রোজ বলি
বনফুল গুঁজে দেবো তোমার মনোহরা চুলে
তোমার দু’পায়ে এঁকে দেবো জলের আল্পনা
সাহুর পাড়ে হাঁটব আমরা শীতের বিহানে
এইসব ইচ্ছের কথা
ঘুমের ভেতর রোজ বলি তোমার কানে কানে
জিরাফ
চোখ বুজলে এখন অন্ধকার থেকে
একটি জিরাফ বেরিয়ে আসতে দেখি৷
আমার সর্বাঙ্গের কলঙ্ক চেটে সাফ করে
আর বন্ধ চোখের ওপর ঝুঁকে
অনর্থক কিছু শব্দ করে চলে যায়৷
এরপর আমি পুরোপুরি বোবা হয়ে যাই,
চোখ খুলে শুধু একটিই ছবি দেখি—
অন্ধকার ও আলোর মাঝখানে কোথাও
আমিও একটি জিরাফ হয়ে যাচ্ছি…
মুখ নেই, কান নেই, চোখ নেই
শুধু মাথাটুকু আর মনটুকু বাঁচিয়ে
আরেকটি জিরাফের সঙ্গে স্থির বসে আছি৷
নাগাল
একটা সময় পর উড়তে থাকা পাখিকে আর দেখা যায় না৷
নাগালের বাইরে চলে যায়৷
একটা সময় পর হাঁটতে থাকা নারীকে আর দেখা যায় না৷
নাগালের বাইরে চলে যায়৷
প্রথমটি অপেক্ষা৷ পরেরটি আক্ষেপ৷
প্রিয় মানুষ নাগালের বাইরে চলে গেলে প্রথমে রাগ হয়৷
তারপর আক্ষেপ আর স্মৃতি কুরে কুরে খায়
সাহুর গোসাঁই
ঠেলাগাড়ি থেকে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ তুলে নিয়ে
বুঝি
জীবনকে সরল করে দেওয়া যেতে পারে
যাবতীয় পার্থিব জটিলতার মাঝে৷
প্রথম প্রথম অবাক হতাম৷ এখন মুগ্ধ হয়ে শিখি৷
বিহান থেকে গোধূলি
চায়ের সুগন্ধে ভরে ওঠে সবুজ অরণ্য৷
গোসাঁই কীর্তন গায়৷ কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলে :
‘জগৎ মুক্তিতে ভুলালে সাঁই
ভক্তি দাও হে যাতে চরণ পাই৷’
জীবনে আঁধার থাকলে আলোও আছে…
সাহুর গোসাঁই শিখিয়েছে আমাকে একা থাকার আনন্দ৷
ঋণী
ভালো থাকা ভুলে যেতে যেতে
ভুলে তো যাইনি কিছুই…
যে আলো লুকোই অন্ধকারে,
তার কাছে আমি আনন্ত্য ঋণী৷
সমস্ত নেই-এর মাঝে
এই যে তুমি না-থেকেও আছ,
আমার চিরশূন্যতা তাই
…………পূর্ণানন্দ এক পুষ্করিণী৷
জন্ম ১৯৮৫ তে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে৷ বর্তমানে শিলিগুড়ি নিবাসী৷ ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর৷ পেশায় স্কুল শিক্ষক৷ কবিতার পাশাপাশি সমানভাবে গদ্য ও গল্পও লেখেন৷ প্রথম সারির নানা পত্রিকা, সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও অনলাইন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখে চলেছেন৷ শখ: বই পড়া, লেখালেখি, গান শোনা, সিনেমা দেখা এবং ভ্রমণ৷ প্রকাশিত কবিতার বই দশের অধিক। অনুবাদ করেছেন: ‘নির্বাচিত কবিতা কো উন’ ও ‘র্যাবোঁর নির্বাচিত কবিতা’।