সময় ১
ভ্রমণ অলীক নয়
দেখো তার উড্ডীন ডানায়
পত্ররাশি উড়ে যায়
আজ কোন্ অগ্নির কাছে
আদিগন্ত
এমন টানের হাওয়া
মনে পড়ে-
একদিন চক্রাকারে
ঘিরেছিল কোমলআগুন
জীবন
বসন্তের আগমনী শুনি। সৈরিন্ধ্রীর দিবানিশি গান। আমাদের জীবদ্দশায় কী করে ফুরায় তবে উজানের দিন?
মোহর নদীর পাশে ঝুঁকে আছে শীত। পরিবর্তিত দিনে, তোমাদের আসা যাওয়া দেখি.. মনে পড়ে, শীতের নরম রোদ সহাস্যে বলেছিল, এমন জীবনের কী মানে পেলে! এখনও কি অপেক্ষার হেলানো আঙুল ছোঁবে, ওহে পড়ন্ত মেঘ?
উড়ে যায় সামান্য পাতা। মন্থর দু’হাতে সরাই তাকে। তার নাম মনে পড়ে, কবে সে হারিয়ে গেছে ছদ্মবেশী প্রণয়ীর মোহে।
ঠারেঠোরে তবু কেন অত কথা বল.. কী চাও, কীচক বধের পর, সৈরিন্ধ্রীর চোখ দুটো যুগে যুগে অশ্রুভেজা হোক!
চন্দ্রনিবাস
মহিষবাথানের মেঘ শুনেছ কি, কবেকার ভুলে- আজো কাঁদে দলছুট মেয়ে। পদ্মপুকুরের জলে প্রত্যাখানের নীল ফুল দোলে। পূজা আর প্রেম-গীত মিলেমিশে উড়ে যায় ব্যক্তি সংঘাতের কাছে। তবু এক অস্পষ্ট রঙের ভেতর, আমাদের জেগে থাকা। যেন পুরনো, নরম কোনো দিনে ঘাসের ওপর কেউ এলিয়ে রেখেছে তার চুল।
অপেক্ষার সেই দোলাচলে জন্ম নেয় রাগিণী নামের এক তারা।
অসুখ
সেই কবেকার শরীর ছেনে রাত্রি গেয়েছিল শুদ্ধ খাম্বাজ। ঈষৎ প্রত্যাখ্যানের জ্বালামুখ বেয়ে তোমার প্রতিটি আঙুল ছুঁয়েছিল তখন অন্তহীন খাদের আঁধার। মনে পড়ে, কীভাবে.. নেমেছিল ঋতুস্রাবের প্রথম ধারাপাত?
আশ্বাসের আলো পেরিয়ে অমিয় ধারায় ডানা মেলছে সেদিন অচেনা কবিতার ভাঁজ।
আজ ফের নবজন্মের কথা ভাবি। আবার মানচিত্র চিনে চিনে তোমার কাছে যাওয়া।
এ জন্মের আঁতুড়ে রেখে যাই নিখোঁজ সংবাদ, অসুখ জরায়ুর খসে পড়া রাগ, জেদ আর অফুরান কান্নার ধারা…
মাভৈঃ
তোমার শিয়র থেকে সমস্ত সংকীর্ণতা সরিয়ে নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছি আজ রক্তস্রোতে। প্রতিবিম্বে ঘন হয়ে আসছে আমার পাঁজর। বুকের দাহে তুলে আনছি সহস্র লহরী। নিশ্চিত বিজয়ের কাছে এসে কেন ভেঙে যাবে বলো স্থাপত্য কৌশল!
উড়াল হাওয়া, তোমাকেও বলি, এই ক্রিমেটোরিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ব আমি সহসাই। আগুন আগুন বলে বিলাপের আগেই হব অন্তিম আগুনের ফলা।
কেন বলো অন্ধকার! আমি তো দেখি প্রতি বিন্দুতে কীভাবে বেজে ওঠে প্রবল দামামা। তুমি বলো অভিশঙ্কা, আমি শুনি সেই হায়দারি ডাক।
মাভৈঃ!!
মেঘ অদিতির জন্ম বাংলাদেশের জামালপুরে। ঢাকায় থাকেন। পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার। তিনি মূলত কবি। পাশাপাশি গল্প এবং গদ্য চর্চা করেন। সম্পদনামণ্ডলির সঙ্গে যুক্ত আছেন ‘ঐহিক’ নামক বাংলা ভাষাভিত্তিক ওয়েব পত্রিকার। ঐহিক বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা সাতটি। কবিতার বই চারটি আর গল্পের তিনটি।