তাঁতিবাজারের কাছের এই বাড়িটা এখন পরিত্যক্ত। যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে। বাড়িটার মাংস নাই, কেবল হাড্ডি দেখা যায়। তবুও দুয়েক জায়গায় পুরনো জৌলুসের ছাপ লুকানো আছে। যেমন ধরা যাক ভাঙা রেলিংয়ের কারুকাজ। সেটুকুই জানিয়ে দেয় এ বাড়ি সাধারণ কিছু ছিল না। কে জানে কার বহু সাধ আর সামর্থের সমন্বয়ে একদা বানানো হয়েছিল এই জমিদারি মেজাজের বাড়ি। বাড়ির রং আর পলেস্তরার মতোই বিলুপ্ত জমিদারি মেজাজ। এখন এখানে কেবল সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই নেশাখোরদের মজমা বসে যায়।
নেশাক্রান্তদের নিয়ে আবরার, সামিতরা কাজ করছে আজ তিন চার বছর। তাদের এনজিও’র নাম ‘লেটস হোপ’। লেটস হোপের পক্ষ থেকে আবরার আর সামিত এসেছে এখানে। বাবুবাজার, শাখারিপট্টির একদল তরুণ এখানে নেশা করে। আজ অবশ্য মাত্র চারজন উপস্থিত। এরমধ্যে বাবুল ইতোমধ্যেই অচেতন হয়ে পড়ে আছে। রঞ্জিত কেবল মুচকি হাসছে, থেকে থেকে শূন্যে রং-তুলি বুলাচ্ছে। হাসান ক্রমাগত বকবক করে যাচ্ছে, তার কথা নেশার মতোই ঘোরালো আর ঝাপসা, স্পষ্টতই তাকে নেশায় ধরেছে। একমাত্র স্বাভাবিক আছে আলী।
পোয়াতি মাইয়া মানুষের মতো গা ম্যাজম্যাজ করে। ঈমানে কই, তখন মনে হয়, শালার এই সব নেশার গুষ্টি কিলাই। কিন্তু নেশা ভি আবার সইন্ধ্যা হইলেই ছিনালের রসিলা ঠোঁট হয়া ডাক পারে। তখন ছুইট্টা আসি এইখানে। আবার হগলে একত্র অই। যতোক্ষণ হুশ থাকে, ততক্ষণ চালায়া যাই।
আলী বলে, হঁ মিয়া, একেকদিন ভোরবেলা ঘুম ভাঙে ফটাশ কইরা। সারারাইতের শিশিরের মতো ঘুম জইমা থাকে চোক্ষে-মুক্ষে। চোক্ষের মধ্যে, মাথার পিছনে লক্ষ ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকে। পোয়াতি মাইয়া মানুষের মতো গা ম্যাজম্যাজ করে। ঈমানে কই, তখন মনে হয়, শালার এই সব নেশার গুষ্টি কিলাই। কিন্তু নেশা ভি আবার সইন্ধ্যা হইলেই ছিনালের রসিলা ঠোঁট হয়া ডাক পারে। তখন ছুইট্টা আসি এইখানে। আবার হগলে একত্র অই। যতোক্ষণ হুশ থাকে, ততক্ষণ চালায়া যাই। শালার নেশা জিনিসটাই এমুন।
আলী ভাই, আমি যতদূর জানি, আপনি তো একবার রিহাবেও গেছেন? আপনার চিকিৎসাও হয়েছিল।
আবরারের কথায় আলী নয়, হাসান ক্ষেপে ওঠে। আলী কিছু বলার আগেই সে চেঁচিয়ে ওঠে।
আরে থোও তুমাগোর রিহাব টিহাব, এইগুলা সব বিজিনেস সেন্টার। একদল নেশা বেইচা পয়সা কামায়, আরেক দল নেশা ছাড়ানির নামে পয়সা কামায়। সবই হইল টেকাপয়সার খেলা। দুনিয়ায় টেকাপয়সা হইল সেরা নেশার খেলা।
সামিত এই সুযোগে পাল্টা যুক্তি ছাড়ে, এতোই যদি বোঝেন, তাহলে এই মারণ খেলায় নামলেন কেন?
হোনো, একখান জিনিস মনে রাখবা মিয়া, নেশা কিন্তুক কারো সাথেই বেঈমানি করে না। তেমন মাল পেটে পড়লে আহারে রঙের দুনিয়া। এহেবারে পয়সা উসুল। মনে করো, আলী’র কথা কই, ওই যে কইলা না, রিহাব ছেন্টারে গেছিল, ভালাও অইয়া গেছিল, কিন্তুক, সেইখানেই এক ছেমড়ি কাম করত, আলী মিয়া পড়ল তার পেরমে। মাগার, পেরমে পড়লে অইবো কি! ছেমড়ি তো ওরে পাত্তা দেয় না! নেশাখোররে পাত্তা দিব কেডা? আর আলী মিয়া গেল আবার বিগড়ায়া।
মুচকি হাসি দিয়ে রঞ্জিত মৃদু স্বরে বলল, মাইয়া মানুষ খতরনাক চিজ হ্যায়!
রঞ্জিত হয়তো আরও কিছু বলত, কিন্তু রঞ্জিতের মুখ থেকে কথা কেড়ে নেয় হাসান।
হ, বহুত টেকা খরচা কইরা মাইয়া পটাইলা, কিন্তু আখেরে দেখবা একখান চুম্মা খাইতে গেলেও কতো নকশা করব। আবার মনে করো, ছেমড়ি তোমার চৌদ্দগুষ্টির কপাল বদৌলতে চুমা খাইতে দিলোও, তখন দেখবা কি একেবারে ভূয়া, কুন টেস্ট নাই, শালা সব ধোকাবাজি, দুই নম্বর মাল! মাস্ত চিজ হইল, এই নেশা। যেই হালায় যেই কথাই কউক, নেশার মতো জিনিসই হয় না। সে তুমি পুরিয়াই টানো, সুঁই লাগাও, কি গলাই ভেজাও। আমরা অবশ্য সব নৌবাহিনীর লোক, মানে কি না পানি পথেই যাত্রা করি, তবে শালা মাঝে মধ্যে যে এয়াফোর্সে ঘাটি গাড়ি না তা নয়। না কি রে আলী?
হ, তয়, ধূয়ার পথডা হইল মনে করো, এহেবারে সাম্যবাদের পথ। ‘গাহি সাম্যের গান, গাঞ্জার চেয়ে বড়ো কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান’…। ধরো, তুমি ফকিন্নি হইলেও ভি এই জিনিস জোগাড় করবার পারবা, বিশ টেকায় একখান পোটলা কিনো, দুইখান দুইটেকার সিগরেট, পায়জামা খোলো, মাল আউট করো, আবার মিকচার করো, এইবার পুরিয়া ভরো, ব্যস এইবার তুমি রাজা। দুইটানেই আইটেম সং। আবার ধরো যে পকেটে তোমার পয়সার গরম আছে, ঠেকঠুক দেওয়ার ভি অইভ্যাস আছে, তাইলে হিরুইন খাও, খোদা কি কসম, দুইটানেই ফরেন ক্যাবারে ডেন্স। আবার মনে করো যে, তুমি ভদ্দরনুকের বাচ্চা, ইংরেজি স্কুলে পড়ছ, বাপের এনাফ হারাম পইসা আছে, তাইলে চইলা যাও গুলশানে ফুটানির হোটেলে শিসা টানতে। মোদ্দাকথা, ধূয়া যার যেমন খুশি সামর্থ মতো জোগাড় কইরা টানতে পারবা।
একটানা কথা বলে আলী হাপিয়ে ওঠে। সে গ্লাস তুলে নেয়। বড়ো এক পেগ ভদকা র ঢেলে দেয় গলায়। মুখটাকে বিকৃত করে। বোঝা যায়, তার পরিপাক তন্ত্র বেয়ে বস্তুটি জানান দিয়ে যাচ্ছে। সে ঝিম মেরে যায়। আবরার সামিত মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। সামিত চোখের ইশারায় আবরারকে উঠতে বলে। আলীকে দম ফেলার সুযোগ দিয়ে হাসান আবার বকবক শুরু করে। তার কথার স্রোত আলী’র কথার তালে তাল মিলিয়ে চলে।
খোদার কসম ওইসব কাশের ওষুধ খাইলে সারাদিন কুইচ্চা মুরগির মতো ঝিম পারা লাগে। একেক সময় মনে হয়, দেই শালার ডিম পাইরা। আহা, ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় নেশাখোরেরা ডিম পাইরা রাখলে কেমন হইতো! মনে করো, ডাইলখোরেরা লুঙ্গি উঠাইয়া কক কইরা ডিম পারত ফার্মগেট, চাংখারপুল কি কাটাবনে। আমার তো মেলা খায়েশ অয় মতিঝিলের শাপলার উপরে ডিম পারি, হাইকোর্টের সামনের কদম ফোয়ারা আর দোয়েল চত্বরের জোড়া দোয়েলের উপরে ভি ডিম পারি।
তয় আমরা কইলাম, ডাক্তারি লাইনে কম-উম যাই। মেডিকেল লাইন বড়ো হারামি চিজ। আমার তো সুঁইমুই ঢুকাইতেই ডর করে। অসুখ হইলেই সুঁই ঢুকাইতে চাই না, আর তো নেশার লাইগা! ইম্পসিবল, কাভি নেহি! আর খোদার কসম ওইসব কাশের ওষুধ খাইলে সারাদিন কুইচ্চা মুরগির মতো ঝিম পারা লাগে। একেক সময় মনে হয়, দেই শালার ডিম পাইরা। আহা, ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় নেশাখোরেরা ডিম পাইরা রাখলে কেমন হইতো! মনে করো, ডাইলখোরেরা লুঙ্গি উঠাইয়া কক কইরা ডিম পারত ফার্মগেট, চাংখারপুল কি কাটাবনে। আমার তো মেলা খায়েশ অয় মতিঝিলের শাপলার উপরে ডিম পারি, হাইকোর্টের সামনের কদম ফোয়ারা আর দোয়েল চত্বরের জোড়া দোয়েলের উপরে ভি ডিম পারি। কী মজাই না অইতো, সব শালা পাবলিক তামশা দেখতে পারত তাইলে। এই দেশের মানুষ তামশা দেখতে বহুত পছন্দ করে। মনে করো, মাঝ রাস্তায় তুমি ছেপ ফালাইয়া চায়া থাকো, দেখবা শালার পাবলিক আইসা জিজ্ঞাইবো, ‘কী অইছে ভাই।’ আবে হালা, তোর নানীর বাচ্চা অইছে, হালার পাবলিক, কাম নাই তোগো। যা না, বউরে লইয়া এট্টু সিনেমা দেখলেও তো একটা কামের কাম অয়। তা না, খালি অন্যের ব্যাপারে নাক হান্দাইবো। জনগন হইল গিয়া…
রঞ্জিত আকস্মিক বিকট হাসিতে ফেটে পড়ে। জনগণ সম্পর্কে হাসানের মূল্যবান মতামটি আর জানা হয় না। সামিত আবরারকে বলে, চলো ওঠা যাক। সামিতের কথা লুফে নেয় হাসান।
আরে কী যাইবা, বসো। তুমরা ভদ্দরনুকের পুলাপান, আসছো, বসো। নাকি আমার লেকচারে মাথা ধরছে! বুঝছো, একসময় স্বপ্ন দেখতাম বেশ্যবিদ্যালয়ের মাস্টার অমু। সেই থাইকা লেকচারের অভ্যস অইয়া গেছে গা। কিছু মনে কইরো না, ব্রাদার। খাড়াও আরেকটু খায়া লই। আহা, কী সুখ, খাইবি যুদি মদ খা, মদের বাপ ভদকা!
আপনি এভাবে র খাচ্ছেন, এটা ঠিক না।
আরে থোও মিয়া, আমারে নেশা শিখাইও না। কুথায় কেমনে কী নেশা লইতে অইবো এই বিষয়ে আমার পিএইডি আছে। কি কছরে আলী?
হ, তবে হোনো, সব সময় সব জায়গায় কিন্তু নেশা কইরা আরাম পাইবা না। শালা পুরানা জমিদার শুয়োরের বাচ্চাগোর কোনো ভাঙা বাড়ি যদি পাইলা আহা দাঁত কামড়াইয়া ভয়ডর সামাল দিয়া কোনোরকমে একখান পেথিড্রিন একবার লইতে পারলেই হইল। তারপর পাছা উপুত কইরা শুইয়া থাকো, দেখবা, কেমুন জলসা জলসা ভাব চইলা আসবো।
আবার মনে করো চাঁদনি রাইতে যুদি বন জঙ্গলে যাওন যায় খোদা কি কসম, মদের উপরে তখন আর কিছুই নাই। এক্কেবারে হেড়ে গলায় গাও, আইজ জোসনা রাইতে সবাই গেছে গা বনে। আর যুদি গাঞ্জা খাও, তবে বাবার আখড়ায় যাও। মুর্শিদের গান ছাড়া কি গাঞ্জার ইজ্জত থাকে। শালার যেই জিনিসের যেই নিয়ম। তবে আবারও কই আমরা কইলাম ডাইল উইল খাই না। খাইলেও বেশি খাই না। ভদ্দরনুকের সন্তান বইলা কথা। রাস্তার উপর ডিম পারলে তো বাপ-মা’র প্রেস্টিজ ফুটা অইয়া যাইব। বুঝো না কেলা, কতো কষ্ট কইরা তিনারা আমাগোরে পয়দা করছেন। যদিও পয়দা কইরা কোনো ফায়দা অয় নাই। লিকিন, কিন্তু, আফটার অল, আমরা তাগোর বিবাহিত সন্তান।
তুই কিন্তুক বেশি প্যাচাল পারতাছিস, আলী খেকিয়ে ওঠে, কানের ভিতরে তোর প্যাচালের ঠেলায় ভোমরা নাচতাছে। অফ যা এট্টু।
থাক, আলী ভাই, হাসান ভাই বলুক, আমরা তো শুনতেই এসেছি, আমরা চাই আপনাদের কথা মন দিয়ে শুনতে। বলেই সামিত খেয়াল করে তার মোবাইলে কথাগুলো ঠিক মতো রেকর্ড হচ্ছে কি না।
আলী উদার স্বরে বলে, তুমরা মাইন্ড না করলে আমার তো আর কিছু বলার নাই। তয় আমি কই কি, তোমরা মহল্লার ছোটোভাই অইলেও ফ্রেন্ডের লাহানই। আইছো যখন এট্টু খাও। আরে আসরের ভি একটা নিয়ম আছে, আসরে বসলে খাইতে অয়। দেই একটু বানায়া?
না, না, আমার লিভারে সমস্যা আছে, আমি চাইলেও খেতে পারব না।
আর আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি, এ সব আমি খাব না, এই শর্তেই তো আপনাদের সঙ্গে আসরে বসেছি, তাই না সামিত?
ঠিক আছে, কুনো জোড়াজুড়ি নাইকা, আপোসে খাইতে চাইলে খাইবা যত ইচ্ছা, নাইলে নাইকা। আমরা ভদ্দরনুকের পোলা ঝালেমা পছন্দ করি না, তয়, এট্টু মাল না মারলে মগজটা খোলে না। আরে ধরো মাল খাইলে কার না পূর্তি হয়, থুক্কু ফূর্তি হয়। বুঝলা সামিত, আমার কাছে কিন্তু এই বোতলটাই সেরা। এরমধ্যে আবার সেরা হইতাছে রাশিয়ান ভদকা। কমুনিস্ট ঐতিহ্য বইলা কথা। মনে করো, আমাগোর বাড়ির পুষিরে খাওয়াই দিলেও দেখবা একেবারে রয়েল বেঙ্গল টাইগার হয়া গেছে গা। খাইবা না এট্টু ব্রাদার? লবণ মরিচ দিয়া দুইপেগ বানায়ে দেই ভাইয়া। না, না, না খাইলে নাই। জোরাজুরির কিছুই নাই। আফটার অল তোমরা সমাজ সেবক হইছো। চোখের সামনে হাত পায়ে বড়ো অইয়া গেলা। শালা, দিন কুনদিক দিয়া হান্দায় আর কুনদিক দিয়া বাইর হয়! আনিস সাহেবের পিচকি মাইয়াডারও নাকি সাদী অইয়া গেছে! তা বেশ, এইবার পরিবার পরিকল্পনা শুরু করলেই অয়। দেশের মূল সমস্যাই হইল গিয়া জনসংখ্যা। জনসংখ্যারে মনে করো জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে অইবো, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনগণকে আন্তর্জাতিক মানের বানাইতে অইবো।
এইটা ঠিক বলছিস আলী, জনগণ অইলো গিয়া মূল কথা, মানে কি না বেবাক ক্ষমতার উৎস। জনগণরে ঠিক মতো চালাইতে পারলেই দেশটা নতুন ইয়ামাহা হুন্ডার লাহান চলব।
এইটা ঠিক বলছিস আলী, জনগণ অইলো গিয়া মূল কথা, মানে কি না বেবাক ক্ষমতার উৎস। জনগণরে ঠিক মতো চালাইতে পারলেই দেশটা নতুন ইয়ামাহা হুন্ডার লাহান চলব।
তা তো ঠিক বলেছেন, হাসান ভাই, কিন্তু আপনারা এই পুরান ঢাকার খান্দানি বংশের ছেলে, আপনারা যদি এই সব ছাইপাশ খেয়ে…
এই খবরদার, একদম খবরদার আবরার! আমাগোর পেয়ারের ভদকারে ছাইপাশ বলবা না, ইজ্জতে লাগে। নাকি কস আলী?
হ, ঠিকই কইছোস।
স্যরি হাসান ভাই।
স্যরি আলী ভাই।
আবরার আর সামিত দুজনেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘স্যরি’ নামক ইংরেজি শব্দটিকে যথাবিহিত কাজে লাগায়। বাবুলের ঝিম বোধহয় কেটে গেছে। হাসানের ‘খবরদার’ চিৎকারে সে চোখ মেলে তাকায়। কিছু বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকায়।
কী অইছে বে, চিক্কুর দিল কেঠা, আবে এরা কারা?
বাবুলের গ্লাসে আরেকটু ভদকা ঢেলে দিতে দিতে আলী বলে, বাবুল সোনা, তুই ঘুমা, স্বপ্ন দ্যাখ, ঘুমায়া ঘুমায় স্বপ্ন দেখায় কুন ঝামেলা নাই। বাবুলও কলে দম দেয়া পুতুলের মতো তিনঢোকে গ্লাসটা খালি করে আবার অবচেতনে চলে যায়।
হাসান আবার বকবক শুরু করে, তা কী যেন বললা তোমাদের ইয়ের নাম? লেটস হোপ? এইটার মানে কি?
বাংলায় বলা যায়, তবুও আশা।
এবার রঞ্জিত মুচকি হেসে ফোড়ন কাটে, আশা! আশায় মরে চাষা!
কিন্তু হাসান কাউকেই কথা বলার সুযোগ দেয় না। সে বলেই চলে, আইচ্ছা, তুমাগোর এই এনজিও তো ফরেন খরচে চালাও, না? আইচ্ছা ইংরাজি নাম রাখলে হেভি সুবিধা তাই না? দুনিয়াই তো অহন ইংরেজ অইয়া গেছে। ব্রিটিশ শালার পুতেগোর হেইদিন নাই, তারা এখন পুরানো ইংরেজ। আর মনে করো যে, মার্কিন শালারা অইলো নয়া ইংরেজ। একবারে আধুনিক। ব্রিটিশ সূর্য অস্ত গেছে গা, এখন মার্কিন সূর্যের তেজে বেবাকতে পুড়বো। আইচ্ছা, সত্যি কইরা কওতো লাদেন ভাই কি মইরা গেছে?
জ্বি, এটা তো সবাই জানে।
আরে থোও, চাপাবাজিও তো হইতে পারে। হিটলার মরছে কি মরে নাই সেইটারই তো এখন তরি কোনো মীমাংসা হয় নাই। তাই না? মনে করো, এর আগেও তো বুশ মিয়া কইছিল, লাদেন ঠুশ। রাশিয়া শেষ, লাদেন শেষ, এরবাদে কী নিয়া খেলব ওবামা মামা! দুনিয়াটার বেলেন্সই থাকল না।
সামিত রীতিমতো চমকে ওঠে। এই নেশার আখড়ায় তারা এসেছে, এদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে, এদের সম্পর্কে কিছু তথ্য নিতে, কিন্তু হাসানের মতো লোক যে, বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য নিয়ে কথা বলবে এতোটা সে আশা করেনি। সে বলে, না বেলেন্স থাকবে, সুপার পাওয়ার হিসাবে ভারত-চীনের উত্থান কি হবে না মনে করেন?
কিন্তু সামিতের প্রশ্নটা কোনো কাজে লাগে না। হাসান সুপার পাওয়ার আর বিশ্ব রাজনীতির আলোচনার ধারাবাহিকতাটা গ্রহণ করে না। সে অনেকটা আপন মনেই বলতে থাকে, আইচ্ছা, আইচ্ছা বুশ সাহেবের নেশাডা কি? মনে অয় কুত্তা পালা, তিনার নাকি বেশ কয়েকখান পেয়ারা কুত্তা ছিল। ওবামা মামা’র নেশাডা কি? ইন্টারনেটে খুঁজলে পাওন যাইব না, কি কস রে আলী?
আবে, একবার নেশা লইয়া ইন্টারনেটে সার্চ দিসিলাম। ও মা, দুনিয়ায় যে কতো কিসিমের নেশা, কতো রকম মানুষ যে কতো নেশায় উপতা অইয়া পইরা রইছে! মনে করো যে, কারো নারীর নেশা, কারো গাড়ির, কারো টেকার নেশা তো কারো খ্যাতির, কারো নেশা এন্টিক আইটেম তো কারো নেশা মর্ডান গেজেড। ‘নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে’… তয় আলটিমেটলি নেশা জিনিসডাই খারাপ না। অবশ্য বুইঝা শুইনা করতে পারলে। মনে করো যে, মাদ্রাসার মাস্টারের তো কচি ছাত্রের নেশায় বুদ অওন উচিত না, আবার প্রেসিডেন্টের তো কবিতা লেখার নেশায় পইরা থাকলেও কাম অইবো না। যাউক গা, তুমাগোর ফান্ড আসে মার্কিন দেশ থাইকা বেশি, তাই না? তেনারা তো আবার মানব অধিকার সচেতন। দুনিয়ার যে কোনো দেশে ঢুইকা গণতন্ত্র সিধা করতে না পারলে তো তেনাগোর দায়িত্ব পালনই অয় না। মাশাল্লা দেশ একখান! ক্যাবারে, কেসিনো, বার, স্ট্রিপটিজ আরও কতো যে চিজ যে আছে!
আলী বলে, বুঝলি হাসান, আমার বড়ো শখ একবার আমরিকা যাইতাম। ওরা কি আমাগোরে ভিসা দিবো? আবরার মিয়া, সামিত ভাই, দেও না একটা লাইনগাট কইরা। লাগলে গাটের পয়সা খরচ করমু। দুইলাখ তিনলাখ ভি দিতে পারমু। বুঝলা একবার যাইতে পারলে মালের সাগর পারি দিতাম।
ধুর, এই জাতিটা মর্ডান হইল না ভাই। দেশের কথা চিন্তা করলেই মনটা পেচগি খাইয়া যায়। নেও, ভাই এক ছিপ খাও, আরে খাও। ওষুধের মতো একছিপ নাক কান বন্ধ কইরা খায়া ফেলো। ভালা লাগব। খাইবা না? আইচ্ছা, না খাইলা, আমিই খাই। নে আলী, তুইও খাও। চিয়ার্স।
সামিত, সেইখানে তো কমুনিষ্ট ঐতিহ্য আছে। আছে না? আহ, দেশ একখান, চিন্তা করো, প্রেসিডেন্ট মেয়েছেলে নিয়া কতো লাড়ালাড়ি করল। যতো দোষ আমাগোর এরশাদ সাহেবেরে। ধুর, এই জাতিটা মর্ডান হইল না ভাই। দেশের কথা চিন্তা করলেই মনটা পেচগি খাইয়া যায়। নেও, ভাই এক ছিপ খাও, আরে খাও। ওষুধের মতো একছিপ নাক কান বন্ধ কইরা খায়া ফেলো। ভালা লাগব। খাইবা না? আইচ্ছা, না খাইলা, আমিই খাই। নে আলী, তুইও খাও। চিয়ার্স।
চিয়ার্স বললেও, আলী মুখে দেয় না। সে সব সময়ই রয়ে সয়ে খায়। যথেষ্ট সময় নিয়ে সে একেকটা চুমুক দেয়। ছোটো ছোটো চুমুক দেয় আর প্রাণ ভরে বলে, ‘ওঁম শান্তি!’ কেন যে বলে কে জানে। এখন অবশ্য ওঁম শান্তি বলেই আলী হেরে গলায় গান ধরে, ‘সখি ভাবনা কাহারে বলে, ওগো, সখী বেদানা কাহারে বলে।’ ঈশ্বর সাক্ষী আলীর কণ্ঠে এ গান শুনলে রবীন্দ্রনাথ নির্ঘাত আত্মহত্যা করত। রবীন্দ্র সংগীতের ব্যবহার যে কতো বিচিত্রভাবে হতে পারে তা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমাধারী অধ্যাপকও কল্পনা করতে পারবে না। আলীর গান শুনে রঞ্জিত আবার বিকট এক হাসি দেয়।
হাসিস না বান্দর, হাসিস না। খালি সেই আগের গলাটা যুদি থাকত তাইলে দেখতি! এইসব খাইয়াই না সব হারাইলাম। মনে কর যে, হারমোনিয়াম নিয়া বসছি, দুইখান লাইন গাইছি, ব্যস ফসাট কইরা পাশের বাড়ির দুইতিন জানালা খুইলা গেছে। চেহারাটাও খুব একটা খারাপ ছিল না, কী বলো সামিত? গরীবের উত্তম কুমার বইলা চালান যায়। ক্যা, মহল্লায় স্টেজ বাইন্ধা নাটক করি নাই? তোমরা তো হেইদিনের পোলাপান, তোমাগর হয়তো মনেও নাই, তোমাগর পুতুল, তার বড়ো বোন মিলি বিষ খায় নাই? কও, কও, তাইলে কার জন্যে খাইছিল। ‘মিলি জেনেশুনে বিষ করেছে পান…’ হিস্টোরি তো জানো না কিছুই। আহা, মাইয়াটা বড়ো ভালোবাসতো আমারে। আরে, এই ছিল আমাগোর সময়ের মাইয়া মানুষ, বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। এতো ভালোবাসিস তো একবার বলবি না! আর অখনকার মেয়ে মানুষ ভালোবাইসা ভিডিও কইরা এক্কেবারে ইন্টারনেটে দিয়া দেয়। আহা কতো আধুনিক! আইচ্ছা এই যে মিলিটা মইরা গেল কার কী লাভ হইল! আরে ছেমড়ি, তোর বাপ-মায়েও তো তোরে মনে রাখে নাই। মইরা গিয়া তো তাগোরে থানা-পুলিশের প্যাঁচে ফালাইছিলি। কতোটি টেকা খরচ হইচে তোর বাপের! আর তুই, তুই তো সেই জাহান্নামের শিক কাবাব হবি। একবার বরং কইতি, তোমারে আমি প্রাণ দিছি জান। না ব্রাদার, বলে নাই। রাস্তার পোলা মনে করছে। ভাবছে, আমি আর ভালোবাসার কী বাল বুঝমু। আরে তোরে তো অহন মনে রাখছে এই রাস্তার পোলাই, না কি!
আলী হু হু করে কাঁদে। নেশা হয়তো এমনই এক জিনিস যা জমে থাকা কান্নাকেও গলাতে পারে। বয়স্ক মানুষও ছোট্ট শিশুর মতো সবার সামনে অবলীলায় কেঁদে বুক ভাসাতে পারে। আর একই মদের আসরে আলী যখন কাঁদছে রঞ্জিত তখন মুচকি হেসেই যাচ্ছে, কান্না-হাসির এমন আজগুবি সঙ্গম নেশা ছাড়া আর কোনো প্রেক্ষাপটেই যেন মানায় না। তবে আলীর কান্না অবধারিতভাবে হাসানকে ছোঁয়। সকল ভূ-খণ্ডেই হয়তো সকল আলীর কান্না সকল হাসানকে ছুঁয়ে যায়।
ধুর যা, দিলা মিয়া মনটা খারাপ কইরা। ও আলী, কান্দিস না, বাপ, নে, আরেক পেগ খা বাপ। বড়োই চিন্তার কথা আইজকা আবার মাংস নাই কা। যে শীত পরছে, একটু কষা মাংস হইলে ফাটাইয়া নেশা জমতোরে দোস্ত। নেও আবরার ভাই, অন রিকোয়েস্টে একটু খাও। আমি তো তোমাগর বড়ো ভাই, মানির মান পাহাড় সমান। একটু খাইলে কিছু অইবো না। নেও, নেও খাও। খাইবা না? মনে চোট পাইলাম ব্রাদার। আপন-পর সব খানেই আমরা চোট পাইলাম খালি! আহা, পর বলছি বইলা আবার মাইন্ড করলা নাকি? না, পর বলি কেমনে, স্যরি, মিসটেকে ভুল অইয়া গেছে, এলাকার ছোটো ভাই বইলা কথা। আসলে বুঝছো, মাথাটা ঠিক থাকে না, আপন পরের হিসাব থাকব কেমতে! বুঝো না, নিজের বাপ শালাই দুলাভাই হয়া গেছে গা। আমার বাপের নতুন বৌ দেখছো নাকি, শালি জিনিস একখান।
আলী চোখের পানি মুছে গ্লাসের তরলটায় আরেক চুমুক দেয়, হাসানকে বলে, নাহ, বড়ো প্যাচাল পারতাছিস হালা। তোরে তো নেশায় ধরেছে মনে কয়।
ঠিকই কইছোস দোস্ত! বুঝি না এতো প্যাঁচাল পাই কই! না গো, আসল কথাটা বলি। বুঝলা সামিত, আমি একটা প্রোজেক্ট নিতে চাই। তুমাগোর ডোনাররে কও, আমারেও কিছু পাত্তি দিতে। আমি অবশ্য অতো ইংরেজি কইতে পারি না, তোমরা তো আবার ইংরেজি ছাড়া এনজিও চালাইতে পারো না। সমস্যা নাই, তোমরা এট্টু হেল্প করবা। দেখবা প্রজেক্টটা কেমনে খাড়াইয়া যাইব। একবার খাড়াইলেই ধরো যে, আর শোয়ায় কোন শালায়! সোজা কথা, মনে করো, মহামানব বানাবো আমরা। হে, হে, কতো প্রজেক্টের কথা শুনছো, আমারটার মতো অভিনব আর নাই। ফান্ড আসবো আর নেশা করব। আর নেশার ঘোরে সবাই মহামানব হয়া যাব।
নেশা করলে কীভাবে মহামানব হবে বুঝতে পারলাম না তো হাসান ভাই?
বুঝো নাই ব্রাদার! আইচ্ছা বুঝাইয়া কই, মানুষের দিলের মধ্যে তো মহব্বত নাই আর। সব শুকাইয়া গেছে। ধরো, মাল খাইলে তো বুকটা রঙিন বেলুনের মতো হাল্কা অয়। মনে হয়, মহান কিছু করি। আরে তুমি দেখো না, প্রত্যেক দিন কতো খুন খারাবি ধর্ষণ টর্ষণ হইবার লাগছে। ঈমানে কই, এইগুলা কিন্তুক সব সুস্থ লোকে করতাছে। আই মিন, যারা নেশাউশা করে নাই তারা করতাছে। তুমি দেখো, নেশা কইরা, মাল খাইয়া কয়টা লোক খুন খারাবি করছে? এমুন নজির ভি হালায় কম পাইবা। আসলে নেশা কইরা মাইনসের উপকার করন যায়, কিন্তু, লেকিন, বাঁশ মারুন যায় না। আরে বাঁশ মারতে তো একটা প্ল্যান লাগে, নেশাখোররা কি প্লেন করতে পারে! আমি দেখছি নেশা মানুষরে মহৎ করে। জার্মান এক নাটক দেখছিলাম, এক বড়োলুক হালায় বড়ো হারামি, কিন্তু নেশা পেটে পড়লেই ভালা মানুষ, তখন কাজের পোলারেও আদর কইরা খাওয়ায়, কাজের বেটিরে মহব্বত করে, আর নেশা কাইট্টা গেলে লাত্থি দেয়। দেখো নাইকা নাটকটা? না তুমরা মিয়া কিছুই দেখলা না, শুনলা না। তোমরা তো ফূর্তি করতে ভি শিখলা না। সব ভেজিটেবল অইয়া গেলা। যাও, আমার কি! ইশ, একটু মাংস হইলে যা হইত না। মাংস পামু কই, মইষের মাংসর কেজিও বুলে ২৬০ টেকা হইছে! তয় যেইটা কইতে ছিলাম, নেশা করলেই মানুষ খারাব কাম থাইকা দূরে থাকবো, আর খারাব কাম থাইকা দূরে থাকলেই তো মানুষ মহামানব অইয়া যাইব, কী কও? মাল খাইলে দিলটা এত্তো বড়ো অইয়া যায়। আইচ্ছা, তোমরা নিজেরা একটু খায়া দেখো না! নেও ভাইয়া, একটু খাও। খেয়ে দেখো, মনটা কেমন ফ্রেস হয়ে যাবে। শুধু মদই খাও। মাংস তো আজ খাওয়াতে পারলাম না। নেও, খাও। দেখো দেখি, মুখটা অমন করো কেন! তোমারে তো গুমুত খাওয়াচ্ছি না। একদম ফরেন মাল। এমন আদর করে কেউ খাওয়াইবো না। খাও, ভাই, খাও।
আহা হাসান, কী শুরু করলি! চুপ থাক না, পোলাপানডি খাইবো না, জোর করতাছোস ক্যা!
ক্যা, খাইবো না ক্যা? মহব্বত কইরা সাধতাছি না! কী দুষ করছি, ক, তুই ক? কী অপরাধ, হ্যাঁ! এট্টু আবদার করতেছি, আমি ওগোর বড়ো ভাই না! এট্টু খাইলে কী অয়? আমার তো একটা প্রেস্টিজ আছে!
অইছে, ব্যাটা, অফ যা না।
তুই অফ যা! হেইদিন ন্যাংটা দেখছি এইসব পুলপানরে, অহন কথার অমান্য করে! ইন্টারভিউ লইতে আইছে, কথা কইছি, অহন আমার কথা হুনবা না ক্যান? খাইতে অইবোই বাবুল ওঠ, ধরতো শালার পুতেরে! হেইদিনের পুলাপান কথা হোনে না! ধর, শালা, তুই খাবি না, তোর বাপে খাইবো আর তোর মা চাইয়া চাইয়া দেখবো। ধর, ধর শালারে। বাবুল উঠ, ধর শালারে ধর।
হাসান কষে বাবুলকে লাথি মারে। বাবুল লাফ দিয়ে ওঠে।
কী অইছে, দোস্ত কী অইছে!
ধর শালারে, ঢং করে, মাল খাইবো না!
বাবুল আদ্যোপান্ত কিছু না বুঝেই আবরারকে চেপে ধরে। আবরারের মুখ চেপে ধরে হাসান মদ ঢেলে দেয়। সামিত বুঝতে পারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সে দ্রুত মোবাইলটা হাতে নেয়, স্থানীয় ওসির ফোন নাম্বারটা খুঁজতে থাকে। রঞ্জিত পুরো ব্যাপারটায় এতো মজা পায় যে হাসতে হাসতে তার বিষম লেগে যায়। এতোক্ষণে আলী উঠে আসে।
কী করছিস হাসান, ছাড়, ওরে ছাড়।
কিন্তু হাসানের মাথায় খুন চেপে গেছে। সে আবরারের গলাটা চেপে ধরে। ফট করে পকেট থেকে একটা ছুরি বার করে। আবরারের দিকে নয়, আলীর দিকে ছুরিটা তাক করে।
আগাবি তো খুন কইরা ফালামু। পুরা একখান বোতল ওগরে খাওয়ামু আমি। ফুটানি করে। নেশা কুন শালা করে না দুনিয়াতে, খালি আমরা করলেই দুষ।
বাদ দে, রংবাজি করিস না, ছাড়।
তুই ফোট্! ফোট্ এইখান থাইকা।
হাসান, চাক্কু রাখ!
অফ যা!
হাসান!
আলী চিৎকার দিয়ে ওঠে। একদম ছুরির সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখের পলকে হাসান ছুরি চালায়। আলী ‘ও মাগো’ বলে হাত চেপে ধরে বসে পড়ে। তার হাতের অনেকটা অংশ কেটে গেছে। হয়তো রগ কেটে গেছে। গলগল করে রক্ত পড়ছে। সামিত ততোক্ষণে ওসির নাম্বারটা খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু ওপার থেকে যান্ত্রিক স্বর শোনা যাচ্ছে, ‘মোবাইল ক্যান নট বি রিচ এট দ্য মোমেন্ট’।
একদম ছুরির সামনে এসে দাঁড়ায়। চোখের পলকে হাসান ছুরি চালায়। আলী ‘ও মাগো’ বলে হাত চেপে ধরে বসে পড়ে। তার হাতের অনেকটা অংশ কেটে গেছে। হয়তো রগ কেটে গেছে। গলগল করে রক্ত পড়ছে। সামিত ততোক্ষণে ওসির নাম্বারটা খুঁজে পেয়েছে।
হাসান পাগলের মতো বলতে থাকে, খা, খাবি না, খা, খা তুই।
ভীত আবরার ঢকঢক করে বোতলের তরল গলায় ঢালে। হাসান যেমন হঠাৎ ক্ষেপে গিয়েছিল তেমনি হঠাৎ মিইয়ে যায়। সে ফ্যালফ্যাল করে আলীর প্রবাহমান লাল রক্ত দেখে।
বেশি কাটছে দোস্ত?
সামিত পায়ে পায়ে পিছিয়ে যায়।
আর রঞ্জিতটা এতো কিছুর পরও হেসেই যাচ্ছে।
মুম রহমান একজন লেখক। সার্বক্ষণিক এবং সর্বঅর্থে লেখক। যা করেন লেখালেখির জন্য করেন। গল্প, নাটক, কবিতা, অনুবাদ, বিজ্ঞাপণের চিত্রনাট্য, রেডিও-টিভি নাটক, সিনেমার চিত্রনাট্য, প্রেমপত্র– সব কিছুকেই তিনি লেখালেখির অংশ মনে করেন। রান্নার রেসিপি থেকে চিন্তাশীল প্রবন্ধ সবখানেই তিনি লেখক।