বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

‘এইসব প্রেম মোহ’: গল্পে রুমা মোদকের আবেগী স্বর : ফয়জুল ইসলাম

0

‘এইসব প্রেম মোহ’ গল্পগন্থ (২০২১)-এ রুমা মোদক আবারও সমাজমনস্ক গল্প রচনার ক্ষেত্রে তার নিজস্ব প্রবণতা ও পারঙ্গমতাকে প্রমাণ করলেন। তার গল্পগুলোর চরিত্ররা হয় নিম্নবিত্তের অথবা মধ্যবিত্তের নিম্ন পর্যায়ের মানুষ। তাদের অস্থিরতা, হাহাকার, আশা-আকাঙ্ক্ষা কে নির্মোহভাবে, সাহসের সাথে গল্পতে আবারও তুলে এনেছেন তিনি। এখানে এ-ও উল্লেখ করতে হবে যে পুরুষশাসিত সমাজে টিকে থাকবার সংগ্রামে নিয়োজিত নারীদের দিকে তিনি বিশেষ মনোযোগ নিবদ্ধ করেছেন। রুমা মোদকের গল্পের এসব চরিত্ররা দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রাজনীতির ফককিকার এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে ক্রমাগত ধুকছে। লেখক এখানে সমাধানটা আরেঢাঁরে বলে দেন— নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের সম্মানজনকভাবে বেঁচেবর্তে থাকবার সমাধানটা মূলতই রাজনৈতিক।

রুমা মোদকের গল্পের এসব চরিত্ররা দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রাজনীতির ফককিকার এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে ক্রমাগত ধুকছে। লেখক এখানে সমাধানটা আরেঢাঁরে বলে দেন— নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের সম্মানজনকভাবে বেঁচেবর্তে থাকবার সমাধানটা মূলতই রাজনৈতিক।

‘গোল’ নামের গল্পে আমরা দেখি, নিম্ন মধ্যবিত্ত নায়ক জামিল দুঃখজনকভাবে রাজনীতিবিদদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে এবং এক পর্যায়ে সে এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন-কর্মকাণ্ডের ফাঁকি নিয়ে রুমা লিখেছেন ‘ধুতরার বিষ’। মৃত স্বামীর ভিটে থেকে সীমাকে বিতারণ করা হলে সে তার অভুক্ত সন্তানদেরকে নিয়ে বোন জোছনার টানাটানরি সংসারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। জোছনার সঞ্চয়ের চাল চুরি হয়ে গেলে সীমা সন্দেহে বিদ্ধ হয় এবং তাকে সন্তানসহ ফিরে যেতে হয় স্বামীর ভিটেতে যেখানে সে মোটেই সমাদৃত নয়। পরদিন সংবাদ আসে মৃত স্বামীর ভিটায় ফিরে যাবার পরে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে সীমা। ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ গল্পে চা-স্টলের মালিক রহম মোল্লা ও তার পরিবার দিনের পর দিন ভাতের সাথে শাকপাতা সেদ্ধ করে ক্ষুধা নিবারণ করে চলেছে। কাজেই রহম মোল্লা বদরুলের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে। সুদের টাকা ঠিক মতো পরিশোধ করতে সে ব্যর্থ হয়। ‘প্যান্ডোরার বাক্স’-তে জামিলার জুয়ারি স্বামী সমুজ আলী প্রতিনিয়ত জুয়া খেলে পয়সা উড়িয়ে দেয়। জামিলার দয়ালু শ্বশুর একটা বাক্সে টাকাপয়সা জমিয়ে রাখে জামিলার সন্তানদের জন্য; উচ্ছন্নে যাওয়া তার সন্তান সমুজ আলীকে সে তার সঞ্চয়ের কোনো অংশ দিতে চায় না কোনোমতেই। এদিকে সমুজ আলী জামিলাকে চাপ দিতে থাকে বাক্সে রেখে দেওয়া তার বাপের টাকা হাতিয়ে নিতে। জামিলা ভাবে, সে শ্বশুরের টাকার দখল নেবে। তার মনে হয়, মহাজনের ঋণ শোধ করে শ্বশুরের ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দিয়ে সে নিজের বাপের দেশে চলে যাবে সবুজ আলীকে নিয়ে। এই লক্ষ্যে সে খুন করে তার শ্বশুরকে এবং সরিয়ে ফেলে টাকা। তবে ব্যাগে রাখা টাকা সাথে নিয়ে পুলিশের হাতে সে ধরা পড়ে যায় এবং খোয়া যায় পুরো টাকা। ‘মাত্র হাজার পাঁচ’ অতিমারির গল্প যেখানে মধ্যবিত্তরাও অকস্মাৎ ঝুঁকিতে পড়ে গিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে। ঘনিষ্ঠ মানুষজনদের দয়াদাক্ষিণ্য হাত পেতে নেবে কি নেবে না− এই নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায় তারা। এসবের মাঝে কখনও কখনও নিজের আত্মা বিকিয়ে দিতে তারা বাধ্য হচ্ছে। ‘অমোঘ’ গল্পে অতিমারির সময়ের অভাব নার্গিস ও তার স্বামী লিটনের সংসারে আঘাত হানে। শহরের বাসার ভাড়া দেওয়া এবং খাবারের সংস্থান করতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে লিটন এবং সে নার্গিসকে দেহ বিক্রি করতে প্ররোচনা দিতে থাকে। অনেক ভেবেচিন্তে ক্ষুধার কাছে হার মানে নার্গিস। সেই গ্লাণিতে আত্মহত্যা করে লিটন।

Aisob Moho Prem

এইসব প্রেম মোহ | রুমা মোদক | প্রচ্ছদ : রাজীভ দত্ত | প্রকরণ : ছোটোগল্প | প্রকাশক : জলধী | মূল্য : | এইসব মোহ প্রেম বইটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন।

‘শুধু প্রাণ ধারণের গ্লাণি’ শীর্ষক গল্পে বৃদ্ধ মহেন্দ্রনাথ তাদের পরিবারের বাঁশঝাড় আগলে বসে থাকে। সে শুনেছে যে রায়টের সময় দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাবার সময় তার আত্মীয়-পরিজনেরা এই বাঁশঝাড়ে পুঁতে রেখে গেছে তাদের সোনার গয়না, কলস ভরা হীরে-জহরত। মহেন্দ্রনাথ ভাবে, একদিন বাঁশঝাড়ের মাটি খুঁড়ে সে গুপ্তধন সব তুলে নিয়ে আসবে। এভাবে বাঁশঝাড় পহারা দিতে দিতে সে বৃদ্ধত্বে পৌঁছে যায়। শেষপর্যন্ত অভাবের তাড়নায় পারিবারিক বাঁশঝাড়টা তাকে বিক্রি করেই দিতে হয়, সে আর গুপ্তধনের দেখা পায় না। ‘মামা ফকিরের কেরামতি’-তে আমার দেখি, মামা ফকির যখন ‘আগুন! আগুন!’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে তখনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটবেই! মুক্তিযুদ্ধের আগ দিয়ে তার এই চিৎকার শোনা গিয়েছিল। অনেকদিন পরে ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার আগে আবারও তার সাবধান-বাণী আমরা শুনতে পাই।

রুমা মোদকের গল্পে সাম্প্রদায়িকাতা-বিরোধী অবস্থান দেখা দেয় সুস্পষ্টভাবেই। আমরা ভুলে যাই না যে এই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পের কারণেই দেশবিভাগ ঘটে গিয়েছিল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ডামাডোলের ভেতরে পড়ে যাওয়াতে সচেতনভাবেই কালে কালে সেই বিষবাষ্পকে বর্ধিত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ও মানবতাবাদীদের স্পষ্ট অবস্থানও প্রকাশিত হয়ে আসেছে। এই প্রতিরোধের ধারাবাহিকতায় বর্তমান গল্পগ্রন্থটিতে বেশ ক’টি গল্প সংযোজন করেছেন রুমা মোদক। ‘১৯৭৫’ গল্পে আমরা দেখি ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে ফেনিয়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক পরিবেশের কারণে দেশ ত্যাগ করেছে বুবলির পরিবার। অনেকের মতো করেই বুবলির পরিবারও ততদিনে অনুধাবন করছে যে ‘দেশ আবার পাকিস্তান অইয়া গেছেগা!’ সেই বুবলি বাংলাদেশে এসেছে তার পরিবারের ফেলে যাওয়া ভিটে থেকে তার বাবা আর ঠাম্মার জন্য মাটি নিয়ে যেতে।

রুমা মোদকের গল্পে সাম্প্রদায়িকাতা-বিরোধী অবস্থান দেখা দেয় সুস্পষ্টভাবেই। আমরা ভুলে যাই না যে এই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পের কারণেই দেশবিভাগ ঘটে গিয়েছিল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ডামাডোলের ভেতরে পড়ে যাওয়াতে সচেতনভাবেই কালে কালে সেই বিষবাষ্পকে বর্ধিত করা হয়েছে।

‘হরিপদ কেরানির মেটামরফসিস’-এ নানান সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে চায় জনৈক কেরানি। নাসিরনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা শারিরীকভাবে নির্যাতিত হলে, তাদের ভিটে পুড়িয়ে দেওয়া হলে, মন্দির ভাঙা হলে, নারী সদস্যরা ধর্ষিত হলে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে আমাদের এই কেরানি। ‘হে প্রগার মাতামহী’ গল্পেও আমরা দেখি, দেশবিভাগ সংক্রান্ত রেফারেন্ডামের সময় সিলেটের কয়েকটা গ্রামের হিন্দুরা পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয়নি বলে তারা জঙ্গী মুসলিমদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, একরাতেই ধর্ষিত হয়েছে এলাকাটার শ’খানেক যুবতী ও কিশোরী। এ বিষয়টা ব্যথিত করে রোমা মোদককে।

‘ভালো থেকো ফুল’ গল্পটা মূলতই নারী-স্বাধীনতার গল্প। টুকটুকি নামের একজন নারী তার সঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতা প্রয়োগ করবার সাহস রাখে; সমাজের মানুষের ঔচিত্যবোধের তোয়াক্কা করে না। ‘দুঃখভুক মৃত্যুময় দিন’-এ বিধৃত হয়েছে নারীর অস্তিত্বের সংগ্রাম যেখানে একজন নারী তার প্রাক্তন প্রেমিক এবং বর্তমানের স্বামীর কপটতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। ‘দুঃখভুক স্বপ্নময় দিন’-এ স্বপ্নাক্রান্ত জনৈক নারীর পাশে থাকা মানুষ পর্যন্ত জানে না তার হৃদয়ের গোপনতম খবর। ‘একটি সন্ধ্যা যেভাবে রাত হয়’ গল্পে আমরা একজন মৃত নারীকে কালভার্টের নিচে জঙ্গলে পড়ে থাকতে দেখি। বোঝা যায় যে গোপন সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে তার প্রেমিক তাকে খুন করেছে। ‘এইসব প্রেম মোহ’ গল্পে পঙ্গু স্বামীকে টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সুমনা; সে নতুন সঙ্গও খুঁজে নেয়। কিছু পরেই তার অনুধাবন হয় যে এক বন্ধন থেকে আরেক বন্ধনে জড়ানোর কোনো অর্থ হয় না এবং সে সব সম্পর্ক থেকেই মুক্তি চায়। ‘সে’ গল্পে নায়কের স্ত্রী মনোয়ারা নায়ককে পুরুষত্বহীনতার অপবাদ দেয়। আদতে নায়ক পুরুষত্বহীন নয় কেননা আমরা দেখি, ঘনিষ্ঠতার কারণে তার বন্ধু শেফালি অন্তঃস্বত্ত্বা হয়েছে। তবে শেফালি সেই ভ্রুণ হত্যা করে ফেললে নায়ক শেফালিকে খুন করে। নায়কের মনে হয়, তার পৌরুষের প্রমাণ নষ্ট করেছে শেফালি। ‘সাত বোন চম্পা’-তে দরিদ্র হাজেরা বিবি পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় একের পর এক কন্যা-সন্তান জন্ম দিতে থাকে। স্বামী ভিন্ন অন্য পুরুষের ঔরসে গর্ভধারণেও সে পিছপা হয় না। ‘ভোরের আভার আভাস’ পুরুষশাসিত সমাজে জনৈক নাট্যকর্মীর মাথা উঁচু করে থাকবার সংগ্রামের গল্প। এ লড়াইয়ে সে হারবে না কিছুতেই। তার এই প্রত্যয়কে সকলেই যে বাহবা দিচ্ছে এমনটা নয়। ‘অকাল বর্ষণ আর সিনেমার বৃতান্ত’ গল্পে লুৎফা সারাক্ষণ ভয়ে থাকে− যদি তার স্বামী ফুল মিয়া তার ভাত-তরকারির ভাসমান ব্যবসাটা বন্ধ করে দেয় তবে পরিবার চলবে কীভাবে! লুৎফার বোন শানু ভালো গান গায়, তবে সমাজে ছড়িয়ে পড়া নানান অযৌক্তিক ও আগ্রাসী অনুশাসনের মুখে পড়ে যাওয়াতে সে গান গাইতে ভয় পায়, এমনকি একটা ডকুমেন্টারিতে ছোটো একটা অংশে অভিনয় করতেই সংকুচিত হয়ে যায় সে।

এভাবে সমাজের নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের প্রতি রুমা মোদকের সীমাহীন মমত্ববোধ আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না। তার বর্ণণাতে হরহামেশাই ঢুকে পড়ে তীব্র শ্লেষ। তবে সেই শ্লেষ কখনোই শ্লোগানে পর্যবসিত হয় না— এটা নিশ্চয় সুখের বিষয়। সেখানে আবেগের ব্যবহার এতই নান্দনিক যে মনে হয়— আহা! এ গল্পই তো আমি আশপাশে দেখেছি; প্রকাশও করতে চেয়েছি মানুষের কাছে! এই আবেগই রুমার গল্পের অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য।

পুরো ব্যাপারটাকে ফিকশনে রূপান্তরিত করবার জন্য রুমা মোদক যে সাহিত্যিক ভাষা ব্যবহার করেন তা খুবই গতিময়। গল্প পড়তে পড়তে পাঠক কোথাও হোঁচট খাবেন না। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার রুমার লেখার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বর্ণনাতে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই সিলেটের নানান নামশব্দ ও ক্রিয়াপদ জুড়ে দেন, যেমন, মাইজম, ফুটকা মাছ, দিরং করা, আঞ্জাআঞ্জি করা ইত্যাদি। কথপোকথনের ক্ষেত্রেও তিনি খুবই পটুতার সাথে এই আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন যা কিনা বিশ্বাসযোগ্য করেছে গল্পকে।

লিটনের স্ত্রী নার্গিস অভাবে পড়ে তার নিজের দেহ বিক্রি করলে গ্লাণিতে আত্মহত্যা করে লিটন। বাস্তবতা এই যে এই শহরেই এমন অনেক নার্গিস অভাবের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে থাকে বটে, হয়তোবা সজ্ঞান পারিবারিক সিদ্ধান্তেই, কিন্তু নিম্নবিত্ত লিটনরা এভাবে আত্মহন্তারক হয় না, বরং নিজেদের ভোগের সর্বোচ্চ সুযোগ গ্রহণ করে স্ত্রীর বেলায় এমন পুত পবিত্রতা প্রত্যাশা করে আত্মপ্রতারক মধ্যবিত্তরা।

এবারের গল্পের বইটা আবারও জানান দিল যে রুমা মোদক আধুনিক বাংলা গল্পের ক্ষেত্রে ভিন্ন এক স্বর। তার বিষয় নির্বাচন এবং ভাষার প্রয়োগ যে সুচিন্তিত তা পরিষ্কার করেই বোঝা যায়। প্রকরণের দিক থেকে, ভাষার দিক থেকে তাকে সাধুবাদ দিতেই হবে। তবে তার রাজনৈতিক সচেতনতা এসব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়ে গল্পকে নতুন এক মাত্রা দেয়। রাজনৈতিক সচেতনতার কারণেই তিনি নির্দ্বিধায় রাজনৈতিক শূন্যতা, সাম্প্রদায়িকতা এবং পুরুষশাসনের জাঁতাকলের বিরুদ্ধে পরিষ্কার অবস্থান নিতে পারেন। প্রকরণ ও ভাষা দ্যুতি ছড়ালেও কথাসাহিত্যে রাজনৈতিক সচেতনার প্রয়োগ যথাযোগ্যভাবে সকলেই করতে পারেন না। রুমা তা পেরেছেন। তবে দু’একটা জায়গাতে তাকে বেশ আদর্শবাদী বলেই মনে হয়, যেমন, ‘অমোঘ’ গল্পে লিটনের স্ত্রী নার্গিস অভাবে পড়ে তার নিজের দেহ বিক্রি করলে গ্লাণিতে আত্মহত্যা করে লিটন। বাস্তবতা এই যে এই শহরেই এমন অনেক নার্গিস অভাবের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে থাকে বটে, হয়তোবা সজ্ঞান পারিবারিক সিদ্ধান্তেই, কিন্তু নিম্নবিত্ত লিটনরা এভাবে আত্মহন্তারক হয় না, বরং নিজেদের ভোগের সর্বোচ্চ সুযোগ গ্রহণ করে স্ত্রীর বেলায় এমন পুত পবিত্রতা প্রত্যাশা করে আত্মপ্রতারক মধ্যবিত্তরা। নিম্নবিত্তরা বরং স্ত্রীর সাথে নতুন সমীকরণ তৈরি করে নেয়! একেই বলে বেঁচে থাকা, টিকে থাকা!

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কথাশিল্পী, ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক গবেষক এবং প্রাবন্ধিক। জন্ম ২৪ নভেম্বর ১৯৬৩ সালে, ঢাকা শহরের সিদ্ধেশ্বরীতে। তার প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের ভেতরে রয়েছে: ‘নক্ষত্রের ঘোড়া’, ‘খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক’, ‘আয়না’, ‘নীলক্ষেতে কেন যাই’,  ‘বখতিয়ার খানের সাইকেল’ এবং ‘ঘুমতৃষ্ণা’। উপন্যাসটির নাম–‘বয়েজ স্কুল ব্যান্ড’। তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক’ প্রথম আলো বর্ষসেরা বই: ১৪২২-এর সৃজনশীল শাখায় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়ামস কলেজ থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে তিনি স্নাতোকোত্তর।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।