১.
উদ্ এমন এক বাদ্যযন্ত্র যার খঞ্জর থেকে
লুত সম্প্রদায়ের ঘুম টুপটাপ ঝরে পড়ে
রাজদরবারে লেখা ইতিহাস লোককবি মানবেন কেন?
তোমার শিলাচিঠিগুলি তাই
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের কাছে রেখে এলাম
২.
আলিঙ্গনরত জোনাকি যেন এক উড়ন্ত রেলগাড়িলণ্ঠন!
বিদেশি গরুর কাছে বীজ নিতে যাওয়া
দেশি গাইয়ের ঋণগ্রস্ত সংসার
লজ্জায় থরোথরো কাঁপছে!
তাঁত ও নৌকোর এ দুনিয়ায় তুমি কী করে
কার্তুজচিহ্নের পাশে কুরচিফুলের ক্ষমা হয়ে উঠবে?
৩.
ছদ্ম সভ্যতার হাত থেকে পিগমিদের আত্মরক্ষার কৌশল
রপ্ত করতে গিয়ে ডুবোপাথরে ঘেরা দ্বীপে
কবে আর সন্ন্যাস নেবে তুমি, লোহার করোটি ছেড়ে?
তবু লাজুক ভ্যাম্পায়ারের উড়ালপথ হয়ে,
শত্রুসম্পত্তি হিসাবে জব্দ ব্রাহ্ম সমাজের
নারীজাগরণ কেন্দ্রে ছদ্ম পরিদর্শক হয়ে…
সংজ্ঞাহীনতার পাশে তোমায় আড়কথা শোনানো যাবে না?
তুমি কি নো পার্কিং জোন যে তোমায় ভালোবাসা যাবে না?
৪.
যে গান তুমি গাওনি,
আমি তার প্রতিধ্বনি ক্রমশ মুছে যাওয়ার পথ আগলিয়ে দাঁড়াই
যে গান তোমার অশ্রুপারাবার হয়ে ওঠেনি কোনোদিন,
আমি তার বাঘের ডাক মুছে চলেছি সযতনে
পথের বাঁকে ভাষাবঞ্চিত যত বর্ণমালা বিজ্ঞাপনে ঝুলে থাকে,
আমি তার উজানমর্মর, গুম্ফাগোধূলি
এক প্রসন্ন ভালুক সেই থেকে গানের আলেয়া মুছে চলেছেন
৫.
গর্জনফুলের মতো হৃদয় তোমার হলো না
অবনি চেয়ে আছে
বাসনাসঙ্কুল রাগিণী চেয়ে আছে
চেয়ে আছে কর্পোরেট স্ট্র্যাটেজি
গর্জনফুলের মতো হৃদয় হলো না অনন্তগুচ্ছের
স্বপ্নে হারিয়ে ফেলা তোমার ক্ষতচিহ্ন হলো আমার জীবন
৬.
দৃশ্যান্তরে প্রকৃত বিদ্যুৎ ঝরে,
ডাকে রুরু কুড়িয়ে পাওয়া তারার অন্ধকারে
যদিও বাচ্চা প্রসবের সময় নেকড়ে নেকড়েই থাকে
বালিবোঝাই ট্রলারের ঢেউয়ে নদী কি বুঝতে পারে,
তার মিন্দিস-জন্ম ফুরিয়ে আসছে?
মণিকারের খোলা বাকশো আসলে
মায়া পঞ্জিকায় ছড়িয়ে থাকা প্লেজার অফ ইরোর
৭.
অবিশ্বাসীরা প্রমাণ করতে চাইলেন
ক্রুশকাঠে ঝুলে আছে রক্ত-আয়না
বিশ্বাসীরা করণজলে মুছে দিলেন
ক্রুশকাঠে ফুটে থাকা থোকা থোকা লাল গোলাপ
আর তোমায় ভালোবাসি বলে
চিরঅর্ধনমিত পতাকার মতো হাওয়ায় জব্দ করে রাখলে আমায়!
৮.
মরা নদী দেখেও অনেকে ভয় পায়,
জলে ডুবে মারা গেছে যার আঁধার মানিক
মানুষ কীভাবে জলে ডুবে মরে?
মায়ের পেটে তো জলের আদরেই সে বড়ো হয়েছিল!
চাঁদের আলোও একটা সাঁকো, শূন্যতাবোধ ও অবনির মাঝে
সাঁকো পেরোতেও কেউ কেউ ভয় পায়।
৯.
শিরিষকাগজে শিল্পের বিচার করা পাগলের ধর্ম নয়—
পাগল আস্ত একটা ক্ল্যাসিক ছিঁড়ে ফেলে জরতির মোড়ে
এবং মনে মনে সেই বই আবার লিখে জোড়া দেয়,
এরপর যৌনতা নিয়ে দর্শন বিদেশনীতি নিয়ে
সবচেয়ে মৌলিক কথাটি বলেন!
প্রেমেরই টানে
হেলিকপ্টারের পাখায় ছিন্নভিন্ন হল ছোট্টপাখিটি,
পাগলের জমাট রক্ত ছাড়া শিরিষকাগজ মসৃণ হয় না
১০.
রাষ্ট্রদ্রোহীর মতো—
দূরনিয়ন্ত্রিত এক সাবমেরিন গভীর সাগরে
শত্রু দেশের সংরক্ষিত ভয়ংকর পরীক্ষণাগারের চারপাশে
নিশিদিন ঘুরতে থাকে, প্রেমবঞ্চিত নাঙ্গা কবির মতো
নরম পাথর, সবুজ রাজনীতি, পানসির না ফেরা…
এসবে যদি প্লাবিত না হও,
তামাম জখমি দুনিয়ার বীজ থেকে জেগে উঠবে
চে’র হাত ধরে মাহমুদ দারভিশ।
বাংলা কবিতায় অমিত রেজা চৌধুরীর উত্থান নব্বইয়ের দশকে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে, বগুড়ায় বসবাস করেন। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, সমালোচনা— বিভিন্ন মাধ্যমে তার বিচরণ অবাধ। একসময় দেশের প্রথিতযশা লিটলম্যাগাজিনগুলোয় লিখেছেন নিয়মিত। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথেও ওতোপ্রোতোভাবে যুক্ত ছিলেন এবং এখনও সেই বিশ্বাস লালন করেন। কী এক অজ্ঞাত কারণে গদ্যরচনার জগৎ থেকে এখন অনেকটাই দূরে অবস্থান করেন। কোনো বই প্রকাশিত হয়নি।