গান গাবো বিজয়নগরে
ঝিঁঝিঁ পোকা তোমাকে
কি যে রহস্যময় লাগে
ঝোপে বাজছে ঝুমঝুম
ছরতা দিয়ে ছ্যাতর ছ্যাত
শব্দ করলে তুমি ভাবো যে
তোমার জোড়া এসে দাঁড়ালো
লক্ষ্মীপুরের ছাদে
আর যদি প্রিয় সুপারি গাছ
থেকে নেমে কাছে আসো
আমিও একটা ঝিঁঝিঁ’র
মেয়ে হবো, আমার হাত
বাড়িয়ে দিবো তোমার
ঝিঁঝিঁ পাখার ঐকতানে
আমরা বাজাবো
শিখা’পার জার্মান রিডের
হারমোনিয়াম, যদিও
ছিঁড়া তানপুরা, একটা তারের,
সেও একসাথে সংগত
করতে এসে ঝিঁঝিঁ’র এক
প্রেমিক পুরুষ হবার লোভ
সামলাতে না পেরে আমাদের
গায়ে গা ঘেঁষে বসে পড়বে
ঝিঁঝিঁ তুমি কিন্তু লাজুক
হয়ে আবার উড়ে যেয়ো না
সবাই মিলে আমরা
ঝোপে ঝোপে তারস্বরে
গান গাবো বিজয়নগরে
১৫/০৯/২০১৮
ইস্ত্রি করি তোমাদের শাদা শার্ট
তুমি অনেক স্মার্ট হয়ে রাস্তায় নামবে আজ
তোমার লাগবে ধবধবে শাদা শার্ট
শার্ট ইস্ত্রি করছিলাম আর ভাবছিলাম,
আজকেও কেউ না কেউ তৈরি হচ্ছে
রাস্তায় নামার জন্য
ইচ্ছে হচ্ছে শতশত, হাজার হাজার, লাখ লাখ
কোটি কোটি সব শার্ট ইস্ত্রি করতে লেগে যাই
কি আর করতে পারি তোমাদের জন্য?
কেঁপে কেঁপে উঠছি শার্ট ইস্ত্রি করতে করতে
ইস্ত্রি করবো তোমাদের সব শাদা শার্ট
০৪/০৮/২০১৮
বাজার
কৃষ্ণের মাছ নিয়া কাড়াকাড়ি চলে,
নকুল শ্যালক চালায় দা-বটি গলে!
মিন্টু মাছুয়া হিংসায় জ্বলজ্বলে,
জ্যান্ত মাছের আঁশ রেগেমেগে মলে!
কাতল রোহিত কাঁদে দুখী দুখী চোখে–
বিঁধিয়ে দিলে যে পেটি টংকার নোখে!
লেঞ্জা দিয়েই দিবে থাপ্পড় গালে,
যে ব্যাটা নাসিকা চোখা করে হাল-চালে!
২৪/০৩/২০১৭
দীর্ঘ দীর্ঘ ঘুম
ঝড় আসলে উটপাখি
বালির মধ্যে মুখ
গুঁজে রাখে যেমন
আমরাও বালিশে মুখ
গুঁজি আর ভাবি
কোথাও হয়না তো
তেমন উপদ্রব, তেমন
ক্রাইসিস নাই আমাদের
নেয় না তো উড়িয়ে
ছাদ সেরকম ঝড়
মুখ তুলি আর পরক্ষণেই
ঘুমিয়ে যাই আমরা
এরকম দীর্ঘ দীর্ঘ
ঘুম আমজনতার
২১/০৭/২০১৯
হান্টার প্রজাতি
মুরগিওয়ালা মহসীন সত্যি কথাই বলে—
সে মুরগি দেয় সত্য, মোরগ দেয় না
তবে একবার মুরগির বড় সিনা
দেখিয়ে হাতের কারসাজিতে একদম
শুকনা মুরগি গছিয়ে দিয়েছে
বুঝে ওঠার আগেই জবাই সম্পন্ন হলো
আমি যতবার বলি, পাকিস্তানি মুরগি নিব না,
সে ততবার খাঁচায় মিশানো মুরগির ঠোঁট
হা কি বন্ধ এসব লক্ষণ নেড়েচেড়ে প্রমাণ
দেখায় সবগুলি দেশি মুরগির জাত মামা
যখন সকালে নাস্তার টেবিলে খাচ্ছি,
দেখলাম সব রান চড়ুই পাখির সমান
আমরা এতোটা মাংসাশী কবে থেকে
মহসীন জানবে না এসব, জানবে সোহেল
সোহেল পাখির দিকে গুলি মারতে
মারতে বুক টানটান করে বলছিলো—
আমরা হান্টার প্রজাতির লোক
১৪/১০/২০১৮
এখানে কেনো আসছো
শিউলি ফুল শিউলি ফুল
এখানে কেনো আসছো, বলো?
পায়ের নিচে প’ড়ে থেঁতলে
গেলে আমার কিন্তু দোষ নাই
পা শুধু উঁচু থেকে নামে
আর দড়াম করে নিচে পড়ে
শিউলি ফুল শিউলি ফুল
গেটের কাছেই লুটিয়ে পড়লে
এবার লোহার গেট খুলবো
আবার ঘটাং ক’রে লাগাবো
তুমি তখন কুঁকড়ে গেলে
আমার কি করার থাকবে?
পা নিয়ে জীবনভর হন্তদন্ত
পা শুধু পড়িমরি করে
জুতা তো পায়ের ইয়ার,
তোমাকে পাড়া দিবেই দিবে
শিউলি ফুল শিউলি ফুল
এখানে কেনো আসছো, বলো?
১৩/০৭/২০১৮
বিভ্রম
কল ছেড়ে দেখি পানি একদম নাই
মেশিন কেন যে চুপচাপ থাকে ভোরে
কলকব্জার পাঁজর নিয়েছে চোরে
তোমার দোয়ায় কমতি ছিলো কি ভাই?
পানি তুমি আছো কোন জলাধারে বলো
পাইপের বুকে নিঃসীম হাহাকার
কান পাতি আর হাত ছুঁই বারবার
হাঁটু গেড়ে বসে পানিকে বলছি গলো
আব্বার পরে আম্মাই আজ সব
যতবার করি মেশিনকে দোষারোপ
আর ছুড়ে মারি তার দিকে যতো ক্ষোভ
আম্মাই এই মেশিনের বান্ধব
কলকল করে শব্দ আসে কি তোড়ে,
নাকি বিভ্রম মাথার ভেতরে ঘোরে!
০১/০৮/২০১৬
নাদান
এতো কি লম্বা হয়েছে তোমার চুল
রেলিং টপকে লাফিয়ে পড়বে নিচে?
প্রেমিক চোরটা ঘাপটি মারছে রোজ
চুল বেয়ে বেয়ে উঠবে বারান্দায়!
স্বপ্নের ভার এতোই দিগম্বর
মাঝ পথে যেয়ে চুল কেটে দেয় ফেউ!
এইদিনে আর এক ঠ্যাঙা বক হয়ে
প্রেমের মাছকে ধরবে আছে কি কেউ?
১২/১২/২০১৬
দেখাও তোমার হিয়া
তোমার সহিত জংগলে যাবো ও দূরতর মেয়ে
কামড়ে নিবো যে আছে যতো বিষ আশরীর ছেয়ে
বলেছি, সাপের খোলসে আসবো দ্রুত একেবেঁকে
সর্পিণী তুমি চামড়া ছাড়িয়ে দাঁড়াও সমুখে
পারি না সমাজে মানুষের অবয়বে মিলিমিশি
জীবন বদলে চলো না আমরা সাপের স্বভাবে মিশি
সমাজ সাহেব লাফ দিয়ে সরে যাবে দেখে সাপ —
জানি, তুমি চাও দিতে প্রাণপণ রক্তমাংসে ঝাঁপ
জংগলে যাবো কতো খাদ আর পাথর চিরিয়া
নেচে নেচে তুমি ফণা তুলে আজ দেখাও তোমার হিয়া!
২৫/১০/২০১৮
বাঁকা গাছ
যখন গলিটাতে ঢুকছি ধীরেধীরে
একটা বাঁকা গাছ হঠাৎ চোখে পড়ে
এমন বাঁকা গাছ দেখি নি কোনোদিন
নাচছে ফুল নিয়ে তাধিন ধিন ধিন
যেভাবে হাওয়া এসে ঝাঁকায় গাছটাকে
তাতেই মনে হয় নাচছে সেই গাছ?
বিভোর নৃত্যতে ফুলরা ঝরে গেলো
বাঁকানো গাছটায় পাতারা রয়ে গেলো
আসলে নাচে নাকি গাছরা পৃথিবীতে
দেখতে বাঁকা তাই, নাচের মতো লাগে?
এমন সন্ধ্যায় বাঁকা সে গাছ দেখে
আকাশে চাঁদ ওঠে আবারো বাঁকা হয়ে
০৬/১১/২০১৯
জন্ম ২৭ শে জুন ১৯৬৫, ঢাকায়। পেশায় এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, সাপ্লাই চেইন, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা।
প্রকাশিত বইয়ের নাম:
কাব্য-গ্রন্থ :
শিশু ও হারানো বিড়ালের কথা (১৯৯৬, ধানসিঁড়ি ), মহাপুরুষের জোব্বা (১৯৯৯, ধানসিঁড়ি), ওরা আমাকে ঘিরিয়া ঘিরিয়া নাচে আর গুলি করে (২০০২, ধানসিঁড়ি ), আ মরি ক্ষুদ্রত্ব (২০০৫, গাণ্ডীব), শুরু থেকে সম্প্রতি (কাব্য-সংগ্রহ: ২০০৯, উলুখড়), শব্দ-দ্বন্দ্ব-ভেদ (২০১১, শিরদাঁড়া), নখের টুকরা (২০১১, প্রতিশিল্প), কালো কাচের বাইরে কিছু আর ঘটে না (২০১৬, উলুখড়), তোমার নেচে নেচে চলা (২০১৬, শিরদাঁড়া), মিসেস নিতিয়ার সাথে বৃষ্টি আসলো যেদিন (২০১৮, উড়কি), গান গাবো বিজয়নগরে (২০১৯, উড়কি), যে ব্রিজ দৃশ্যত নেই (২০২০, উড়কি)। গদ্য-গ্রন্থ :ঘষা খাইতে খাইতে চলে নয়া চক্রের খেইল (২০০২, দুয়েন্দে)। গল্প-গ্রন্থ : ট্যাক্সট ম্যাসেজের মৃত্যু (২০১২, উলুখড় )। প্রকাশিতব্য বই (কবিতা) : তাল তাল মেঘ ভেঙে পড়ছে (২০২১, উড়কি)