১.
নারী-পুরুষের যে মিলন হয়, জুবেদ শেখ তার ছোটোবেলায় বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে টুকটাক চটি বই পড়তে গিয়ে জেনেছে, এইটার সুন্দর নাম হল রতিমিলন, কিন্তু বড়ো হতে হতে এই ছাব্বিশ বছরে এসে পড়বার পর, তাবৎ বাংলা সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতায়, এই কয়েক মিনিট আগে পর্যন্ত তার মনে হইতেছে—রিয়াজের সাথে দীর্ঘদিন দেখা করতে না পেরে দুর্ধর্ষ পিতা আহমদ শরিফের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কলেজের পেছন বারান্দা দিয়ে বুকের ওড়না ফেলে দিয়ে ডবকা দুধগুলি নাচাতে নাচাতে পূর্ণিমা যেভাবে ছুটে এসে রিয়াজের বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেইটার নামও নাকি মিলন! যেভাবে পাবলিক বলে আর কী! আলিঙ্গন মিলন হয় কী করে—এইটা তার মাথায় আসে না। দুটো জিনিস কি এক?
গ্রামের ভাষায় রতিমিলনকে বলে চুদাচুদি। কিন্তু জুবেদ শেখের মনে হয়, চুদাচুদি শব্দটা দিয়ে পারস্পরিক দুইটা শরীরের আনন্দ ভাগাভাগিটা একেবারেই ফুটে ওঠে না। এই শব্দটা এক ধরনের গালি বলে মনে হয় তার কাছে। যেমন কেউ যখন বলে, তোর মারে চুদছি, এই কথার মানে হলো—ওই লোকটাকে চূড়ান্তভাবে অপমান করা। এর চাইতে জঘন্য গালি বাংলা ভাষায় সম্ভবত আর নাই। আবার কেউ যখন বলে তোরে চুদার টাইম নাই। এরও মানে আগেরটার প্রায় কাছাকাছি। হতে পারে সেইটা, তোরে আমি নর্দমার পানিতে কিলবিল করা সাদা কৃমির মতন দেখি। এরকম আর কী! তাইলে এই ‘চুদাচুদি’ শব্দটা ‘রতিমিলন’ শব্দের সমগোত্রীয় কী করে হয়!
গ্রামের ভাষায় রতিমিলনকে বলে চুদাচুদি। কিন্তু জুবেদ শেখের মনে হয়, চুদাচুদি শব্দটা দিয়ে পারস্পরিক দুইটা শরীরের আনন্দ ভাগাভাগিটা একেবারেই ফুটে ওঠে না। এই শব্দটা এক ধরনের গালি বলে মনে হয় তার কাছে। যেমন কেউ যখন বলে, তোর মারে চুদছি, এই কথার মানে হলো—ওই লোকটাকে চূড়ান্তভাবে অপমান করা।
ভাদো মাসের ঝলমল করা চন্নি রাইত, লিচুগাছের ঘন ছায়ার নিচে, ইন্দারার হিম হিম ঠান্ডা জলে চ্যাপচ্যাপা গরম, ঘাম আর লবণের ভারি ক্লান্তি তাড়াতে তাড়াতে, নতুন প্যাকেট খোলা কেয়া সাবানের ভুরভুরা খুশবাই রাতের বাতাসে ছড়িয়ে, অত্যন্ত চমৎকার একটা সংগমপর্ব কাটানোর পর জুবেদ শেখের এইসব দু-চারটা শব্দ নিয়ে ঘোর ঘোর ভাবনার মধ্যে প্রায় হঠাৎ করে, এই এক্ষুনি হঠাৎ করে মনে হয়—‘রতিমিলন’ শব্দটাও যেন পর্যাপ্ত নয়।
আজকে শুরুটা হয়েছিল, সংগমের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে। শুরুর দিকে কয়েক ধাপ পেরোনোর পর মনটাকে একটু যদি এদিক সেদিক না সরানো যায়, যদি ধনুকের বাঁক থেকে সুচালো তির তীব্র গতিবেগে বেরিয়ে পরে যদি বাতাসের আইনকানুন না মেনে শাঁ শাঁ করে পাখির মাথা লক্ষ্য করে ছুটতে থাকে, তবে নিশ্চিত থাকো সেই তির পাখি অবধি যাওয়ার আগেই গোত্তা খেয়ে মাথা ঘুরে মাটির দিকে ধরাশায়ী হবে। তির মারা জানতে হয়। মাঝপথে এসে তিরের ফলাকে হাওয়ার মধ্যে শূন্যে কিছুক্ষণ ভাসিয়ে ভুলিয়ে রাখতে হয়। সংগমের সময় দক্ষ পুরুষেরা টেকনিক খাটায়। জুবেদ শেখ নিজেকে এখনো অতটা দক্ষ মনে করে না। বয়স সবে ছাব্বিশ। খেলতে খেলতে খেলোয়াড়—তাই না! গোটা জীবন এখনো পড়ে আছে।
সংগমের সময় কেবল জোশ লাগতে শুরু করেছে, এই সময় ঘোড়ার লাগাম খুব সাবধানে রাখতে হয়, আচমকা দৌড় লাগালে শেষ অবধি যেতে পারবে না ঘোড়া, এই সময় হলো সুখী রাজকুমারের মতন ঘাড় ঘুরে ঘুরে নদীর তীর, শস্যখেত, গ্রামের ঘরবাড়ি দেখবার। জুবেদ শেখ ঘরের বর্গা, মাটির দেওয়ালের ওপর সারি সারি চলা কালো পিঁপড়ার সারি—এইসব দেখে, দেখতে দেখতে ‘রতিমিলন’ শব্দটাকে মাথার ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলে। বলতে হয়, সে ইচ্ছা করেই এই কাজটা করে। ঘোড়ায় সওয়ারিকে শুধু গন্তব্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে চলে না। এই সময় নানান বিক্ষিপ্ত ভাবনায় মনটাকে সদাব্যস্ত রাখতে হয়।
২.
সিতারা বানু সেই ধরনের নারী যে কিনা শুধু ভালোবাসা চায়। শুধু ভালোবাসা, আর কিছু না। এমন অনেক দিন গেছে জুবেদ শেখ নিজের কারবার, পুলিশি মামলা, নিজের বাচ্চা-কাচ্চা, সংসারের খরচাপাতি—এইসব নিয়ে এট্টু আনমনা হওয়ামাত্রই চলন্ত ঘোড়া থেকে ছিটকে পড়েছে। সিতারা বানুর জায়গায় অন্য নারী হলে এবং সে নারী যদি সিতারার মতন অতীব সুন্দরী ও মেদচর্বি ছাড়া প্রফুল্ল যৌবনা কার্তিক মাসের মধ্যাহ্ন পরবর্তী টানটান রৌদ্র অথবা রৌদ্রের মতন হয় এমনকি তার অর্ধেকেরও কম থাকে, জুবেদ শেখ মনে করে সে নিশ্চিত তখন সে নারীর লাথ খেতো, চোইত মাসের মরা উড়ির ঝাড়ের রূপ নেওয়া তার বউ হাসনা পর্যন্ত এমন অবস্থায় তাকে অনেক দিন কুদাকুদি করেছে। হাসনারও এমন হঠাৎ করে নায়িকা পূর্ণিমার মতন নাক সিটকানো ভাব দেখে জুবেদ শেখের মাঝেমধ্যে একা একা অট্টহাসি দিতে ইচ্ছা করত। কথায় আছে না—ঘোড়া গাতায় পরলে ব্যাঙেও লাথ মারে! হা হা হা!
কিন্তু ব্যতিক্রম সিতারা বানু। জুবেদ শেখ সম্পর্কে তার দুঃসম্পর্কের ভাগিনা হয়। মানে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে হলে একটা না একটা লতাপাতার লেজের অবশিষ্টাংশ যেহেতু তৈয়ার করে রাখতে হয় সেই অর্থে ভাগিনা আর কী! মৈ এমন একটা ডাক, যার সাথে দূর বলে কিছু নাই। মায়ের পরেই মৈয়ের জায়গা। সুতরাং এখানে অবিশ্বাসের প্রসঙ্গ আসলে তা অনেক দূর গড়িয়ে যাবার পর লোকে জট খুলতে বসে।
তার ভেতরের খবর কেমন করে যে সে জানে! যেদিন জুবেদ শেখের ভালোবাসতে আদর করতে মন বসে না, সেদিন সে জুবেদ শেখের সামান্য সময়ের চোখের দৃষ্টি দেখেই তাকে পড়ে ফেলতে পারে। অথচ তাদের দুজনের সম্পর্ক মাত্র এই কদিনের। হাসনার সাথে তার বিয়ের প্রায় বারো বছর চলে। প্রথম প্রথম হাসনাও তার এই মনের ভেতরের ভালো মন্দ বুঝতে পারত। কিন্তু একসাথে থাকতে থাকতে কাঁচির দুই বাহুতেও মরিচা পড়ে। অনেক দিন ব্যবহারের পর দেখা যায়, চাবি দিয়ে তালা খোলা যাচ্ছে না, অনেক কসরত করে খুলতে হয়। দুনিয়ার নিয়মই হয়তো এই। রোগে অসুখে সারা বছর ভোগা হাসনার জন্য তার মায়া হয়। শরীর ভালো থাকলে মনটাও ভালো থাকে। হাসনা যে সময়-অসময়ে ছাঁৎ করে লাফ দেওয়া শিখার মতো জ্বলে ওঠে, যৌবন হারানো নদী আর যৌবন হারানো নারীর সাথে তার তুলনা দেওয়া যায়। যে নদী তীব্র বারিষার দিনেও হাঁটুর ওপরে উঠতে পারে না, আচমকা এক শীতের বৃষ্টিতে তার পাড়ভাঙা স্রোত আলু, টম্যাটোর খেত ভাসিয়ে দিলে গেরস্তও তখন বিদ্রুপের হাসি হাসতে চায় নদীর দিকে চাইতে চাইতে।
তবে সিতারা বানু যেহেতু শুধু ভালোবাসা চায়, শরীরের সুখ সব দিন না পেলেও তার দিন চলে যাবে, হয়তো তার মনটাকে সে এইভাবে তৈরি করে রেখেছে, হয়তো এরকম না-ও হতে পারে—মানুষের মন বোঝা কি সহজে করা যায়! কিন্তু আগে যতবার জুবেদ শেখ মাঝপথে ছিটকে পড়েছে, অন্য নারী হলে নিশ্চিত তাকে গালাগালি করত, নিজের বউ যেখানে তাকে এক ইঞ্চি ছাড় দেয় না সেখানে সিতারা বানু তাকে বুকে তুলে নিয়েছে। মুমূর্ষু বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দোল খাওয়ানোর মতন ‘আমি নু তোর মা ব্যাটা! আমি নু তোর মা!’, যতবার সিতারা তাকে মায়ের রূপ ধরে পুত বলে ডেকেছে ততবারই সে কেঁপে কেঁপে উঠেছে। ‘আম্মা আম্মা’ বলে গভীর নিস্তব্ধতায় ডুবে গেছে কিছুক্ষণ। যেন পুরো পৃথিবী গোটা একটা পর্বতের নিচে চাপা পড়ে সহস্র বছরের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কোনো এক অপরাহ্ণে তখন ঝাপসা চোখে দেখা যাবে সাগরের তীর ধরে ধরে একটা ল্যাংটা বালক হাতে একটা পিতলের ঘটি নিয়ে গ্রামের পথে আসতেছে। ঠিক যেভাবে মায়ের গর্ভ থেকে মানব সন্তান ধীর ক্লান্ত পায়ে পৃথিবীর পথে আসতে থাকে। এইসব দৃশ্য তখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কতক্ষণ এইভাবে বিভ্রমে কেটে যায় কে জানে!
তারপর জুবেদ শেখ যথারীতি সিতারাকে আদর করতে গেছে। আচমকা মুখ থুবড়ে পড়া ঘোড়াটা ঈশান কোণে কেমন করে রক্তিম সিঁদুর দেখে কে জানে! এর পরের দৃশ্যে দেখা যাবে, তীব্র সুখে একে অপরে আঁকড়ে ধরে দুইটা আদিম জন্তু শীৎকার করতে করতে মরে যাওয়ার মতন ডুবে গেছে স্রোতহীন কোনো জংলি নদীর অতল জলে। সেই সুখের কোনো তুলনা কারো সাথে দিতে চায় না জুবেদ শেখ।
মিষ্টির দোকানে বোলভরা শিরায় চিনিখেকো পিঁপড়ার ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়া দেখেছে কেউ! জুবেদ শেখ দেখেনি। তবে কল্পনা করলে পিঁপড়ার অনুভূতিটা সে বুঝতে পারে। তীব্র সুখে হাত-পা ছুড়ে চিৎকার করতে করতে মরণের পথে গমন। নারী-পুরুষের দুই নগ্ন শরীরের পরস্পর একসাথে ডুবে যাওয়াটাও এক ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত সহমরণ, যে মরণে নারী-পুরুষ সবাই ঝাঁপ দিতে চায়—সেরকম আর কী! সিজনের পয়লা বৃষ্টিতে রস কষ নিঃস্ব হয়ে যাওয়া কামিনী গাছটা হাত-পা ছুড়াছুড়ি করে যেভাবে নাচতে নাচতে আকাশের অসীম পথে মিলিয়ে যাওয়ার জন্য তোড়ফোঁড় আয়োজন করে—ঠিক সেরকম মরণের আনন্দের সাথে সংগমের তুলনা দিতে চায় জুবেদ শেখ। রতিমিলন শব্দটা কোনোভাবেই সংগমের আনন্দের প্রতিশব্দ হতে পারে না। অন্য বিকল্প কী শব্দ হতে পারে—জুবেদ শেখ তা জানে না। কিন্তু এইটা সে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারে—রতিমিলন শব্দটা খুবই নিরীহ মনে হয় সংগমের মতন তীব্র ও আনন্দকাতর শব্দের কাছে।
৩.
সিতারা বানুর মতন একটা টাইট মালকে দিনের পর দিন মাসের পর মাস একা পাহাড়ের টিলায় অবহেলায় ফেলে রাখে যে ব্যাটামানুষ, তার পৌরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ একসময় ছিল জুবেদ শেখের। হতে পারে সে লোকটা চার বাচ্চার বাপ। কিন্তু বাপ বনে গেলেই যে মর্দা পুরুষ হয়ে গেল—বিষয়টা কি তাই! কিন্তু পরে সে বুঝতে পারে লোকটাও সিতারার মতন ভালোবাসার কাঙাল। সিতারা তাকে একদমই সহ্য করতে পারে না অথচ সিতারার জন্য সে পাগল! নায়ক বাপ্পারাজের প্রেমিকা ভালো না বাসলেও সারা জীবন সে ভালোবেসে যাবে—সেইরকম আর কী! কিন্তু জুবেদ শেখের কথা হলো, ভালোবাসলে দূরে থাকা কেন! লোকটাকে সে হয়তো ইচ্ছা করলে বলতে পারত মহান কবি শেকসপিয়রের অমর সেই লাইন, ‘আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড’। কাছ থেকে দূরে সরে গেলে মনটাও দূরে দূরে সরে যায়। কিন্তু আরও একটু গূঢ় চিন্তা করে দেখল, সে কেন বলতে যাবে! কারো সংসারের ভাঙাগড়ার দায়িত্ব কি কেউ তাকে সঁপে দিয়েছে! আর আরেকটা কারণ কি সেইটা, যে তাদের দুজনের মধ্যে মিল না থাকলে জুবেদ শেখেরই লাভ! সিতারা তার স্বামীর ভালোবাসা পেলে জুবেদ শেখকে আর কেন জিগাতে যাবে, বগল কামিয়ে দিতে!
জুবেদ শেখ যেভাবে শুধুমাত্র কামনার জ্বালা মিটানোর জন্য সিতারার কাছে আসে, সেইরকম সিতারার প্রতি এক প্রকারের তীব্র ঘৃণা সে লোকটার চোখেমুখে দেখতে পেয়েছে। ভালোবাসার আরেক নাম তো ঘৃণা— তাই না!
রুটিরুজির জন্য সংসারে হাজারো কাজ আছে। হ্যাঁ, তুমি সংসারে একটাই কাজ জানো, সেইটা হাতির দাইদারি, এই তো! কিন্তু যে দাইদারের ঘরে অপূর্ব সুন্দরী বউ থাকে, তার কি উচিত হয় ঘর বাড়ি ফেলে গহিন পাহাড়ে গিয়ে হাতির লাদার ঝাঁজালো গন্ধের নিচে থেকে মুখ হা করে রাত যাপন করা! জুবেদ শেখ কোনোভাবেই হিসাব মিলাতে পারে না। সিতারার স্বামী দেখতে যতই বেখাটা, গরু দিরগা দেওয়ার মুগুরের মতন হোক—স্বভাবে লোকটার ঘাউড়ামি একটা আছে। সংসারের হিসাব বড়ো জটিল। প্রেম ভালোবাসার জন্য হলো একটা দেওয়াল আর বিপরীতে যে দেওয়াল আছে, সেখানে প্রেম ভালোবাসার বিন্দুমাত্র জায়গা নাই। আছে ঘৃণা হিংসা রক্তপাত, নিষ্ঠুরতা এইসব। জুবেদ শেখ যেভাবে শুধুমাত্র কামনার জ্বালা মিটানোর জন্য সিতারার কাছে আসে, সেইরকম সিতারার প্রতি এক প্রকারের তীব্র ঘৃণা সে লোকটার চোখেমুখে দেখতে পেয়েছে। ভালোবাসার আরেক নাম তো ঘৃণা— তাই না! সামান্য একটা দাইদার হয়ে এত রূপসি এক নারী তার জীবনে আসবে আর প্রকৃতি তাকে বিনয় দেখিয়ে ছেড়ে দেবে এতটা ঔদার্য বোধ হয় প্রকৃতি কোনো কালেই করেনি, জুবেদ শেখের স্বল্পজ্ঞানে যেটুকু জানে আর কী!
৪.
জুবেদ শেখ যখন সিতারার জীবনে ঢেউয়ের তঙ্গ লাগার মতন তীরের কাছাকাছি এসে কেবল আসা-যাওয়া শুরু করেছে, তখনই সে বুঝতে পারে, সিতারা বানু সুখী নয়। এত রূপ থাকার পরও মানুষ যদি অসুখী হয়, তাইলে রূপ সৌন্দর্য নাই এমন লক্ষ হাজার কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা বেদনা আর বিচ্ছেদ দিয়ে এত হাহাকার করা কেন ভাই! তাইলে কি এটাই সঠিক—সুন্দরী মাত্রই অসুখী আর অসুন্দররাই সুখী!
কিন্তু জুবেদ শেখের এইসব দার্শনিক বিলাপ তো ভ্রম মাত্র, তাই না! সে সামান্য গরুর দালাল। লেখাপড়া করেছিল কলেজ অবধি, পরে আর হয়ে ওঠেনি। অবসর পেলে এইসব সুখ অসুখ নিয়ে নানান ভাবনা ভাবতে পারে, বলা যায় এইসবে তাকে ঘিরে ফেলে। সামান্য লেখাপড়া করার এই হলো আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ—আল্লাহই জানেন ভালো। তবে সিতারার ব্যাপারে তার বেদনা কিংবা তার মনের দুর্বলতা এইসব বোধ হয় খাটে না। দিনের পর দিন আসা-যাওয়া করতে করতে একটু দুর্বলতা তৈরি হতে পারত, যেইটা খুবই স্বাভাবিক। শুধু কি শরীরের যাবতীয় জ্বালা যন্ত্রণা ধুয়ে ফেলার জন্য সিতারার কাছে সে আসে! যেভাবে পুরুষ মানুষ বেশ্যালয়ে যায়। সিতারা কি তার কাছে কেবলই একটা বেশ্যার মতন নারী! যে পরিমাণ প্রেম ভালোবাসা আদর যত্ন তার জন্য সিতারা উজাড় করে দিচ্ছে—এইসবের কি কোনো মূল্য নাই! বেশ্যাকেও তো শেষ পর্যন্ত জমিদার পুত্র স্বীকার করে নেয়। তীব্র ভালোবাসার কাছে হার মানে। এই রকম গল্প কাহিনি তো জুবেদ শেখের নিশ্চয়ই অজানা নয়।
কিন্তু অত দূর সে ভাবতে চায় না। আজ যদি সিতারার সাথে তার সম্পর্ক এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ হয়ে যায়, সে মনে করে তার খুব একটা মন খারাপ হবে না। গল্প উপন্যাস এক জীবনে প্রচুর পড়ার এই হলো আশীর্বাদ। সংসারে এইসব প্রেম ভালোবাসা তো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা—তাই না! কেউ কারো জন্য আটকায় না। বই পড়তে পড়তে জীবন সম্পর্কে সে যা জানে, জুবেদ শেখ মনে করে অতটুকুই চলার জন্য যথেষ্ট। হয়তো তার এই নির্মোহ স্বভাবের জন্যই হাসনা তাকে আজও পাগলের মতো ভালোবাসে। হয়তো সিতারাও এরকম।
সিতারা বানুকে যেদিন সে প্রথম দেখে, সারা শরীর জুড়ে যেন বিদ্যুৎগতিতে ঘুমন্ত সরীসৃপ দংশন করতে তেড়ে আসছে, এমনটা মনে হয়েছিল তার। এমন নারীকে যদি বিছনায় নিয়ে না যাওয়া যায়, তাইলে কীসের জীবন! ঘরে বসে বসে বাল ছিঁড়ার জন্য!
এক ভয়ংকর তুফানের রাইতে গোটা এলাকা যখন তছনছ হয়ে গেছে, বাজ পড়ছে একেকটা যেন কলিজা জ্বালিয়ে টাটকা ছাই না হওয়া পর্যন্ত রেহাই দেবে না কাউকে। এমন দিনে, ঘোর ঘুটঘুটা মধ্য রাইতে ঘর থেকে কারা বের হয়? হাসনা কিছু বুঝে উঠবার আগেই জুবেদ শেখ উত্তেজনায় লাইট পর্যন্ত নিতে ভুলে গেছে। তার মাথায় শুধু ওই একটাই চিন্তা, আজ এক্ষুনি যদি ঝড়তুফান পরোয়া না করে নির্জন টিলার মধ্যে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে একা থাকা সিতারার কাছে যায়, সিতারা প্রচণ্ড খুশিতে আজই তাকে উজাড় করে সব দিয়ে দিতে পারে। মেয়েরা এইসব বিষয় নিয়ে খুব সিরিয়াস থাকে। চরম বিপদের দিন সে যাকে কাছে পায়, তার প্রতি বিশ্বস্ততা রাখা ওইদিন থেকেই শুরু করে দেয়। সুযোগ তো তোমার মুখের সামনে আল্লাহ তুলে দেবেন না। ওই এক চ্যুতি চান্স যারা কাজে লাগায়, তারাই দুনিয়াদারি ভোগ করে।
গিয়ে দেখে, সিতারার অবস্থা সে যেমনটা কল্পনা করেছিল, ঠিক সেরকম। টিনের চাল সবক’টা উড়ে গেছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে বৃষ্টি পড়তেছে ঝমঝমিয়ে। তিন কিলো পথ—এই বৃষ্টির মধ্যে, ছাতা নাই লাইট নাই! কেমন ঘোরগ্রস্ত প্রেমিক, নিজেকে একটিবার চিন্তা করে দেখুক জুবেদ শেখ! যদি সে টর্চলাইট আনত, আলো ঘোরালেই দেখতে পেত সিতারার ধবধবে সাদা মাংসল একটা পা হাঁটুর নিচ থেকে অনাবৃত হয়ে দরজার চৌকাঠের বাইরে, কেবলই পা-খানি দেখা যাইতেছে আর বাকি শরীর ঘরের ভেতরে। অন্ধকারে ঘোর বৃষ্টির মধ্যে এই দৃশ্যটা কল্পনা করে জুবেদ শেখ কি কামাতুর হতে শুরু করবে! বাইরে ঘোর বৃষ্টি, ঠান্ডা ভেজা বাতাসে শরীরে তীব্র কাঁপুনি ধরবার মতো অবস্থা হওয়ার কথা। কিন্তু তার শরীরের ভেতর শূন্য ন্যাড়া খেতে আগুন জ্বালাবার পর, বাতাসের ঝাপটায় আগুনের শিখা লাফ দিয়ে দিয়ে জঙ্গলের দিকে ধাওয়া করবার মতন দাবানল জ্বলতেছে কেন! কামের আগুন কি এতটাই শক্তিশালী যে ঝড়তুফানে সর্বস্বান্ত হওয়া একটা নারীর অসহায়ত্বকে পর্যন্ত নিস্তার দেবে না!
তার পাশের বাড়ির চাচা মন্তাজ মিয়া এই তো গত বছর শীতের এক সন্ধ্যায় পাহাড় থেকে আসার পথে রাস্তার পাশে পরে তার লাশ আবিষ্কার করেছিল গ্রামের মানুষ। হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, সাপের কামড়—এইসব কিচ্ছু না। লাশকে গোসল করানোর সময় দেখা গেল, মন্তাজ মিয়ার পিঠে টাটকা পাঁচ আঙুলের দাগ! এই দাগ যে মানুষের না সেইটা একটা দুধের বাচ্চাও বলে দিতে পারবে।
সিতারাকে বাচ্চাসমেত তার রান্ধাঘরের লাকড়ি রাখার মেচাঙের নিচে ভেজা জবুথবু অবস্থায় আবিষ্কার করার আগে আগে জুবেদ শেখ অন্য একটা পরিস্থিতির মুখামুখি হয়। এই যে গহিন অন্ধকার রাতে ঘোর বৃষ্টির মধ্যে, ঠাটা পড়ে নগদ কাঁচা টাটকা মৃত্যুও হয়ে যেতে পারে যেকোনো মুহূর্তে, গোটা একটা জনমানবহীন এলাকায় সে যে একা এলো, হাতে তাও কিনা একটা টর্চ পর্যন্ত নাই—এখন যদি সিতারার ঘর থেকে সিতারাকে তার বাচ্চাসহ কাঁচা খেয়ে ফেলার পর সিতারার রূপ ধরে এই এলাকার ভয়াবহ ডাইনটা বেরিয়ে আসে! অসম্ভব বলে তো কিছু নাই! কিয়ারি বলো আর ডাইন বলো—এদের শত শত নিষ্ঠুরতার কাহিনি কে না জানে! তার পাশের বাড়ির চাচা মন্তাজ মিয়া এই তো গত বছর শীতের এক সন্ধ্যায় পাহাড় থেকে আসার পথে রাস্তার পাশে পরে তার লাশ আবিষ্কার করেছিল গ্রামের মানুষ। হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, সাপের কামড়—এইসব কিচ্ছু না। লাশকে গোসল করানোর সময় দেখা গেল, মন্তাজ মিয়ার পিঠে টাটকা পাঁচ আঙুলের দাগ! এই দাগ যে মানুষের না সেইটা একটা দুধের বাচ্চাও বলে দিতে পারবে। হাতের থাবার মধ্যে যেন গনগনে গরম লোহার টুকরা ফিটিং করা। পাঁচটা আঙুল এমন গভীর হয়ে বসেছে, কাছে গেলে সেই ক্ষতের ভেতরটা পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা গেল। লাল লাল মাংসের চাকা পিঠের ভেতরে বুদ্বুদের মতন ভাসতেছে। এইসব দেখবার পর মানুষের হুঁশ কি আর জায়গায় থাকে! জুবেদ শেখ মুহূর্তের মধ্যে তাকে আটকে ফেলা ভয় কাটানোর জন্য চিৎকার করে সিতারার নাম ধরে ডাকতে পারে, তার বাচ্চাদের নাম ধরে ডাকতে পারে! জানে সিতারার দাইদার স্বামী বাড়িতে নাই, হোক তার চাইতে বয়সে অনেক বড়ো—তবু চিৎকার করে ‘হুসমতের বাইচ্চা’, ‘দাইদার কুত্বার বাইচ্চা’ বলে ডাকতে পারে! কিন্তু সে এইসব কিচ্ছু না করে কেবল মুচকি একটা হাসি দিয়ে কেন বলতেছে, ‘আমি কিতা রহস্যোপন্যাস লিখতে বইলাম নি, ল্যাওড়া!’
৫
সে জানে যে, ঝড়তুফান, গুর্দা ফেটে যাওয়ার মতন প্রচণ্ড ঠাটা পড়ার রাইতে সে কেন, তার মৃত বাপ চাচারা যদি জিন্দা ফিরে তাকে লাঠি তরোয়ালসহ ঘের দিয়ে সিতারার বাড়ির উদ্দেশে নিয়ে যায়, তবু সে যাবে না। যে মানুষ হালকা ঠাটা পড়লেই ঘরের ভেতর তাড়া খাওয়া মুরগির মতন পড়িমরি করে ঢুকে—সে কিনা মাঝ রাইতে ঘুটঘুটা অন্ধকার পাড়ি দিয়ে তিন কিলো পথ কোনো রকম লাইটটাইট না নিয়ে দৌড়তে শুরু করবে! আর তার বউ হাসনা অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া তার স্বামীর গন্তব্যের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখবে!
প্রায় প্রতিবারই কাহিনিটা এই ঝড়তুফানের রাইতে এসে আটকে যায়। সিতারার ঘরে তো চোইত মাসি দুপুরবেলাও যাওয়া যায়। টাটকা খিরা পিছ পিছ সাথে নুন মরিচমাখা। মাটির ঘরের খোলা জানলা দিয়ে হুহু বাতাস এসে ঢুকতেছে, বাইরে রোইদের মাতম। বিছনায় পাশাপাশি বসে তারা খিরা খেতে খেতে একে অপরে প্রচণ্ড তৃষ্ণা নিয়ে চাওয়াচাওয়ি করতেছে। এই দৃশ্য কি বেমানান কিছু! অথবা হাওনমাসি ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ব পড়ব ভাব, এর আগে চানা ডাইল আর আটা নিয়ে সিতারার ঘরে গিয়ে হাজির হওয়া যায়—ঝুমঝুম বৃষ্টির দিন গরম পরোটা আর চানা ডাইল খেতে খেতে সিতারার রান্ধাঘরে বসে তার ব্লাউজ উপচেপড়া স্তন দেখবার দৃশ্যও তো কল্পনা করা যায়—যায় না! কিন্তু মাথায় এসে কবে যে এই বৃষ্টি, তাও মধ্য রাইতের ঘুটঘুটা অন্ধকারের মধ্যে, এইসবের সাথে তার সবচাইতে আতঙ্ক যে জিনিসটায় সেই ঠাটা পড়াটাও মিলে গেল!—এখন কোনোভাবেই সে এই দৃশ্যটাকে অতিক্রম করে যেতে পারছে না। বড়ো লেখক হলে নিশ্চয়ই পারত। কিন্তু সে তো সামান্য গরুর দালাল। তার মাথায় আর কতটুকুই-বা লোড নিতে পারে! ঝাড়তেও পারতেছে না। একটা দৃশ্যকে সেন্সর করার জন্য সে তুতবাড়ি বাজারের পুব পার্শ্বে নির্জন টিলাগুলোতে কয়েক দিন পর্যন্ত গেছে। যেখানে রয়েছে সিতারার একলা বাড়ি। এত নির্জনে কেউ থাকতে পারে না, থাকবার কথাও নয়—এইসব কঠোর কথা বলে সিতারার বাড়িকে কাছাকাছি বস্তির ধারে কাছে কোথাও আনতে চেয়েছে। কিন্তু সেইটা আনতে গিয়ে দেখেছে, ঝামেলা কমার তো প্রশ্ন নাই বরং বাড়বার সম্ভাবনাই বেশি। তখন করতে হবে কী— হুসমত দাইদারের চরিত্রটাও পালটে দিতে হবে। নির্জনতার মধ্যে সিতারার নিঃসঙ্গতার বেদনা গভীরভাবে অনুভব করা যায়। বস্তিতে নিয়ে গেলে সিতারা আর সিতারা থাকবে না। পুরা কাহিনিটাই তখন মাঠে মারা যাবে। তার চাইতে যতটুকু সে এগিয়ে নিতে পেরেছে ততটুকুই থাকুক। মনকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া তার হাতে আর কিছুই করার নেই। আছে কি?
৫
হাসনা এইসব মরে গেলেও বিশ্বাস করবে না। একটা মানুষ যে দুই দুইটা জীবন যাপন করতেছে, এইটা তার জ্ঞানে ধরবে না। আবার বিপরীতে যদি চিন্তা করা যায়, এই যেমন জুবেদ শেখ যদি মনে করে, হাসনার ভেতরেও যদি তার মতো আরেকটা জীবন বসবাস করতে থাকে! জুবেদ শেখের থাকলে হাসনার থাকতে অসুবিধা কোথায়! থাকতে পারে না! হয়তো এইভাবে পৃথিবীর অগুনতি মানুষ একসাথে দুইটা জীবন চালিয়ে নিতেছে। কে জানে?
একেক দিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে সে এতক্ষণ যাকে খোয়াবে দেখেছিল, সেই লিচু গাছের ছায়াপড়া উঠান, ঝিরঝির মোলায়েম বাতাস, শীতল ছায়াপড়া ইন্দারার পাড়ে গোসলরত তাকে ডাক দিয়ে যাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে ডিম দিয়ে লাউয়ের ঝোল নিয়ে বসা ম্যাক্সিপরা সিতারা—মনে হয় সিতারা অনেক দূর থেকে তাকে ডাক দিতেছে, এত কাছে থেকেও অনেক দূরে শোনার কারণ সে ততক্ষণে ঢুকে গেছে আরেক ধান্ধায়, গরুর তিনটা চালান একটু পরে মাগরিব বাদ এসে ঢুকতেছে দশটেকি লাইন দিয়ে, তারা তিন জন পাইকারের সর্বমোট বিশটা মাল, তার একার সাতটা, ওপার থেকে ইমো ভিডিও কলে গরুগুলির সাইজ দেখে সে ভীষণ খুশি, এইবার ভালো একটা দান মারা যাবে, এইবার আর মিস করবে না, হুন্ডা কিনেই ছাড়বে, নতুন হুন্ডা নিয়ে তাতানো রোইদের নিচে দুই পাশে সারি সারি শাল গজার বনাক—এইসব অতিক্রম করে শূন্যে চিলের ডিগবাজি খাওয়ার মতন ভো চু ত ভো চু ত… যাহ চ্ছালা! এই জুবেদ শেখ তখন কাউকে কেয়ার করে নাকি! হুন্ডা একটা লগে থাকলে তুমি এই যুগের রাজা! আজকাল ফইন্নির বাচ্চারাও হুন্ডা দৌড়ায়! সবজিওয়ালা, মাছের মাইমল, রাজমিস্ত্রির জুগালি, বুংগা কারবারি, হোটেলের মেসিয়ার, বিদেশ থেকে ক্যানসেলড দুম্বার রাখাল—কে চালায় না হুন্ডা! বিছরাইতে গিয়ে দেখা যাবে, একা এক ভোদাই মার্কা জুবেদ শেখই অবশিষ্ট রয়ে গেছে! অথচ যে কিনা লাখ লাখ টাকার কারবার করে! তার উড়ন্ত গতির পিছন থেকে সিতারা যে তাকে ডিম দিয়ে লাউ তরকারি গরম গরম খেতে ডাকছে, মনে হইতেছে অনেক দূর থেকে তাকে ডাকতেছে, সে স্পষ্ট শুনতেছে আবার শুনতেছে না—এই বেটিমানুষের আবার বড়ো দোষের একটা হলো, একবার ডাকলে তার কাছে যাওয়া ছাড়া রেহাই দেবে না, অথচ হুন্ডার গতি এখন ফুল গিয়ারে, এখন কেবল বাতাসে শিস দিলে ‘টুনির মা’ গানটা শোনা যাবে, ও টুনির মা/ তোমার টুনি কথা শুনে না/ যার তার লগে/ ডেটিং মারে/ আমায় চিনে ন…উ… এই সময় এই উরাধুরা সুখের সময় কেউ এসে ডাকাডাকি করলে মেজাজের কি আর গতি ঠিক থাকে! সে তখন ‘এই বেটি চুপ থাক’ বলে চড়া গলায় ধমক দিতে যাবে, আর এইটা করতে গিয়ে সে তখন নিজেকে আবিষ্কার করবে—নিজের বাড়ির বিছানায় শূন্যে হাত পা ছুড়ে সে প্রায় আধো অন্ধকারে দুইটা জীবনের মাঝখানে এট্টু সময়ের জন্য হাঁসফাঁস করতেছে, বাচ্চার ঝাঁজালো মুতের গন্ধ ততক্ষণে তাকে আসল জীবনে ফিরিয়ে আনলে সে লম্বা করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আধো অন্ধকারে দেওয়ালের কাছে খাড়া করে রাখা আলমারির ওপর পড়ে থাকা হাসনার বিয়ের লাল ময়লা সুটকেসটাকে পাশ ফিরতে ফিরতে দেখবে, প্রায় অস্ফুট স্বরে সে তখন বলবে, ‘হালার জীবন! পুঞ্জির সামান্য ছফা কামলা মস্ত বড়ো গরুর দলাল অইতো চায়!’ বিড়বিড় করে না বললেও চলত, ততক্ষণে হাসনা ভঁইসের মতন ঘুমে কাদা, ভুস ভুস করে শ্বাস ফেলতেছে, শুনে ফেলার কোনো ডর নাই, কিন্তু সে বিড়বিড় করবে, হাসনা শোনা না শোনা, সেইটা বিষয় না, সে বিড়বিড় করবে এই জন্য যে, আল্লাহ যাতে শুনতে পান, তার ধারণা, আল্লাহ একদিন তার স্বপ্ন পূরণ করে দেবেন।
৬
ঘুম ভাঙার পর সে শিথানের কাছে রাখা ডার্বি সিগ্রেটের প্যাকেটে পড়ে থাকা সর্বশেষ সিগ্রেটটা হাতড়ে হাতড়ে বের করবে, কাছাকাছি লাইটারটাও যাবে পেয়ে—এইসব নিয়ে আলগোছে বিছানা থেকে ওঠে সে, যেহেতু আধো অন্ধকারে প্রায় সবকিছুই দেখতে পাচ্ছে, যেহেতু সে মাত্র ছাব্বিশ বছরের টনকা যুবক, ছাপান্ন বছরের বুড়া নয়, প্রায় নিঃশব্দে, দেওয়াল-টেওয়াল ধরবার কোনো প্রয়োজন আছে কি! দরজার ছিটকারিটাও তার হাতের পরশ জানে, টিকটিকির লেজের বাড়ি মারার মতন ‘চটাস’ করে মৃদুমন্থর একটা শব্দ তুলে সে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যাবে, এই মধ্যরাতে। মাথার ওপর বরাবরের মতন ঝলমলে চন্নি, কোনো দিন চন্নির তেজ থাকে প্রায় নিভুনিভু, ঝাপসা, আলো ক্রমশ ফুরিয়ে যাবার মতন। হেঁটে হেঁটে সে তার বাড়ির পুকুরপাড় পর্যন্ত যাবে, ওইটুকুই সীমানা। বরইগাছের ছায়ার নিচে। কোদাল দিয়ে দুই দিন পরপর চেঁচে দেওয়া এক টুকরো জায়গা, যেখানে সে প্রতি রাতে এসে বসে থাকে। এখানে সে ততক্ষণই বসবে যতক্ষণ না পর্যন্ত তার শরীরের জ্বালা যন্ত্রণা, মনের যাবতীয় দুঃখ, বেদনা—এইসবের উপশম হবে।
সিতারার সাথে তার সম্পর্কটাই-বা কেমন! মুখে সে বলতেছে, তার অত দায় নাই। ভালোবেসে যদি সিতারা শোকে দুঃখে আকুল হয়, সেইটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এমন কোনো দিন এমনকি আছে এমন কোনো মুহূর্ত—যেখানে সিতারা ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করতে পারে! এই যে মাঝরাতে বিছনায় বউ বাচ্চা ফেলে এই নিস্তব্ধ রাত্রির নিচে এসে প্রায় প্রতিদিনই পৃথিবীর সমস্ত মনুষ্যপ্রজাতি যখন গভীর নিদ্রায় অতল সাগরের তলদেশে ডুবে গেছে, সে কেন একা একা, পুকুরপাড়ে, বরইগাছের ছায়ায়, নিঃসঙ্গ চন্নির নিচে!
সিতারার মনের হদিস তার দরকার নাই কোনো, তার দরকার টসটসে কাঁঠালের কোয়ার মতন পেলব শরীরটা—এই কথা মুখে যতই বলুক, এই যদি হয়—তাইলে ভাই কেন গোটা দিন জুড়ে কেবল বেদনার ক্ষীরে ডুবে যাওয়া!
এইসব না হয় ঠিক আছে—কিন্তু এইসবের বাইরেও সিতারা কেবল একটা নারী হয়ে কি তাকে ইদানীং অনেকটা জায়গা জুড়ে বসতেছে না! আজকাল প্রায়ই একটা দৃশ্য দেখে সে, সিতারা আর সে লোকাল ট্রেনে চড়ে দূরে যাইতেছে কোথাও।
সে যে সিতারাকে পালকা মা বনিয়ে চটি বইয়ের অজাচার কাহিনির মতন প্রতিটি মুহূর্ত তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে, সারা দিনের ক্লান্তির ভারটাকে লাঘব করার জন্য এই যে একটু পরে বরই গাছের নিচে বসে বসে নিঃসঙ্গ খোলা চন্নি আর নিঃসঙ্গ সে নিজে, রিপুর তাড়নায় ধীরে ধীরে নিজেকে শিথিল করে দেবে—এইসব না হয় ঠিক আছে—কিন্তু এইসবের বাইরেও সিতারা কেবল একটা নারী হয়ে কি তাকে ইদানীং অনেকটা জায়গা জুড়ে বসতেছে না! আজকাল প্রায়ই একটা দৃশ্য দেখে সে, সিতারা আর সে লোকাল ট্রেনে চড়ে দূরে যাইতেছে কোথাও। একসময় দেখা গেল, সিতারার বাদাম খাওয়ার ইচ্ছা হলে জুবেদ শেখ তাকে বাদাম কিনে দিতেছে, সেই বাদাম ভেঙে ভেঙে সিতারা খাওয়ায়ে দিতেছে জুবেদ শেখকে। জানলার বাইরে থেকে দমকা হাওয়া এসে সিতারার আচমকা খোঁপা ভেঙে চুলের বাঁধ খুলে দিলে জুবেদ শেখের চোখেমুখে রেশমি চুলের এমন মোলায়েম পরশ লাগতেছে! তার মনে হইতেছে, পৃথিবীর সৌন্দর্য বড়ো ক্ষণস্থায়ী! আহা বড়ো ক্ষণস্থায়ী!
ইদানীং বরইগাছের নিচে এই মধ্যরাইতে এসে সে বসতেছে ঠিকই, কিন্তু এমনও দিন আছে যে, যে কাজের জন্য সে পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে এসেছে, দেখা যাইতেছে কোনো কোনো দিন সে শরীর শিথিল করার কথা বেমালুম ভুলে বসেছে। যে ঘোরের মধ্যে সে থাকে, দেখা যেত, প্রায়ই সে ঝুপ করে গা ডুবিয়ে ঘরে ফেরে, মাঝেমধ্যে তার বউ হাসনা তাকে ভেজা অবস্থায় দেখে বিরক্ত হয়ে যায়, ঘুরেফিরে ওই কিছু কথাই বলে, ‘বউ তো ডেইট ওভার অই গেছে! পুরান জুতা আর পিন্দা যায়নি’ অথবা ‘সংসারও বাসি অই গেলে আর দাম থাকে না!’ শেষের বাক্যটা প্রায় এই ধরনের থাকে ‘স্বপ্নদোষে সুখ নেও মিয়া!’
কিন্তু হঠাৎ করে তার এই সহজ স্বাভাবিক, একদম ঘোরগ্রস্ত নয়, এমন লোকটাকে যদি হাসনা দেখে, যদি সে আন্দাজ করে বসে, তার সিধাসাধা স্বামী কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ল না তো!
একেক দিন হাসনা তার ওপর হামলে পড়ে। হাসনার আর দোষ কী! মেয়েমানুষের স্বামী যদি দিনের পর দিন তার স্বামীর আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত থাকে, সে তো মাঝেমধ্যে বিদ্রোহ করবেই। জুবেদ শেখের হাসনার জন্য মায়া হয়। তার শীতল, নিষ্প্রাণ ধাতব শরীরে হাসনা নিজেকে গুঁজে দিতে দিতে তৃষিত প্রাণীর মতো আঁকুপাঁকু করে। জুবেদ শেখের নিজেকে বড়ো অপরাধী মনে হয়। হাসনার শরীর দেখে তার মনে হয়, হাড্ডিগুড্ডি চারপাশ থেকে জড়ো করে যদি আঁটি বাঁধা হয়, সেটাই এখন হাসনা। এত পাতলা, এত ওজনহীন! আদুরে বিড়ালের মতন ‘গরগর’ শব্দ করে হাসনা আদর খেতে চায়। দীর্ঘ তেরো বছরের ঘর করা বউ সে, স্বামীর শরীরের পরশে কতটুকু প্রেম আর কতটুকু উদাসীনতা আছে—এইসব যদি না জানে আর জেনেশুনে যদি তার স্বামীর এইসব সমস্যা থেকে তাকে মুক্ত না করে তাহলে আর কীসের এত দিনের সংসার আর কীসের প্রেম ভালোবাসা! তারা তো একে অপরে ভালোবেসে বিয়ে করেছে—উকিল, কাজি ধরে নয়। সে তার গলাটাকে যথাসম্ভব নিচে নামিয়ে আনে। একটু আগে যে চড়া গলা ছিল, সেইটা নাই, হঠাৎ এমন ছন্দপতনে জুবেদ শেখ অবাক হয় না। সংসারে এইসব দৃশ্য বিরল কিছু নয়। নিয়মিত ঘটনা। হাসনা কদিন ধরে যা বলতেছে বা যা বলতে চায়, তা ঘুরেফিরে একই ত্যানাপ্যাঁচানো কাহিনি। গাওগেরামের মানুষেরা যা ভাবে সেটাই। জুবেদ শেখকে নাকি কিয়ারি বশ করেছে। এখন তাগা তাবিজ করে মোল্লা ডেকে জুবেদ শেখকে চিকিৎসা করাতে হবে। জুবেদ শেখ আগের মতোই শীতল থাকে। তার আসলে শরীরে বিন্দুমাত্র হাসনার জন্য প্রেম জাগে না। এর মানে এই নয় যে সে হাসনাকে ভালোবাসে না। হাসনা তার দুই বাচ্চার মা। তাদের দীর্ঘদিনের সংসার। কত দুঃখকষ্টে হাসনা তাকে ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছে। নিজে না খেয়ে তাকে খাইয়ে কাজে পাঠিয়েছে। কিন্তু বিষয়টাকে অত জটিল করে না ভাবলেও তো পারে জুবেদ শেখ। তার বউ হাসনা যেখানে বলছে, পরনারী হলে নাকি কোনো সমস্যা ছিল না। এইগুলা হলে নাকি সে তেমন কিছু মনে করত না। কিন্তু কিয়ারি ধরেছে জানলে কোনো বউ শান্তিতে স্বস্তিতে থাকতে পারে! আর স্বপ্নদোষ তো তাদের ধর্মে সাফ কবিরা গুনাহ।
হাসনার মুখে প্রায়ই এইসব শুনে জুবেদ শেখের বিরক্তি বাড়ে। হাসনার জন্য তখন তার করুণা হয়। হাসনা মুখে বলতেছে, পরনারী হলে কোনো সমস্যা মনে করে না সে। আদতেই কি কোনো নারী এতটা ঔদার্য দেখাবে! ইতিহাসে আছে এমন কোনো নারী যে নিজের স্বামীর পরকীয়া মেনে নিয়েছে! জুবেদ শেখের তখন মনে হয়, শালা গোটা সংসারটাই একটা প্রহসন। মিথ্যাচার ছাড়া কেউ একটা মুহূর্ত টিকে থাকতে পারবে না। এমনকি সে নিজেও।
৭.
কিন্তু জুবেদ শেখ কাহিনিকে অত দূর নিতে চায় না। সে হাসনার ভুল ভাঙাতে চায়। কিন্তু হাসনাকে নিজের কাছে নিতে গিয়ে সে টের পায়, কাজটা যতটা সহজ ভাবা হয়েছিল অতটা নয়। হাসনা আসলেই এখন কয়েকটা হাড্ডির টুকরা মাত্র। এই শরীরের ওপর কীভাবে সুর তোলা সম্ভব! কীভাবে সম্ভব ফুল ওঠানো!
যেভাবে রতিমিলনের সেই স্বর্গীয় সংগীত দুটো প্রাণকে, দুটো মানুষকে ধীর লয়ে সুর তুলে তুলে পরস্পরের দিকে আকর্ষিত করে, সেই সুর সে হাসনার উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করার প্রয়োজনই মনে করে না। হাসনা তাকে মাফ করে দিক। গোলাপ তো গোলাপই—তাই না! গোলাপের কাজ কি অন্য ফুল করে দিতে পারবে! সিতারার সাথেও তো তার সব দিন রতিক্রিয়া গোলাপের মতন সুন্দর আর মনোরম হতো না বা হয় না। যেদিন মন অস্থির থাকত বা থাকে এখনো, সে কী করে? খুব সহজ হিসাব। তার এসময় একটা উদাহরণের কথা মনে পড়ে। বিয়ের বাজনাদার যখন আসরে আসে, তার হাতে সব রকমের সুর তৈয়ার থাকে। পরিবেশ যদি ক্লাসিকের হয় তখন সে ধীর লয়ে সুর তুলে তুলে উচ্চতায় উঠতে থাকে। আবার যদি পরিবেশ হয় বিশৃঙ্খল, অস্থির চিত্ত মানুষের চোখমুখ, তখন সে ধুমধাম সংগীত বাজায়। তাল লয়ের এইসবের নো পরোয়া। জুবেদ শেখের এইটা মাথায় সেট করা হয়ে গেছে যে, কোনো নিয়মে শান্তি না পেলে অজাচারে ফিরে যাও।
সিতারার সাথে তার প্রেম নেই। বরং সিতারার চাইতে হাসনার জন্যই তার মনটা পোড়ে। তার রুগ্ণ, অসহায় অনাথা প্রেমিকা হাসনা! তার অবোধ দুইটা সন্তানের মা হাসনা! তার জন্য তার সন্তানের জন্য তিলতিল করে নিজেকে নিঃশেষে ক্ষয় করে দেওয়া হাসনা!
কিন্তু আজকাল সিতারা যেভাবে তার রতিমিলনের সঙ্গী থেকে অনেক দূর এগিয়ে গিয়ে ট্রেনের ভ্রমণে সঙ্গী হয়ে যাইতেছে, নিস্তব্ধ মধ্যরাতে নির্জন বরইগাছের নিচে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে যেভাবে বাউল ফকিরদের মতন ব্যাকুল আর উদাসী করে দিচ্ছে, এইটাকেই তার সবচাইতে ভয় হয়। মৈরূপী সিতারা আর হাসনা—এই দুজনের মধ্যে সে অতটা পার্থক্য খুঁজে পায় না। দুজনেই তার চেনাজানা, হাসনার মতন সিতারাকেও তার দুখী, গরিব আর বড়ো নিঃসঙ্গ মনে হয়।
আপাতত তাকে হাসনার জন্য, মন একেবারে না চাইলেও সেক্রিফাইস করতে হবে। পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী সম্ভবত সেক্রিফাইস করতে জানে। যেহেতু হাসনার শরীরের প্রতি তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই এখন সুতরাং তাকে রতিক্রিয়ার প্ল্যান বি মোতাবেক আগাতে হয়। যেইটার নাম সে দিয়েছে সেক্রিফাইস! সে তখন তার ব্রেইনের বাক্স থেকে অজাচার বইয়ের পৃষ্ঠা খুলতে শুরু করে। যেভাবে সাপুড়িয়া তার ধুরন্ধর গোখরাটাকে ধীরে ধীরে বাক্স থেকে বের করে আনে, ঠিক সেভাবে। সে তখন কয়েকটা শ্বাস ফেলে তা নিশ্বাসরূপে ফিরিয়ে নেওয়ার আগেই টের পায়, সিতারাকে ‘মৈ’ থেকে ‘পালকা মা’তে দ্রুত রূপান্তরিত করার সাথে সাথেই তার শরীরে বিদ্যুৎগতিতে ঢেউ এসে আছড়াতে শুরু করেছে। এবং এর একটু পরপরই তার মনে হয় বাতাসে সুর তৈরি হইতেছে। অপ্রেম থেকে প্রেমের কাব্য বয়ান হইতেছে। যেইটা আসলে সচরাচর হয় না। তবে হয়ে গেলে অবাক হওয়ার তো কিছু নাই। সে তখনই বুঝে যায়, সিতারা ছাড়া তার গতি নাই। হাসনা কেবলই হাড্ডির টুকরা মাত্র!
তারপর ঢেউয়ের পর ঢেউ আসে। একেকটা ঢেউ তার কোমর বরাবর তারপর বুক বরাবর তারপর গলা বরাবর এসে তাকে দূরে ভাসিয়ে নেয়। তুমুল জলরাশিতে তার শরীর থেকে, হাসনা যদিও নামমাত্র, আসলে তো ওখানে স্বয়ং সিতারা এসে গেছে। সিতারার শরীর থেকে ইলেকট্রন প্রোটন নিঃসরণ করতে করতে তার মনে হয়, এমনকি সিতারার চোখের ঝিলিক দেখেও সে মনে করে তারা নিঃসীম বিন্দুতে মিলাতে মিলাতে একসময় ফেটে যাবে।
আর তখন রতিমিলনের উপযুক্ত সংজ্ঞা না পাওয়ায় কিছু দিন আগে যে একটু একটু অস্থিরভাব এসে সুখসুখ শূন্যতায় তাকে বিলোল করে দিয়েছিল, এইদিনের কথা মনে পড়ে যাবে। আর হাসনাকেও বড়ো সুখী সুখী মনে হবে, তার রুগ্ণ, দুবলা, হাড্ডিসার অবস্থার পরও।
আপাতত সিতারার কাছ থেকে জন্ম নেওয়া, একসাথে দুজনে ট্রেনে করে দূরভ্রমণে যাওয়া সেই আরেক সিতারার সাথে হাসনার দেখা না হলেই হলো!
জন্ম ১৯৮৫ সালের ১৮ই জুন, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার মুড়ইছড়া চা বাগানে। পেশায় স্কুল শিক্ষক।