শনিবার, নভেম্বর ২৩

মুখর রচনাখণ্ড : সরকার আজিজ

0

Utsob-Songkha_Motif

মুখর রচনাখণ্ড


১.
শ্রীমতি কুরুক্ষেত্র
এ-তো সুলিখিত একটা পতন
জুতোহীন পায়ে
এ-কথা যৌনকর্মী বলেছে

শ্রীমতি…

 

২.
প্রতিবেশির বাগানে
অনাদরে বাড়ছে জামগাছ
শিশু জানে—
একদিন অবলীলায়
জামফল খাওয়া যাবে…

শ্রীমতি…

 

৩.

সব ছেলেবেলা
রঙিন ছোপচিহ্নে প্লুত
সব ছেলেবেলা…
ছেলেবেলার একটা হাঁস
চিনে ফেল্লো: সে রায়বাবুদের ছেলে

আশা,
বলো না তুমি—
‘একদিন ছাদেই দাঁড়াব’

শ্রীমতি…


আলোকপ্রপাত


ওখানে কবির সন্ন্যাসীরা—ডাকে পাখি
বাতাসে সোমার শাড়ি নির্ভুল ওড়ে
চোখে বৃষ্টির ফোটা—আটকে থকে ছায়া
দিনে আলোকপ্রপাত দিনে সুগন্ধ-চিকুর
খাঁড়া শুলপাণি ব্রিজ দৃষ্টি বিভোর
মেহগিনিকা, তুমি কি ফিরবে না!

ডাকো, কমবেশি বিকাল
এখন গ্রীষ্মকাল

প্রমিজ…
অলিন্দে আমার সোমার সালোয়ার
শোবিজ…


শরীরচিহ্ন


একা যায় এক ওই সহজ বিকাল
লাল কে লিখছ কবিতার পাতাগুলিতে
কত ফিরে যাই ফেরার কামনা নিয়ে
বন্ধ রাখা যত নগর-খিলান
গাছেরাও বৃদ্ধ হয়
পড়া যাবে কি কেলাসিত পরমাণু
এতো পাণ্ডুলিপির অক্ষর!

কালীন্দি মোহানায় যুগপৎ
চতুর্দোলা
চরও জেগেছে বলা যায়
বালির পরেও হাঁটতে পারো
দয়াল-শ্যাওলার ভুলগুলি একটুও দাঁড়ায় না
ভাঙাচোড়া আমাদের ঘর

মেদ ও ঘাম রান্নাও উল্লেখযোগ্য
পুরাতন
কালিক-কর্তব্য ও কলমনিব জানে
এই জনম জটিল
কঠিন প্যাঁচে পড়েছে কতক জ্যোতিচিহ্ন
হ্রস্ব ও দীর্ঘ
পথ চলা পথের পিছন

আসছে বিকালেই জানা যাবে
মরণাস্ত্রের রতিগুলি
থাকা খাওয়া নাওয়া সেই ব্যাপার
এই ব্রজে একটাই শটিবন

কণ্ঠে স্বরলিপি ধরো—
সা-রে-গা মা-পা ধা-নি-সা-ধা-রে
সংসারি তাজা শ্বাস ও স্নেহ ভালোবাসা
কান পেতে আছি


রাসভরা পূতিপঙ্ক


আমি যখন খণ্ডিত—অনির বুক থেকে খসে পড়ছিল আঁচল, সিঁড়িতে নীল-ছায়া আলো—গহরজান উপরে উঠছিল রাতে—অনি কী ঘুমোতে যাবে!

নিষিদ্ধ এলাকা থেকে ফিরে দেখি ঘরের জানালা ভাঙা: মানিপ্লান্টের ডগা নুয়ে পড়ছে
শুকনো খসখসে হয়ে গেছে ফুলদানির ফুল

আর কত প্রশ্ন করব অনির বাবুটা নিয়ে! মুটিয়ে যাওয়া বাবুটা

অনির কান্নার কথা মনে পড়ে। চাই চকিত চঞ্চল বিড়ালটার দ্রুত মেঝে পার হওয়া

কী অট্টহাসি! মানুষ এতো হাসে কেন?

মুক্তিপণ দিয়েও দ্বিখণ্ডিত দেহ, একদিন শতখণ্ড হবে

খেলা হবে—এই বলেই কি যুদ্ধ আর খেলার আসামিতে ভরে যাচ্ছে কারাগার?

স্বর্গ-নরকের জ্ঞান সকলের জানা:

ঝাউবন বলো! ও অনি! পৃথিবীতে থাকবে কি একদিন কোনো গোরখোদক… কোনো কবরের চিহ্ন… অনি!


যৌনতা


অত্যধিক ভালোবেসে কে হতে চায় ক্রিশ্চান!
মাংসাশী! তার চাইতেও….

বাড়ি যাব বাড়ি যাব বলে ভোজন করেছি বেশি সজ্ঞানে বিছানায় গেছি
এখনও চর্ম-চুলকানি নাই—এমনই
দেহের চেয়ে ধর্মে যৌনতা আমার
এই স্বাতন্ত্র্যবশে জেগে আছি

ক্রিশ্চান নৈঃসর্গিক জন্ম-পরম্পরায়
আমি ক্রিশ্চান হতে পারিনি

মদের পেয়ালা রেখে পুবে চলে গেছি কতবার
ট্রেনে, মহিলা বগিতে চড়ে

এ বঙ্গ কলাবৃত্তান্ত: মদ পান কারি মধুকর সন্তান

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১। ময়মনসিংহের তরাকান্দা উপজেলার কলহরি গ্রামে। প্রকাশিত বই ‘চলো যাই বলিনি’ (কবিতা), উত্তরে তুমি (কবিতা), ‘জনপদে ঘোড়ামানুষ’ (কবিতা), ‘যেভাবে ধনুর্বিদ্যা শেখা’ (কবিতা), ‘সীমানায় কাঁটাতার’ (কবিতা), ‘নির্বাচিত কবিতা’ (কবিতা), ‘ষোলো চালের বাগাডুলি’ (কবিতা)। সম্পাদনা: ‘অনুশীলন’ (১৯৯৩—১৯৯৬), ‘অনুশীলন আড্ডা’ (১৯৯৬—১৯৯৮), ‘ময়মনসিংহ জং’ (২০০০ সাল থেকে চলমান)। পুরস্কার ও সম্মাননা: লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ সম্মাননা ২০০৮, বগুড়া লেখক চক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১৩, অনুশীলন সাহিত্য সম্মাননা (কবিতায়) ২০১৮।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।