বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

ঊনসাংসারিক বউ : জাহেদ আহমদ

0

Motif-01১৯৯৫ সালে প্রস্থানের পর থেকে এমনকি এখনোব্দি শামীম কবীরের সবচেয়ে বেশি পঠিত কবিতা সম্ভবত ‘নভেরা’। আমার ভুলও হতে পারে, কিন্তু এই সেদিন পর্যন্ত যার সঙ্গেই আলাপ হইছে এ-প্রাসঙ্গিক, কমন একটা এক্সপ্রেশন প্রত্যেকেরই ছিল: ও আচ্ছা, শামীম কবীর, আহা, কী ভীষণ কবিতা আছে একটা তার লেখা, ভাই, ‘নভেরা’, এক্কেরে সেরাম কবিতা, বুঝলেন! —আমার মনে হয়, ঠিকই আছে, ব্যাপারটা ঠিকই আছে হয়তো। তবে ‘নভেরা’ কবিতাটাই কি শামীমের সর্বৈব প্রতিনিধিত্বকারী কবিতা?

তা, রিপ্রেজেন্ট করতে পারে একজনকে তার অনভিপ্রেত কোনো কবিতাও, বলতেছিলাম এইটাই কি কবির রিস্টমার্ক হিসেবে সর্বেসর্বা, কাফি? নভেরাই কি কবির সিগ্নেচার পোয়েম? কবিতার ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার সবসময় মনে হয় যে, এইভাবে একক কোনো কবিতা সিঙ্গল-আউট করা আদৌ কবির প্রতি বিবেচনাজাত সুবিচার নয় আখেরে। গানের ক্ষেত্রে অবশ্য সিগ্নেচার টিউন আমরা শনাক্ত করে উঠি শিল্পীর ক্যারিয়ার প্রারম্ভেই, কিন্তু সিগ্নেচার সং ডিটেক্ট ও ডিক্টেইট করাটা আদৌ কোনো শিল্পীর উপকার করে না। কবিতার ক্ষেত্রেও তেমনি টিউন পয়েন্ট-আউট করে বলতে পারি যে অমুক কবির কবিতায় বিষাদ, তমুক কবির বিদ্রোহ, আরেক জনের প্রেমপূজা, ফের অমুক-তমুক প্রমুখের অবসাদ-অবদমন-ক্লান্তি-বিবমিষা ইত্যাদি টিউন কবির স্বর চিনিয়ে দেয় বেমক্কা ধাক্কার ভিড়ভাট্টায়। কিন্তু ‘বনলতা সেন’ দেখায়া যদি বলি যে এই একটাই জীবনানন্দসমগ্রের সমতুল, কী বলব, জ্ঞানীগুণীদের কিছু বলাও মুশকিল সহাও মুশকিল। লেটস ড্রপ ইট। সাউন্ডস বেটার।

আমরা বাংলাপাঠক বনলতা দিয়া জীবনবিচার সারি, বউঠান দিয়া ঠাকুর, নার্গিস দিয়া নজরুল, সুরাইয়া দিয়া হাসান, গায়ত্রী দিয়া বিনয় ইত্যাদি। কিউট ব্যাপারটা, মে বি, আবার কবিতার জন্য আপদও। তো, মোদ্দা কথাটা তো শিশুপাচ্য সহজ ব্যাপার যে বনলতার হাড়গোড় দিয়া বনলতা পাওয়া যায় না, জীবন তো দূর দিল্লি, তেমনি নভেরা নাম দেখেই সেখানে নভেরা পাইতে গেলে দুর্গতি।

কিন্তু মনে হয় এইটা আরেকটা ব্যাপার যে আমরা বাংলাপাঠক বনলতা দিয়া জীবনবিচার সারি, বউঠান দিয়া ঠাকুর, নার্গিস দিয়া নজরুল, সুরাইয়া দিয়া হাসান, গায়ত্রী দিয়া বিনয় ইত্যাদি। কিউট ব্যাপারটা, মে বি, আবার কবিতার জন্য আপদও। তো, মোদ্দা কথাটা তো শিশুপাচ্য সহজ ব্যাপার যে বনলতার হাড়গোড় দিয়া বনলতা পাওয়া যায় না, জীবন তো দূর দিল্লি, তেমনি নভেরা নাম দেখেই সেখানে নভেরা পাইতে গেলে দুর্গতি। কিন্তু ‘দ্রষ্টব্য’ পত্রিকায় এই কবিতাটা কবি-অভীপ্সিত ডজনখানেক ফুটনোটসমেত প্রকাশ পাবার পর কবিতাটি ঘিরিয়া আমরা নানান মিথ পল্লবিত হতে দেখি। হিট হতে দেরি হয় না বাংলায় কিছুর সঙ্গে মনুষ্য, খাস অর্থে স্ত্রীবাচক, কোনো নাম যুক্ত হলে; এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয় নাই। কিন্তু কবিতাটা ভালো কবিতা নো-ডাউট, শুধু এইটাই শামীমের সর্বাধিক ভালো কবিতা বলা হলেই বিপত্তি। ‘জানো না আমার মনে কত কথা পড়ে আর ঝড়ে/ উড়ে যায়/ মনোনিবেশিক হাওয়া ব্যগ্র হলে ঝড় হয়…’ ইত্যাদি উচ্চারণ তখন আমাদিগেরে আন্দোলিত করেছে। টেকনিকটা মনেও ধরেছে যে এইভাবে সহজ গদ্যবিবৃতির বাক্য দুয়েকটা শব্দ রিপ্লেস করে নিলে পরে কেমন ম্যাজিক তৈয়ার হয়, দ্যাখো: ‘জানো না আমার কত কথা মনে পড়ে আর ঝড়ে উড়ে যায়’… এইটুকু কথা খানিক শব্দপ্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায় কী জাদু নিয়া হাজির হলো পঙ্‌ক্তির গতরে! অ্যানিওয়ে। এই সরল শব্দ অদলবদল প্রক্রিয়া গোটা কবিতায় আশা করলেই ঠকেছেন, কবিতাটা প্যাঁচাইন্না স্পাইর‌াল অনেক। যদিও শব্দবিন্যাসের এই টেকনিক শামীম ঘুরেফিরেই প্রয়োগ করেন স্বরচিত কবিতায় দেখতে পাই। ইন-শর্ট কথাটা এ-ই যে ‘নভেরা’ শামীমের আইডি না মনে হয়, অ্যাট-লিস্ট এই নিবন্ধকের মতানুসারে, একটা পার্ট অব হিজ পোয়েটিক অরিয়েন্টেশন বাট নেভার একমাত্র। অন্য অনেক ‘মধু ও মশলা’ আছে, এবং রয়েছে গন্ধবণিকেরও অনেক কিমিয়া, ভেতরে প্রবেশিলে যাহা লভ্য।

চব্বিশ বছরের সীমায় যে-সংসার শামীমের, সংখ্যায় গণনীয় হলেও বহরে-গতরে অপরিমেয় বৈভবের সেই নভোসৌকর্যের সংসারযাত্রা। প্রবণতাগত দিক থেকে সেখানে বেশিটাই মহাজাগতিক অব্যাখ্যেয় উন্মাদনা, মাতলামি ও মীননৈরব্য, শব্দ ও অশব্দের সংঘর্ষ, কনফ্লিক্ট বিটুয়িন ক্যায়োস অ্যান্ড কোয়ায়েটনেস। সবশেষে এক বিপন্ন বিস্ময়ের সেরেন্ডিপিটি। রক্তান্তর্গত সেই বিস্ময়, বিবমিষা, কেউ কেউ তারে এড়াতে পারে না বলেই চব্বিশে ঝুলে পড়ে তমালের ডালে। অ্যানিওয়ে। যেইটা বলার, আপাতত, তা এ-ই যে সেই সংসারের পঙ্‌ক্তিতে পঙ্‌ক্তিতে কত-না পান্নাদ্যুতি, হিরেঝিলিক, কচুরিপানাফুলের মনখারাপ মেঘ! কয়েকটা নজরানা আমরা রেকাবিতে একবার তুলি, র‌্যান্ডোমলি বিভিন্ন কবিতা হাতড়ে এগোতে গিয়ে, ঠিক সূচয়নী কিসিমের কিছু মনে করা বারণ এই ইন্সট্যান্সগুলারে। লেটস হ্যাভ সাম অব দেম:

 

• বলো তো হে সূর্যোদয় আমি কবে সুস্বাদু ও/ লোভনীয় হব
• এসব তো ছেড়ে আমি হেরার প্রায়ান্ধকারে যাব
• সম্মিলিত সিগারের রেশ ম্লান-করা কুয়াশার মধ্যে উত্তেজিত
• বাঘকে বন্দি করলেও অতি দূর থেকে তার/ হুঙ্কার যায় শোনা
• এবং একদা আমি রাজমাতৃকার কাঁধে/ ঠেস করে অঘোরে ঘুমিয়েছিনু
• বহুকিছু দেখি নাই/ দ্যাখা যায় ইউক্যালিপ্টাস/ বনের যৌবন ভেদ করে আছে খাড়া
• চায়ের বাকশের মধ্যে লাশ হয়ে থাকা/ কী যে মজাদার

 

ইত্যাদি উদাহরণ অজস্র দেওয়া যায়। ছিন্ন পঙ্‌ক্তি দিয়ে এইভাবে কবির গোটা আদল খোঁজা আদৌ উন্নত তরিকা নয় জেনেও কয়েকটা নাছোড় পঙ্‌ক্তিই আমাদিগের নির্কবি (যিনি/ যারা কবি নন, পাঠক শুধু) কমন পাঠকগোত্রেরে একেক কবির সনে সংলগ্ন করে রাখে। কাজেই ছিন্ন পঙ্‌ক্তিমালার অবদান আমাদের জীবনে অনস্বীকার্য কবিস্মরণপ্রশ্নে।

নন্দনবিচারে ‘নভেরা’ কবিতাটা পাশমার্কস পাবে এইটা শামীমেরও অভিপ্রেত মনে হয়। এর প্রমাণ হচ্ছে যে এইটা ‘শামীম কবীর সমগ্র’ নামধেয় গ্রন্থের সূচনাপাণ্ডুলিপি ‘চব্বিশ’-এর দ্বিতীয় কবিতা। ‘মা-র সঙ্গে বাক্যালাপ’, অনবদ্য মন-উথলানো কবিতা, শামীমের মুখ দেখাবার পয়লা আয়না। মা ও প্রেমিকা, আমরা অনুমান করে নিচ্ছি শামীমের একজন মা ও একজন প্রেমিকা কবিতায় হাজির থাকার ব্যাপারে, আত্মহননকৃত ও অকালপ্রয়াত সমস্ত কবিকেই কী বেদনাবহ দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়া চালায়ে নেয় এইটা আমরা বারবার দেখতে পাই নানান কবির মধ্যে। এইটা আমরা মায়াকোফোস্কি-ব্যোদলেয়ার বা শামসের আনোয়ার বা আবুল হাসানের মধ্যে দেখব। শামীমের মধ্যেও, মানে তার কবিতায়, এইটা গোচরাতীত নয়। এ নিয়া বাদে এক-সময় কথা বাড়ানো যাবে ইজাজত পেলে। এখন, কথাটা কার কাছ থেকে জেনেছিলাম মনে নেই যে, শামীম কবীর তার পাণ্ডুলিপিগুলোর কবিতা নিজেই বিন্যস্ত করে রেখেছিলেন থরে থরে। এইটা কি ঠিক? ‘…সমগ্র’ নামধেয় বইটাতে এ-বাবতে কোনো কথা খরচা করা হয় নাই। বছর-কয় আগে একটা নির্বাচিত টাইপের সংকলন মনে হয় বেরিয়েছে যৌথ/ যুগ্ম সম্পাদনায়, সেইটা দেখার সুযোগ ঘটে ওঠে নাই নিবন্ধকের, সেখানে এসব আপাত-অনাবশ্যক অথচ গুরুত্বপূর্ণ, কৌতূহলোদ্দীপক কোনো-কোনো পাঠকের কাছে এমনতর বিষয়াদি নিয়া খানদুই কথা ব্যয় হয়েছে কি না আল্লা মালুম।

নন্দনবিচারে ‘নভেরা’ কবিতাটা পাশমার্কস পাবে এইটা শামীমেরও অভিপ্রেত মনে হয়। এর প্রমাণ হচ্ছে যে এইটা ‘শামীম কবীর সমগ্র’ নামধেয় গ্রন্থের সূচনাপাণ্ডুলিপি ‘চব্বিশ’-এর দ্বিতীয় কবিতা। ‘মা-র সঙ্গে বাক্যালাপ’, অনবদ্য মন-উথলানো কবিতা, শামীমের মুখ দেখাবার পয়লা আয়না।

‘ঊনসাংসারিক বউ’ শব্দজোড় কোত্থেকে এলো, বলি একটু। শামীম কবীরেরই একটা কবিতার মাঝখানে এই জিনিসটা পাওয়া যায়। পঞ্চখণ্ডের দিঘল কবিতা, ‘কাঁধ’ নাম সেই কবিতার, দ্বিতীয় খণ্ডটি স্টার্ট করছে এই বলে: ‘তুমি আমার শরীরের প্রাণ’… কবিতাটা আরেকটু শুনি:

 

তুমি আমার শরীরের প্রাণ
দৈর্ঘ্য-প্রস্থহীন দেহ পড়ে আছে
আবছা বনের ধারে
সুরোচ্ছ্বাস লেগে লেগে কাঁধ থেকে
বাষ্পঘূর্ণি ওঠে ঘুরে…
শুধু এই-ই ঊনসাংসারিক বউ
কলসি নিয়ে বহুকাল গত…

 

শামীম কবীরের এই ঊনসংসার সম্পর্কে একটু খোঁজপাত্তা লাগানো যাবে এক-সময় পরে। এই ‘ঊনসাংসারিক বউ’, সামান্য তার সংসারের অসামান্যতা আদতে কোথায়, কেমন করে গড়ে উঠেছে এই নিরুপম সংসার তিলে তিলে, এইসব জানার রাস্তা দুর্গম হলেও অগম্য নয়। শামীমের ডায়েরিভুক্তি এ ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক বেশ কিছু প্রবেশবাতায়ন অফার করে পাঠকের সামনে। এখন না, বাদে এ-বাবতে বাকিটুকু।

অপ্রীতিকর একটা ব্যাপার ইতস্তত গলায় উপসংহারের আগে এখানে একবার উল্লেখ করা যায়। ‘শামীম কবীর সমগ্র’ বইটা নানা কারণেই রিপ্রিন্ট হয়ে বেরোনোর দাবি রাখে। এক হচ্ছে এর পাঠকডিমান্ড, তরুণ উঠতি কবিরাই রিডার এর, দুই এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে এ-ই যে বইটার প্রয়োজনীয় প্রচুর সংস্কার দরকার। বানানসাম্য ও কবিজীবনতথ্য তো খুবই জরুরি। বানানের কারণে ব্যক্তিগতভাবে এই নিবন্ধকারের প্রচুর অস্বস্তি হয় বইটা পড়তে গিয়ে। একটা ব্যাপার হচ্ছে যে, কবির অভিপ্রায়। এ-রকম বানানেই সম্পাদনা করা হয়তো কবির অভিপ্রেতই ছিল। সে ক্ষেত্রে আরেক ডিবেইট ওঠে। আমরা উদাহরণ না-দিয়ে এক-দুইটা কথা ঝটিতি বলে ফেলি। এই বইটা কার হাতে সম্পাদিত হয়েছে, কে এর বানান ইত্যাদি এবং ম্যানুস্ক্রিপ্ট দেখে প্রুফ সংশোধন করেছেন, কে বা কারা এর সম্পাদনাপর্ষদসংশ্লিষ্ট ইত্যাদি কিচ্ছুটির কোনো হদিস বইটিতে নেই। কেবল ‘দ্রষ্টব্য’ প্রকাশ করেছে, এইটুকু তথ্য আমরা আন্দাজ করে নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানবিরোধী লিটলম্যাগ হিসেবে তৎকালে মশহুর ‘দ্রষ্টব্য’ ব্যক্তিবিরোধী হয়ে এইটা এডিটিংকাজে হাত দিয়েছিল কি না, তা দিতেই পারে, এ-বাবতে কোনো বক্তব্য বইটায় আমরা পাই না। ব্যক্তিনাম না-দিয়ে এডিটিং খুবই, কী বলব, ইম্যাচিউর ব্যাপার। রেস্পন্সিবিলিটি নিতে কেউ চান নাই হয়তো। ভবিষ্যতের রিডার কোথায় কোন লিংক ধরে একটু খোঁজ নিতে যাবে যে শামীমের ম্যানুস্ক্রিপ্টে কেমন বানান ছিল, যদি হবহু তা-ই ছাপানো হয় বইতে সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে ম্যানুস্ক্রিপ্টের সুরতহাল-ময়নাতদন্তপূর্বক যে ওই বিশেষ ধাঁচের বানান কবির সচেতন প্রয়োগপ্রয়াস কি না। এইসব আপনি কোথা যায়া কারে জিগাইবেন? দ্য অ্যান্সার ইজ ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড?

প্রতিষ্ঠানগত পুঁথিবিদ্যায় অনাগ্রহবশত পড়াশোনা অসমাপিত বা অর্ধসমাপিত মর্মে একটা ইনফো আমরা এই পরিচিতিচিলতে থেকে জেনে উঠি। ইন্ট্রো অংশে যে-ভূমিকাটি লিখেছেন মজনু শাহ, সেখানে বেশ মর্মাচ্ছন্ন স্বরে শামীমকে এঁকেছেন তিনি। কবির কাজকর্মের বেশ কিছু চাবিশব্দবন্ধ নিয়া কাব্যগদ্যান্বিত ভূমিকাংশটুকু মূল্যবান ইন্টার্প্রিটেশন উপহার দেয় আমাদিগেরে।

বইটিতে একটি ভীষণ মর্মদ্রাবী প্রিফেস লিখেছেন শামীমের সতীর্থ মজনু শাহ। উনিও কবি হিসেবে রেগুলার কবিতাপাঠকের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছেন পরবর্তীকালে। অ্যানিওয়ে। একদম অন্তিমে একটা সংক্ষিপ্ত কবিপরিচিতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই বইটায়, যেখান থেকে এটুকু জানা যায় যে শামীম জন্মেছেন বগুড়া জেলায়, বিড়ালাক্ষ ও গৌরবর্ণ। প্রতিষ্ঠানগত পুঁথিবিদ্যায় অনাগ্রহবশত পড়াশোনা অসমাপিত বা অর্ধসমাপিত মর্মে একটা ইনফো আমরা এই পরিচিতিচিলতে থেকে জেনে উঠি। ইন্ট্রো অংশে যে-ভূমিকাটি লিখেছেন মজনু শাহ, সেখানে বেশ মর্মাচ্ছন্ন স্বরে শামীমকে এঁকেছেন তিনি। কবির কাজকর্মের বেশ কিছু চাবিশব্দবন্ধ নিয়া কাব্যগদ্যান্বিত ভূমিকাংশটুকু মূল্যবান ইন্টার্প্রিটেশন উপহার দেয় আমাদিগেরে। যেইটা হয় আর-কি যে কাব্য নিয়া কথা বলতে গিয়ে জরুরি জ্ঞাতব্য জানানো হয় না। আমরা এই সমগ্রে যে-আলাদা নামের আওতায় পাণ্ডুলিপিগুলো ছাপা হতে দেখি, সেগুলো শামীম কবীর জীবদ্দশায় ছেপেছিলেন কি না ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর সহসা অন্তত বইটির ভিতর থেকে জানতে পাই না। এইগুলা জানতে ইচ্ছেও করে কখনো কখনো।

অত্যন্ত অকালেই নিজের শরীরী জীবন নিভিয়ে দেওয়া শামীম তার সতীর্থ কবিবন্ধুদের অনেকের কাছেই ইনফ্লুয়েনশিয়াল হয়ে উঠতে পেরেছিলেন তার আত্মহত্যাকাণ্ডের আগে-পরে, এই চিত্রটা আমরা চাক্ষুষ করেছি বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের লিটলম্যাগকেন্দ্রী বাংলাদেশের কবিতায়। কেবল কনটেম্পোরারি কবিবন্ধুদের মেমোয়ারে নয়, শামীমের ইনফ্লুয়েন্স নাইন্টিসের বাংলাদেশজ কবিদের টেক্সটুয়্যাল প্রেজেন্টেশনে অ্যাভেইলেবল কি না বা থাকলে কতটা তা সার্চ করে দেখবার হাই টাইম পারায়া যায়।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবি, গদ্যকার, অনুবাদক

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।