খেরোগল্প
সময়ের খেরোগল্প লিখে আনকোরা অনুভূতি
বানভাসি মন মেঘের উচ্চতা মাপে
নির্লিপ্ত বোধ ছায়ার পিছু খুঁজে ফিরে সমকাল
নানা বর্ণের শোকের আসর বিরহ সন্তাপে।
দোটানার দুই প্রান্ত বেয়ে ভাবনা শিকড় ছড়িয়ে
যে’কটা পথ অবেলায় নিয়েছিলো ঠিক করে
গলি মেঠোপথ হারায়ে ফিরেছে আঁধার সন্ধিক্ষণে
সময়ের কাঁটা গিলেছে তারে গভীর অন্ধকারে!
সময়ের ঘনঘটায় যেপথ এঁকেছিলো যতিচিহ্ন
দিনশেষে এনেছিলো যে নতুন ভিন্ন দিনে
নিজেকে মগ্ন করেছিল তার মায়ার ব্যূহ মেপে
নতুন আলোয় নেশাতুর চোখ নিয়েছিল ঠিকই চিনে।
প্রেমতাপ কিছু নিয়েছিল সে ঋণ চেয়ে প্রিয়জনে
নিজেকে পুড়ে জীবাশ্ম সুখ খাঁটি করবার প্রেরণায়
দিয়েছিল যার এতটুকু দান নিয়েছিলো তার বেশি
দেয়াল পেরিয়ে নেমেছিল চাঁদ স্বপ্নের জানালায়
সুখপাখিদের বচসার গান আনমনে নিরালায়
নিজেরে হারায় সুরের বাণে নিয়তির আলাপন
লোভাতুর মন ঠিকানা ভুলে লিখে দেয় উড়োচিঠি
আলোকবর্ষে পৌঁছে যদি শ্রেষ্ঠ সম্ভাষণ।
ভেসে যায় জীবন—
ভেসে যায় দিনের আলো—অবশিষ্ট পথ
আগলে রেখে অন্ধকার জোছ্না প্রহর নামে
ভেসে যায় অন্ধকার—অন্তিম নিয়তি
লিখে রাখে বিয়োগের খাতা ভোরপাখিদের খামে
ভেসে যায় ঘুমভোর—অযাচিত কোলাহল
উবে যায় সব অপচয় ঘাম বৃষ্টির প্রার্থনায়
ভেসে যায় বৃষ্টিরাশি—আকুতির মেঘমালা
হিজলের বন মাতাল মহুয়া প্রেয়সীর কান্নায়
ভেসে যায় কান্না-কথা—জমানো নোনাজল
ভিজে যায় পথিক রেখা দালানের অভিলাষ
ভেসে যায় দালানের রঙ—সভ্যতার খোলস
তোমরা যাকে অনুযোগ বলো পরম দীর্ঘশ্বাস
ভেসে যায় সব অনুযোগ—মরীচিকা পরিণাম
অভিমান বলে ভালোবাসা তারে ভিন্ন আঙিনায়
ভেসে যায় সুখ-ভালোবাসা—অবেলার গুঞ্জন
প্রণয়ের পথ ভারী হয়ে যায় কঠিন মুখরতায়
ভেসে যায় গভীর প্রণয়—ভীষণ অবলীলায়
বিচ্ছিন্ন কোনো কাকতাল নয় স্বরূপ অবচেতন
এভাবে প্রতিক্ষণ দিনমান একে একে ভেসে যায়
ভেসে যায় ধূসর জীবন—শ্রেষ্ঠ উদ্যাপন !
উন্মাতাল
চলো ভালোবাসি—উন্মাতাল ভালোবাসা
সমস্ত চিহ্ন খুলে উদ্ভ্রান্ত-আদিম
লিখে দিই জীবন
ভালোবাসার নামে
আমাদের মিলিত হস্তাক্ষরে
দৃষ্টান্ত স্থাপনে নয়—অথচ দৃষ্টান্ত হয়ে যাবে
মুছে যাবে সময়ের বিভেদরেখা
জনমের ভালোবাসার সাধ মিটে যাবে—তবুও
বেঁচে থাকবে সাধ জনম জনম ধরে—
দুর্দান্ত উত্তাপে গলে যাই চলো—
সমপাতন ধারায়
সঞ্চিত উত্তাপ নিঃশেষ হবার আগে,
চলো উবে যাই
এক নিঃশ্বাসে—সুদীর্ঘ বাতায়নে
বেআবরু লিখে রাখি
পাতার শিরায় শিরায় জলজকাব্য
ভোরের আগের অন্ধকারে
মেঘবতীর বনে উন্মাতাল অভিসারে
গিরিমল্লিকা ফুটে উঠবে সুগন্ধ প্রত্যাশে
অথচ তখনো আমরা,
পদচিহ্ন আঁকছি আগামীর পথপানে—
আহত বিকেল
আহত এক বিকেল সামনে দাঁড়িয়ে—
ঝড়ছে গোধূলি রেণু
শহরে বাণ ডেকেছে কোলাহল
ইটের গায়ে ঠাই দাঁড়িয়ে খোলস
রেণু ভেসে যায় নিন্দিত অনুনাদে
ঘণ-কালো ধোঁয়ায়—কিছু নিকোটিনে
জানালার ফাঁকে বিম্বিত অবকাশে
জানালার নাম মেঘডাকা পাখি
ডেকে ডেকে গায় বিলাসের স্বরলিপি
করচার ঘ্রাণ শুকিয়ে উবে যায় উত্তাপ
রক্তকণায় অঙ্কুরিত হয় শীতল ধারা
সংকুচিত দিনে মেঘেদের উচ্ছ্বাস
ভেঙে পড়ে অবলীলায়
নির্বিকার প্রলয়ে অবরুদ্ধ সত্ত্বায়
কোনটা নিবে বলো!
অযাচিত বলে কিছু নেই এখন
শব্দের রঙ গাঢ় ধূসর
ধূসর রঙের দায় নেয় না কেউ
দেয় না কেউ কিছুই—আহত বিকেল ছাড়া।
শরীরের দায়
দিনক্ষণ জানা নেই, না ঠিকানা
একটা শরীর এসেছে—
বিচ্ছিন্ন শরীর
সৃষ্টির দায়—অস্তিত্ব বলে ভাঙা চৌচির
গন্ধর্ব বনেরও যদি মিলে সন্ধান
ডানা মেলে ঘাটে ঘাটে ভেসে যায় প্রাণ
কুৎসিত কোনো গন্তব্যে হারায়
জীবনের সম্মান
তিলে তিলে কালে কালে আলো-বাতাসে
কাকতাল নয় এ শরীর, না ঘটনার রেশ
মিশে যাওয়া ধরতি—ভ্রান্তির অবশেষ
জঙ্গম প্রণতি খোলে হিসাবের খাতা
বিন্যাস জানা নেই—রাজবাতি নিভে যায়
অবশিষ্ট থাকে কেবল শরীরের দায়;
কেউ যদি না নিবে দায়—ধরায় মিলাক
নিভে যাক সলতের আগুন
অপয়া ঝরে ভেঙে যাক মাস্তুল
নগ্ন শরীর বরং খুবলে খাক
শ্মশানের কাক।
জন্ম ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পশ্চিম নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পেশাগত জীবনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য। বর্তমানে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সমকালীন বাংলা কবিতায় তার পদচারণা লক্ষ্য করা যায় নিজস্ব ভঙ্গিমায়।