বহু দিন পর তার সাথে দেখা। সেই মুখের আদল। সেই শীতল দুই চোখ। শুধু সময় যেন একটা গাম্ভীর্যের ছাপ ফেলে দিয়ে গেছে সবকিছুতে—চাহনি, চলনে, বলনে। তাকে দেখে হৃদয়ের গভীরে প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম! যেন এক ঝাঁক পাখি শেষ সন্ধ্যায় ডানা ঝাপটে দূরে, বহু দূরে উড়ে গেল!
২.
সেই দিন অফিসফেরার পথে জ্যামে বসে আছি উবারের গাড়িতে। গত কয়েক রাত ধরে পরিপূর্ণ ঘুমহীনতার ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসতে চায়। চিন্তা, বাস্তবতা ও স্বপ্নের রেশে মাখামাখি অবস্থায়। জ্যাম ঠেলে গাড়ি একটুখানি এগোয়, ফের থেমে থাকে। ঘুমমাখা মস্তিষ্কের চিন্তাও সেইরূপ; বিবিধ গলিতে ঢুকতে গিয়ে না পেরে কোথাও আটকে থাকছে দীর্ঘসময়, মনে হয় জীবন জীবন। ঠিক সে সময়টাতে পেছনের গাড়ি সজোরে ধাক্কা দিয়ে মোহগ্রস্ততা থেকে বিষাদময় পৃথিবীতে টেনে আনে। আমার গাড়ির ড্রাইভার নেমে গিয়ে গাড়ির পেছন দেখে, তারপর পেছনের গাড়ি থেকে ড্রাইভারকে নামিয়ে এনে তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়। জ্যাম আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। মানুষের কোলাহল বাড়ে, বাড়ে গাড়ির হর্ন। অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে বিষয়টি থামিয়ে ড্রাইভারকে নিয়ে দ্রুত কী করে বাড়ি ফেরা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগী হই। দেখি যে, গাড়ির বাম্পারটা একটু বেঁকে গিয়েছে। আমি ড্রাইভারকে বলি, ‘এখানে কলহ না করে চলুন যাই। ক্ষতি খুব একটা হয় নাই।’ কিন্তু আমার ড্রাইভার আমার দিকে লালচোখে তাকিয়ে বলল, ‘আপনি তো উবারের ভাড়া দিয়ে চলে যাবেন। বারোটা তো বাজছে আমার! এক হাজার টাকার গুয়ামারা।’ এই শুনে বড়ো বিব্রত হলাম। কী বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। ড্রাইভারের এমন ভাষার ব্যবহারে অতীব লজ্জিত। পেছনের গাড়ি থেকে এক নারী নেমে এলেন। আমার ড্রাইভারকে বললেন, কী ক্ষতি হয়েছে আপনার? ড্রাইভার বলল, ‘বাম্পার সোজা করতে আমার এক হাজার টাকা খরচ অইবো।’ ওই নারীর ড্রাইভার বিরোধিতা করে বলল, ‘বড়োজোর দুইশ টাকার মামলা।’ নারীটি তার ড্রাইভারকে ঠান্ডা কণ্ঠে বললেন, ‘তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।’ এরপর তার ব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার দুটি নোট বের করে আমার উবারের ড্রাইভারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘একটা দিয়ে গাড়ি সারাবেন। আর একটি আপনার কাছে রেখে দেবেন। এখন গাড়ি সরান।’ আমার নির্লজ্জ ড্রাইভারটি নোট দুটি হাতে নিয়ে টাকাটা আসল কি না পরখ করতে লাগল। আমি সলজ্জিত চোখে নারীটির দিকে তাকিয়ে দেখি, নারীটি আমার চোখে চোখ রেখেছে। আমি চোখ নামিয়ে ফেললাম। ঠিক তখনই মনে হলো, আরে! এ যে জাকারিয়ার নতুন আম্মা!
এরপর তার ব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার দুটি নোট বের করে আমার উবারের ড্রাইভারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘একটা দিয়ে গাড়ি সারাবেন। আর একটি আপনার কাছে রেখে দেবেন। এখন গাড়ি সরান।’ আমার নির্লজ্জ ড্রাইভারটি নোট দুটি হাতে নিয়ে টাকাটা আসল কি না পরখ করতে লাগল।
৩.
জাকারিয়ার নতুন আম্মার সাথে এই অকস্মাৎ সাক্ষাৎ আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় চব্বিশ বছর আগের কৈশোরবেলার স্মৃতিতে। আর ভাবতে থাকি জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে কি কোনোভাবে ফের খুঁজে পাওয়া সম্ভব! জনবহুল এই ঢাকা শহরে নাম ঠিকানা না জানা একজনকে খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব। তারপরও যদি গাড়ির নাম্বারটা টুকে রাখা যেত! জাকারিয়ার নতুন আম্মার পুরোনো সেই মুখশ্রী মনে ভাসে। মনে ভাসে জাকারিয়ার কথাও।
৪.
তখন আমাদের মফস্সল শহরের বয়েজ স্কুলে নয় ক্লাসে পড়ি। ঠিক সে বছরই আমাদের পাশের বাসায় জাকারিয়ারা এসে ওঠে। জাকারিয়াও আমাদের স্কুলে নয় ক্লাসে মানবিক শাখায় ভর্তি হয়। ফলত আমরা একই ক্লাসে পড়তাম এবং একই পাড়ায় পাশাপাশি বাসায় বসবাসরত ছিলাম। প্রথম দেখে মনে হয়েছিল জাকারিয়া ভীষণ নোংরা আর এলোমেলো। এই ছেলেটার সঙ্গে কোনো মতেই মেশা ঠিক হবে না। ঠিক পাশের বাসা বলেই জানতে পারি, জাকারিয়ার বাবা ছিলেন ফুড গোডাউনের কেরানি। আর জাকারিয়ার মা প্যারালাইজড। জাকারিয়ার বয়স যখন ছয়-সাত বছর তখন থেকেই তিনি বিছানায় পড়ে আছেন। জাকারিয়ারা এত দিন গ্রামেই ছিলেন। কিন্তু গ্রামে ভাইয়ের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হওয়ায় সেখানকার সব জায়গা জমি বিক্রি করে দিয়ে জাকারিয়ার বাবা আমাদের পাশের বাসাটা কিনে নিয়েছিলেন। আর জাকারিয়াদের নিয়ে এসে সেখানেই বসতি গেড়েছিলেন। পাড়ায় নতুন আসা এই পরিবারটির সম্পর্কে আমাদের তেমন কোনো আগ্রহ তৈরি হয়নি। কিন্তু খুব শীঘ্রই আবিষ্কার করলাম জাকারিয়ার বাবা অতি বদমেজাজি লোক। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যাপারে জাকারিয়াকে মারধর করেন। দেখতাম নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি পরে জাকারিয়ার বাবা প্রতিদিন সকালে বাজারে যেতেন। এবং বাজার থেকে ফিরেই জাকারিয়াকে মারধর করতেন। ওদের বাসা থেকে মারের দুপদাপ আর জাকারিয়ার কান্নার শব্দ শোনা যেত। ঘণ্টা দেড়েক পর দেখতাম জাকারিয়ার বাবা নীল পাঞ্জাবি পরে, সাদা টুপি মাথায় দিয়ে ক্রমেই সাদা হতে থাকা দাড়িগুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে অফিস চলে যেতেন। কিছুক্ষণ পর জাকারিয়াও নতুন অথচ ময়লা হয়ে যাওয়া স্কুল ড্রেসটা পরে স্কুলের দিকে রওনা দিত। যেহেতু পাশের বাসা সেহেতু জানতে পারি—পড়তে বসে ঘুমিয়ে পড়ার অপরাধে জাকারিয়া তার বাবার হাতে মার খেত।
৫.
‘একটা বাচ্চা ছেলেকে প্রতিদিন তার বাবা কেন মারবে? এ কেমন বিচার!’ আমাদের মনে এইরূপ প্রশ্নের উদয় হয়। ভাবতে থাকি জাকারিয়ার বাবা বদরাগী আর জাকারিয়া একটু ভোঁদাই ছাড়া কিছুই না। কোনো কোনো দিন চলার পথে কিংবা স্কুল থেকে ফেরার সময় আমাদের কারো কারো সাথে জাকারিয়ার দেখা হলে ডেকে জিজ্ঞাস করতাম, এই ছেলে, তোমাকে প্রতিদিন তোমার বাবা মারে কেন? জাকারিয়া এই প্রশ্ন শুনে বিব্রত হতো। ঘাড়ের চুল চুলকাতে চুলকাতে লজ্জামাখা ম্লান একটা হাসি দিয়ে চলে যেত।
তার মা প্যারালাইজড এবং তাদের কাজের মহিলাটি বিকেলে বাড়ি চলে যেত হেতু দ্রুতই তাকে বাসায় ফিরতে হতো। ষান্মাসিক পরীক্ষার ফলাফলের দিন একটা ঘটনা ঘটল। স্কুলে টেনের এক বড়ো ভাই তুচ্ছ কারণে মেরে আমার নাক ফাটিয়ে দিল। আশেপাশে স্যাররা ছিলেন না। কেউ ফেরাতে এলো না। ছুটে এলো জাকারিয়া।
৬.
ক্লাসে জাকারিয়া অমনোযোগী এবং পড়া না পারাদের দলভুক্ত হয়ে যায়। আমি তেমন ভালো ছাত্র না হলেও, ক্লাসের ফার্স্টবয়ের সঙ্গে আমার গাঢ় বন্ধুত্ব এবং ভালো ছাত্রের একটা মেকি অহং থাকায় জাকারিয়ার সঙ্গে দূরত্ব থাকাটাই সঙ্গত ও শ্রেয় বলে মনে হয়। ষান্মাসিক পরীক্ষা অব্দি জাকারিয়ার সঙ্গে আমার খুব একটা কথা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। অথচ আমরা পাশাপাশি বাসা থেকেই স্কুলে যাওয়া আসা করতাম। জাকারিয়াকে অবশ্য স্কুলের বাইরে খুব একটা পাওয়া যেত না। তার মা প্যারালাইজড এবং তাদের কাজের মহিলাটি বিকেলে বাড়ি চলে যেত হেতু দ্রুতই তাকে বাসায় ফিরতে হতো। ষান্মাসিক পরীক্ষার ফলাফলের দিন একটা ঘটনা ঘটল। স্কুলে টেনের এক বড়ো ভাই তুচ্ছ কারণে মেরে আমার নাক ফাটিয়ে দিল। আশেপাশে স্যাররা ছিলেন না। কেউ ফেরাতে এলো না। ছুটে এলো জাকারিয়া। একরকম প্রতিরোধ গড়েই আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে গেল। এই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে জাকারিয়ার সঙ্গে মেশা শুরু হয়। দেখলাম জাকারিয়া বেশ বুদ্ধিদীপ্ত ও রসিক। আর পৃথিবীর অশ্লীলতম গল্পগুলো সে নির্বিকারে বলে যেতে পারে।
৭.
আমাদের তখন উঠতি বয়স। শরীর ও মনের নতুন ভাষা বুঝতে পারি না। ‘কী জানি কীসেরি লাগি প্রাণ করে হায় হায়!’ আমরা স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া শুরু করি। আমরা মানে আমি, আমার বন্ধু ক্লাসের ফার্স্টবয় আর জাকারিয়া। একটা গ্রুপ হয়ে যাই। পৃথিবীতে তত দিনে অশ্লীল সিনেমার যুগ চলে আসে। কিংবা দূরে কোথাও নদীতীরে গিয়ে চারজনে বিষয়হীন আড্ডায় মাতি এবং বিষয়হীনতা থেকে নারীর শরীরই ক্রমে আড্ডার মূল বিষয় হয়ে ওঠে। যা সম্পর্কে আমাদের তেমন কোনো ধারণা নাই; অথচ তুমুল আকর্ষণ।
৮.
সময় এক গভীর পাথর। ভারী অথচ দ্রুত ‘বহিয়া যায়’। খেয়াল না করলে মনে হয় একই ধারায় চলতে থাকে নিত্য দিন। খেয়াল করলে বোঝা যায় কেমন গভীর দাগ রেখে যাচ্ছে! জাকারিয়ার আব্বার মেজাজ দিনকে দিন খারাপ হতে থাকে। অল্প কারণেই জাকারিয়া মার খেতে থাকে। এর মাঝে আমরা নাইন থেকে টেনে উঠে পড়ি। এর মাঝে এক দিন জাকারিয়ার প্যারালাইজড আম্মা মারা গেলেন। আমরা জোহরের নামাজের পর জানাজা পড়লাম। তারপর জাকারিয়াকে কয়েক দিন কোথাও দেখা গেল না। জাকারিয়ার বাবা আগের মতোই প্রতিদিন সকালে বাজারে যেতে থাকলেন। বাজার থেকে ফিরে অফিস। এবং অফিস থেকে বাসায় ফিরতেও দেখা গেল। সপ্তাহখানেক পর জাকারিয়া স্কুলে যাওয়া শুরু করল। পৃথিবী ঠিক আগের মতোই চলতে থাকল। এমনকি ক্লাস টেনে উঠে যাওয়ার পরও প্রায় প্রতিদিন সকালে মা-মরা জাকারিয়া যথারীতি মার খেতে থাকল।
৯.
জাকারিয়ার আম্মা মারা যাওয়ার মাস খানিক পর এক শুক্রবার জাকারিয়ার আব্বা জাকারিয়ার জন্য নতুন আম্মা নিয়ে আসেন। পাড়া প্রতিবেশীরা ভিড় করেন ‘নতুন বউ’ দেখতে। আড়ালে কেউ কেউ বললেন ‘বউটা মরল মাসটাও ঘুরল না, ঘরে নতুন বউ নিয়ে আসছে! ব্যাটা মানুষ এমনই!’ আবার কেউ বললেন, ‘মেয়েরবয়সি একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসছে! মেয়েটার মা-বাবাই বা কেমন! এমন কচি একটা মাইয়ারে বুইড়ার হাতে তুইল্যা দিল!’ আমাদের পাড়ার বড়ো ভাইদের কেউ কেউ বললেন, ‘বুড়ো বয়সে জাকারিয়ার আব্বা এত লোড কীভাবে নেবেন!’ তবে এই কথা সকলেই বলে যে, ‘জাকারিয়ার নতুন আম্মা সুন্দর।’ আমরা সেই সুন্দর মহিলাকে নিজেদের মধ্যে ‘জাকারিয়ার নতুন আম্মা’ বলেই সম্বোধন করতে থাকি। আর আমরা এই ভেবেও অবাক হই যে, ‘এমন সুন্দর একটা মেয়ে এইরূপ বুইড়াকে বিয়ে করল কেন?’
১০.
জাকারিয়ার নতুন আম্মা আসার পর থেকে দারুণ একটা পরিবর্তন দেখা যায়। জাকারিয়ার বাবা প্রতিদিনই সকালে বাজার করতে যান। কিন্তু হাসি মুখে ফিরেন। বাসা থেকে মারধরের শব্দ আসে না। আবার অফিসে যাওয়ার সময় কী এক প্রশান্তি নিয়ে সাদা দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে চলে যান! পরিবর্তন দেখি জাকারিয়ার মাঝেও। পরিষ্কার জামা-কাপড়। আঁচড়ানো চুল। আমরা শুনি যে, জাকারিয়ার নতুন আম্মা জাকারিয়াদের ঘরটাই পালটে দিয়েছে। শুধু যে ঘরই পালটেছে তা নয়, আমরা যারা ঘরের নই, তারাও সেই ঘরের প্রতি দারুণ টান অনুভব করতাম—আমাদের চোখ জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করত। ফলত তিনি আমাদের চিন্তার পৃথিবীও পালটে দিয়েছিলেন, পালটে দিয়েছিলেন আকাঙ্ক্ষা।
১১.
মাঝে মাঝে জাকারিয়ার নতুন আম্মা আমাদের বাসায়ও আসতেন। খুবই কম। আমি হয়তো তখন দূর থেকে বইয়ের দিকে চোখ রেখে মন দিয়ে রাখতাম জাকারিয়ার নতুন আম্মার কাছে। বয়সে বড়োজোর বছর তিনেকের বড়ো হবেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, অসঙ্গত কারণে পরীক্ষা না দিয়ে বিয়ে করতে হয়েছে। তিনি বলেন, জাকারিয়াকে তিনিই পড়াচ্ছেন। সামনে প্রিটেস্ট। জাকারিয়া অঙ্কে দুর্বল। চেষ্টা করছেন ভালো করার। এই শুনে আমারও মনে হয়—অঙ্কে আমার ভীষণ দুর্বলতা।
কিন্তু আমরা আঁড় চোখে তাকিয়ে দেখতাম জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে। চোখে শীতলতা আর ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি। যেন আমাদের ভেতরকার সব তিনি জেনে গেছেন। তারপর অস্বস্তিতে জাকারিয়াকে নিয়ে বের হয়ে আসতাম। বলতাম, চল জাকারিয়া ঘুরে আসি! বিকেলে বাসায় থাকতে হয় না।
১২.
মাঝে মাঝে ছুঁতো খুঁজতাম, শুধু আমি না, আমার বন্ধু স্কুলের ফার্স্টবয়ও, বিকেলে, তখন পর্যন্ত হয়তো জাকারিয়ার আব্বা অফিস থেকে ফেরেনি, জাকারিয়ার বাসায় যেতাম। জাকারিয়া কিংবা তার নতুন আম্মা দরজা খুলে দিলে আমরা বলতাম—দেখতে এলাম জাকারিয়া কেমন পড়াশোনা করতেছে। কিন্তু আমরা আঁড় চোখে তাকিয়ে দেখতাম জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে। চোখে শীতলতা আর ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি। যেন আমাদের ভেতরকার সব তিনি জেনে গেছেন। তারপর অস্বস্তিতে জাকারিয়াকে নিয়ে বের হয়ে আসতাম। বলতাম, চল জাকারিয়া ঘুরে আসি! বিকেলে বাসায় থাকতে হয় না। কোনো কোনো দিন, জাকারিয়া বাসা থেকে বের হতে না চাইলে, আমি আর ফার্স্টবয় দুজনে বিষণ্ন হয়ে পুকুরপাড়ে বসে থাকতাম। ফার্স্টবয় হয়তো তখন বলত, ‘জাকারিয়ার নতুন আম্মা খুব সুন্দর না রে!’ আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতাম বিকেল ফুরানো রোদে সাদা মেঘগুলো রঙিন হয়ে উঠেছে। খুব মেঘ ছুঁতে ইচ্ছে হতো!
১৩.
সামনে প্রিটেস্ট হেতু আমাদের স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখাটা কমে আসে। কিন্তু স্কুলফেরত পথে সিনেমাহলের ভেতর থেকে যখন আইয়ুব বাচ্চুর গান ভেসে আসে—
‘আকাশে বাতাসে,
এই কথা জানিয়ে দেবো
তোমাকে না পেলে,
আমি তখনই মরে যাবো…’
তখন আমাদের সিনেমা দেখতে যেতে ইচ্ছে হয়। গানের সুর আমাদের মোহমুগ্ধ করে। মন চায় দৃশ্যটা দেখে আসি। এক দিন বারোটার শো দেখে ফেলি। সিনেমা শেষ হলেও স্কুল শেষ না হওয়ায় বাড়ি ফিরতে পারি না। দূরে কোথাও ধানখেত দেখতে যাই। ধানখেতের পাশে বসে দেখে আসা সিনেমা নিয়ে কথা বলতে থাকি। তখন কী এক কারণে জাকারিয়া ফার্স্টবয়ের ব্যাগে হাত দেয়। আর বের করে নিয়ে আসে নারীদের লাল রঙের বক্ষবন্ধনী। জাকারিয়ার এই আবিষ্কারে জাকারিয়া তো বটেই আমিও বিস্মিত হই— এই ব্রো, হোয়াট ইজ দিস? ফার্স্টবয় ব্রো বিষয়টাতে বিব্রত হয়। জাকারিয়ার হাত থেকে লাল কাপড়টি ছিনিয়ে নিতে চায়। বলে, কারো ব্যাগে না বলে হাত দেওয়া অনুচিত। আমরাও মেনে নিই—ইহা অবশ্যই অনুচিত। কিন্তু ‘ইহা’ কার? ফার্স্টবয় ব্রো কিছুতেই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় না। সে বিশেষ তাড়া হেতু চলে যেতে চায়। আমরা তাকে আটকে রাখি। বলি যে, না বলিলে ‘ইহা’ দেওয়া হইবে না। জাকারিয়া লাল বস্ত্রখণ্ডটি পতাকার ন্যায় উড়াতে চেষ্টা করে। কিন্তু ওড়ে না। ফলে সে মাথার ওপর শূন্যে ঘুরাতে থাকে। শেষে বাধ্য হয়ে ব্রো একটা নাম বলে। একসাথে তারা কোচিং করে। ‘তাহাকে’ আমরা চিনি। জাকারিয়া বলে যে—অসম্ভব! বস্ত্রখণ্ডের আয়তন আরও বেশি। ‘ইহা’ কোনোমতেই ‘উহা’র হতে পারে না। আর কারো। এই শুনে ফার্স্টবয় ব্রো রেগে যায়। এবং দাঁতে দাঁত কামড়ে জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে ইঙ্গিত করে অশ্লীল একটা কথা ছুড়ে দেয়। কিছু সময়ের জন্য যেন পৃথিবী থেমে যায়। অকস্মাৎ জাকারিয়া একটা ঘুসি দিয়ে দৃশ্যটাকে সচল করে, ফার্স্টবয়ের নাক ফাঁটিয়ে দেয়। ফার্স্টবয় নাক চেপে ফ্যালফ্যাল করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার অশ্লীল কথাটা এতটাই ধারালো ছিল যে, জাকারিয়া তো বটেই আমাকেও অনেকখানি কেটে ফেলে। জাকারিয়া আর আমি আমাদের ঘৃণাসমেত তাকে ধানখেতের পাশে ফেলে রেখে নীরবে ফিরে আসি।
১৪.
প্রিটেস্টে জাকারিয়া অঙ্কে ভালো করেছে। কিন্তু আমি খারাপ করেছি। ফলত জাকারিয়ার সঙ্গে আমিও জাকারিয়ার নতুন আম্মার কাছে অঙ্ক শিখতে শুরু করি। বিকেলে জাকারিয়ার আব্বা অফিস থেকে ফেরার আগ অব্দি আমরা অঙ্ক শিখি। এবং মনে হতে থাকে পৃথিবীতে অঙ্ক শেখার মতো দারুণ আর কিছু হয় না। কিছু না, শুধু জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে খুশি করার জন্য দিস্তার পর দিস্তা কাগজ অঙ্ক করে করে ফুরিয়ে ফেলতে থাকি। টেস্টে যেভাবেই হোক অঙ্কে একশতে একশ পেতে হবে।
মওতা বাসায় উনুন জ্বালাতে নেই বলে সকাল-দুপুর এবং রাতে জাকারিয়াদের জন্য আমরা তিন বাসা থেকে পালা করে খাবার পাঠাই। এরপর আমরা পাড়া-প্রতিবেশীরা আমাদের আর কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে করতে পারি না। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না যেতেই পাড়ার কয়েকজন বলতে থাকি—জাকারিয়ার আব্বা লোডটা নিতে পারল না!
১৫.
এর মাঝেই এক সকালে জাকারিয়ার আব্বা আর বাজারে যেতে পারেন না। মূলত সেই দিন তিনি আর ঘুম থেকেই জাগেননি। জাকারিয়া দৌড়ে এসে আমাদের বলে, ‘আব্বা মারা গেছেন!’ এই শুনে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। তার চোখে শূন্যতা। তারপর সে দৌড়ে বাসায় ফিরে যায়। তাকে অনুসরণ করি। গিয়ে দেখি জাকারিয়ার আব্বা বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে আছে। ঘরের কোণে মাথায় কাপড় তুলে দাঁড়িয়ে আছেন জাকারিয়ার নতুন আম্মা। মূলত মৃত্যু আমাদের বিহ্বল করে দেয়। ধীরে ধীরে বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠি। কেউ মারা যাওয়ার পর আমাদের প্রথম কর্তব্য হয় মৃত ব্যক্তিকে লুকিয়ে ফেলা। কারণ মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে আমাদের অস্বস্তি হয়। আমাদের বড়োদের কেউ কেউ বিষয়টিকে নিজেদের দায়িত্বে নিয়ে নেয়। জাকারিয়া বলে যে, তার এক চাচা, প্রথম আম্মার বাবার বাড়িতে নানু আর মামা ছাড়া তার আত্মীয় স্বজন কেউ নেই। জাকারিয়ার নতুন আম্মা বলেন যে, জাকারিয়া ছাড়া তার কেউ আর জীবিত নেই। সবাইকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু জাকারিয়ার মামা ছাড়া আর কোনো আত্মীয় আসে না। আসরের নামাজের পর আমরা জানাজা পড়ে জাকারিয়ার আব্বাকে কবর দিয়ে দেই। মওতা বাসায় উনুন জ্বালাতে নেই বলে সকাল-দুপুর এবং রাতে জাকারিয়াদের জন্য আমরা তিন বাসা থেকে পালা করে খাবার পাঠাই। এরপর আমরা পাড়া-প্রতিবেশীরা আমাদের আর কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে করতে পারি না। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না যেতেই পাড়ার কয়েকজন বলতে থাকি—জাকারিয়ার আব্বা লোডটা নিতে পারল না!
১৬.
সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন হেতু জাকারিয়া আব্বার প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সম্পদের অন্যান্য জটিলতার জন্য জাকারিয়ার নতুন আম্মা দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। পাড়ায় আরও কয়েকজনকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন তিনি। আমি আর জাকারিয়া টেস্টের প্রস্তুতি নিতে থাকি। জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে আরও শক্ত ও দৃঢ় মনে হয়। তার চোখে অন্য রকম চাহনি। তিনি চলছেন, ফিরছেন, কথা বলছেন; কিন্তু মনের ভেতর আর কিছু চলছে। আর কোনো হিসেব কষছেন বলে মনে হয়। কেউ না থাকার ব্যথায় বুঝি মুহ্যমান! তাঁর জন্য আমার ভীষণ মন খারাপ লাগে।
১৭.
এক দিন আমি আর জাকারিয়া অঙ্ক শিখছিলাম। তখন জাকারিয়ার পুরানো আম্মার মা আর ভাই, অর্থাৎ জাকারিয়ার নানু আর মামা এসে হাজির হন। আমাদের পড়া শেষ হলে আমি চলে আসি। পরে জাকারিয়ার কাছে জানতে পারি— তার মামাটা একটা ফাজিলের বাচ্চা। সে কিনা বলছে জাকারিয়ার আব্বা এই বাসা কেনার সময় বড়ো একটা অঙ্কের টাকা সে দিয়েছে। জাকারিয়া আরও বলে, হারামি মিথ্যাবাদী, ও তো জুয়া খেলেই কুল পায় না, টাকা দিবে কোথা থেকে! ঘটনা এই অব্দি থাকলেও চলত। সেই হারামির এক বউ আছে। সে এখন চাচ্ছে জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে বিয়ে করে এই পরিবারের দায়িত্ব নিতে। এক দিন জাকারিয়ার নানু আমাদের বাসায় বেড়াতে আসে। এই সেই কথার পর মায়ের সঙ্গে জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে ইঙ্গিত করে বলে, ‘এই মাগির তো কোনো পরিচয়-টরিচয়, ঠাঁই-ঠিকানা নাই। আমার নাতির সব কিছু হাতায়ে নিয়া লাঙ ধরে ভাগব। পথে বসব আমার নাতি।’ এমন অশ্লীল কথা শুনে আমার ভীষণ মন খারাপ হয়। বুড়ির ওপর ঘেন্না ধরে যায়। আমি এইসব জাকারিয়াকে বলি। জাকারিয়া বলে যে, এইসব কিচ্ছু না, বুড়ির সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল। তবে সে একটুও চিন্তিত নয়, তার নতুন আম্মার অনেক বুদ্ধি। নিশ্চয়ই তিনি একটা উপায় বের করে নেবেন।
এমন অশ্লীল কথা শুনে আমার ভীষণ মন খারাপ হয়। বুড়ির ওপর ঘেন্না ধরে যায়। আমি এইসব জাকারিয়াকে বলি। জাকারিয়া বলে যে, এইসব কিচ্ছু না, বুড়ির সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল।
১৮.
পাড়া-প্রতিবেশীদের কানাঘুষা ক্রমেই বাড়তে থাকে। আর আগুনে ঘি-ঢালতে থাকে জাকারিয়ার নানু। সে নিজেই বলে বেড়াতে থাকে—‘সংসার ফালায়ে রাইখ্যা এইখানে পইড়া থাইক্যা পাহারা দিতে অইতাছে। এমন যুবতি একটা মাইয়া আর উঠতি বয়সের একটা ছেলেকে এক ঘরে রাইখ্যা আমি ক্যামনে যাই। ছেড়ির তো ভাব ভালা না।’ বুড়ির এইসব কথায় সমাজ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সমাজ একটা অজাচারের গন্ধ পেতে শুরু করে। এবং এটার একটি বিহিত করা তাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। এক শুক্রবার জুমার পর জাকারিয়ার বাসার সামনে সমাজের গণ্যমান্য জঘন্য ব্যক্তিরা চেয়ার পেতে গোল হয়ে বসে। জাকারিয়ার মামা ও নানুও উপস্থিত হয়। তারা বলে, এইটার সমাধানের জন্য তারা সমাজের দিকে তাকিয়ে আছে। সমাজ কিছু বলার আগেই জাকারিয়ার নতুন আম্মা ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। মাথায় কাপড় টেনে বলেন, এইটা আমার স্বামীর ঘর, জাকারিয়া আমার সন্তান। আমার গর্ভে আর একজন আছে। আমার স্বামী নেই। এখন এই দুইজনের দায়িত্ব আমার। স্বামী মারা গেছেন দুই মাস হয়। আমরা কী খেয়ে আছি, কীভাবে চলছি সমাজ তো একবারও এসে দেখে গেল না! আমাদের বাঁচতে দেন। ছেলেটার মাস খানিক পর পরীক্ষা…
জাকারিয়ার মামা কী যেন একটা বলতে চাচ্ছিল, জাকারিয়ার নতুন আম্মা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আপনি থামেন। আপনার এখানে কী? এখন আপনি এই বাসা থেকে বের হবেন। আর কোনো দিন যেন না দেখি।
জাকারিয়ার নতুন আম্মার কথা শুনে সমাজের দুই একজন তার পক্ষে চলে আসে। একজন নারী যখন কাউকে সন্তান বলে স্বীকৃতি দেয়—তখন সমাজের কেউ কেউ তার নিজের মায়ের কথা স্মরণ করে এবং মায়ের প্রতি সম্মানে মাথা নত করে ফেলে। ফলে কয়েকজন বলল, তাই তো! আগে জাকারিয়ার পরীক্ষা শেষ হোক। কী পরিশ্রমটাই না করছে বেটিটা! কী এক অদ্ভুত কারণে সেই দিন প্রথম জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে আমার জাকারিয়ার আম্মা বলেই মনে হয়।
কিন্তু গুঞ্জন তোলা সমাজ চুপ থাকে না। আড়ালে আবডালে ঠিকই ডাক তোলে। সমাজ যেন একটা চেয়ার পেতে বসে সারাক্ষণ চোখ রাখতে চায় জাকারিয়াদের বাসার ভেতর। দুইটা মানুষ বাসার ভেতর কী করছে! ভীষণ আগ্রহ নিয়ে নিজের মতো ঘটনা কল্পনা করে পুলকিত হয়। আফসোস করে। আর বলে, দেখছোস কারবারটা! সমাজটা শেষ হয়ে গেল! শেষ জমানা চলে আসছে!
১৯.
মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগে আগে এক দিন দুপুরে জাকারিয়াদের বাসা থেকে বহু দিন পর মারধরের শব্দ আসে। জাকারিয়ার চিৎকার শোনা যায়। জাকারিয়ার নতুন আম্মার কিন্নর কণ্ঠে হাহাকার মিশ্রিত কান্না বেজে ওঠে। আমি অনেকের সঙ্গে দৌড়ে বের হয়ে আসি দেখার জন্য—কী হলো! কী হলো!
জাকারিয়ার মামা জাকারিয়ার নতুন আম্মার চুল ধরে টেনে ঘর থেকে বের করে দিতে থাকে। জাকারিয়া ছাড়াতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। বড়ো অশ্লীলভাবে বলতে থাকে, খারাপ মহিলা সমাজটা ধ্বংস করে দিল। তোকে আজকেই পুলিশে দেবো। দুইটারেই পুলিশে দেবো। জাকারিয়ার মামার সঙ্গে আরও দুই তিনজন ছিল লাঠিসোটা হাতে।
তিনি মার খেয়ে পড়ে থাকেন নিস্তেজ হয়ে। দূরে পড়ে থাকে জাকারিয়া। দুপুরে সাধারণত পুরুষরা বাসায় থাকেন না। ঘরের মহিলারা জানালা-দরজা দিয়ে নিজেকে আড়ালে রেখে এইসব দেখছিলেন। পাড়া-প্রতিবেশীরাও এমন ঝামেলায় জড়াতে চায়নি।
জাকারিয়ার নতুন আম্মা তাদের সাথে পেরে ওঠেন না। তিনি মার খেয়ে পড়ে থাকেন নিস্তেজ হয়ে। দূরে পড়ে থাকে জাকারিয়া। দুপুরে সাধারণত পুরুষরা বাসায় থাকেন না। ঘরের মহিলারা জানালা-দরজা দিয়ে নিজেকে আড়ালে রেখে এইসব দেখছিলেন। পাড়া-প্রতিবেশীরাও এমন ঝামেলায় জড়াতে চায়নি। কিন্তু জাকারিয়ার নতুন আম্মার এমন পরাজয় আমার মেনে নিতে কষ্ট হয়।
২০.
সন্ধ্যায় জাকারিয়া আসে। ফুলে যাওয়া গাল। রক্তজমা চোখ। ময়লা লাগা শার্ট। বলল, ‘আম্মাকে খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও।’ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। আমি কিছু বলার আগেই বলল, ‘যাই আর একটু খুঁজে দেখি।’
সেই শেষ। আর কোনো দিন জাকারিয়া কিংবা জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে দেখিনি কোথাও। আমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। জাকারিয়া তার নতুন আম্মাকে খুঁজে নিয়ে ফেরে না আর। তাদের বাড়িটায় দীর্ঘ দিন তালা ঝুলেছিল। বছরখানিক পর এক পুলিশের কনস্টেবল এসে থাকতে শুরু করে। জানতে পারি, তিনিই ওই বাসার নতুন মালিক।
আমি অপেক্ষা করতাম, এক দিন জাকারিয়ার মতো জাকারিয়ার নতুন আম্মাকে খুঁজে বের করার জন্য পৃথিবীতে বের হয়ে পড়ব। কিন্তু আমাদের পরীক্ষার ব্যস্ততা থাকে। থাকে নিজেদের জীবন যাপন।
জন্ম বাংলাদেশে। প্রকাশিত গল্পের বই ‘আনোহাবৃক্ষের জ্যামিতি’।