই শনশন হাওয়া, আগুন লাগানো সুন্দরবনে আমি বাঘ—তোমার লকডাউনের ক্ষুধা!
প্রজাপতি
তোমাকে অজস্র চুম্বন মেয়ে
মেয়ে অজস্র আয়নাপড়া তোমাকে
স্মৃতির বয়সে এনেছো ভুল প্রজাপতি
হোক না ভুল— মন্দ নয়, সাবেকি
তোমাকে মেয়ে অজস্র ঢাল পথের আশেকি।
এসফল্টে আঁকা
ব্যাপারটা কিন্তু বেশ অদ্ভুত লাগে,
না ঠিক বলিনি— ব্যাপারটা খুব গা সওয়া লাগে;
মনে হয়, কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই স্থির করি—
একাত্তরের যুদ্ধে আমাদের লাঞ্ছিত নারীদের ঘরে
অনেক পিতৃপরিচয়হীন শিশুর জন্ম হয়—
প্রথম দিকে ওদের ডাকা হতো জারজ সন্তান
পরে জাতি তাদের যুদ্ধশিশু নামের তকমায় বাঁধে;
কে না জানে একাত্তরে হাজার হাজার
যুদ্ধশিশুর জন্ম হয়েছে—
কিন্তু যতোবার দেখি কোনো ওয়ার বেবি
তার নিজের কথা, দুর্ভাগ্যের রোজনামচা লিখছে
সে একটি মেয়ে— শারমিন, মেরি, অলিভিয়া, কী লিজ
কখনও সে আরিফ নয়, নয় মোবারক, কী মার্ক।
এর কারণ কী আসলে—
যিনি নির্যাতিত হয়েছেন, কালো এসফল্টে জমাট
একটি লজ্জা, একটি কলঙ্ক, একটি প্রত্যাখ্যান—
তার জেরও বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন
একজন মঞ্জুশ্রী, একজন ফৌজিয়া, একজন হেনরিয়েটা
আমার নমিত জননী— একজন ঢেউয়াফল,
একটি এসফল্টের ডোরাকাটা দাগ।
কবি, নাট্যকার, অনুবাদক। জন্মেছেন ভাটি অঞ্চল কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে। পড়াশোনা বাজিতপুরে, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বহুদিন দেশের বাইরে— যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় থাকেন। বাংলাদেশে নাটকের দল— গল্প থিয়েটার-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য; নাট্যপত্রের সম্পাদক। নানা পর্যায়ে আরও সম্পাদনা করেছেন— সমাজ ও রাজনীতি, দ্বিতীয়বার, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, পূর্ণপথিক, মর্মের বাণী শুনি, অখণ্ডিত। প্যানসিলভেনিয়ায় কবিতার আসর– সংবেদের বাগান-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রকাশিত বই: আখ্যান নাট্য : নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে। আবের পাঙখা লৈয়া। প্যারাবল : হৃদপেয়ারার সুবাস। কবিতা: পিছুটানে টলটলায়মান হাওয়াগুলির ভিতর। নদীও পাশ ফেরে যদিবা হংসী বলো। দূরত্বের সুফিয়ানা। ভাষান্তরিত কবিতা: ঢেউগুলো যমজ বোন। ছিন্নগদ্য : সঙ্গে প্রাণের খেলা। প্রকাশিতব্য নিবন্ধ : আশ্চর্য বতুয়া শাক ও কাঁচা দুধের ডিসকোর্স।