শুক্রবার, নভেম্বর ২২

রিকশা সিরিজ : রোমেল রহমান

0

এ যেন প্রীতির মেঘ ছেঁড়া ছেঁড়া বিরহের মতো
ক্রমে এসে জমা হল আমাদের আকাশ আলাপে
দুজনার চোখে চোখ ছিল ঘোর তন্দ্রায় রত
কখন যে ফোঁটা ফোঁটা ঝিরিঝিরি নামল প্রলাপে!
কথা ছিল কিছুদূর গিয়ে ফেরা হবে শুধু আজ
জানতো কে কাছে এলে ফিরে যেতে চায় না হৃদয়
প্রতিবার ভালোবেসে এই ভুল করে বাকোয়াজ
অভিসারে এলে বুঝি প্রতিবার এরকম হয়?

রিকশায় হুড দিলে পঙ্খিরাজ পাখনা মেলে
উড়ে যায় আমাদের নিয়ে মেঘ শহরের বুকে
দূর থেকে আরো দূরে চেনাপথ ঠিকানাও ফেলে
এই জাদুবৃষ্টিতে সুখ যার হারানোর দুখে?

শহরে শ্রাবণ এলে প্রেমিক প্রেমিকা খুশি হয়
প্যাডেলে প্যাডেলে চলে কামনার সমুখ বিজয়।

 

২.
দুইটি হৃদয় শুধু চৌম্বক টান অনুভবে
বিলি কেটে সিঁড়ি খোঁজে পৌঁছাবার প্রথম গোলাপ
অধরের কাছে এলে কাঁপে ঠোঁট নিজেই নীরবে
ফুটপাতে দোকানিরা ফেলে দেয় আচানক ঝাঁপ।
কেতলির শুঁড় দিয়ে ধোঁয়া ওঠে মেঘের আকাশে
আমিও নিকট হই মেঘ ছুঁয়ে বজ্র তরাস
টাল খেয়ে চাকা যেন মাতালের মতো ধীরে ভাসে
এতো কাছে সরোবর পেয়ে গেল যেন দুটি হাঁস!

যে কপাট তালা ছিল আজ তাতে বোধনের শাঁখ
এই জল বাতাসের মন্দ্রতায় জাগাল সহসা
জলের সুরভী ভরা কাছাকাছি আসবার ডাক
চুরমার করে দিলো লহমায় নামল বরষা।
কাকাভেজা হয়ে কাক উরে যায় আকাশে ভীষণ
ক্রিং ক্রিং বেল দেয় চালকের আচানক মন।

 

৩.
প্রবল বেদনা আজ বুক ভারী করেছে ভীষণ
জোয়ারের তোলপাড় দুইবুকে ছলাৎ ছলাৎ
চরাচর ভেঙে নেবে টেনে নেবে খনিজের ধন
বিরহের বেহালায় ঝড় যেন ওষ্ঠ আঘাত।
স্মৃতিকাব্য নয় তো আজ শুধু আমরা দুজন
খুব কাছাকাছি মিশে মেখে আছি ননীর মতন
পারাবত নেমে আসে উড়ে যায় অলীক পতন
তার খোঁজ নিতে রাজি নেই আজ আমাদের মন।

এ বিলাস নয় জানি অধিবাস জলের শপথ
করুণ কানাই এসে নত যেন রাধার দুয়ারে
অভিমানী মুখ তুলে চাও তুমি উড়াবো যে রথ
মেঘের আড়াল চিরে নিয়ে যাবো বজ্র অভিসারে।

নগরে জমেছে জল আসমান ভরা শুধু ঘোর
সব আছে তবু যেন রাধাশূন্য আমার শহর।

 

৪.
মুখোমুখি অনুভব তবু দূরে কার ভেজা চুলে
ফুটেছে কেয়ার ঘ্রাণ যেই তাপ প্রবাহিত হয়ে
জানায় কপাট খোলো কুলুপ দিয়েছ কেন ভুলে
আজ বাহু বাহু ছুঁয়ে নদী হয়ে যাবে শুধু বয়ে।
তোমার কানেট ছুঁয়ে নেমে আসা চুলের মতন
বিরহের জলছাঁট আদ্রতায় এলোমেলো করে
মুঠোর ভেতর আছো তবু যেন হারানো রতন
নিখোঁজের হাহাকার বিদ্যুতের তার গলে ঝরে।

তোমার দেহের থেকে উড়ে আসা সুরভীর ওম
এতোটা ধারালো হয়ে ছিঁড়ে খায় আমার এ মন
আচানক মেঘে মেঘে বেজে ওঠে যেন ঝমঝম
পলিথিন পর্দায় হবে না সে আড়াল দহন।
রিকশায় আঁকা আছে নায়ক নায়িকা সিনেমার
সেই সব দৃশ্যে আজ অভিনয় তোমার আমার।

 

৫.
গাঙুরের জল ধরে কে গিয়েছে বেদনায় ভেসে
দেবতার ঠিকানায় গিয়ে তার সিথির সিঁদুর
ফেরাবে অটল পণ চোখেমুখে বিষাদ আবেশে
এমন বিরহ নীলে পোষ মানে দেবতা অসুর।
আমরাও ভেসে যাই পিচ ঢালা রাস্তার বুকে
রিক্সায় হুড দিয়ে ধীরে বেয়ে যেন কালো জলে
আমার বাহুতে তুমি রাখ গাল আচানক সুখে
নীল হয়ে যায় মেঘ ঈর্ষার মনসা ছোবলে।

সজল শহরে আজ আমাদের ভেসে ভেসে চলা
মায়াবতী লাগে যেন চারিদিক ঈষৎ প্রাচীন
দালান দেয়ালে ঘেরা শহরের অলিগলি তলা
অভিসার বুকে নিয়ে কাচ এঁটে হয়েছে রঙিন।
ঝুপ ঝুপ বৃষ্টিতে ভিজে যায় অলিন্দ গ্রিল
আমাকে ছুঁয়ো না তুমি ছুঁলে আমি হয়ে যাব নীল।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবি ও নাট্যকার। প্রকাশিত কবিতার বই : বিনিদ্র ক্যারাভান (২০১৫, অনন্যা)। বাংলাদেশের খুলনায় থাকেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।