ঠিকানা
কার্লোস যখন আর্জেন্টিনার রাস্তায় হাঁটছিল, আমি তখন কলম্বিয়ার সবুজ প্রান্তরে স্ট্যাম্পিডের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বেড়ে বামণের ঘরে গত রাতে কেদে ওঠা শিশুটির চিৎকার, বুনো হায়েনার দলে গিয়ে মিশেছিল। রাত শেষে দাদির কবরে গিয়ে দাঁড়ায় বুড়ো লোকটা। বাবা তাকে সেখানেই কবর দিতে বলেছে।
সাপুড়ের কাছে প্রশ্ন
ঘুমগুলো জলজ্যান্ত রাত্রি হয়ে হেঁটে যেতে থাকে জীবনময়। আমাদের পাড়ার মাসিমা ঘুম ঘুম খেলতে জানে নিপুণ সাপুড়ের মতো। সাপুড়ে আমাদের জাগরণের ঝুলি খুলতে খুলতে জট পাকিয়ে ফেলে চাঁদহীন কিশোরীর আঙুলে। হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া দস্যুটার প্রেমে মজে ছোট দিদি চাঁদ হতে হতেও জেগে থাকে জাগরুক নৌকার দোলায়। নৌকা বড় পছন্দের ছিল দস্যুটার। ঠিক এমনই বসে থাকত তার গলুইজুড়ে। সাপুড়ে তুমি কেমন খেলা জানো?
মৃত্যুপাহারার বয়ান
বিষাদিত শূন্যতায় একলা হেঁটে চলার মুহূর্তগুলো বালিয়াড়ির তেতে ওঠা নিয়ে পক্ষীপ্রাণ হয়ে যায়। সীমান্ত পেরিয়ে লালদাগের আঁচড় বুকে বাজিয়ে, লোপাট করে সীমান্তজাহাজ, হতচকিত আড্ডায় কেউ ফিরতে পারবে সংবাদ পাওয়া গেছে। কানে কানে হেডফোন উপচে বেরিয়ে আসা বিষণ্ন সংবাদ আহ্লাদিত পায়রার মতো মৃত্যুতৎপর জানালা খুলে দেয়। মৃত্যু নিয়ে যারা ঘুমহীন পাহারায় থাকে, তাদের জন্য অর্কিডের পরাগায়ণ দরকার বারবার। অর্কিডও জানে মৃতজীবীরা মৃত্যুপাহারায় বসে থাকে। ঘুমের ঘোরে হেঁটে চলা আর মৃতজীবীর গান গাওয়া সমান কথা নয় কখনো।
রোড সিগন্যাল কিংবা জন্মগ্রহণের ডেইলি শপ
অষ্টপ্রহর কেটে গেলে রোড সিগন্যালে সবুজসংকেত খোঁজে
একটা সাদা বিলবোর্ড
এগারো ডিজিট লেপে দেয়ার ভার বইতে পারে না দুরন্ত তলোয়ার
জীবন খুঁজতে খুঁজতে কৌটার লাল রং ছিটকে পড়ে বাঁশির ছিদ্রে
আড়েঠারে ব্যালকনির চৌকাঠে রোদ মাখে ছাপান্ন অক্ষিগোলক
ভূগোল নেড়েচেড়ে বেলুন ওড়াতে থাকে আমতলীর দোকানিরা
ক্রেতাশূন্য বিছানায় একটা গুইসাপ
আলজিহ্বার সিসা উগরাতে উগরাতে নির্বিষ হেঁটে যায়
দীর্ঘশ্বাসের পাড় ভেঙে
‘কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়ে’ প্রবাদ আজ
পোস্টমডার্নিজমে এসে দাঁড়িয়েছে
শালিকও এখন আশ্রয়দাতা
তোমরা যারা জারজ আছো
শান্তিনগরের শান্তি দ্যাখো
তোমাদের ঔরস বিছিয়ে রেখেছে জন্মগ্রহণের ডেইলি শপে
লিফলেটে ঘুমবিহীন আরও একটা সকাল লালগালিচা বিছাতে ব্যস্ত
ট্রাফিকের হাতে আর কোনো সবুজসংকেত নেই।
শূন্য হাইওয়ে একটা ট্রাফিকের জন্ম দিতে চায়
পিচ খসে পড়বার ভয় নেই এখনো পাঁচ বছর
পঁচাত্তর হলেই ছোঁবে নতুন উল্কার গর্ভাশয়।
ট্রাফিক, তুমি কত আর সিগন্যালের ভ্রুণ বুনে যাবে?
একবার বিলবোর্ড হয়ে দ্যাখো, চিরহরিৎ বৃক্ষের গান খুঁজে পাবে।
ব্যাড অ্যাট লাভ
হাইওয়ে
শহরের শেষ মাথায় দেবদারু বৃক্ষ
সুনসান রেলওয়ে
স্বাগত সৌম সুপ্রভাতের আন্দোলনে
আগত কাকগুচ্ছ ‘ব্যাড অ্যাট লাভ’ শুনতে শুনতে
মারা যাবার সংকল্প করছে
হঠাৎ গুলতি হাতের কিশোর
সাইরেন বাজাতে বাজাতে
পেরিয়ে গেল চৌরাস্তা
জন্ম কুষ্টিয়ায়। ছড়া ও কবিতা লিখে চলেছেন। বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্সের ষষ্ঠ ব্যাচে ছিলেন। বর্তমানে প্রথম আলোয় সম্পাদনা সহকারী হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত ছড়ার বই: ‘টাপুর টুপুর টুপ’ (২০১৬) ও ‘কিলিক কিলিক মেঘের ঝিলিক’ (২০১৮)।