লস এঞ্জেলসের পাতালপুরীর বিতর্কিত কবি চার্লস বুকাওস্কি মূলত জার্মান। তিনি ১৯২০ তে জন্মগ্রহন করেন আর তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৯৪ সালে। ডিসলেক্সিয়ার রোগী চার্লস কবিতার জগতে পা রাখেন পঁয়ত্রিশ বছর পেরিয়ে অথচ তাঁর ক্ষুরধার লেখনী সরকারকে এতটাই ভয় পাওয়ায় যে একটা সময় তাঁকে এফ বি আই এর নজরবন্দি থাকতেও হয়েছে। সমাজ, সংস্কৃতি আর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাবদুষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তাঁর কবিতার ভাষা স্পষ্ট, উচ্চকিত ও আভরণহীন। তিনি বিশ্বাস করতেন কবিতার জন্য কখনো “ট্রাই” করতে নেই, যা যখন আসার তা আসবেই। অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে তাঁর জীবন, দর্শন ও সৃষ্টিকে ভিত্তি করে। সাহিত্যে বুকাওস্কির আগুনে শক্তির প্রভাব চির বহমান।
অবশ্যই
চিন্তা করে দেখতে গেলে,
একা থাকার থেকে ঢের বেশি খারাপ জিনিসপত্র পৃথিবীতে অজস্রই আছে।
কিন্তু মুশকিল,
সেটা বুঝে উঠতে গিয়ে দীর্ঘ সময় চলে যায়,
আর যখন সেটা আপনি বুঝে যান,
বড্ড দেরী হয়ে গেছে,
আর দেরী করে ফেলার থেকে বেশি খারাপ
আর কিছুই হতে পারে না।
চারুকলা ইস্কুলের গরুর পাল
মনোরম আবহাওয়া অনেকটা ধার্মিক রক্ষিতাদের মতো।
সচরাচর জোটে না,
আর পেয়ে গেলেও কপালে বেশিদিন টেঁকে না।
বরং পুরুষমানুষ অনেক সুস্থির।
যদি সে শয়তান হয়,
তার সারাজীবন সেইরকমই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
আর যদি সে খাঁটি হয়,
উদাসীন থেকেই কাটিয়ে দিতে পারে পুরোটা সময়।
অথচ নারী বদলে যায়।
সন্তান, বার্ধক্য, সংযম, কথোপকথন, যৌনতা, জ্যোৎস্না, সূর্যের থাকা বা না থাকা অথবা সুসময়,
যে কোন কিছুর প্রেক্ষিতেই।
শুধুমাত্র বাঁচিয়ে রাখতে গেলেও একটা মেয়েকে ভালোবেসে আগলে রাখতে হয় সমস্তটা আয়ু,
যেখানে একটা ছেলে হয়তো ততটাই শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে,
যতটা ঘৃণা সে কুড়োয়।
স্তব, নরকের দেবীকে…
কিছু কুকুর রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাড়ের খোয়াব দেখে,
আর আমার মনে পড়ে মাংসে ডোবানো
তোর হাড়গুলোর কথা,
অপূর্ব দেখাতো যখন শ্যাওলা সবুজ পোশাক আর উজ্জ্বল কালো হিলতোলা জুতোর ভিতরে তুই সেগুলোকে লুকিয়ে রাখতি।
মাতাল হলেই চিৎকার করে অভিশাপ দিতি,
চুলগুলো খুলে পড়ত,
যা কিছু তোকে বাধা দিতে চাইত,
সেই সবকে মিথ্যা প্রমাণ করে ফেটে পড়তে চাইতি।
বিকৃত অতীতের নষ্ট স্মৃতি যত…
তবে তুই শেষমেষ নিষ্কৃতি নিয়েই ছেড়েছিলি, মরে গিয়ে।
আর আমায় ফেলে গেলি একটা পচে গলে যাওয়া বাস্তবের আবর্জনায়।
তুই চলে গেছিস আজ আঠাশ বছর হয়ে গেলো,
অথচ তোকেই আমার মনে পড়ে,
বাকী যে কোন কিছু, সমস্ত কিছুর থেকে বেশি।
বেঁচে থাকার সংবিধান যে কতটা অসাড়, একমাত্র তুই-ই ধরে ফেলেছিলি নির্ভুল।
বাকি প্রত্যেকে শুধুমাত্র তুচ্ছাতিতুচ্ছ ছেঁড়া খোঁড়া অংশগুলো নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়,
আবোল তাবোল বিষয় নিয়ে বোকার মত দোষারোপ করে।
তোকে হত্যা করেছিলো তোর চৈতন্য।
এই মদটা তোর হাড়গুলোকে দিলাম,
যেগুলোর স্বপ্ন এখনও এই কুকুরটা দেখে।
অতঃপর
শব্দেরা এসেছিলো,
ফিরেও গেছে,
অসুস্থ আমি ঠায় বসে আছি।
ফোন বেজে উঠছে,
বিড়ালগুলো ঘুমিয়ে আছে,
কাজের মেয়েটা ঝুল ঝাড়ছে।
আমি বেঁচে ওঠার অপেক্ষা করছি।
আমি মরে যাওয়ার প্রতীক্ষায় আছি।
সেই বেশ্যাকে,
যে আমার কবিতাদের আত্মসাৎ করে চলেছে
কেউ কেউ ব্যক্তিগত আক্ষেপদের কবিতা থেকে দূরে রাখতে বলে,
শুধু বলে দুর্বোধ্য হও,
অবশ্যই তার কারণও কিছু আছে।
কিন্তু প্রভু,
বারোটা কবিতা হারিয়ে গেলো আর আমি তো প্রতিলিপিও করে রাখিনি,
এমনকি তোমার কাছে আমার আঁকা ছবিগুলোও আছে,
শ্রেষ্ঠগুলো,
এটা তো দমবন্ধ করে দিচ্ছে।
তাহলে কি বাকিদের মত আমাকেও তুমি পিষে মেরে ফেলতেই চাইছ?
তুমি আমার টাকাপয়সাগুলো নিয়ে নিলে না কেন?
তারা তো নেয়,
ঘরের কোণে মাতাল যে প্যান্টগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকে তাদের পকেট হাতড়ে।
পরের বার থেকে আমার বাঁ হাতটা নিয়ে নিও,
অথবা পঞ্চাশটা মত টাকা,
কিন্তু আমার কবিতা না।
হ্যাঁ জানি আমি শেক্সপিয়র না,
কিন্তু কোনো কোনো সময় শুধুমাত্র এটুকুর বাইরে,
আর কোনো সহায় সম্বল থাকে না,
সে বিমূর্ত বা ছাইপাঁশ যাই-ই হোক না কেন।
পৃথিবীতে ধ্বংসের মুহূর্ত অবধি অর্থ থাকবে,
বেশ্যা থাকবে,
মদ এবং মাতালও।
কিন্তু ঈশ্বর,
ক্রুশের আয়েশে পায়ের উপর পা তুলে,
তুমিও তো স্বীকারোক্তি দিয়েছ…
‘দেখতে পাচ্ছি কোথায় আমি অজস্র কবির জন্ম দিয়েছি,
আর ঠিক ততটাই সামান্য সংখ্যায় কবিতা’
কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও অনুবাদক । ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর । ২০১৬ সালে প্রত্যক্ষ লেখালিখির জগতে যুক্ত হওয়ার আগে পরিচয় ছিলো ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী । বর্তমানে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যে গবেষণারত ।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :
১|”জামার নীচে অলীক মানুষ” (২০১৭)
২|”পদ্মব্যূহে নিম অন্নপূর্ণা” (২০১৯)
৩|”মমিস্রোতে বেহায়াসিন্থ” (২০২১)
সম্পাদিত গ্রন্থ “ষটচক্র” (ভারত বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ, ২০১৯) ও “সংকলিত বাক্” (২০১৯) ।কবিতার সঙ্গে নিয়মিত অনুবাদক বিশ্বসাহিত্যের । অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে ‘নীলগিরি ওয়াগন’, ‘দি ডেইলী স্টার’, ‘অংশুমালি’ সহ আন্তর্জাতিক পত্র পত্রিকায় ও পঠিত হয়েছে ‘দিল্লী সার্ক সম্মেলন’ এ ।
যোগাযোগ : sonali9191@gmail.com