যাত্রাপালার এককালের দাপুটে অনেক অভিনেতা, যারা একসময় ‘মঞ্চরানি’, ‘মঞ্চকুসুম’ প্রভৃতি অভিধায় অভিহিত হতেন; শীতলা, বেহুলা, রাধা, মর্জিনা, আলেয়া ইত্যাদি বিখ্যাত নারী চরিত্রে রাতের পর রাত মানুষকে বিনোদিত করতেন; তাদের ব্যক্তিজীবনের গল্প স্বভাবতই ভিন্ন। আর সাধারণের গল্প নয় বলে কার্যত অবহেলিত। এই অগণিত মানুষদের জীবনধারা, মন, গল্প বহুযুগ ধরে সমাজ ও সভ্যতার এক প্রান্তে পড়ে আছে। যেমন চপল কুমার ভাদুরী। উনিশশ’ পঞ্চাশ বা ষাটের দশকের বিখ্যাত যাত্রাশিল্পী ‘চপল রানি’ কে নিয়ে ২০১০ এ এসে কৌশিক গাঙ্গুলী নির্মাণ করেন ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’। ঋতুপর্ণ ঘোষ অভিনীত তিনটি বাংলা ছবির মধ্যে একটি।
ছবির গল্প সংক্ষেপে এইরকম: চপল কুমার ভাদুরীর জীবনের উপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালক অভিরূপ সেন ও তাঁর দলের কলকাতায় আগমন ঘটে। একপর্যায়ে কাজ শুরু হয়। চপলকুমার অকপটে জীবনের গল্প বলতে থাকেন। মায়ের মৃত্যু, এক প্রভাবশালী পুরুষের (ছদ্মনাম কুমার বাবু) সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি। সমান্তরালে চলতে থাকে অভিরূপের সাথে সিনেম্যাটোগ্রাফার বাসুদেব রায়ের প্রেম। স্থানীয় লোকদের বাধায় একসময় কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে, কলকাতার বাইরে উদয় নামের একজনের বাড়িতে আবার কাজ শুরু হয়। অভিরূপ সেনের বর্তমান জীবনের গল্প আর চপল ভাদুরীর অতীতের গল্প সমান্তরালে চলতে থাকে।
চপল কুমার ভাদুরীর জীবনের উপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালক অভিরূপ সেন ও তাঁর দলের কলকাতায় আগমন ঘটে। একপর্যায়ে কাজ শুরু হয়। চপলকুমার অকপটে জীবনের গল্প বলতে থাকেন। মায়ের মৃত্যু, এক প্রভাবশালী পুরুষের (ছদ্মনাম কুমার বাবু) সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি।
ছবির শুরুর দিককার একটা ফোনালাপের দৃশ্য। একপাশে পরিচালক অভিরূপ সেন; অন্যপাশে চপল ভাদুরী যাকে নিয়ে প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি হবে। আয়নায় দেখা যাচ্ছে অভির মুখ। একহাতে ফোনটা ধরে আছেন, অন্যহাতে কাজল। বেশ গাঢ় চাহনি। দুইচোখে কথার সমান তালে কাজলের রেখা এঁকে চলেছেন তিনি। সদ্যস্নাত হয়তো, তাই মাথায় তোয়ালে জড়ানো অবস্থায়— ‘আমি কি চপল বাবু বলব, না চপল দা বলতে পারি?’
অপর প্রান্তে খানিক মিহি গলায় চপলবাবু/চপলদার জবাব এলো— ‘আপনার যা ইচ্ছে।’ বাম হাতে কালো ফিতার ঘড়ি। ডান হাতের তর্জনী, মধ্যমা আর অনামিকায় তিনটা আংটি। একটায় লাল পাথর বসানো, অন্য দুইটা সোনারঙের। বয়সের ভারে মুখের গড়ন ঝুলে গেছে। মাথার সাদা চুল উজানে তোলা।
এরপর যেদিন প্রথম দৃশ্যধারণ হবে। চপল বাবু হয়তো নিজের মতোন করে সেজে বসেছিলেন। চিরাচরিত মঞ্চসাজের মতোন করে ঘন কাজল, স্নো-পাউডার মেখে প্রস্তুত হয়েছিলেন। অভিরূপ চপলদার মুখ থেকে সেসব মুছে ফেলছেন। এতে খানিক অভিমানী হয়ে ছটফট করছেন চপলবাবু। চোখের কাজল যখন মুছে ফেলা হচ্ছে, বলে বসলেন— ‘নিজে তো বেশ কাজল পরা হয়েছে।’
—‘আমি তো রোজ পরি, তুমি পর?’ কালো ফ্রেমের চশমা চোখে, লাল ওড়না-জড়ানো অভিরূপ সেনের আদুরে জবাব।
অভিরূপ সেন আর চপল ভাদুরীর মাঝে নারী আর পুরুষ (মেয়েলি আর পুরুষালি) এসে একাকার হয়ে গেছে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘অ্যান্ড্রোজিনি’, এক মনে দুই সত্তার বাস। একদম শুরু থেকে নজির খুঁজতে গেলে মহাভারতের চরিত্র শিখণ্ডী, বৃহন্নলা।
পুরুষের প্রচলিত জগতের বাইরের বলে মনে হয় এই দুইজনকে। নারীর যেমন বেঁধে দেওয়া জীবনধারা, কথা বলা, চলাফেরার ধরণ; তেমনি ‘পুরুষালি’ বলে যে শব্দ প্রচলিত সেটাও ছেলেদেরকে একটা গণ্ডিত আটকে রাখে। তাদের পোষাক, সজ্জা, কথা বলা, হাঁটা, বসা, শুয়ে থাকা, দৌড়ানো, দাঁড়িয়ে থাকা সবকিছুর নির্দিষ্ট ধরণ আছে। ‘স্বাভাবিক’ পুরুষেরা এর বাইরে যায় না, যেতে চায় না, বা যেতে পারে না। অভিরূপ সেন আর চপল ভাদুরীর মাঝে নারী আর পুরুষ (মেয়েলি আর পুরুষালি) এসে একাকার হয়ে গেছে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘অ্যান্ড্রোজিনি’, এক মনে দুই সত্তার বাস। একদম শুরু থেকে নজির খুঁজতে গেলে মহাভারতের চরিত্র শিখণ্ডী, বৃহন্নলা। মধ্যযুগের শ্রী চৈতন্যকে নিয়ে প্রচলিত কিংবদন্তীগুলো শুনে, পড়ে মনে হয় তিনি কৃষ্ণপ্রেমে রাধার সাথে একাকার ছিলেন।
জন্মগতভাবে, দৈহিক গঠন বা বিকাশের কারণে যারা পুরুষ-নারী এই দুই মরুকরণের মাঝামাঝি অবস্হান করেন, তাদের বাইরেও আরও অনেকে এই বাংলায় একেবারে আদিকাল থেকেই ছিলেন, আছেন যারা চরিত্রগত বা মানসিক দিক দিয়ে না-পুরুষ, না-নারী। বাংলা যাত্রা, আলকাপের পালা, ঘাটুগান, লেটোর দল এমনকি তুলনামূলক আধুনিক মঞ্চনাটকে বহুকাল ধরে অসংখ্য পুরুষ বা বালক নারীর চরিত্রে অভিনয়, নাচ-গান করে এসেছেন। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ আলকাপ পালাকে কেন্দ্র করে লেখেন ‘মায়ামৃদঙ্গ’। আলকাপ পরবর্তী জীবনে এইসমস্ত নাচিয়ে, গাইয়ে অভিনেতাদের মানসিক যন্ত্রণার কথা তিনি বেশ গাঢ়ভাবেই তুলে ধরেছেন এই উপন্যাসে। আগে আলকাপ ছোকরাদের একজন কালাচাঁদ গুনিন। এখন তার ‘বয়স হয়ে গেছে খুলতে হয়েছে চাঁদির চুড়ি, কাটতে হয়েছে চুল। তবুও আলকাপের ছোকরার স্মৃতি তাড়িয়ে ফেরে, কিন্নরকণ্ঠ ছ্যাঁচর দলের ‘বালক’, বর্তমানে বৃদ্ধ কালাচাঁদ গুনিনকে।… বৃদ্ধাবাসে মনে মনে আজও সে জং না খোলা পা নিয়ে, দীঘল কেশ নিয়ে, শাড়ি ব্লাউজ নিয়ে সাজঘরে।…বয়স হলেও বেরোতে পারে না নারীর মায়া থেকে আলকাপের মায়া থেকে।’
২.
‘আরেকটি প্রেমের গল্পে’ দু’টি পাশাপাশি, সমান্তরাল জগত। বর্তমান জগতটার সব রং স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে। চপল ভাদুরীর অতীত জীবনের গল্প বর্ণিত হয় তাঁর কণ্ঠে। যারা সেই গল্প শুনছেন, তা ধারণ করছেন, সেই অভিরূপ, বাসু, মম গল্প শুনতে শুনতে সেই জগতে ঢুকে পড়েন। সেই গল্পের রঙগুলো মলিন হতে হতে এখন প্রায় সাদাকালো। নারী আর পুরুষের মন মিলে জন্ম নেওয়া, গড়ে ওঠা চপল কুমার ভাদুরী বা অভিরূপ সেনের মতোন দ্বৈতসত্তায় ছবিটি তৈরি, প্রামাণ্যচিত্র আবার কাহিনিচিত্রের যুগলবন্দী। তাই চপলভাদুরী নিজেই আছেন নিজের চরিত্রে। অভিরূপ সেনের চরিত্রে ঋতুপর্ণ ঘোষ। তিনি যেহেতু একজন পরিচিত পরিচালক তাই এই অভিনয়টাও অনেকটা প্রামাণ্য। ঋতুপর্ণ ঘোষের জীবনযাপন, বিশেষ বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখেই যে চরিত্রটার সৃষ্টি হয়েছে, ব্যাপারটা বেশ স্পষ্ট ধরতে পারা যায়। কিন্তু যখন ঋতুপর্ণ ঘোষ যুবক চপল ভাদুরীরূপে হাজির হন, তখন যেমন ছবিটি প্রামাণ্যচিত্র থেকে কাহিনিচিত্রের মায়াজগতে প্রবেশ করে, ঋতুপর্ণ ঘোষও অন্য একজন হয়ে জ্বলে ওঠেন পর্দায়।
এই চপলরাণী চরিত্রে ঋতুপর্ণ ঘোষ অনবদ্য, সাবলীল অভিনয় করেছেন। প্রথম চপল-জগতের দৃশ্যে তাঁকে দেখা যায় যাত্রার জন্যে করা ভারী সাজে। সারা গায়ে গয়না, চুল খোঁপা করে বাঁধা, খোঁপায় সাদা বেলী জড়ানো। সবে পালা ফুরাল। সাজঘরে আয়ণার সামনে বসে আছেন। নাকের নোলক খুলছেন, সামনে খোলা গয়নার বাক্স। ঘরে এসে ঢুকলেন কুমার বাবু।
—‘পালা কেমন দেখলে?’
—মন দিয়ে আর দেখলুম কই?’
এইরকম সব দৃশ্যে চোখ, হাতের ভাষায় ঋতুপর্ণ চপলরাণীকে ফুটিয়ে তুলেছেন পূর্ণমাত্রায়। শেষের দিককার আরেকটা দৃশ্য। কুমার বাবুর বাড়ি। ততদিনে কুমার বাবুর আর প্রেয়সী নেই চপল, তাঁর ঘরে থাকেন, গৃহস্থালির কাজকর্ম করেন। ঋতুপর্ণ তাই এখানে মলিন বেশে, বুকে গামছা জড়ানো। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে রবি ঠাকুরের ‘প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে, মোরে আরও আরও আরও দাও প্রাণ।’ কুমার বাবুর অসুস্থ স্ত্রীকে জীবনসুধা দানের জন্য নাচানোর চেষ্টা করছেন চপল। সারা ছবিতে বোধকরি এই দৃশ্য সবচাইতে নজরকাড়া। একজন বিস্মৃত যাত্রাশিল্পী, প্রেমিকের অবহেলা সহ্য করে যাওয়া চপলের চরিত্রে ঋতুপর্ণ এই দৃশ্যে এসে এতটাই সার্থক যে মনে হয় পুনর্জন্ম বলে কিছু একটা বোধহয় আছে। অন্য কোনো দেহে সম্ভব না হোক, নিশ্চয়ই অন্য কোনো মনে মানুষের আবার জন্ম হয়।
বাংলার অসংখ্য যাত্রাশিল্পী, মঞ্চে যারা রাধার বেশে, লাইলীর বেশে হেসেছেন, কেঁদেছেন; মনসা, শীতলার বেশে ভজনা, অর্চনা চেয়েছেন তাঁদের সাহস ছিল, শিল্প ছিল, মন-মেধা সবই ছিল। তবু পুরুষের বাঙালি সমাজ তাঁদের ‘নারীসুলভ’ বলে বিদ্রুপ, অবজ্ঞা করেছে; সময়ে ব্যবহার করেছে, অসময়ে অপমান করেছে।
বাংলার অসংখ্য যাত্রাশিল্পী, মঞ্চে যারা রাধার বেশে, লাইলীর বেশে হেসেছেন, কেঁদেছেন; মনসা, শীতলার বেশে ভজনা, অর্চনা চেয়েছেন তাঁদের সাহস ছিল, শিল্প ছিল, মন-মেধা সবই ছিল। তবু পুরুষের বাঙালি সমাজ তাঁদের ‘নারীসুলভ’ বলে বিদ্রুপ, অবজ্ঞা করেছে; সময়ে ব্যবহার করেছে, অসময়ে অপমান করেছে। তাঁদের মধ্যে এসে যে নারী আর পুরুষ মিলেছে, এই ব্যাপারটাকে ‘অস্বাভাবিক’ আর ‘অসম্মানের’ মনে না করলে, চিরাচরিত ‘নারীসুলভ’ আর ‘পুরুষসুলভ’ এই দু’য়ের আকাশমান মানবসৃষ্ট বৈষম্য, ব্যবধান হয়তো কমে আসত; ‘পুরুষালি পুরুষ’ আর ‘মেয়েলি মেয়ে’ ছাড়া অন্যরা যারা বাস করেন তাঁদের গুরুত্ব খানিক হলেও বোঝা যেত।
কিন্তু হয়নি। নারীর মধ্যে পুরুষ আর পুরুষের মধ্যে নারীর অস্তিত্ব কেউ চায় না বলেই, কোনো রাধার ব্যথাই কোনো কৃষ্ণ বোঝে না। রাধাকৃষ্ণ দুইজনকেই একত্রে মননে ধারণ করেছিলেন শ্রী চৈতন্য। অর্জুন বৃহন্নলার বেশে নারীত্বকে ছুঁয়েছিলেন। বৃটেনের রানি প্রথম এলিজাবেথ মনে করতেন তার মাঝে এক পুরুষ বাস করে। আর আমাদের ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর নিজের পুরুষ দেহের মাঝে এক নারীকে খুঁজে পেয়েছিলেন। খুঁজে পেয়ে ভীরুর মতোন তা লুকিয়ে রাখেননি, বরং সাহসের সাথে তুলে ধরেছেন। নারীত্বকে চিনেছিলেন বলেই একের পর এক ছবিতে নারীর মন, বেদনা, জ্বালা তুলে ধরতে পেরেছিলেন সফলতার সাথে। তাই মধ্যযুগের চৈতন্যদেব, ইউরোপীয় রেনেসাঁর রানি এলিজাবেথ, পঞ্চাশে-ষাটের দশকের যাত্রাপালার চপল ভাদুরির আধুনিক অবতার তিনি। এইজনমে তিনি কৃষ্ণের দেহ নিয়ে এসেছিলেন, অনুভব আর মানসিকতায় ছিলেন রাধার মতোন।
‘আরেকটি প্রেমের গল্পের’ একটি দৃশ্যে অভিরূপ সেন তার মাথা মুড়িয়ে ফেলেন। চুল ফেলে দেয়ার সেই দৃশ্যে ঋতুপর্ণ রাধার বেদনা তুলে ধরতে পেরেছেন প্রায় ষোলআনা। ধীরে গলার মালাটা, চশমাটা খুলে রাখলেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে তখন ‘বুঝিবে তখন রাধার বেদন’ বাজছে আর তাঁর চোখ মুখ থেকে জমাট বেদনা গলে বের হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সাদা একটা কাপড়ে তাঁর গলা পর্যন্ত জড়ানো হলো। পিছনের জমিন ধবধবে সাদা। তিনি নির্বাক চেয়ে আছেন খানিকটা সামনে, খানিকটা নিচের জমিনে। সজল সেই চাহনি।
‘আঁখিজলে দীপ-আলা নিভে গেল, ওরে কালা।
রাত রাত পথ চাহি, সারারাত পথ চাহি অবিরত কাঁদা
বনমালী তুমি পরজনমে হইও রাধা।’
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদিরের জন্ম সিরাজগঞ্জে, ১৯৯০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করে এখন শিক্ষকতা করছেন ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতায় ছোটগল্প ও কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ২০১০ সালে । এখন পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতার বই দুইটা, অন্য গাঙের গান, সমুদ্রসমান (২০১৬) ও যুদ্ধ যুদ্ধ রুদ্ধ দিন (২০২০)। প্রথম গল্প সংকলন বছরের দীর্ঘতম রাত প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।