চার্লস সিমিক ৯ মে ১৯৩৮ সালে যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেডে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর দুর্বিষহ শৈশব অতিবাহিত হয়। মা ও ভাইসহ তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পিতার সাথে একত্রিত হন; শিকাগোতে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত বাস করেন। অধ্যবসায়ী হওয়ায় তিনি দ্রুত ইংরেজি ভাষায় পারঙ্গম হয়ে ওঠেন। একুশ বছর বয়সে তাঁর প্রথম দিকের কবিতা প্রকাশিত হয়। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর প্রথম কাব্য ‘What the Grass Says’ ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ থেকে তাঁর চৌষট্টির অধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘The World Doesn’t End’ (1989) কাব্যের জন্য তিনি পুলিটজার পুরস্কার ১৯৯০ লাভ করেন। সিমিক ফরাসি, সার্বীয়, ক্রোয়েশীয়, মেসিডোনীয় ও স্লোভেনীয় কাব্য অনুবাদ করে বিভিন্ন ভাষার শৈল্পিক সম্ভার উন্মোচন করেন। তাঁর কাব্য ও অনুবাদকর্মের জন্য তিনি American Academy of Arts and Letters ও Poetry Society of America কর্তৃক পুরস্কৃত হন। তাঁর অন্যান্য অর্জনের ভেতর এডগার অ্যালান পো পুরস্কার, পি.ই.এন অনুবাদ পুরস্কার, গুগেনহাইম ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ, ম্যাকআরথার ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ উল্লেখযোগ্য। সিমিক ২০০৭ সালে পঞ্চদশ Poet Laureate Consultant হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ৩০ বছরের অধিক কাল ধরে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। জীবনের প্রথম ১১ বছর ২য় বিশ্বযুদ্ধের ত্রস্ত কালের সাক্ষী হওয়ায় তিনি রণোন্মাদনাকে কবিতায় বিদ্রুপাত্মক ভাষায় চিত্রিত করেন। তাঁর সৃষ্টিকর্মে পরাবাস্তববাদী ও অধিবিদ্যক শৈলীর ব্যবহার লক্ষণীয়। এমিলি ডিকিনসন, পাবলো নেরুদা ও ফ্যাটস ওয়ালার তাঁর চেতনায় বিস্তার করেছেন প্রভাবমণ্ডল। সিমিকের কবিতা সহজবোধ্য। The World Doesn’t End কাব্য থেকে সংগৃহীত কবিতাগুচ্ছ অনূদিত হয়েছে।
আমার বাবা ভালোবাসতেন…
আমার বাবা আনড্রে ড্রেটনের বিস্ময়কর বই ভালোবাসতেন। তিনি সেই সকল দূরবর্তী সন্ধ্যায় মদের গ্লাস ও টোস্ট তুলে ধরতেন ‘যখন প্রজাপতিরা একক অখণ্ড ফিতে গড়ে তুলতো’ অথবা আমরা পেচ্ছাপের জন্য পেছনের গলিতে যেতাম এবং তিনি বলতেন, ‘এখানে আচ্ছাদিত চোখের জন্য কিছু বাইনোকুলার রয়েছে।’ আমরা বৃদ্ধ মানুষ ও তাদের পোষা প্রাণীর গন্ধে ভরা একটি ভাঙাচোরা বাড়িতে বাস করতাম।
‘নিষিদ্ধ বস্তুর সৌরভে পরিব্যাপ্ত খাদের সন্নিকটে থেকে’ আমরা পালা করে টেবিলে ধূমময় সসেজ কাটতাম। তিনি আমাদের বলতেন, ‘আমি আমেরিকাকে ভালোবাসি।’ সে রাতে স্বপ্নে দেখা জিনিস উৎপাদন করে আমরা মিলিয়ন ডলার অর্জনে প্রবৃত্ত হয়েছিলাম।
আমি সর্বশেষ…
আমি সর্বশেষ নেপোলিয়নীয় সৈনিক। প্রায় দুশত বছর পরে আমি মস্কো থেকে পশ্চাদপসরণ করছি। রাস্তায় সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে সফেদ বার্চ বৃক্ষরাজি এবং কর্দম আমার হাঁটুতে উঠে আসছে। একচোখা মহিলা আমার কাছে একটি বাচ্চা মুরগি বিক্রি করতে চাইছেন, এবং গায়ে দেওয়ার কোনো পোশাক আমার নেই।
জার্মানরা এক পথে যাচ্ছে, আমি যাচ্ছি অন্য পথে। রুশরা আর এক পথ ধরে যাচ্ছে এবং বিদায় জানাচ্ছে। আমার একটি আনুষ্ঠানিক তরবারি আছে। এটি চার ফুট লম্বা, আমার চুল কর্তনে এটি ব্যবহার করি।
আমি অপহৃত হয়েছিলাম…
জিপসিদের দিয়ে আমি অপহৃত হয়েছিলাম। আমার বাবা-মা আমাকে অপহরণ করে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তারপর জিপসিরা আবার আমাকে অপহরণ করে। এভাবে চলতে থাকে কিছু সময়। জিপসিদের শকটে আমি নতুন জননীর শ্যামলা স্তনবৃন্ত চুষেছি, অন্য সময়ে লম্বা খাবারের টেবিলে বসে রূপোর চামচ দিয়ে প্রাতরাশ খেয়েছি।
বসন্তের প্রথম দিনের কথা। আমার একজন বাবা বাথটাবে গান গাইছিলেন; আরেকজন জ্যান্ত চড়ুইকে আঁকছিলেন, ক্রান্তীয় পাখির রংচং।
আমার মা ছিলেন…
আমার মা ছিলেন কালো ধোঁয়ার বিনুনি।
তিনি আমাকে জ্বলন্ত শহরগুলোর ওপর কাপড়ে জড়িয়ে রাখতেন।
আকাশ শিশুর খেলাধুলার জন্য ছিল বিশাল ও ঝোড়ো জায়গা।
আমাদের মতো অনেকের সাথে আমরা দেখা করেছি।
তারা তাদের ধুম্র নির্মিত হাতাওয়ালা ওভারকোট পরতে চেষ্টা করেছিল।
সুউচ্চ অন্তরীক্ষ নক্ষত্রের বদলে বধির কান নিয়ে সামান্য সংকুচিত ছিল।
নগরের পতন ঘটেছিল…
নগরের পতন ঘটেছিল। একজন পাগল-ব্যক্তির আঁকা বাড়ির জানালার কাছে আমরা এলাম। অস্তায়মান সূর্য কিছু নিষ্ফলতার পরিত্যক্ত যন্ত্রে আলো ফেলেছে। ‘আমার মনে পড়ে’, কোনো একজন বললো, ‘প্রাচীনকালে কীভাবে একটি নেকড়েকে কেউ মানুষে রূপান্তরিত করতো এবং তারপর আশ মিটিয়ে তাকে তিরস্কার করতো।’
মৃত মানুষটি…
মৃত মানুষটি ফাঁসিমঞ্চ থেকে সরে দাঁড়ায়। সে বাহুর নিচে তার রক্তাক্ত মাথাটিকে চেপে ধরে।
আপেল গাছগুলো পুষ্পিত। সকলেই লক্ষ করছে সে গ্রামের পান্থশালার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে টেবিলের একটি আসনে বসে সে দুটো বিয়ার চায়, একটি তার জন্যে এবং একটি তার মাথার জন্যে। আমার মা অ্যাপ্রোনে তার হাত মুছে নেন এবং তার সেবা করেন।
পৃথিবীতে বেশ প্রশান্তি। কেউ প্রাচীন নদীর ধ্বনি শুনতে পায়, যে নদী তার বিশৃঙ্খলার ভেতর উল্টোদিকে বয়ে চলে।
যেখানে অজ্ঞতা…
যেখানে অজ্ঞতা পরম সুখ, যেখানে কেউ রাতে বুদ্ধিজড়তার শয্যায় শয়ন করে, যেখানে কেউ হাবা দেবদূতের কাছে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করে…যেখানে আনন্দদীপ্ত গণ্ডমূর্খের সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে যেতে বুদ্ধুকে কেউ অনুসরণ করে…যেখানে ঘরের মোরগেরা কর্কশভাবে ডাকে…
সুন্দর নির্বোধ বারবার গাইছে প্রেমের গানের একই অংশ। রোয়াকে ব্রেকফাস্টের জন্য আমাদের কিছু চোখ-ঠকানো চিত্রিত আঙুর রয়েছে যেগুলোকে পাখিও ঠোকরায়। আর এখন চুম্বনরাশি…যার জন্য আমরা হ্যালোয়িন মুখোশ খুলতে ভুলে গিয়েছি।
গৌরাঙ্গ মোহান্ত অ্যামেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্টের কবিতায় চিত্রকল্প ও প্রতীকের প্রয়োগ সম্পর্কে গবেষণা করে পিএইচডি অর্জন করেন। তাঁর দশটি গ্রন্থের ভেতর ‘Robert Frost : A Critical Study in Major Images and Symbols’ (2009), ‘প্রমগ্ন কবিতাবলি’ (২০১৭, ২০১৮), ‘A Green Dove in Silence : Forty Prose Poems in Translation’ (2018, 2019), ‘ঝলকে ওঠা স্বপ্নডাঙা’ (২০১৬) উল্লেখযোগ্য। দিল্লিস্থ রুব্রিক পাবলিশিং A Green Dove in Silence এবং এর হিন্দি অনুবাদ ‘এক হরা ফাখতা মৌন-সা’ (২০১৮) প্রকাশ করে। গৌরাঙ্গ মোহান্তের কবিতা অন্যান্য পত্রিকার সাথে লন্ডনের Poetry Out Loud পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তাঁর প্রকল্প পরিচালনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ঢাকা ট্রানস্লেশন ফেস্টিভ্যালের তিনি একজন উদ্যোক্তা।