রিসাইকেল
ধরো কোনো জাদুবলে বিপরীত ক্রমে
শুরু হলো আমাদের নয়া আয়ুকাল
লাভাপুঞ্জ ঢুকে যাচ্ছে অগ্নিগিরিমুখে
সূর্যাস্তের পর নেমে এসেছে সকাল
হাঁড়িতে ফোটানো সাদা ধবধবে ভাত
দুধনিভ চাল হয়ে ধানের শরীরে
পৃথিবী-জরায়ু, খসে-পড়া চাঁদ
পুনরায় মাতৃগর্ভে আসতেছে ফিরে
তোমারও কিশোরীকাল জাগছে আবার
বয়সের বলিরেখা মুছে গিয়ে ক্রমে
দেখছ নতুন করে গলির মাথায়
সে আমি দাঁড়িয়ে একা কাঁপছি শরমে।
এভাবে একটি আয়ু কাটিয়ে কি শেষে
বলবে তেমনই, চলো মরি ভালোবেসে?
টাইমমেশিন
আমরা দুজন দুইটি শতাব্দীতে
আটকা পড়েছি, অনেক দিনের চেনা
শিকড়ে শিকড়ে পরিচয় ঘটে, তবু
দুইটি গাছের দূরত্ব কমছে না!
আমরা দুজন দুইটি দ্বৈধ রেখা
একটি গ্রাফের কোনাকুনি বরাবর
স্থানাঙ্ক মিলে, সময়ের ফেরে তবু
আমাদের দেখা হবে না পরস্পর।
একে অপরকে ভেদ করে যাব জানি
ছেদবিন্দুর দিকে অনিমিখ চোখে
চেয়ে রবো শুধু, দেখব কেমন করে
একটি বিশ্ব মাল্টিভার্সে ঢোকে।
ঘুরে আসি যদি আলোকবর্ষ পথ
যেখানে সময় স্থানভেদে আগুপিছু
এ পরিভ্রমণ শেষে কি পাব না তবু
পুরোটা না হোক, অন্তত তব কিছু।
ধরো তুমি এক কিশোরিবেলার দিকে
ঝুঁকছ ক্রমশ বিকেল বেলার মতো
আমি এক বুড়ো অশীতিপরের চেয়ে
ভীমরতি দেহে ত্রিকোণোমিতির ক্ষত।
তবু হলো দেখা এই বুঝি কম কিছু
মুছে যায় যদি, আয়ুরেখা অপঘাতে
সময় বাঁকিয়ে দেখে নিব এতটুকু
আমরা দুজন একটি অপেক্ষাতে।
একেশ্বরী
তোমারই নামের গুণে রোশনাই সব
পাহাড় সুরমা হয় তমোহর তাপে
তব জ্যোতি মেখে মহাজাগতিক ধূলি
আসমানে বিন্দু বিন্দু তারা হয়ে কাঁপে।
কাফেরেরও মনে যেন গুটিসুটি মেরে
বসে থাকো, চুপচাপ এমন দরদী!
পাথরের বুকে তুমি জমে থাকা জল
অভিমান গাঢ় হলে ফেটে হও নদী।
আমার ইলাহ তুমি, বহু দেবতার
অবতারে দেখি শুধু তুমিই আসীন
যেখানেই থাকো আর যত দূরে যাও,
স্বীকার করতে দিয়ো, প্লিজ এই ঋণ
তব দেহে এ দীনের জীবন সওয়ার
তোমা হতে সৃষ্টি, হব তোমাতে বিলীন।
মেরিলীন
যেন সে জানে না কিছু, প্রথম মানবী
এখনো ঘোচেনি যার কুমারিত্ব দোষ
আচমকা চোখে দেখে বেগানা নাগর
হাসিমুখ, তবু ভাব, কিছুটা নাখোশ।
সেই সে ছিনাল হাসি, বাঁকা দুই চোখ
ইনোসেন্ট মুখে লেগে থাকা মধুবিষে
একই লজ্জা ব্রীড়া দেখি, একই সে শরম
নাটোর, লাদাখ, ম্যানহাটন, প্যারিসে।
ঝড় তো কতই আসে, দমকা বাতাস
আঁচল উড়ায় সাথে মন আমাদেরও
উড়াতে অমন করে সাদা মিনিস্কার্ট
তোমার মতো কি কেউ পেরেছে মনেরো!
আব্বা
কতো কিছু বয়ে আনে আমাদের নদী
অজানা উজান থেকে হিমবাহ স্মৃতি
বয়ে আনে পলি, আর, স্রোতের স্বভাবে
ভূগোলকে ভেঙে, গড়ে নিজ পরিমিতি।
যেমন সে একদিন, এনেছিল এক
মৃত গাছ, কাষ্ঠপ্রায়, শাখাপত্রহীন
তারে ধরে এনে, ঘর বানানোর পর
ভাবলেন বাবা, এলো এই তো সুদিন।
সেই ঘরে হাওয়া আসে, রোদের ভিতর
গুটিসুটি মারে ছায়া, কতো কী যে ঘটে
আশ্চর্যজনক যা, তা বলে নেওয়া ভালো
একদিন মরা গাছ কথা বলে ওঠে।
মানে, মৃত ভাবতাম যাকে এতোদিন
বোধয় এতোটা মৃত নয় সে আসলে
আরও যা যা জানা গেলো অতি ভয়ানক
ধরা পড়ে অতঃপর বাবা হেসে বলে—
‘দেখছো যা, তা তো নয় অতটা সরল
আমার জীবনশক্তি শুষে নিয়ে নিয়ে
সতেজ হচ্ছে সে গাছ। ফিরে পাবে প্রাণ
আমারই দেহের স্বেদ লবণ ছিনিয়ে।’
আসলো সেদিন, শেষে। দাফনের পর,
হুজুর পড়লো দোয়া সূরা ইখলাস।
বাড়ি ফিরে কয় ভাই খুঁজি ঘর কই!
ঘর নাই, পড়ে আছে এক শালগাছ।
জন্ম ১৯৮৩, বিষ্ণুপুর শেরপুর। প্রকাশিত বই : ‘প্রায় প্রেম’, কবিতা, ২০২০; ‘মিলনদহ’, কবিতা, ২০২১, ‘হাওয়া’র এ ঘরখানি’, ঐতিহ্য, ২০২২।