শনিবার, নভেম্বর ২৩

মিছিল খন্দকার-এর পাঁচটি কবিতা

0

কলার বাগান

প্রায়শই ঘুমের ভেতরে
তীব্র ডিস্টার্বসহ ট্রাক ঢুকে পড়ে।
সেদিন কারওয়ান বাজারে দেখি
ট্রা

টা
কে।
চুপচাপ।
চালক নেই।
অনেক অনেক লোক
ট্রাকের পাছা থেকে বের করছে কাদি কাদি কলা।
চাম্পা, সবরি আর সাগর (সমুদ্রও থাকতে পারে কলার ভেতরে!) ওনাদের নাম।
গ্রাম থেকে- কলার বাগান থেকে এসেছেন ওনারা।
আড়তে তাদের এমনভাবে রাখা হচ্ছে
যেভাবে ক্যাম্পে ইহুদিদের রাখত নাৎসি বাহিনী।
কী কাহিনী কী কাহিনী
ও ট্রাক ভাই
ওহে কলা ভাবী… যদি বলি
কথা তো বলে না তারা তাতে।
তবু ট্রাকটা ডিস্টার্বসহ ঘুমের মধ্যে আসে মাঝরাতে।

যেন আমি মফস্বলে রাস্তার ধারে কোনো কলার বাগান!

যথেষ্ট নেশা রাখা হবে

নদীতে সাঁতার জমা দিয়ে তীরে উঠে আসুন তাহলে
নারীরা যদিবা পড়ে পুরুষের দিকে আজ ঢলে
কোলে তুলে নিন—
বেলুন উড়িয়ে দিন
পরে সব আকাশ একে একে নিয়ে ফিরবেন।
অন্যমনস্করা তার আগে লাগান নিজ নিজ প্যান্টের চেন।

সবার সকল দাবি মেনে নেওয়া হলো।
সতেরোর পর হবে ষোল।
খেলা হবে। খেলা শেষে রবে নারকোলও।
মদের মধ্যে যথেষ্ট নেশা রাখা হবে জারি
অতল সংকট থেকে উঠে আসা হাসিরা পাবে পিচকারি।
পৃথিবীর সব অশান্তি জ্বালিয়ে রান্না হবে
খাওয়া শেষে ভাতঘুম হবে
সবাই বাস্তু পাবে
মেঘ দিয়ে জানলা-কবাট হবে, রোদ দিয়ে আসবাব আর
জোৎস্না দিয়ে হবে ঘরদোর।
যে যার বাড়ি ফিরতে পছন্দমতো পাবে রাত, দুপুর, সন্ধ্যা বা ভোর।

মেঘ ও পেয়ারা

পেয়ারায় কামড় বসানোর মুহূর্তে
মেঘ সরে গেল।
কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায়
এই বাংলাদেশের ঢাকায়
তথা শীতকালে
এবং দুপুরে
ঢুকে পড়ল রোগা রোদ।
আমি আরেকটা কামড়ের আগে
বিরতি নিলাম—
এমনকি বন্ধ রাখলাম
কবিতার শুরুর কামড়কে চিবানোও।
দেখতে চাইলাম, কিছুটা হলুদ আলো পেয়ে
আমার ভেতরে কী কী রংবদল হলো।
দেখার আগেই ফের মেঘ—
ও মেঘ, আমরা পেয়ারা খাই চলো।

পাড়া

পুকুর উধাও হলে
গোসলের দৃশ্যরা কোথায় যায়!
বিরান পড়ে থাকে ঘাট।
ভেজা জামা লেপ্টে থাকা শরীর নিয়ে
বাড়ি ফেরা তোমাকে মিস করে পাড়া।
পাড়ে বিষণ্ণতা নিয়ে বড় হতে থাকে
নিম, জলপাই চারা।

গাড়ির তলে ফেলতে নেওয়া কবিতা

একটা বড় দুঃখের মধ্যে একটা বাচ্চা দুঃখ ঢুকে দেখলো
চারপাশ অন্ধকার—
পৃথিবীতে তখন সন্ধ্যা।
টুকরা শীতকাল পেয়ে
বৃক্ষকূলের চুলে-মুখে কুয়াশার রেনু,
অথচ গাছেদের নেই কোনো হুডি।

এর মধ্যে আকাশে উঁচায়ে মাথা দেখি,
একটা তারা এমনভাবে জ্বলছে
যেভাবে লঞ্চের দৃশ্যে পাড়ের দোকানে জ্বলে
টিমটিম আলো,
যদিও অতোটা নয় কাছে—
ও তারা, তোমার দোকানে বেনসন আছে?

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম: ২০ ডিসেম্বর; খেজুরা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল। স্নাতকোত্তর (অর্থনীতি)। প্রকাশিত বই: কবিতা— মেঘ সামান্য হাসো [ঐতিহ্য, ২০১‌৫] পুষ্প আপনার জন্য ফোটে [জেব্রাক্রসিং, ২০১৮ ও বৈভব সংস্করণ, ২০২০] আকাশ চাপা পড়ে মরে যেতে পারি [বাতিঘর, ২০২০] ই-মেইল : michhilkr@gmail.com

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।