১.
তোমার শরীরে
নেমে আসা গোলাপের স্রোত
পিতলের দীপাধারে যেন জ্বলজ্বলে অগ্নি—
বাহুবন্ধনের সে সপ্তাহ
বরফ ঝরনার মতো ভূতগ্রস্ত অতীতের
শঙ্খের ভেতর বায়ু
যে রণাঙ্গনের গান হয়ে জাগছে অধীর
সংঘাত কী সেখানেই?
হাড়-কাপানো জ্যোৎস্নায়
কালিন্দী তোমার তলপেটে ব্যথা
তবু সমুদ্র ঢেউকে
কেন যে বলছি
শান্ত হও হৃদয়, প্রেমে পোড়ো না—
২.
নিজ রক্তের পুকুরে
দেহ ভেসে রেখে, মেটে নাকি তৃষ্ণা?
অনাথ দুচোখ
কবরের মাটি দিয়ে চাপা দিচ্ছি—
প্রসারিত নাভিমূলে
প্রজাপতি ওড়াতে গিয়েই
জন্ম দিলাম শূন্যতা!
ধুলো মুছে, আয়না ধরেছি মেঘে
প্রতিবিম্বে বৃষ্টি নেই, শুধুই পড়ছে বাজ—
৩.
ধারালো চাঁদে তুমি কেটে নিলে আমার জিভ
আলো ঝরছে, আলো ঝরছে…
উদ্বেল হৃদয় সমতলে
কে তুমি উষসী গানের রাত্রি?
মুমূর্ষু সাগরতল থেকে
মুণ্ডহীন পাখিরা উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে
হে শস্য, হিরণ্ময় আয়ু
বৃষ্টিপাতের পর কবরে রেখে এসেছি বসন্ত
উড্ডীন বাবুইয়ের ঝাঁক
আমার ঝুলন্ত খুলিকে বাসা ভেবে ফিরে এসেছে
আর কেটে ফেলা জিভের বাঁকি অংশ
স্তব্ধতার সময় জুড়ে তোমার হৃদয়ে শুধু লাফাচ্ছে—
৪.
দূর ওই চারণভূমির দিকে
সূর্যাস্তের পূর্বে দুরন্ত লাফিয়ে ওঠা ঘোড়ার মতো
কিছু উন্মাদনা, যৌবন সহচর নগ্নতা
হৃদয়ের স্তব্ধতায় ক্ষুব্ধ গন্ধে ভরে তোলো দেহ
বীতশ্রদ্ধ সকালের উপকূলে
কেনো দাঁড়াতে গেলে হে মৃত-সত্যের তনিমা
ব্যাকুল শস্যভূমি তার রণনের কারু
নিরুদ্দেশ সন্তানের দিকে মায়ের অশ্রুরাত্রি ও ফণা
তুমি কী গান গাইছো গর্ভে বিদ্যুৎ নিয়ে!
পরিধেয় ছিঁড়ে
বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে অতৃপ্ত মাতৃস্তন—
৫.
শ্বেত অশ্বারহী
মৌন তৃণভূমে ছুটে এসো প্রাণবায়ু হয়ে—
মাশরুমের মুকুট পড়ে
আমি বসে আছি রিপু-সমীপে
জাগো সর্পজিভের মতন
তালার গহ্বর থেকে
উৎস ভুলে যাও সে নদী
ক্রমশ এ বুকের ওপর মাথা ঠুকছে একা
পাকা করলার পাশে এক রূপদক্ষ গিরগিটি
আমাদের ধার করা চিন্তার দিকে ফুঁসে উঠছে
আর
এই মধ্য দুপুরে
সমুদ্র ফেনায় ঢেঁকে যাচ্ছে আমার ক্রুদ্ধ ছায়া—
কবিতা লেখেন মূলত; পাশাপাশি গদ্য লিখতে চেষ্টা করেন। প্রকাশিত বই: যামিনী ও মরমী ধনুক ( কবিতা)।