হরিণের খেত দেখেছি
পৌঁছেছি, তবু পৌঁছানো গেলো না, দুলে ওঠা অঢেল ধ্বনিটির কাছে।
হাওয়ায় হাওয়ায় একবার তবে বেরিয়ে পড়া যাক— কোমলডাঙার দিকে
চমকিত পড়ে আছে হরিণের খেত। আজ মাঠে শীত নেই, অনেক স্লোগান
প্রলম্বিত হলে জমে ওঠে পাখিবাসনার সাধনা। যার যার নিজের দিকে ফেরা।
ও হো ঘাটের বেদনা, ছেয়ে আছে বৃহৎ মধুপুর। সে যে ডুবিয়ে মারে।
অনেক গানের পর থেমে যাবে। সম্মুখে চেয়ে আছে আরেক পারাবার।
সুলতার কোকিল উড়ে যায়
ঋতুবদলে জীবন বহিয়া যায়। সুলতার কোকিল উড়ে যায়।
একটা ভ্রমের পাখির আওয়াজ বহুদিন পিছু ধরেছে। মাটির গানেরা
সব আল ধরে চলে। এক লক্ষ কামিনীর চারা পুঁতে যায়। আর ঋতুহীন
বীজ ফেলে যায়।
ছায়ার পাশে দাঁড়ালে ছায়া সরে যায়। মৌসুমে তার কোকিল উড়ে যায়।
একটি পয়সা রঙিন
বরং প্রশ্ন তুলি মাংসের দর-দাম নিয়ে। অনুগত হেঁটে গেলে
সস্তা বাজার। অনুগত হেঁটে গেলে মিটে যাবে। জীবনের ঘানির উপর শতেক মুদ্রা।
একটি পয়সা রঙিন—নগ্নতা ভালো বোঝে। একটি সুদর্শন ভুখ—নগ্ন হতে ভালবাসে।
বাঁশপাতার তরল বাহনে যেটুকু গমন তার নকশা বেয়ে একটানে যেতে পারো।
বহেরা মন বিষাদ পাবে না।
অপঘাত আর সংবেদনা বলছে
‘বিতিকিচ্ছিরি লাশের চেয়ে ফুলের রঙ অনেক সুন্দর’—এ কথা সত্যি মুখর। অপঘাত আর সংবেদনা বলছে, নিমফুলের গন্ধের চেয়ে নিমফলের বেদনা বেশি নিকটবর্তী।
অতএব, অবসাদে দুঃখ করো। কোনো সোনালি গমক্ষেতের দিকে যাবার প্রয়োজন নেই।
পাখিদের অনেক স্লোগান
পতনের দিনে ঝরছে এতগুলি পাতা! এইসব কারুবাসনাও ঝরে যাবে।
তোমার চোখ ক্রমাগত ছুঁয়ে যাচ্ছে ক্ষুধা ও ফেনা।
এইসব মহাপতনের ক্ষণে,
ভগ্নপ্রায় বটগাছটির নিচে অঢেল ক্রন্দনে
দুজনে মুখস্থ করছি পাখিদের অনেক স্লোগান।
ভবপ্রেম
বসন্তের ঠোঁটভরা হাসি। টোকা দিলে ফেটে যাবে ফাগুন।
বসন্তে শাখে শাখে পরাগের রাগ। এ ক্ষণে পাখির চলাচল
ভালো লাগে। দেহে ফুটে ওঠে তৈলাক্ত ফাঁদ।
পড়ে আছে বালকের তানপুরা, শ্রুতিময় তাপ।
*
পাতাঝরা-ঝরাপাতা এখানে কি আগুন লেগে আছে?
পাখি পায়ে লেগে আছে নাচ, হেঁটে গেলে কুসুমিত ফাঁদ।
তোমার দিকে আমার এ উদ্দেশ্য তবু ফুরাবে না। হৃৎপিণ্ডে চক্রাকারে
জুড়ে আছে ভবপ্রেম। এ যাত্রা নিদারুণ—গন্দমে সুধা আছে, স্বাদ।
তুমি কল্পনা করো ম্যাজিক মোমেন্ট
সত্যি বলছি, কলহসুরে আমি আর নাই। এই সুরা ও সুরপথ ভ্যাপসা ঋতুকাল।
তুমি কল্পনা করো ম্যাজিক মোমেন্ট, গরমকাল। আমি কদাচিৎ হেঁটে যেতে চাই।
সম্মুখে ঋতুপরিবর্তন
সম্মুখে পতন
সম্মুখে খেলা
সম্মুখে আমি আর নাই।
ঋতুপরিবর্তনের কালে পাতারা জানে বদল, প্রণয়ে মৃত্যুর প্রক্রিয়া।
একশত চুমুর লণ্ঠন
যেটুকু আয়ত্তে এলো তার প্রণোদনা ও তরঙ্গ আমার।
দূরগমন। দূরব্যঞ্জন। একশত চুমুর লণ্ঠন!
কে অধিক?
এই যে একতারা
এই যে ছায়াধারণা
ঊহ্য মুদ্রা— এ কেবল আক্রমণ।
পেয়ারার বন সহাস্যে লুটায়
অন্ধ কাজে মন ঘাসের মাদুর। মধু-মধু চুম্বন।
ঘন হয়ে ভূমিতে মিশেছে।
ছিলে তো
দুধের নিনাদ,
আপন আধেক,
ভূমিতে পল্লব।
ছিলে তো খেতের থইথই সুর।
ঘন হতে হতে ভূমিতে মিশেছে।
পেয়ারার বন সহাস্যে লুটায়—
তোমার বিয়োগ শূন্য পেয়েছে,
তোমার পাখি অন্ধ সরীসৃপ।
ঘোড়া ও মহান চাবুক
কোনোদিন বিভ্রান্ত বিজয় খেলিনি। তবু বাতাসে তীর ছিল—
ঘোড়া ও মহান চাবুক।
জন্ম ২১ নভেম্বর ১৯৯০ সালে, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। রাজশাহীতে বসবাস। উত্তরকাল ডট কম নামের একটি নিউজপোর্টালে কর্মরত। প্রকাশিত কবিতার বই দীর্ঘ স্বরের অনুপ্রাস (২০১৮), কাগজ প্রকাশন। ইমেইল : nushinnushrat@gmail.com