গেলবার পানকৌড়িদের ডানায় চড়ে নীলগাঙের ঘোলাজল ছেড়ে কিছু ক্ষুধিপানা উড়ে এসে বসতি পাতল ধলাদিঘিতে। সপ্তাহ না পেরোতেই ধলাদিঘির টলটলে স্বচ্ছ জলের ওপর সবুজ পর্দার গাঢ় আস্তরণ পড়ে গেল তীব্র গতিতে। কথিত আছে হোসেফা গোসল সেরে উঠলে ধলাদিঘির পানিতে সেই ক্ষুধিপানার মতো উকুনের এক পরত কালো আস্তরণ পড়ে। হোসেফা যখন দাওয়ায় চুল শুকাতে বসে তখন চিরুনির আঁচড়ের সাথে তার এক হাঁটু লম্বা চুল বেয়ে পৌষের শিশিরের মতো উকুন ঝরতে থাকে। পাড়ার সব মুরগি তার আশপাশে জড়ো হয়ে মাটি থেকে গমের দানার মতন খুঁটে ওই উকুন খায়। অবশ্য চক্রপুর গ্রামে সব তিলই অতিকায় তালে পরিণত হয় অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। কত শত অদ্ভুত কাহিনি এখানে প্রচলিত আছে তা লিখতে গেলে একখানা মহাকাব্য হবে বইকি! গ্রামের মানুষের মুখে নানা রং মেখে হোসেফা ও তার উকুন নিয়ে ডজনখানেক মিথ এ গ্রামের জোয়ান-বুড়ো কমবেশি সবাই জানে। তাতে অবশ্য হোসেফার কিছু যায় আসে না, ছেলে তরিকুলই তার জগৎ—পৃথিবীর বাকি আর কিছু নিয়ে সে মাথা ঘামায় না।
খটখটে গরমে এক গ্লাস পানির ভেতর ক্রমাগত চামচের ঘূর্ণনে যেভাবে চিনি চিরতরে মিশে যায় ঠিক তেমনি বছর সাতেক আগে হঠাৎ বন্যা আর নদীভাঙনে তাদের ফসলি জমি সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। হোসেফার মনে হয় এই তো সেদিন মোচা ভাত, ছোট্ট একটা জগ আর পেটের ভেতর আট মাসের তরিকুলকে নিয়ে যে আলের ওপর বসে পরম তৃপ্তি নিয়ে সাদিকুলকে ভাত খেতে দেখেছিল—তা আর নেই। সেই জমি নেই, জমির ফসল নেই, আল নেই… সাদেকুলও নেই। অথচ চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় এই বুঝি সাদিকুল লুঙ্গির কোঁচড়ে ছটফট করতে থাকা এক গাদা জিওল মাছ নিয়ে ঘরে ঢুকল। বড্ড মাছপাগল মানুষ ছিল সে। অমন ঘোর বন্যাতে সব হারিয়েও জাল নিয়ে রাতদিন বাইরেই পড়ে থাকত। গভীর রাতে উঠোনভর্তি হাঁটুসমান বন্যার পানিতে ছপ ছপ শব্দ তুলে বাড়ি ফিরত। হোসেফা উৎকণ্ঠা নিয়ে জেগে থাকত চাঁদের আলোবিহীন সেইসব নিকষ রাতে। পেটের ওপর আলতোভাবে হাত রেখে বুঝতে চাইত সন্তানের নড়াচড়া, আর মনে মনে শাপ দিত চাড়াল নদীকে। সবই গেল চাড়াল নদীর আগ্রাসী, রাক্ষসী পেটে। যেমন নাম তেমন স্বভাব, চাড়ালের মতোই সর্বস্ব শেষ করে গেল। কিন্তু সাদেকুলের মুখের চওড়া হাসি, গা থেকে ভেসে আসা কাঁচা মাছ আর বন্যার পানির আঁশটে ঘ্রাণ, কোমরে গোঁজা পানের কৌটো থেকে ছড়িয়ে পড়া হাকিমপুরী জর্দার সুবাস ক্ষণিকের জন্য সব ভুলিয়ে দিত। ভাগ্যের লিখন, এই ছটাকখানের সুখও হলো ক্ষণস্থায়ী।
এক রাতে গনগনে জ্বর নিয়ে ফিরল সাদিকুল। বাইরে তুমুল বৃষ্টি, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বন্যার পানির তোড়, কিছুক্ষণ পরপর কড়া বাজের হুংকার আর আলোর ঝলকানিতে পুরো চক্রপুর আলোকিত হয়ে উঠছিল। আর উষ্ণতাহীন সেই আলোয় ছনে ছাওয়া ছোট্ট ঘরটায় সাদিকুল আউড়ে চলে জমি হারানোর মর্সিয়া। হোসেফা চোখের পানির স্রোতে হারিয়ে যেতে যেতে ভাবছিল মানুষটা কত কষ্ট ওই হাসির নিচে চাপা দিয়ে রেখেছে এত দিন! একটিবারও তাকে বুঝতে দিলো না! পরম মমতায় সাদিকুলের বিশাল হাত সে নিজের হাতের ওপর তুলে নেয়। হাত বুলাতেই দেখে শতশত সূক্ষ্ম ক্ষত রহস্যময় সংকেতের মতো আঁকিবুঁকি জুড়ে দিয়েছে পুরো হাত জুড়ে। ডান হাতের তর্জনীতে এখনো লেগে আছে শুকিয়ে যাওয়া চুন। বিস্তীর্ণ জমিতে যেভাবে হালে জুড়ে দেওয়া গরুর খুর এবড়োখেবড়োভাবে এঁকে দেয় রেখাচিত্র, তেমনি সাদিকুলের সমস্ত শরীর জুড়ে দারিদ্র্য আর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের গ্রাফিতি। রাত তখন ফুরোবার পথে। পানির স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাদিকুলের জ্বর আর হোসেফার ব্যথা।
ডান হাতের তর্জনীতে এখনো লেগে আছে শুকিয়ে যাওয়া চুন। বিস্তীর্ণ জমিতে যেভাবে হালে জুড়ে দেওয়া গরুর খুর এবড়োখেবড়োভাবে এঁকে দেয় রেখাচিত্র, তেমনি সাদিকুলের সমস্ত শরীর জুড়ে দারিদ্র্য আর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের গ্রাফিতি। রাত তখন ফুরোবার পথে।
অথই জ্বরগ্রস্ত সাদিকুল আর ব্যথায় আড়ষ্ট হোসেফা—দুজনের সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে হাল ছেড়ে দিয়ে জবজবে হয়ে থাকে। ক্লান্ত কণ্ঠে সাদিকুল ধীরে ধীরে বলে, ‘হোসেফা আমার পুলা হইলে নাম দিও তরিকুল, মাইয়া হইলে হীরন… হী..র..ন..।’ হোসেফা তার ক্রমাগত তীব্র হতে থাকা ব্যথাটাকে উপেক্ষা করে শাড়ির আঁচল দিয়ে সাদিকুলের কপালের ঘাম মুছে দিতে দিতে বলে, ‘ঘুমাও তুমি, এই বেলা এট্টু ঘুমাও।’
সাদিকুল তার কথা শুনেই ঘুমিয়ে পড়েছিল কি না, জানা যায়নি। পরদিন সকালে মেঘ-কাটা রোদ ক্যাটক্যাটে তীব্রতা নিয়ে চক্রপুরের প্রতিটা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছিল, ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছিল রাতভর তাণ্ডব চালানো চাড়াল নদীর বুক ভেঙে আসা অশান্ত বন্যার পানি। সবাই ঘুম থেকে উঠল বটে, কিন্তু সাদিকুল শান্ত, বাধ্য বাচ্চার মতো সেই যে ঘুমাল আর জাগল না। হঠাৎ সদ্যজাত বাচ্চার গগনবিদারী প্রথম কান্নার শব্দ লোকজন যখন টের পেল বেলা তখন সকাল আটটা। নবজাতকের তীব্র কান্নায় খানিকটা অবাক হয়ে পাশের বাড়ির আম্বিয়া চাচিই ‘ব্যাপার কী’ তা দেখতে প্রথম এসেছিলেন। তার চিৎকার-চ্যাঁচামেচিতে পুরো গ্রাম জড়ো হলো। নব্বই বছরের থুত্থুড়ে বুড়ি তরাবুন বানু ছাড়া যে যেভাবে পারল ছুটে এলো। গায়ে সাবানের ফেনা আর এক হাতে কসকো সাবানসহ সফুর কবিরাজ এলো। তবারক মিয়া লাঠি হাতে হাঁপাতে হাঁপাতে এলো; সুরমা বেগম যখন এলো তার হাতে তখনো মাজতে থাকা এঁটো বাসন, পূর্বপাড়ার বজল তো বদনা না রেখেই এসে পড়ল! নুরুননেসা তার ছেলেকে কোলে নিয়ে ধড়ফড়িয়ে এসে বসে পড়ল হোসেফার ঘরের দাওয়ায়।
উঠোনের পানি ভেঙে ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাটির মেঝে, কোলের ওপর নিশ্চল সাদিকুলের মাথা আর বুকের ওপর তখনো নাড়ি না কাটা সদ্য ভূমিষ্ট তরিকুলকে জড়িয়ে ধরে হোসেফার ফ্যাকাশে দেহ পড়ে আছে। তারস্বরে কেঁদে যাচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্মানো ওই একটুখানি বাচ্চা। যদিও লোকে বলে চক্রপুরের মানুষজনের সবকিছু একটু বাড়িয়ে বলার বাতিক আছে বটে কিন্তু এই ঘটনা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। সেদিন যদি ঠিক সময়ে হোসেফাকে তারা সদর হাসপাতালে নিতে না পারত হোসেফা ও তার উকুন কাহিনির জন্মই হতো না।
স্বামীর মৃত্যুর পর, দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে হোসেফার নতুন এক যুদ্ধ শুরু হয়। যে যুদ্ধে চেনা হোসেফার আমূল বদলে গেল। তার হাঁটুসমান চুল সব সময় বেণিতে গোছানো থাকত । যেই হোসেফাকে সবাই কুঁচি করা নিপাট শাড়িতে স্মিত হাসিমুখে সব সময় দেখে অভ্যস্ত ছিল সেই হোসেফা মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে রাতারাতি পালটে হলো পুরোনো পাঁচিল দিয়ে ঘেরা নির্জন একখানা ঘরের মতো। কুঁচি ছেড়ে এক প্যাঁচে শাড়ি পরা শুরু করল সে, আর মাথার ঘন চুলে অবাদে গড়ে উঠতে দিলো শত শত উকুনের কলোনি। যদিও বললে কেউ বিশ্বাস করবে না, তারপরও বলে রাখি, তার মাথায় এখন কিন্তু কোনো উকুন নেই। তরিকুল একটু বড়ো হয়ে উঠতেই সে ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ করে চুল কেটে ফেলল অনেকখানি। তারপর দিন রাত উকুনের চিরুনি চালিয়ে সমানে উকুন ধরে মারতে লাগল। সেটার পরিমাণ অবশ্য এত বেশি ছিল যে আঙুল দিয়ে তা আর পারা গেল না, তখন সে ছোট্ট একটা পাথর দিয়ে উকুন জড়ো করে পিষে মারতে লাগল। মোল্লাপাড়ার নুরুননেসা অবশ্য কিরে কেটে বলেছেন, ‘অবাক ব্যাফার রে বাপ! দেখি হোসেফা শিলপাটায় কালা কালা কী যেন বাটতিসে। সেইগুলান কিলবিলায়ে পাটা থেইকে হাইটে চইলে যায়। সে আবার কুড়ায়ে বাইটতে থাকে। খানিক বাদে বুঝলাম রে বাপ, এইডি উকুন! লাখ লাখ উকুন! হোসেফা শিলপাটায় উকুন বাটতিসে!’ বাটা উকুন দিয়ে হোসেফা কোন পদের তরকারি রাঁধল সে ব্যাপারে তার তেরো বছরের একমাত্র পুত্র হাক্কানি জানতে চাইলে, এক চড়ে তার জিজ্ঞাসার মাঝখানে দাঁড়ি এঁকে দেন তিনি। এতে অবশ্য হাক্কানির আগ্রহ কমে না বরং হাঁড়িতে মৌন হয়ে বসে থাকা দুধ চোখ সরালেই যেভাবে তেড়েফুঁড়ে বাইরে উপচে পড়ে তেমনি তার আগ্রহ সমানে বাড়তে থাকে। গ্রামে হাক্কানি ও তার মা নুরুননেসার বেশ খ্যাতি আছে আষাঢ়ে গল্পকার হিসেবে। ভেতরে ভেতরে সবাই তাদের নিয়ে হাসাহাসি করে, টিপ্পনী কাটলেও দিনশেষে এই গহিন গ্রামের বিবিসি-সিএনএন কিংবা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে কিন্তু মা-ব্যাটাকেই সবাই কাজে লাগায়। আবার তাদের কথাকে কেউ তেমন গুরুত্বও দেয় না।
ওই যে একটু আগে বললাম, আশেপাশের গ্রামের লোকজন বলা-কওয়া করে চক্রপুরের লোকেরা একটু বাড়িয়ে-চড়িয়ে কেচ্ছা কাহিনি বলতে পছন্দ করে। এই কথার জন্ম আসলে নুরুননেসার কারণেই। অল্পবয়স থেকেই তার এই স্বভাব, জামাই মারা যাবার পর যা আরও বেড়েছে। হারুন মিয়া বেশ সজ্জন লোক ছিলেন। নুরুননেসা মা হতে পারবে না, এমন কথা গ্রামের সবাই জানত সফুর কবিরাজের বদৌলতে। এই গ্রামের সব রেকর্ড ভেঙে ত্রিশ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। তার ওপর বিয়ের আট বছরেও সন্তান হলো না। বদ্যি-কবিরাজ, ডাক্তার সব ফেল। ভাগ্যকে মেনে নিয়ে তারা অবশ্য বেশ ভালোই ছিল। এক শ্রাবণে আউশের ধান কাটার ব্যস্ততায় লোকজন খেয়ালই করল না পাশে হারুন মিয়া কখন যেন মরে পড়ে আছে। তখনো শক্ত হাতলের পুরোনো কাস্তেটা তার হাতের মুঠোয় পুরা। এই ঘটনার সাত দিন পর জানা গেল নুরুননেসা সন্তানসম্ভবা।
অসম্ভব দুর্বলতা আর শরীর খারাপ নিয়ে নুরুননেসা ঘরে পড়েছিল হারুন মিয়ার মৃত্যুর পর থেকেই। পাশের গ্রাম থেকে আসা একটা এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মী তার প্রতি মাসের ডিউটি পালন করছিল বরাবরের মতো। আম্বিয়া চাচির কাছে নুরুননেসার অসুস্থতার কথা শুনে দেখতে আসলেন তিনি। এরপর লক্ষণ দেখে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করলেন। জানা গেল নুরুননেসা সন্তানসম্ভবা। এই ঘটনার পর সফুর কবিরাজের বিদ্যা আর ব্যাবসা দুটোই টলে উঠল বইকি। নুরুননেসা তো তাকে দেখলেই চোখ-মুখ কুঁচকে না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে যায়। অন্যদিকে এখনো হাক্কানিকে দেখলে সফুর কবিরাজ এক রাশ বিরক্তি নিয়ে মাটিতে এক দলা থুতু ছিটিয়ে বিড়বিড় করে, ‘শালারপুত! তুই হইলি কেমনে?!’
হাক্কানির জন্মের আগ পর্যন্ত নুরুননেসা বেশ খ্যাতির সাথে একাই গ্রামে কথা রটানোর কাজ চালিয়ে যেত। কার খোপে মুরগি ক’টা ডিম পাড়ল থেকে শুরু করে, কার বউয়ের পিঠে ক’টা মার পড়লে সবই তার নখদর্পণে। বড়ো হয়ে উঠতে উঠতে ছেলে হাক্কানিও মায়ের এই দুর্লভ গুণ পেল বটে, তবে তার ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। মুনশিবাড়ির পেছনে পাঁচ পাওয়ালা বিড়ালের বাচ্চা হয়েছে, কদমপুকুরে ওজু করতে গিয়ে সিদ্দিক মিয়া কিম্ভূতকিমাকার মাছ দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছে, সেলিমুদ্দীর বেলগাছের সব বেল ফাঁকা মানে খোলস আছে কিন্তু ভেতরে কিছু নেই হয়ে গেছে ইত্যাদি বিচিত্র খবর রোজ তার ঝুলি থেকে বের হয় অবিরত। এসব খবরের সত্যতা অনুসন্ধানে কেউ উৎসাহ দেখায় না, দেখালেও সাত ঘাটের জল খেয়ে কোনো ফলাফল দেখতে না পেয়ে হাক্কানির সংবাদের ব্যাপারে মাথা ঘামানো বন্ধ করে দেয় একেবারে।
যাহোক, হোসেফার কাছে ফেরা যাক। এখনো হয়তোবা তাকে দেখবেন কথা বলতে বলতে কিংবা রাস্তায় হাঁটার সময় আনমনে চুলে হাত চালিয়ে এক অদৃশ্য উকুন ধরে বুড়ো আঙুলের নখের ওপর রেখে নিপুণভাবে অন্য হাতের নখ দিয়ে পিষ্ট করছে সেটা।
তার ছেলে তরিকুলের বয়স এখন নয় চলে, শিগ্গিরই দশ হবে। মাকে নিয়ে এত কাহিনি থাকার পরও তরিকুল লক্ষ্মী বাচ্চার মতো এসব কানে তুলে না। তার কাছে মা-ই সব। এই গ্রামের বাচ্চাদের মতো দুরন্ত বাচ্চাকাচ্চা আর কোথাও পাওয়া দুষ্কর। সেখানে একটি নিস্তরঙ্গ দিঘির শান্ত জলের মতো তরিকুল রীতিমতো দুর্লভ বলা চলে। সেই তরিকুলকে বাকিরা ইচ্ছেমতো নাজেহাল করার চেষ্টা করে বটে তবে সফল হয় না। যে ছেলে সাত চড়ে রা করে না, বল ছুড়ে নাক ফাটিয়ে দিলেও অভিযোগ করে না—তাকে ঘাঁটিয়ে মজা পাওয়া তো দূরের কথা উলটো ভোঁতা রাগে দুষ্ট পিচ্চিগুলোর ছোট্ট মাথা স্কুলঘরের টিনের ছাউনির মতো গরম হয়ে ওঠে।
হাক্কানি আর তরিকুল একই স্কুলে পড়ে। বছর বছর ফেল করে হাক্কানি এখনো পঞ্চম শ্রেণিতে আর ওদিকে তরিকুল চতুর্থ শ্রেণিতে উঠে গেছে। অবাক করা ব্যাপার হলো ইংরেজিটা যা-ও খানিকটা পড়তে-টড়তে পারে হাক্কানি বাকি সবক’টা বিষয়ে বরাবরই লবডঙ্কা। জব্বার স্যারের ইংরেজি ডিকশনারিটা সুযোগ পেলেই স্যারের টেবিল থেকে সরিয়ে উলটেপালটে দেখে সে। ধরা খেলে স্যার খানিকটা বকে ছেড়ে দেন প্রতিবার। বাকিরা অবশ্য কম টিটকারি ছুড়ে না এ ব্যাপারে। ‘নিজের নাম বানান করি লিখতি গেলি পেনসিল ভাইঙে যায় সে আবার পড়তি চায় ইংরিজি!’ হাক্কানি তো হাক্কানিই, বরাবরের মতো এ কান দিয়ে ঢুকিয়ে কথাগুলো ও কান দিয়ে চড়ুইয়ের মতো সুড়ুৎ করে বের করে দেয়।
স্কুলের বাকিরা সবাই এই দুজনকে হয় এড়িয়ে চলে নাহয় সুযোগে পেলে খ্যাপায়। যদিও এই দুটো ব্যাপার নিয়ে হাক্কানি কিংবা তরিকুল কেউ তেমন মাথা ঘামায় না, তবে দলছুট দুজন একসাথে চলাফেরা করে। টিফিন ছুটিতে একসাথে খেতে যায়। বলা যায় তারা দুজন বন্ধু আবার ঠিক বন্ধুও নয়, সমান্তরালে চলতে থাকা দুটো সরলরেখার মতো যারা নিজস্ব দূরত্ব রেখে চলে। তবে এই দূরত্ব প্রায়ই হাক্কানি ডিঙিয়ে যায়, বড্ড চঞ্চল ছেলেটা। হেন কোনো বিষয় নেই যা নিয়ে তার আগ্রহ নেই। আর তার মুখ, সে তো দিনমান হড়বড় করে চলতে থাকা একটি রেডিয়ো। তার টিংটিঙে হাত-পা লতানো গাছের মতো তরতরিয়ে বাড়ছে রোজ। তাকে দেখে কেউ আন্দাজই করতে পারবে না ওই ছোট্ট পেটভর্তি এত কথা! স্কুলের ছেলেপেলেরা এত ঝামেলা পাকায় তারপরও হাক্কানি তাদের পাত্তা না দিয়ে কথা দিয়ে তাদের পাকায় রোজ। তারা হাক্কানিকে দেখলেই হাঁক পাড়ে, ‘ক-থা-র নাগর, হাক্কানি একখান বান্দর!’
একমাত্র তরিকুলই কোনো বাঁধা না দিয়ে কিংবা বিদ্রুপ না করে ওর কথা শুনে। চক্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় দুজনেরই ঘর থেকে তেমন দূরে নয়। তারপরও তারা সময় নিয়ে সব সময় দূরের পথটা দিয়েই ঘুরে যায়। কদমপুকুরের পাড় ধরে গেলে সময় খানিকটা বেশি লাগে তারপরও তারা ওই পথ ধরেই যায়। রোজ তরিকুল ভাঁট, ডাকুর, দাঁতরাঙা, সোনাঝুরিসহ নানান ফুল ছিঁড়ে পকেটে পুরে মায়ের জন্য নিয়ে যায়। মায়ের কাছে শুনেছে তার বাবাও সব সময় বুনোফুল নিয়ে যেত হোসেফার জন্য।
গরমের দিনগুলোতে যদিও স্কুল ছুটি থাকে তারপরও তারা দুটো অলস বেড়ালের মতো এই দিঘির পাড় জুড়ে ঘুরে বেড়ায়। কদমপুকুরের পাড় জুড়ে নানান বুনো ফল-পাকুড়ের গাছ। তরিকুলের চোখ থাকে বুনোফুল আর নানান জংলি ফলজুড়ে। অন্যদিকে হাক্কানি বলা-কওয়া ছাড়া এই ঝাঁপ দিলো পুকুরে নাহয় ওই উঠে পড়ল বড়ো সোনালু গাছটা বেয়ে। লম্বা লম্বা গাছে সে কাঠবেড়ালির মতো নির্লিপ্ত আর স্বাভাবিকভাবে তড়তড়িয়ে চড়ে বসে। শাপলা-শালুকের দিনে তো ভোঁদড়ছানার মতো সে রোজ পুকুর আর পাড় এই দু’জায়গায় রীতিমতো গড়াগড়ি দেয়। আর পুরো পথ জুড়ে প্রতিদিন হাক্কানি হড়বড় করে বলতে থাকে কত রকমের কথা, তরিকুল চুপ করে শুনে যায়।
গরমের দিনগুলোতে যদিও স্কুল ছুটি থাকে তারপরও তারা দুটো অলস বেড়ালের মতো এই দিঘির পাড় জুড়ে ঘুরে বেড়ায়। কদমপুকুরের পাড় জুড়ে নানান বুনো ফল-পাকুড়ের গাছ। তরিকুলের চোখ থাকে বুনোফুল আর নানান জংলি ফলজুড়ে। অন্যদিকে হাক্কানি বলা-কওয়া ছাড়া এই ঝাঁপ দিলো পুকুরে নাহয় ওই উঠে পড়ল বড়ো সোনালু গাছটা বেয়ে। লম্বা লম্বা গাছে সে কাঠবেড়ালির মতো নির্লিপ্ত আর স্বাভাবিকভাবে তড়তড়িয়ে চড়ে বসে।
আজ বৃহস্পতিবার হওয়াতে হাফ-ছুটি। বরাবরের মতো তরিকুল ফুল কুড়িয়ে তার রং চটে যাওয়া হাফপ্যান্ট আর জীর্ণ শার্টের পকেটে গুঁজছে। ডাকুরফুলের ঝোপ থেকে বেছে বেছে ক’টা ফুল ছিঁড়ে পকেটে পুরে নিল ও। হাক্কানি রোজকার মতো গল্পের তুবড়ি না ছুটিয়ে আনমনে পুকুরপাড়ের ডুমুর গাছটার নিচে বসে আছে দেখে তরিকুলের অবাক লাগে ভীষণ। কাছে গিয়ে জানতে চাইল ব্যাপার কী। হাক্কানি সাথে সাথে জবাব দিলো না। এই ভর দুপুরে বয়ে চলা লু হাওয়ায় দরদর করে ঘাম ঝরছে তরিকুলের কিন্তু হাক্কানির কোনো বোধই নেই গরমের। সে দীর্ঘক্ষণ চুপ থেকে তরিকুলের জিজ্ঞাসু চেহারার দিকে চেয়ে বলে, ‘গরম লাগতিসে তরিকুল?’ উত্তরে তরিকুল মাথা দোলায়। হাক্কানি মাথা নেড়ে চুকচুক শব্দ করে বলে ওঠে, ‘আমার লাগে না ক্যান?’ শুনে তরিকুল হেসে ফেলে।
‘এই গরমে মইরে যাচ্ছে সবাই আর তোমার গরম লাগতিসে না বলে আফসোস!’
বলেই মিতভাষী তরিকুল হাসতে থাকে। সেই হাসিতে হাক্কানির মুখ থেকে চিন্তার ছায়া অনেকখানি কেটে যায়। তাকে দেখতে প্রতিদিনের চঞ্চল, উজ্জ্বল হাক্কানির মতো লাগতে থাকে যে রোজ মায়ের চড়, স্যারের বকা আর সমবয়সিদের মার-টিপ্পনী খেয়েও হাসতে পারে অফুরন্ত। পুরো গ্রামে যদি একজন তার সাথে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলে সেটা হলো তরিকুল। এত নরম স্বভাবের ছেলেটা! দেখলেই মায়া লাগে। হাক্কানি হেসে লুঙ্গির কোঁচড় থেকে দুটো বড়ো পাকা ডুমুর আর একটা ডাসা পেয়ারা তরিকুলের হাতে তুলে দিয়ে বলে, ‘তোরে ওই পাঁচ ঠ্যাঙওয়ালা বিড়ালের কথা বলছিলাম, মনে আছে?’
তরিকুল হাসিমুখে ডুমুরে কামড় বসায়, মাথা নেড়ে জানায় মনে আছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাক্কানি বলে, ‘বিড়ালের ছাওটা কী সুন্দর আছিল! একদম কুচকুইচে কালা, গাঙের পানির মতো চোখ!’
একটু থেমে সে বলে, ‘তরিকুল, তোরে একটা কথা বলি? বাকিদের মতো হাইসা উড়ায়ে দিবি না তো?’ বয়স কম হলেও তরিকুল তার বয়সিদের তুলনায় বেশ পরিপক্ব। সে জোরে জোরে মাথা নেড়ে সে বলে বিশ্বাস করবে। হাক্কানি বলে চলে—‘তোরও কি মনে হয় আমি বেশি কথা কই? মিছা কথা কই? আমি মিছা কথা কই না রে তরিকুল? মাঝেমইধ্যে মনে হয় এই গ্রামে আমার মতন সত্য কথা কেউ কয় না। সিদ্দিক চাচারে আমি নিজে কদমপুকুরের ঘাট থিকা তুললাম, উনি নিজেই বলল মাছ না মাকড়সার মতো দেখতে কী জানি একটা তার পাওয়ে কামড় দিবার লাগছিল, অথচ লোকজন জড়ো হবার পর ব্যাটায় কইল, কই? আমি এরম কিছু দেহিও নাই, বলিও নাই!’
হাক্কানির কথা ছাপিয়ে যায় তার দীর্ঘশ্বাসে। শুনে ছোট্ট তরিকুলের হঠাৎ করে খুব মন খারাপ হতে থাকে। সে আধখাওয়া ডুমুর হাতে নিয়ে রোজকার মতো মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে হাক্কানির কথা। আজকের মতো এত ধীর লয়ে হাক্কানিকে কথা বলতে সে কখনো শুনেনি।
‘বুঝলি, সেলিমুদ্দী কাকার বেলগুলান গত বছর আমি পাড়ছিলাম। এ বছরও পাড়তে গেছি। ইয়া উঁচা গাছ আমি ছাড়া কেউ চড়বারও পারে না, ভয় পায়। হাত ফইসকে বেল একটা পড়ছে নিচে, আজব ব্যাপার! নিচে তাকাইয়া দেখি বেল ভাইঙা তিন টুকরা তয় ভেতরে ফাঁকা! ভোজবাজির মতো ফাঁকা। বিশ্বাস কর তরিকুল, এরপর আমি পঞ্চান্নটা বেল ফাটাইসি, সবক’টার ভেতর তকতক করতিছে। মুনশিবাড়ির বিশাল উঠান যেমনে ঝকঝক করে তেমনি। কিন্তু ওইটা তো ঝাঁট দেয় মন্তুর মা। বেলের ভেতর ঝাঁট দিলো কেডা? সেলিমুদ্দী কাকারে বইলতে গিয়ে দেখি তারা কেউ ঘরে নাই। আজিব না, ক? আমারে বেল পাড়তে দিয়া বিবি-বাচ্চা লইয়া কই যে ঘুরতে গেল! তিন বস্তা বেল পাইড়ে তার ঘরের সামনে থুইয়া আসলাম। দুই দিন পর কাকা বেল পাড়ার টাকা হাতে দিইয়া কইল, দুইটা বেল নিয়া যাইছ তোর মায়ের জন্যি। এই বছরের বেলের স্বাদ হইছে বড়ো ভালা। যারা কিনছে সবাই বলছে।’
টানা কথা বলে হাঁপিয়ে ওঠে সে। হঠাৎ তরিকুলের পকেট থেকে বাইরের দিকে ঝুঁকে পড়া ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে নরম একটা হাসি দিয়ে ফের বলে ওঠে, ‘নালতা ফুল কনে পাইলি রে? এই হানে তো কখনো এই ফুলের গাছ দেহি নাই।’ তরিকুল দু-চোখ ভর্তি বিস্ময় নিয়ে ফুলগুলো হাক্কানির চোখের সামনে ধরে, ‘এইগুলান নালতা?’
‘হ, নালতাই তো। মন্তু গো ঘরের পেছনের ভিটায় ঝোপ হইয়া আছে।’
‘কী রং নালতার?’
হাক্কানি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে ওঠে। তার চোখভর্তি অচেনা আতঙ্ক, ‘ক্যান জিগাস? তুই দেহস না কী রং?’
তরিকুল চুপ করে থাকে। হাক্কানি আবার জিজ্ঞেস করে, তার কণ্ঠে থাকে এক অদৃশ্য তাড়া।
‘তরিকুল, তুই ক্যান জিগাইলি নালতার কী রং? তুই নালতা দেহস নাই কখনো?’
উত্তরে তরিকুল ডানে বামে মাথা দোলায়।
হাক্কানি হেসে ফেলে। তার বুক জুড়ে হঠাৎ যে ভয়ংকর অজানা চাপ সৃষ্টি হচ্ছিল সেটা মুহূর্তেই কেটে যায়। কালোবোর্ডে সাদা চকের আঁকা অক্ষরের মতো ঝকঝকে একখানা হাসিতে হাক্কানির মুখ ভরে ওঠে। তরিকুলের পিঠ চাপড়ে দিয়ে সে বলে, ‘অ! এই কথা? চল তোরে আজকাই নালতাফুলের ঝাড় দেহামু, কী সুন্দর সেইটা!’ সে হড়বড় করে নালতার গল্প বলতে বলতে পা চালায় মন্তুদের ঘরের দিকে। পুঁটির বিলে ভরা বর্ষায় যখন থইথই জল, সে জল নাকি আয়না হয়ে আকাশের দিকে বুক মেলে দেয়। আকাশ তার মুখ দেখতে আসে ওই আয়নায়। পুঁটির বিল তখন আকাশের নীলে লীন হয়ে যায়। ওই নীলের একটুখানি নীলেই হলো নালতার রং। হালকা নীল। তরিকুল চোখ বড়ো বড়ো করে শুনছিল, হঠাৎ সে থমকে দাঁড়ায়। হাক্কানি পেছনে ফিরে জানতে চায় ফের কী হলো। কিছু না বলে, ফুলগুলো আবার হাক্কানির চোখের সামনে ধরে ধীর গলায় তরিকুল বলে, ‘এইগুলান ডাকুর। রং হইল বাচুখালার ছোট্ট মাইয়া রুমুর গালের মতন।’ হাক্কানির চোখের সামনে ভেসে ওঠে তিন বছরের রুমুর হালকা গোলাপি মুখ। তরিকুলকে আবার বাচ্চাকাচ্চারা বেশ পছন্দ করে।
গ্রামের সব পিচ্চিদের কোলে নিয়ে ঘুরা, ঘোড়া সেজে পিঠে চড়ানো, এটা-সেটা খেতে দেওয়া এসব তার রোজকার কাজ। তার মায়ের ছোট্ট একটা চায়ের দোকান, সেই দোকানের তাক থেকে রোজ গোটাকতক লজেন্স চেয়ে নিয়ে যায় সে এই পিচ্চিবাহিনীর জন্য ফুলের রঙের বর্ণনা দিতে গিয়ে সে রুমুর মিষ্টি চেহারার কথা বলবে তাই তো স্বাভাবিক। হাক্কানির মাথায় তখন এসব নয় বরং ঘুরছে অন্য ব্যাপার। ডাকুরকে সে নালতা দেখছে কেন? ভাবতে ভাবতেই সে একটা ফুল হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল কাছ থেকে। পরক্ষণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠের মতো সেটা ছুড়ে ফেলে দিলো নিচে। তরিকুল চমকে উঠে জানতে চাইল কী হয়েছে। হাক্কানি ভয় পাওয়া অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে, ‘নালতা ডাকুর হইয়া গেল চোখের সামনে! ক্যামনে?’ তরিকুল স্পষ্ট দেখতে পায় হাক্কানির সমস্ত শরীর কাঁপছে। তাকে ঝাপটে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করে তরিকুল কিন্তু লাভ হয় না। হাক্কানি বিড়বিড় করে বলতে থাকে সেই বেলের কথা, তাদের পুকুর কীভাবে পুঁটির বিল হয়ে গেল এক ভোরবেলা, ওই পাঁচ পা-ওয়ালা বেড়াল ইত্যাদি ইত্যাদি।
‘তরিকুল, গত মাসে ঘুম ভাইঙে গেছিল আমার একবার, চোখ খুইলে দেখি মিশমিশা আন্ধার। রাইত হইছে মেলা, বাইরে গেলাম পেসাব করতি… তারপর… বদনাটা লইয়া যেই উঠান পারাইয়া এক কোনায় বসবার লাগছি দেহি ধুম কইরা সুরুয উঠছে পুঁটির বিলের ওপর, কারেন্টের বাত্তির লাহান। চোখ পুইড়া যাইতেছে সেইটার আলোতে। প্রথমে ভাবলাম এইটা ভূতের বাত্তি। ভয়ে তো কাপড়ে-চোপড়ে পেসাব হইয়া গেল রে তরিকুল। তয় আমি স্পষ্ট দেখছি ওইটা সুরুয আছিল। তার চাইয়া বেশি ভয় পাইছি কহন জানস?’
বলতে গিয়ে তার শরীরের সবক’টা লোম দাঁড়িয়ে পড়ে। সেটা লক্ষ্য করে তরিকুলেরও ভয় লাগতে থাকে।
‘ভরদুপুরে আমাগো ঘরের পাশের ছোট্ট পুসকুনিতে একটু ডুব দিয়া শরীর জুড়াইতে গেছিলাম গত সপ্তাহ। বিশ্বাস কর, এক ডুব দিয়া ভুস কইরে মাথা তুলছি যেই দেহি আমি পুঁটির বিলের মাঝে!’
তরিকুলের চোখভর্তি অবিশ্বাস দেখে হাক্কানি খানিকটা আশাহত হয়। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলে, ‘জানি এইসব বাকিগো লাহান তোরও বিশ্বাস করতি কষ্ট হয়। তয় আমি মিছা কথা কই নাই। এই দেখ…’
পকেট থেকে দুমড়ানো-মুচড়ানো কয়েকখানা কাগজ বের করে তরিকুলের হাতে দেয় সে। অনেকগুলো সংখ্যা-সবক’টাই আবার শূন্য ও এক। এক গাদা হিজিবিজি সংকেত, কত কত শব্দ তাতে! প্রথম দেখায় মনে হয় অনেকগুলো কালো পিঁপড়ে এলোমেলোভাবে পাতা জুড়ে ছুটছে।
মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে না পারলেও এতটুকু দুজনেই বুঝতে পারে এটা ইংরেজি ভাষা। জব্বার স্যার রোজ চটাং করে টেবিলের ওপর বেত রেখে হুংকার দিয়ে বাক্য গঠন পড়ান। বর্ণগুলো তাই বেজায় পরিচিত ঠেকে কিন্তু শব্দগুলো তেমন একটা নয়। হাক্কানি জানায়, যেদিন সে মাঝ রাত্তিরে সূর্য উঠতে দেখেছে গতকাল ওই জায়গায় কাগজগুলো পড়ে থাকতে দেখেছে। তবে যেটা সে বলল না সেটা হলো নিজের ঘর লাগোয়া এঁদো ডোবার মতন ঘোলা পানির পুকুরে ডুব দিয়ে যেবার সে নিজেকে পুঁটির বিলে আবিষ্কার করে, তখন সে স্পষ্ট শুনেছে কেউ এক জন স্পষ্ট স্বরে তার নাম ধরে কিছু একটা বলেছে। যদিও সে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি।
ততক্ষণে বেলা পড়ে সন্ধের দিকে হাতছানি দিচ্ছে। লু হাওয়া থেমে গেছে অনেক আগেই। ধীরে ধীরে চাদর গুটিয়ে দিন ছেড়ে যাচ্ছে চক্রপুর গ্রামের আকাশ, চারদিকে এখন শত শত পাখপাখালির জোর কলরব থাকার কথা। কিন্তু চারদিকে এক বিষণ্ন নীরবতা। গোধূলিকে এত ঝটকায় সরিয়ে দোয়াতের কালির মতো গাঢ়, আদিম সন্ধ্যা আকাশ চুইয়ে নেমে আসছে। কেরোসিন ফুরোতে থাকা কুপিবাতির মতো ম্রিয়মাণ হয়ে আসে আলো। এই কম আলোতে এত ছোট্ট ছোট্ট লেখা ঠিকমতো বুঝা দায়৷ চারদিকে তাকিয়ে হাক্কানি হঠাৎ ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়ে।
তরিকুলের হাত শক্ত করে ধরে দ্রুত পায়ে রওনা দেয় বাড়ির দিকে, বলে ‘বাড়ি চল তরিকুল, চারদিকে আন্ধার নামতিছে।’ তবে তার বিড়বিড় করে কথা বলা থামে না। ‘কেউ দেহে না, ক্যান দেহে না? মা দ্যাখছিল? ওই যে উকুন বাটতে… আসলেই বাটতিছিল?!’
তরিকুল হাক্কানির মুখে এই কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকায়।
‘কোনো জায়গায় গিঁট পইড়া আছে, শক্ত গিঁট তরিকুল, বেজায় শক্ত। কেউ বুঝে না, কেউ না!’
তরিকুলের হঠাৎ ভয় লাগতে থাকে। তার মনে হয় হাক্কানি পাগল হয়ে যাচ্ছে। ভয়ে সে আরও দ্রুত পা চালায়। পুঁটির বিলের পাশ ধরে যে রাস্তা সেটা ধরে মিনিট দশেক হাঁটলেই প্রথমে তরিকুলের ঘর। সেই রাস্তা ধরে আরও দশ মিনিট মতন হেঁটে গেলে গ্রামের শেষ মাথা, হাক্কানিরা থাকে ওখানে। পুরোটা পথ জুড়ে হাক্কানি একটানা, এলোমেলো কথা বলে চলে।
‘গেল বর্ষায় কুয়াশা নামছিল, নামছিল না? বক্কর ভাইয়ের পোয়াতি গরুর পেট হুট কইরে খালি হইয়া গেলে। জিগাইলাম যখন বেবাকতে উলটা আমারে বলে, কই? গরু পোয়াতি ছিল কবে?… আমি কি পাগল হইয়া যাইতাছি’ শেষের কথাটা সে বেশ জোরেই বলে উঠে টের পায় তার হাতের মুঠোয় ধরা তরিকুলের হাত কেঁপে উঠেছে থরথর করে। ছোট্ট তরিকুলকে এভাবে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য হাক্কানির হঠাৎ বেশ বিব্রত লাগল। সে তরিকুলের দিকে চেয়ে বলতে লাগল, ‘তরিকুল ভয় পাইছ না, কিছু একটা গোঁজামিল আছে ঠিক তয় সব ঠিক হইয়া যাইব।’ তরিকুল তার কথা শুনল কি না সেটা বোঝা গেল না কারণ তার পুরো শরীর অকল্পনীয়ভাবে কাঁপছে আর ভয়ার্ত চোখদুটো তাকিয়ে আছে পুঁটির বিলের উত্তরের কোনায়। সেদিকে চোখ তুলতেই দেখলো জাবের চাচার পাটের খেত যেটা নিয়ে আজ সকালে সে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেছিলেন এ বছর কোনো পাট তিনি বুনেননি। অথচ গত সন্ধ্যাতেও হাক্কানি ওই পাটখেতের পাশ দিয়ে হেঁটে রহমান চাচার মুদির দোকানে গেল কেরোসিন কিনতে। আর সকালে সেটা ভোজবাজির মতো হাওয়া দেখতেই জানতে চেয়েছিল পাট সব কেটে পানিতে জাগ দিয়েছে কি না। আর জাবের চাচা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জানালেন পাটই বুনেননি, কীসের আবার পাটখেত? সেই পাটখেতের দিকে বিস্ফারিত চোখে তরিকুল আর হাক্কানি দুজনই চেয়ে আছে। কারণ সেটা ঝুলছে পুঁটির বিলের উত্তরের কোনার আকাশ থেকে উপুড় হয়ে।
তরিকুলকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে হাক্কানি তাড়াহুড়ো করে নিজের মাটির ঘরটায় ঢুকে দরজার হুড়কো তুলে দেয় দ্রুত।
অন্যদিকে ঘরে ঢুকতেই তরিকুল ফ্যাকাশে, ভয় পাওয়া দৃষ্টি দেখে হোসেফা চিন্তিত হয়ে পড়ে। হারিকেনের সলতেটা ঠিক করে দৌড়ে আসে তরিকুলের কাছে—বারবার জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে, কোনো কারণে ভয় পেয়েছে কি না। জবাব না দিয়ে তরিকুল পকেট থেকে ফুলগুলো বের করে হোসেফার সাদা শাড়ির আঁচলের ওপর বিছিয়ে দেয়। হোসেফা স্মিত হেসে তরিকুলকে বুকে টেনে নিয়ে কপালে চুমু এঁকে দেয়।
‘বাপজান, এইবার বুঝছি কী হইছে। তুই দক্ষিণের জংলায় ক্যান গেছস? অমন জায়গায় পাগল তো পাগল, ভূতও যায় না। আর জীবনে কহনো ওইহানে পাও রাখবি না বাপ। ওইহানে যাইয়া নিশ্চিত ভয় পাইছস তুই।’
হতভম্ব তরিকুল জানতে চায়, কেন তার মা মনে করল সে জংলায় গিয়েছে। ভরা দিনের আলোতেও কেউ ওই দক্ষিণের জংলার ছায়াও মাড়ায় না। এত ঘন জায়গাটা, সারাক্ষণ কেমন যেন খারাপ করা অন্ধকার সেখানে ছেয়ে থাকে। তার ওপর আছে মশা ও সাপখোপের উপদ্রব। ওই জংলায় গিয়ে কোনো না কোনো অঘটনের শিকার না হয়ে ফিরে আসাটা বিরল। হোসেফা হেসে ফুলগুলো নাকের কাছে তুলে ঘ্রাণ নেয়, ‘না হলে এই চালতার ফুল তুই পাবি কনে বাপজান? জংলায় না সব চালতার গাছে, গ্রামে তো আর কোনো জায়গায় চালতা ফলের গাছ নাই।’
তরিকুলের হঠাৎ চোখ ভেঙে ঘুম আসতে থাকে অসম্ভব ক্লান্তিতে। হোসেফা বেশ খানিকক্ষণ তাকে বকাঝকা করে খাবার আনতে গেল কিন্তু তরিকুল মাথা নেড়ে জানায় সে খাবে না। হোসেফা আরেক দফা বকা দিয়ে হারিকেনটা তুলে পাকঘরের দিকে যায় ভাত আনতে। ছোটো রুমটার আনাচ-কানাচ গভীর অন্ধকারে ডুবে যায় তৎক্ষণাৎ।
যদিও শত প্রশ্ন আর আতঙ্কে তরিকুল জেগে থাকতে চায়। তার মনে হতে থাকে হাক্কানির সাথে থাকতে থাকতে সেও পাগল হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে হঠাৎ ভাসতে থাকে দক্ষিণের জংলার সারি সারি চালতা গাছের ছবি। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে প্রতিটা গাছ। সাদা সাদা ফুল। তরিকুল সেই ফুল ছিঁড়ে নিচে ফেলছে আর হাক্কানি তার লুঙ্গির কোঁচড়ে তা কুড়িয়ে রাখছে। সে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে, আজ আসলে সারা দিন সে কোথায় কাটিয়েছে? কদমপুকুরের পাড়ে নাকি দক্ষিণের জংলায় যেখানে প্রায়ই হাক্কানি তাকে যেতে বলে?
কিন্তু সব প্রশ্ন নিয়ে অতলান্ত ঘুমে তলিয়ে পড়ে তরিকুল।
ওদিকে হাক্কানির রাত কাটে অস্থিরতায়। মাটির মেঝেতে চাটাই পেতে তিনটে কাঁথা দিয়ে নিজেকে ঢেকে, জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় সে। শত শত প্রশ্ন, ছবি, সংখ্যা তার মাথার মধ্যে শুশুকের মতো হুস করে ভেসে উঠে ফের ডুব দেয়। তীব্র যন্ত্রণায় মাথা চেপে ধরে রাখে সে। পাশেই বেতের খাটে তার মা বেঘোর ঘুমে পড়ে আছে। হাক্কানি অনেক চেষ্টা করেও সেই ঘুম ভাঙাতে নিত্যদিনের মতোই ব্যর্থ হলো। রোজ এমনই হয়। নুরুননেসার ছোট্ট একটা মুদি দোকান আছে। হারুন মিয়া মারা যাবার পর সে এই দোকানটা বসায়। প্রথমে গ্রামের লোকজন বেশ নাক সিটকালো, রাগারাগি করল, হুমকিও দিলো অনেকে। তারা বলেছিল মেয়ে মানুষ দোকার নিয়ে বসলে সমাজ নষ্ট হবে। ধীরে ধীরে সবাই অবশ্য মানিয়ে নিয়েছে ব্যাপারটা। তার দেখাদেখি হোসেফাও পরে সংসারের হাল ধরে চায়ের দোকান বসিয়ে।
রোজ ভোরে উঠে নুরুননেসা দোকানে চলে যায়। দুপুরে ফিরে কিছু রান্না গুছিয়ে ফের গিয়ে ফিরে আসে সন্ধ্যায়। হাক্কানির সাথে তার মায়ের কথা তো দূর, দেখাই হয় না ঠিকমতো। গ্রামময় ঘুরে ঘরে ফিরে হাক্কানি দেখত হাঁড়িতে ভাত-তরকারি আছে, নুরুননেসা হয় দোকানে নাহয় গভীর ঘুমে। সেই ঘুম শতবার মা ডাকেও সে ভাঙতে পারে না কখনো। আজও ঠিক একই দশা। কিন্তু আজ কানের কাছে মশার সেই বিরক্তিকর পিনপিন শব্দ নেই, রোজকার মতো ভুলু-মুলু খানিক পরপর ঘেউ ঘেউ করে ডাক ছাড়ছে না, নুরুননেসাও বৈঠা চালানোর মতো নাক ডাকছে না। চারদিকে গুম ধরানিয়া এক নিস্তব্ধতা রাতের সব শব্দ বোবা করে রেখেছে। অসহ্য অস্থিরতা আর মাথা ব্যথায় পুরো রাত ছটফটিয়ে ভোর বেলা ক্লান্তিতে তার চোখ লেগে এলো। ঘুম যখন ভাঙল বেলা তখন সকাল আটটা।
মেঘ ভাঙা রোদ ক্যাটক্যাটে তীব্রতা নিয়ে চক্রপুরের প্রতিটা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছিল। চারদিকে নানান চিহ্ন জানান দিচ্ছে রাতভর তাণ্ডব চালিয়েছে চাড়াল নদীর বুক ভেঙে আসা অশান্ত বন্যার পানি। নবজাতকের তীব্র কান্নায় খানিকটা অবাক হয়ে পাশের বাড়ির আম্বিয়া চাচিই প্রথম ব্যাপার কী তা দেখতে এসেছিলেন হোসেফাদের ঘরে। তার চিৎকার-চ্যাঁচামেচিতে পুরো গ্রাম জড়ো হলো। নব্বই বছরের থুত্থুড়ে বুড়ি তরাবুন বানু ছাড়া যে যেভাবে পারল ছুটে এলো। গায়ে সাবানের ফেনা আর এক হাতে কসকো সাবানসহ সফুর কবিরাজ এলো। তবারক মিয়া লাঠি হাতে হাঁপাতে হাঁপাতে এলো; সুরমা বেগম যখন এলো তার হাতে তখনো মাজতে থাকা এঁটো বাসন, পূর্বপাড়ার বজল তো বদনা না রেখেই এসে পড়ল! নুরুননেসা তার বেতের খাট থেকে এক ঝটকায় তড়াক করে উঠে ছুট দিয়ে এসে ধড়ফড়িয়ে বসে পড়ল হোসেফার ঘরের দাওয়ায়।
চাচির চিৎকারে তার মাসহ সবাই হোসেফাদের ঘরের দিকে ছুটছে দেখে হাক্কানিও দৌড়ে যায়। উঠোনের পানি ভেঙে ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাটির মেঝে, বুকের ওপর নিশ্চল সাদিকুলের মাথা আর কোলের ওপর তখনো নাড়ি না কাটা সদ্য ভূমিষ্ট এক কন্যাসন্তানকে জড়িয়ে ধরে হোসেফার ফ্যাকাশে দেহ পড়ে আছে। তারস্বরে কেঁদে যাচ্ছে ওই একটুখানি বাচ্চা। সবাই তড়িঘড়ি করে সদর হাসপাতালের দিকে রওনা দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে। সমস্ত গ্রাম জড়ো হয় ওই ঘর, উঠোন আর লাগোয়া রাস্তায়। পরিচিত-অপরিচিত-অর্ধ পরিচিত মুখগুলোর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে হতভম্ব।
চাচির চিৎকারে তার মাসহ সবাই হোসেফাদের ঘরের দিকে ছুটছে দেখে হাক্কানিও দৌড়ে যায়। উঠোনের পানি ভেঙে ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাটির মেঝে, বুকের ওপর নিশ্চল সাদিকুলের মাথা আর কোলের ওপর তখনো নাড়ি না কাটা সদ্য ভূমিষ্ট এক কন্যাসন্তানকে জড়িয়ে ধরে হোসেফার ফ্যাকাশে দেহ পড়ে আছে। তারস্বরে কেঁদে যাচ্ছে ওই একটুখানি বাচ্চা।
হাক্কানি রাস্তায় বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কখন সে এলোমেলোভাবে হাঁটতে হাঁটতে পুঁটির বিল এসে রাস্তার ধারে বসে পড়ল জানে না। ঠিক কতক্ষণ এভাবে কেটে গেল তাও ঠাহর করে উঠতে পারে না সে। লুঙ্গির কোঁচড়ে হাত দিয়ে দেখে কাগজগুলো এখনো আছে। তরিকুলের কী হলো, কোথায় গেল ভাবতে ভাবতে বিমর্ষভাবে কাগজগুলো খুলে দেখে আবার।
অনেকক্ষণ পর তার মুখে ফুটে উঠে একটা তির্যক হাসি। ধীরে ধীরে সে মুখ তুলে ওপরের দিকে তাকায়। শব্দবিহীন একটা তির্যক হাসি নিয়ে সে কাগজগুলো ছুড়ে দেয় পুঁটির বিলে। পানিতে ডুবে যাওয়া কাগজের শেষ পাতার ছোটো ছোটো অক্ষরে লেখা, ‘ইমার্জেন্সি সিস্টেম রিবুট।’
মনিটরে একসাথে অনেকগুলো লালবাতি তীব্র শব্দে জ্বলে ওঠে। শূন্যে ভাসমান অতিকায় কক্ষটিতে সবাই আতঙ্ক নিয়ে স্ক্রিনের দিকে ফের তাকায়। দেখে, হাক্কানির সবজান্তা ক্রূর হাসি এখনো মুছে যায়নি বরং বিস্তৃত হচ্ছে। চরম বিরক্তি আর রাগ নিয়ে স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নেয় অপারেশন ডিরেক্টর। চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে থাকে, ‘হাক্কানি, ইউ ব্লাডি গ্লিচ!’
পড়ালেখা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। বর্তমানে চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। লিখতে ভালোবাসেন, তবে তারচেয়েও বেশি ভালোবাসেন পড়তে।