খুব ধীরে ধীরে চোখ খুলল ক্লিহান। পাশে বসে থাকা ইভানকা আর রিকি তার হাত দুটো চেপে ধরল। ক্লিহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে চোখ দুটো আবার বন্ধ করে ফেলল। তার বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে, কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলো না সে। ইভানকা অস্থির হয়ে বলল, এখন কেমন লাগছে ক্লিহান?
ক্লিহান এবার চোখ খুলে তাকাতেই শিউরে উঠল ইভানকা। তার চোখ দুটো রক্তের মতো লাল হয়ে আছে।
রিকি ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, তুমি ঠিক আছো তো ক্লিহান?
ক্লিহান ক্লান্ত গলায় বলল, আমি ঠিক আছি রিকি। তোমরা কি বলবে আমরা এখন কোথায়?
আমরা এখন কেপ ক্যানাভেরালে, তোমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। বিড়বিড় করে বলল ইভানকা।
ক্লিহান উঠে বসার চেষ্টা করল, তার শরীর অসম্ভব দুর্বল। রিকি আর ইভানকার কাঁধে ভর দিয়ে কোনোরকমে উঠে দাঁড়াল সে।
পৃথিবীটা কত সুন্দর তাই না ইভানকা? মানুষ কখনোই এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে চায় না।
তোমার কিচ্ছু হবে না ক্লিহান। ইভানকার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল।
রিকি হঠাৎ চিৎকার করে বলল, মানুষ যদি জানত এই ভয়ংকর কিটি ভাইরাস তাদের ধ্বংসের কারণ হবে, তাহলে কখনোই এই জীবাণু অস্ত্র নিয়ে খেলত না। মানব সভ্যতাকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারত না।
মানুষ চেয়েছিল প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে, ধ্বংসের লীলাখেলায় মেতে উঠতে। কিন্তু প্রকৃতিকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার কাছে মানুষ বড়ো অসহায়।
ক্লিহান ঠোঁটের কোনায় একটা শুষ্ক হাসি ফুটিয়ে বলল, প্রকৃতি কখনো বাড়াবাড়ি পছন্দ করে না রিকি। মানুষ চেয়েছিল প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে, ধ্বংসের লীলাখেলায় মেতে উঠতে। কিন্তু প্রকৃতিকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার কাছে মানুষ বড়ো অসহায়।
এটুকু বলেই মাটিতে বসে পড়ল ক্লিহান। ইভানকা আর রিকি দুজনেই ভয় পেয়ে গেল।
ক্লিহান খুব ধীর কণ্ঠে বলল, আমরা তিনজন ব্যতীত এই পৃথিবীতে আর কেউ বেঁচে নেই। এই ভয়ংকর কিটি ভাইরাস মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। মানুষ ধ্বংস হতে পারে কিন্তু পরাজিত হতে পারে না।
ইভানকা আর রিকি একটা কথাও বলল না। ফ্যালফ্যাল চোখে ক্লিহানের দিকে তাকিয়ে থাকল।
ক্লিহান তার পকেট থেকে একটা ছোটো কাচের শিশি বের করে রিকির হাতে দিয়ে বলল, এটা রেখে দাও।
রিকি অবাক হয়ে বলল, এটা কী ক্লিহান?
ক্লিহানের নিশ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল। ইভানকা তার একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরল।
ক্লিহান ফিসফিস করে বলল, এটা আমার সারাজীবনের গবেষণার ফল। এই ভয়ংকর কিটি ভাইরাস এর প্রতিষেধক।
ইভানকা আর রিকি দুজনেই একসাথে চিৎকার করে বলল, কী বলছ ক্লিহান!
ক্লিহানের চোখের পাতা দুটো ধীরে ধীরে ভারি হয়ে আসছে। অতিকষ্টে সে বলল, সত্যি বলছি। জানি অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি হয়তো পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারিনি, কিন্তু পৃথিবীর শেষ দুজন মানুষের জীবন তো বাঁচাতে পারব।
ইভানকা ভীষণ চমকে উঠে বলল, তার মানে?
মানে খুব সহজ ইভানকা। আমি বলেছি মানুষ ধ্বংস হতে পারে কিন্তু পরাজিত হতে পারে না। তুমি আর রিকি মিলে বিলুপ্তপ্রায় মানবসভ্যতাকে আবার নতুন করে গড়ে তুলবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই শিক্ষা দেবে যেন মানুষ আর কোনোদিন মারণঘাতী জীবাণু অস্ত্র না বানায়, ধ্বংসের লীলাখেলায় যেন মেতে না ওঠে, প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ যেন না করে।
ইভানকা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, তোমাকে ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে চাই না ক্লিহান।
রিকি আবেগাপ্লুত গলায় বলল, তোমাকে আমরা মরতে দেবো না ক্লিহান। এই প্রতিষেধক আমরা তিনজনই নেব।
ক্লিহান অসহ্য যন্ত্রণার মাঝেও মৃদু হেসে বলল, এখানে শুধুমাত্র দুজনের ডোজ আছে রিকি। আমি মারা যাবার সাথে সাথে তোমরা এই প্রতিষেধক নিয়ে নেবে। কেননা এই ভয়ংকর কিটি ভাইরাস তোমাদের শরীরেও ইতোমধ্যে প্রবেশ করেছে।
ক্লিহান অসহ্য যন্ত্রণার মাঝেও মৃদু হেসে বলল, এখানে শুধুমাত্র দুজনের ডোজ আছে রিকি। আমি মারা যাবার সাথে সাথে তোমরা এই প্রতিষেধক নিয়ে নেবে। কেননা এই ভয়ংকর কিটি ভাইরাস তোমাদের শরীরেও ইতোমধ্যে প্রবেশ করেছে।
ইভানকা আর রিকি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।
ক্লিহান আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে একটা শ্বাস নিল। তার চোখেমুখে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি ফুটে উঠেছে। বিড়বিড় করে সে বলতে লাগল, মানুষ ধ্বংস হতে পারে কিন্তু কখনো পরাজিত হতে পারে না।
‘A man can be destroyed but not defeated’ ─Ernest Hemingway
১৯৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর রংপুর জেলার বাবুখাঁয় জন্মগ্রহণ করেন। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে তিনি ২০০৩ সালে এসএসসি এবং ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে তিনি কৃতিত্তের সাথে অর্নাস ও মার্স্টাস সম্পন্ন করেছেন। গল্প, কবিতা, উপন্যাস রচনায় সমান পারদর্শী হলেও তার ভালো লাগার বিষয় সায়েন্স ফিকশন। এ প্রর্যন্ত তার প্রকাশিত বই ১৪টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে: ‘ক্রিপিটাস’ (২০১২), ‘আপোফিস’ (২০১৪), ন্যানো মানব’ (২০১৫), মুক্তযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘ফুলপুরের স্বাধীনতা’ (২০১৬) এবং ‘প্রিথন’ (২০১৭)। তিনি বর্তমানে নীলফামারী সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।