স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্রের সোনার খনি বলা যায় ইরানকে। একের পর এক মাস্টার ফিল্মমেকার আর নিজেদের সেরা কাজ নিয়ে তারা বিশ্বের বুকে হাজির হয়েছেন। কিন্তু এক জায়গায় এসে তারা ঠিক ততটা সফল হতে পারেননি, সেটা মার্কিন অস্কার বিজয়। আসঘার ফারহাদী সেই অসাধ্য সাধন করেছেন এবং একই কাজ তিনি করেছেন দুইবার। যা ইরানের চলচ্চিত্রের জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। সে অভিজ্ঞতার পুরোটা হয়তো এই ছোট্ট সাক্ষাৎকারে পাওয়া যাবে না, তবে তার আমেজটা পাওয়া যাবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন চলচ্চিত্র সাংবাদিক ম্যাট ফাগেরহোম। প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৭ সালে। শ্রী-র জন্য সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন ইলিয়াস কমল।
যতদূর মনে পড়ে ২০১২ সালে শিকাগো চলচ্চিত্র সমালোচক এসোসিয়েশনের সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে ‘এ সেপারেশন’ কে পুরস্কার দেয়, আপনি সেটা গ্রহণ করেছিলেন।
শিকাগো আমি পছন্দ করি, আমার তৃতীয় ছবি ‘ফায়ারওয়ার্কস ওয়েডনেসডে’ নিয়েও আমি ওখানে গিয়েছি, যা কি না শিকাগো ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে শীর্ষ পুরস্কারও পায়। আমি যখন সিনেমা নিয়ে বিভিন্ন দেশে যাই, বিভিন্ন শ্রেণির ও ভাবনার দর্শকের সামনে নিজের সিনেমা উপস্থাপন করি তখন বুঝতে পারি প্রতিটা সিনেমার জন্যই মানুষ যে রকম প্রতিক্রিয়া জানায় তা খুবই ইন্টারেস্টিং। এমন না যে একই সিনেমা নিয়ে বিভিন্ন দেশের দর্শকের প্রতিক্রিয়া প্রায় একই রকম, তবে একটা জিনিস মনে হয় যে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন রকমের দেখতে হলেও আসলে একই রকম।
আপনি তো থিয়েটার নির্দেশনা নিয়ে মাস্টার্স করেছেন। ‘সেলসম্যান’ সিনেমা কি আপনার সেই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে অনুপ্রাণিত?
যদি আমার থিয়েটার লাইফ না থাকত, তাহলে আজ আমি এখানে আপনার সামনে বসে থাকতাম না। ওই সময়টা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন ইরানের বাইরে বিদেশের নাট্য-সাহিত্যের পরিচয় তুলে ধরি সেই সময় আমি ওই সময়ের আমার রুচিটাও উন্নত করি। আর্থুর মিলার আমার ওপর বেশ প্রভাব ফেলেছে। মিলার যে চরিত্রগুলোকে শুধু সাদা-কালোর মতো করে ভাগ করে না এ জন্যই তাকে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। যা আমার কাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধরনও বলা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, উইলি লোমান ভুল ছিল বা তার ছেলেই ঠিক। কখনো আমরা উইলি লোমানের পক্ষে, আবার কখনো তার ছেলের পক্ষে। আমার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমি এই ছবিতে (সেলসম্যান) থিয়েটার এবং বাস্তব জীবনের একটা রেখা বা পার্থক্য দূর করতে পেরেছি। তারা পরস্পর পরস্পরের সাথে মিশে গেছে। আমি চাইছি দর্শকদের মধ্যে এই প্রশ্নটা উঠুক, তারা কি থিয়েটার দেখছে না আসলেই বাস্তবে ঘটছে ঘটনা; আমি সত্যি সত্যিই চাইছি বিষয়টা।
‘এবাউট অ্যালি’, ‘এ সেপারেশন’ এবং ‘দ্যা সেলসম্যান’ সিনেমার ঘটনাগুলো খুবই দ্রুত ঘটতে থাকে, যা দর্শকদের ব্যক্তি জীবনের মধ্যেও একই রকম ভাবে প্রভাব ফেলে।
এটা অনেকটা বিলিয়ার্ড বোর্ডের মতো। আপনি সবগুলো বলকে টেবিলে ছেড়ে দিলেন, তারপর কোনো একটাকে মারলেন অন্য আরেকটা বল দিয়ে, এগুলো গিয়ে অন্যগুলোকেও এলোমেলো করে দিল। আমার সিনেমাযাত্রার শুরুর দিকে স্বাভাবিক প্রসেসেই সিনেমার চরিত্রগুলো আসত। এক সময় দেখা যায় তাদেরকে এমন কিছু এসে আঘাত করছে যা সাধারণত তাদের মধ্যে ছিল না। আমরা যখন সমস্যার মধ্যে থাকি, তখন আমাদের নিজেদেরকেও বুঝতে অসুবিধা হয়। কল্পনা করুন তো, কোথাও যাওয়ার জন্যে গাড়িতে বসে আমরা আলাপ করছি, এমন সময় বন্দুক নিয়ে গাড়িতে এসে কেউ হামলা করল। তখন আর স্বাভাবিক আমরা থাকতে পারি না। একেবারেই ভিন্ন মানুষ হয়ে ওঠি।
ভুল বোঝাবুঝির কারণেই সাধারণত সংকট তৈরি হয়, এটা কি বৈশ্বিক পরিস্থিতির একটা সংক্ষিপ্ত রূপ?
এই ভুল বোঝাবুঝিগুলো এ সময়ে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। নতুন সময়ে এসে, প্রযুক্তির নানা মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার মানুষের সাথে অনুভূতি প্রকাশ করছি, এই জায়গায়টায় এসে আমাদের কেবল সাংষ্কৃতিক ভুল বোঝাবুঝিগুলোই বাড়তে থাকে। যখনই আমরা বেশি বেশি কথা বলি, তখনই আমাদের এই ভুল বোঝাবুঝিগুলো তৈরি হয়। কখনও কখনও আমরা বুঝতে পারি না যে অন্য লোকজন আমাদের কী বলছে, আবার কখনও কখনও আমরা অপর ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া এবং মনের ভাবটাই বুঝতে পারি না। আজকাল আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নৈতিক প্রশ্নই হয়ে দাঁড়ায় এটা। এছাড়াও আমার সিনেমায় বহু দিক আছে যেসব জায়গা থেকে দর্শকরা মনযোগ দিতে পারে, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মোরাল জায়গার দিকে মনযোগ দিতে পছন্দ করি।
নৈতিক দিকগুলো প্রতিটি দৃশ্যের ফ্রেম নির্মাণে কতটুকু প্রভাব ফেলে?
আমি ক্যামেরার মাধ্যমে দর্শককে সব সময়ই একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি চাই না আমার ক্যামেরা কোনো চরিত্রকে ভালো-মন্দ বিচার করুক। আমি চাই বিভিন্ন চরিত্রের মাঝে যে দূরত্ব তা একই রকম থাকুক। সেটে আমি খুবই সিরিয়াস ব্যাক্তি। আমি রাগি নই, কিন্তু সিরিয়াস; আর আমি জেনে রাখতে চাই প্রতিটা ঘটনার পরবর্তীতে কি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। আমি ইতোমধ্যে মনে মনে সব পরিকল্পনা করে রেখেছি, কিন্তু ওটাই করব বা করতে হবে এমনটা আমি ভাবি না। যদি নতুন কিছু আমার মাথায় আসে তাহলে আমি অন্তত এটা বলব না, না এই চিন্তা করা যাবে না। এ নিয়ে যেহেতু আমি আগে ভাবিনি তাই এটা করব না। আমি সেটা (নতুন চিন্তাটা) করার চেষ্টা করব। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে এটা করতে চাইব আমি, অনেকটা থিয়েটার এবং তথ্যচিত্রের মতো করে করব। এইগুলো আসলে এক রকম হবে না, তবে অবশ্যই দুইটার মধ্যে কিছুটা ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা তো থাকবেই।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমার সিনেমাগুলো আমার কাছে তথ্যচিত্রের মতো। তারা অনেকটা বাস্তব জীবনের মতো, সিনেমার মতো না। সবাই মিলে কাজটা এমন করে উপস্থাপন করতে হবে যেন বাস্তবের মতো হয়। এটা বাস্তবের সাথে মিলে গিয়ে থিয়েটারের মতো এবং রূপান্তরও করতে চাই, তবে তাদের অবশ্যই এগুলি এমনভাবে করা উচিত যা ন্যাচারাল বলে মনে হয়, যেন তারা নিজেদের ভেতর থেকেই উঠে আসে। ইরানের লোকজন যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি স্ক্রিপ্টে লিখেছিলেন? নাকি অভিনেতারা ইম্প্রোভাইজড করেছে?’, এটা আমাকে দারুণ আনন্দিত করে যে তারা বিষয়টা ফিল করতে পেরেছে। এগুলি তাদেরই কথা, আমি লিখেছি এমন বলেই নয়।
শাহাব হোসাইনি তো কানে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিল, একই সাথে আপনার ‘এবাউট এলি’ এবং ‘এ সেপারেশন’ সিনেমায়ও অভিনয় করেছিলেন। তার সাথে কাজ করার মূল কারণ কি?
‘এবাউট এলি’র কাস্টিং এর কাজ যখন করছি তখন আমি শাহাবকে নেওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম। সে এর আগের ছবিগুলোতে এমন স্বাভাবিক অভিনয় করেছিল যেমনটা আমি সাধারণত পছন্দ করি না। কিন্তু প্রথমদিকে কিছুদিন যখন সে রিহার্সেলে আসত, তখন আমি তার চোখে এমন কিছু দেখেছি যা দেখে মনে হয়েছে তার সাথে ভালো কাজ করা সম্ভব। সে খুবই আবেগী মানুষ এবং আমাকে আবেগপূর্ণ দৃশ্য নির্মাণের জন্য যা যা করা দরকার সেসব করতে খুবই সহযোগিতা করে এসেছে।
নারী চরিত্র নির্মানে আপনি দারুণ, ‘দ্যা সেলসম্যান’ ছবির ‘রানা’ও তার ব্যাতিক্রম না।
আমি সত্যিই জানি না তারা কোথা থেকে আসে, তবে অবশ্যই তারা আমার সম্পূর্ণ জীবন থেকেই আসে নিশ্চয়ই, আমি পুরুষদের চেয়ে নারীদেরকে বেশি সম্মান করি। মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি দায়িত্ব নেয় এবং পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি দয়ালু। নারীরা সন্তান জন্ম দেয় যেমন তেমনি তারা ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করে বেশি, অন্যদিকে পুরুষরা অধিকাংশেই তাদের অতীত নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। সম্ভবত আমাদের দেশের সীমাবদ্ধতার জন্যই পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি চেষ্টা করে এবং সে কারণেই তারা আরও শক্তিশালী। ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি যাচ্ছে। আমি যখন ফ্রান্সে গেলাম ‘দ্যা পাস্ট’ নির্মাণের জন্য তখন অন্য সিনেমার নারী চরিত্রের চেয়ে এই ছবির নারী চরিত্র খুব বেশি আলাদা ছিল না। এমনটা হতে পারে ইরানে নারীদের সম্পর্কে আমার যে ভাবনা তৈরি হয়ে আছে যেখানেই কাজ করতে যাই সেখানেও আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় না।
বিখ্যাত চলচ্চিত্র গবেষক রজার এবার্ট ২০১১ সালে তার প্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘এ সেপারেশন’ রেখেছেন, আর লিখেছেন, ‘only agenda seems to be to express empathy’।
ফারসি ভাষায় একটি শব্দ আছে ‘একদেলি’ যার অর্থ সহমর্মীতা, যা নিয়ে দর্শকদেরকে আমার সিনেমার চরিত্রদের সাথে একাত্ম হতে আহ্বান জানাই। আমি চেষ্টা করি আমার চরিত্রগুলোকে যেন দর্শকরা বুঝতে পারে, যেন ফিল করতে পারে। এমনকি যদি তারা এমন কিছু করে যার সাথে আপনি একমত না, তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন তারা কেন এটি করছেন। ইরানে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে, লোকজন যখন একটি সিনেমা দেখতে যায়, সিনেমা দেখা শেষে তাৎক্ষণিক অন্যের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেয়। আপনি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যান, দেখবেন আমার সিনেমাগুলো, সিনেমার চরিত্রগুলো নিয়ে একে অন্যের সাথে কথা বলছে, বিতর্ক করছে। এটা অনেকটা স্কুলিংয়ের মতো আমার কাছে। যাঁরা আমার সিনেমাগুলো দেখেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গী জানতে ও বুঝতে এগুলো আমাকে সহযোগিতা করে। আমি এভাবেই ভাবি বিষয়টা। সরকারের বেশ কিছু উগ্র সমালোচক রয়েছেন যারা আমার সিনেমাগুলোকে অপছন্দ করেন। তারা মনে করে আমার কাজটি পশ্চিমা দর্শকদের জন্য যা ইরানের একটা বাজে দিক তুলে ধরা হয়।
ইরানিয়ান সিনেমায় ‘এ সেপারেশন’ তাৎক্ষণিক কি কোনো প্রভাব ফেলেছে?
সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলেনি, তবে তার প্রভাব আছেই। ‘এ সেপারেশন’ এবং ‘এবাউট এলি’ ইরানিয়ান সিনেমায় নতুন ভাষার সূচনা করেছে। এটা অনেকটা দুর্লভ ড্রামার সাথে রিয়েলিটির বোধের সম্পর্ক তৈরি করা। হয় দর্শকরা এই ছবি পছন্দ করবে না হয় সমালোচনা করবে— এর মধ্যে তারা পছন্দই করেছে। এই সিনেমাভাষা সিনেমার সমালোচক আর দর্শকদের একত্রিত করতে পেরেছে। সাধারণ দর্শকরা সিনেমার গল্প পছন্দ করেছে, আর সমালোচকরা পছন্দ করেছে বাস্তবতা। এ জন্যেই দুই পক্ষই আমার সিনেমা খুবই পছন্দ করেছে।
আমি মনে করি আমার ওপর বিলি ওয়াইল্ডারের প্রভাব আছে। যদিও তার গল্প কমেডি ধারার, কিন্তু বলার ধরণের জন্য দুর্দান্ত সাসপেন্স তৈরি করে। একই কথা আমরা হিচককের ক্ষেত্রেও বলতে পারি, যদিও হিচককের মুভিতে রিয়েলিজম খুব একটা শক্তিশালী না। কমেডির হিসেবে আমি বিলি ওয়াইল্ডারের কাজের ধরনের কাছাকাছি থাকতে চাই। তার গল্পে সাধারণ মানুষ অনন্য অসাধারণ পরিস্থিতির মধ্যে পরে যায়, আর এটার সাথে ডিল করে। একই সাথে সে (বিলি ওয়াইল্ডার) সমাজের সমালোচনার দ্বারও খুলে রাখে।
আমি সবসময় খেয়াল করেছি আপনি আপনার গল্পগুলোকে একটা প্রশ্ন দিয়ে শেষ করেন, কীভাবে?
আমার সিনেমার গল্পগুলো উন্মুক্ত না। ওগুলো ওখানেই শেষ। এগুলো উন্মুক্ত কোনো গল্প নয়, যে এরপরও কিছু থেকে যাবে। আমেরিকায় যেটাকে উপসংহার টানার মতো করে বলা হয়। ‘দ্যা সেলসম্যান’ সিনেমার শেষে আমরা জানি যে একটি মূল চরিত্রের কী হয়েছে; তবে মূল চরিত্রগুলির গল্পটি এখনও উন্মুক্ত। এটা অনেকটা ক্রেডিটলাইন শুরু হবার সাথে গল্পের ধারবাহিকতা শুরু হয়ে যাওয়ার মতো। এমনিতেই আপনি ফ্রেমের মধ্যে যা দেখেন এগুলোই এর বাইরে এসব চরিত্রের অবস্থান সম্পর্কে চিন্তা করতে সহযোগিতা করে। সিনেমাটির বেশিরভাগ অংশ অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরেই ঘটে, কিন্তু যখন ছবিটা শেষ হয়ে যায় তখন মনে হয় আপনি পুরো শহরটি দেখে ফেলেছেন।
জন্ম ১৯৮৪; ময়মনসিংহ। শিক্ষা : স্নাতকোত্তর। পেশা : সাংবাদিকতা।