.
অর্থহীন কথাবার্তা
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির দাস হয়ে রেঙে ওঠে বর্তমান
বয়োঃপ্রাপ্ত কালের অধর
নগ্নদুটি ঊরু বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে
কারখানার দুর্গন্ধমাখা কষ
আকাশের গায়ে পিঠ— চেয়ে আছে
অতীত বিশ্বাস—
মহাকালের পাঠাশালার পন্ডিতমশায়;
বেত নয়, চক নয়, তার হাতে—
একজোড়া চশমার খাপ— প্রস্তুর যুগের পাথরে প্রস্তুত।
ও অতীত বিশ্বাস, ও সর্বজন মাননীয় পণ্ডিত মশায়,
জুন পর্যন্ত আপনার ওই চশমাজোড়া ধার দেয়া যায় কি?
কাঁটাভরা আলো ক্ষতবিক্ষত হাওয়া
যেখানেই যাই— প্রান্তরে, হোটেলে, জঙ্গলে বা
জাহাজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা জাতিসংঘপাড়ায়
সবখানেই বিদ্ধ করে স্মার্ট আলোর ড্রোন
হোমারের পাশে বসে বন্ধ দুটি চোখ দেখে—
আলোর কাঁটা মেলে সূর্য একটা মাতাল সজারু
নগ্ন পায়ে নেচে যায় আর
ভাঁজখোলা হৃদয়ের দুইপাশে
ছড়িয়ে পড়ে ছিন্নভিন্ন শান্তিকামী সবুজাভ চারা।
যে-অন্ধকার ‘আসুন বাবুজী’ বলে ডেকে নিতো
ঘরহীন কবি আর পথহীন পথিককে—
অকৃত্রিম নিবিড় প্রবোধে,
যার ডাকে একদিন পাষাণ বেদীতে এসে
প্রণয়ের পুরোহিত লোক ও লোকান্তরের কবি,
আজ তারও বুকে নেই— সেদিনের সেই প্রতিষেধী প্রেম।
আহ্নিকগতির রথে চড়ে খুঁজে ফিরি আলো-আঁধারির
নোম্যান্স ল্যান্ড; কোথায় সে নোম্যান্স ল্যান্ড?
ধূসর দু’চোখ ফেঁড়ে ঢুকে যায়—
সূর্য-নির্গত শাদাশাদা সজারু
আঁধারের উদর হতে বেরিয়ে আসা পরাক্রান্ত শুয়োরের পাল।
নদীমাতৃক প্রচ্ছদে
লালনের গান শোনার আগেই আল ডিঙানোর
মাটি পায়ে নিয়ে সে ঘরে ফিরেছে;
সাতপুরুষের জোত ঘামের বদলে দেয়
সোনালি গম্বুজ;
অথচ ছুটদাগের বুকে সবুজের ঢেউ দেখে
ঘাড়ের গামছা ঘাড়ে নিয়েই সে
কণ্ঠে তোলে প্রান্তরের সুর;
আর বানে-জলে একাকার হলে
পাল ওড়াতে কোনো শাসনই থাকে না।
অবশ্য বাজখাই অধিকার ফিরে পেতে
বলিষ্ঠবাহু অধিকাংশ চরের কিষাণ।
নদীর কত শাসন! জলের কত সংবিধান!
তবু নদীমাতৃক এই দেশে
সিকস্তির ঝুঁকি নিয়েও নদীপাড়ে গড়ে ওঠে ঘর,
ভেসে আসা কণ্ঠে খোলে অনুশাসিত কত জানালা।
গাড়িটা
প্রকৃতির পরাজয নিশ্চিত করতে
বেপরোয়া ছুটছে গাড়িটা—
ড্রাইভিং সিটে বসে বদলি-ড্রাইভার— এক মাতাল;
কন্ডাক্টরের হাতে ছিপিখোলা বোতল।
দূর-সম্মুখে হা-খোলা ব্লাকহোল।
যাত্রীরা কেউ ঘুমে, কেউবা মত্ত
বাকিরা ফুঁ দিচ্ছে নিজ নিজ বুকে।
তাদের নেমে পড়ার কোনো জো নেই; গাড়িটা গেটলক।
বহুমূত্র বর্তমান ভেঙে পড়া ভবিষ্যৎ
‘গুড ফর নাথিং’—এমন বিতর্কে সোচ্চার সিরিজ, মুখর মিডিয়া—
যদিও রঞ্জিতকথন মর্মে সেসব ফেলে দিতে চায়
ফ্রাস্টেটেড ফ্যামিলি; অথচ একথা ঠোঁটকাটা দুপুর যে—
তারা টেনিসে ঘামে না, ভেজে না সাঁতারে-
জগিঙে অনাগ্রহ দেখে বিরক্ত সকালের সূর্য;
মৌরসি ল্যাবরেটরির বাতায়ন বন্ধ, দরোজা শেওলার বাগান,
ভিজিটে এসে হতাশ কালের কিউরেটর;
ও গ্লোবাল ভিলেজের মধ্যপাড়া—
‘কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও?’
কী করে তা হবে— যখন গৃহবিবাদের কোলাহলেই উৎকর্ণ
উঠোন ও আঙিনা!
এ প্রবণতা সংক্রামক। হায় ঘর! হায় ক্ষেত!
ফাইলভর্তি অভিযোগ হাতে নিয়ে অসহায় পাড়া;
অথচ শেকড়সন্ধানী কোনো উদ্যোগ নেই,
ব্লেমগেমে ক্লান্ত হয়ে হীনমন্যতার হুইস্কিতে চুর হয়ে-থাকা;।
বহুমূত্র বর্তমান অচিকিৎসায় হতে ওঠে ভেঙে-পড়া ভবিষ্যৎ।
কবি ও গবেষক। জন্ম ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬৩। প্রকাশিত গ্রন্থ : ২৫টি। কবিতার বই : ২০টি; ছড়ার বই ৩টি; প্রবন্ধের বই ১টি; এবং গবেষণা গ্রন্থ: ১টি। কয়েকটি উল্লখযোগ্য বই : ‘মহানন্দা এক সোনালি নদী নাম’, ‘কুয়াশার বর্ণমালা’, ‘শেষ হেমন্তের জোছনা’, ‘জোছনার রাত বেদনার বেহালা’, ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’, ‘হিজলের সার্বিকট হাউস’, ‘নজরুলসংগীত: বাণীর বৈভব’।