প্রত্নসময়
ফিরে আসছে জায়মান অতীত, চৈত্রের খরতাপে―
বাতাসে ঝুলছে সেঁজুতি দি’র ফাটা পায়ের নৈঃশব্দ্য
জন্মের বিস্মৃতি নিয়ে আমরা যারা গিয়েছিলাম―
ফিরেছি কেউ-কেউ সঙ্গে করে পাতা ঝরার মুহূর্ত
অপ্রাপ্ত বয়স্ক সবুজ পাতার ব্যথা― রক্তজবা ফ্রক
জেগে ওঠে প্রত্নসময়, স্মৃতি-চুল্লিতে ত্রস্ত বেঁচে থাকা
প্রত্যেকের আছে নিজস্ব নিঃসঙ্গতা― মানুষ, বৃক্ষ
ফুল-পাখি-নদী… যার যার নিঃসঙ্গতা তার তার
এমন দহন দিনে কোথায় যাও তুমি, জলপাই-ট্রেন
পেনসিলে লেগে ছিল শূন্যতা, মৃত্যু যাপনের কুহক?
সীমারেখা
চৈত্র-শেষে উষ্ণ হাওয়া, আমাদের তাড়া করে নিষিদ্ধ পথ
অমনি খুলে যায় প্লাজোর ভাঁজ, উঁকি দেয় হীরামন পাখি
জলপ্রপাতের ঝরে পড়া দেখতে-দেখতে ইচ্ছে করে সংযম
ভাঙতে একদিন―যেমন পাহাড় ভাঙে তীব্র লুসিয়া রমনী
শব্দেরা ঝরে পড়ে আনমনে, সন্ন্যাসী চোখ নির্জন সমাধি
ছেড়ে পথ ধরে― আর ওদিকে, সংসারে কারা পাতে ফাঁদ!
জেগে থাকে তৃষ্ণা, অন্তিম মুহূর্তে উত্থান, সীমারেখা টানে
নিষিক্ত গাঢ় বেদনার বিপরীত রতি, ব্যালকনির রেলিঙে
জন্মউৎসে প্রার্থনা
আমার আর যাওয়া হলো না হাফলং, রহস্যময় সেই
গ্রামে― ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা যেখানে আত্মহত্যা করে
কুসুমিত জন্মউৎসে প্রার্থনায় মগ্ন হই, মুহূর্তে একটি
প্রজাপতি ঘরময় উড়তে থাকে;― এক শেলফ থেকে
অন্য সেলফে, বই থেকে বই― আলতো করে ছোঁয়।
দীর্ঘ অজ্ঞাতবাস সেরে বিষণ্ণ একটি চড়ুই উড়ে এসে
আলিঙ্গন করে সিলিং ফ্যান… কীসের আকর্ষণে সে
এভাবে ছুটে এলো! পাখিটি কি জাটিঙ্গা গিরিশিরায়
রেখেছিল পা, মেঘের আলোয়ে নাগাদের উপত্যকায়?
প্রজাপতিটি বাংলা বর্ণমালা হয়ে উড়তে থাকে, আর
চড়ুইটি নেবুলার অংশ হয়ে জন্ম দিচ্ছে নতুন নক্ষত্র
প্রাকৃত পৃথিবীর খোঁজে
যৌথ-মিলনের ভঙ্গি, আমরা হেঁটে যাই, ভেসে যাই
সঙ্কুচিত দৃষ্টিসীমা নিয়ে কতদূর আর যাওয়া যায়!
একদিন ঠিক বেরিয়ে পড়ব প্রাকৃত পৃথিবীর খোঁজে
হারানো সকালগুলো কুড়িয়ে নেব নুড়ি পাথরের
মতো— তুলে নেব পাখির ডানায় বাতাসের নেশা
সীমাহীন স্বপ্ন আর কল্পনায় মানুষ কী বেশি বাঁচে!
মুছে গেলে বাস্তব সত্তা— খুলে যায় অনন্তের পথ
অস্তিত্ব, অনস্তিত্ব
সন্ধ্যায় বৃক্ষের চিঠি এলে ডাকবাক্স উধাও হয়ে যায়
গন্তব্যহীন সে চিঠি উড়তে থাকে— শূন্যে, মহাশূন্যে
২.
থাকা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি, না-থাকা নিয়েও—
আসলে থাকা, না থাকায় তেমন কোনো পার্থক্য নাই
বিপুল এই মহাবিশ্বে মহাকালের স্রোতে কতোটুকু আমি!
মূলত কবি। জন্ম ঢাকায়, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭০। পৈতৃক নিবাস, সোনারগাঁয়ের ললাটি গ্রামে। পড়াশুনা কম্পিউটার বিজ্ঞানে, দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই; এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে, চোন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ‘হিউম্যান রাইটস’ বিষয়ে মাস্টার্স। কবিতায় হাতেখড়ি নব্বই দশকের শুরুতে। থাকেন নিজ গ্রাম সোনারগাঁয়। পেশা ফ্রি-ল্যান্স গবেষক। তিনি একজন মুক্ত-চিন্তক, সংস্কৃতিকর্মী, কাজ করেন মানুষের অধিকার নিয়ে। শখ ভ্রমণ, সুযোগ পেলেই ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশ। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘বাঁক ফেরার অভিজ্ঞতা’ (দোয়েল প্রকাশনী, ১৯৯৯) ‘চূড়ায় হারানো কণ্ঠ’ (মঙ্গলসন্ধ্যা, ২০০৩), ‘মায়াদ্বীপ’ (ঐতিহ্য, ২০১৫), ‘কৃষক ও কবির সেমিনার’ (অভিযান, ২০২০), ‘সহজিয়া প্রেমের কবিতা’ (অভিযান, ২০২১), ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ (চৈতন্য, ২০২৩), ‘স্বনির্বাচিত কবিতা’ (ভাষাচিত্র, ২০২৩)। সম্পাদিত গ্রন্থ: ‘মঙ্গলসন্ধ্যা প্রেমের কবিতা’ (ধ্রুবপদ, ২০১৭)। অন্যান্য গ্রন্থ: ‘এশিয়ার বারটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ (ইংরেজি গ্রন্থ, মে এইটিন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, দক্ষিণ কোরিয়া, ২০১৫), ‘বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম স্মরণগ্রন্থ’ (ঐতিহ্য, একুশে বইমেলা, ২০২০)। পুরস্কার ও সম্মাননা: ‘চন্দ্রাবতী সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার’ (কবিতায়, ২০২১), শালুক সম্মাননা (২০১৯)।