শনিবার, নভেম্বর ২৩

সপ্তডানার বেহাগ : বেনজামিন রিয়াজী

0

পাখিরা মরে না


পাখিরা মরে না
শুধু দূর থেকে দূরান্ত আকাশে
উড়ে যায়।
পাখির ধূসর চোখ
তোমার দুচোখ থেকে
নীল খুঁজে পায়।
তুবও পাখির কিছু সাধ থাকে মানুষের মতো
নীড় চায় উষ্ণতায়
সন্ধ্যায় শিশির ঝরা যতো।
পাখিরাও মৃত্যু চায়
গান গাওয়া হয়ে গেলে শেষ
তুব তারা মৃত্যুহীন…
তোমার দুচোখ যেন পাখিদের
মৃত্যুহীন দেশ।


গান: কোনারণ্যে ছিলে পাখি


কোনারণ্যে ছিলে পাখি
উড়ে এলে কোন রাজ্য থেকে
ডানায় মাখানো ছিল বিকেলের রোদ ঝলমল
বেলা শেষে এলে পাখি তোমায় কি মায়া দেবো বল!

তোমার ঠোঁটের ফাঁকে
সুদূরের সমুদ্রের ফেনা
তোমার চোখের আলো দরিয়ার গহীন সুনীল—
পাখি তুমি বন্ধু হবে আমার পাখনা নাই জেনে?
এতোটুকু গেয়ে যাও আমার একেলা দিনমানে।

কত না আকাশ তুমি উড়ে এলে
ক্লান্ত দুটি ডানা—
কিবা ভুলে এলে বন্ধু এসেছ কি ঠিকানা হারায়ে?
আমার উঠানে তাই ছিটায়েছি
অন্তরের দানা

খাও বা না খাও বন্ধু নখরের দাগ রেখে যাও—
তুমি বন্ধু পাখি জাতি
উড়ে যাবে আকাশে উধাও!


অন্ধপাখি


অন্ধপাখি
কোন অজানার ত্রাসে
সন্ধ্যাধূসর কাঁপছে তোমার ডানা?
দূর সাগরের আকাশডোবা জলে
নাবিকবিহীন রক্ত পাটাতনে
ছিন্নপালের ছায়ার জাহাজ ভাসে
দানবদাঁতের অট্টহাসির টেউয়ে
প্রেত অতীতের স্বপ্নভীতি ঘেরা
সরীসৃপের শীতল দীর্ঘশ্বাসে
ভ্রষ্ট তোমার উড়ন্ত ঠিকানা।


নীলাকাশ ডাকবে না


নীলাকাশ ডাকবে না আর
নিবিড় চোখের তারা
নিভে যাবে তার, সারারাত
জ্বলে জ্বলে।
পাখিরা সুদূরে যাবে চলে
আঙ্গিনার আরক্ত কাকলী
থেমে গেলে।
আসবে না আর বসন্তের রোদের কোকিল
ফিরে যাবে চিল
ফিরে যাওয়া চিলের মিছিলে।

যে তুমি আমার সাথে ছিলে
রোদে জলে বেলা অবেলায়
এনেছিলে ঠোঁটে বয়ে মায়াবী আঙুর-লাল মদ
মেশা হলো নেশা হলো
তার পর ঘনালো বিপদ
হিংস্রতার হিম হাত
পাখিদের বুকে দিল হানা—
দানব নখরে দীর্ণ
আহত রুধির ভেজা ডানা
যন্ত্রণার মতো লাল হীরকের দ্যুতি
ফুটেছিল অপূর্ব অজানা।


শূন্যতা


শূন্যতাকে মেলে ধরে উড়ে যায়
এক ঝাঁক পাখি
আমি চেয়ে থাকি চশমার এ পারে চোখ
ঐ পারে ডানার আকুতি।
কোথায় ফিরবে তারা
অবশেষে কোথায় হারাবে?
কত দূর গেলে তারা
শূন্যতাকে পিছে ফেলে যাবে!
তবে কি শূন্যতাই মুক্তির চূড়ান্ত নিয়তি?


এখন বিদায়


ঝড়ের বিচূর্ণ রাতে
পাখি তোর ভেঙে গেছে ডানা
বর্ষণের হিম জল সারারাত ভিজিয়েছে তোকে
একাকী গাছের ডালে— ভাঙানীড়, বিপন্নতা চোখে
দহন ক্রন্দন সবই শেষ হলো
হারানো আলোকে।

বিদ্যুতের অগ্নি এসে
অন্ধ করে দিয়ে গেছে চোখ
উদোম শীতল দেহ
ঝঞা এসে ঝরালো পালক
থেমে গেছে শিহরণ নিভে গেছে শরীরের তাপ
বিচূর্ণ হল মনের বিলাপ।

পাখির সোনালি ডানা
উড়ালের অনন্ত সীমানা
সোনালী রোদ্দুর মেঘ
আকাশের নীলান্ত কণিকা
উড়ে যাওয়া পুড়ে যাওয়া
ঝরে যাওয়া ক্ষণের ক্ষণিকা—
ঝড়ের নিবিড় ডাকে
বুঝে গেছে এখন বিদায়।


পাখিদের শেষ কথা


পাখিদের কথা কখনো কি শেষ হয়
সূর্য জাগলে পাখিরা আবার জাগে
অথবা পাখির ডাকেই আবীর রাগে
সূর্যরা জাগে দূর করে দিতে ভয়

পাখিরা কি রাত জেগে জেগে কথা বলে
আমাদের মতো নিদ্রাবিহীন রাতে
অন্ধকারের নিথর যন্ত্রণাতে
তাদের সূর্য যায় কি অস্থাচলে

প্রভাত পেরিয়ে প্রভাত পেরিয়ে দূরে
যেখানে আলোর সীমানা পেরিয়ে আলো
পাখিরা কেবলই পালকের পতাকায়
মুক্তির গান গেয়ে গেয়ে উড়ে যায়
পাখিরা তবে কি গান গেয়ে বাসে ভালো
পাখিদের কথা পাখিদের সুরে সুরে।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবি, চিত্রকর ও অনুবাদক। জন্ম রাজশাহীতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যয়ন শেষে বর্তমানে সরকারের প্রশাসন বিভাগে কর্মরত।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।