শনিবার, নভেম্বর ২৩

টোকন ঠাকুরের ধারাবাহিক : জার্নি অব কাঁটা : পর্ব ২২

0

কেরানীগঞ্জ থেকে একটি ট্র্যাডিশনাল কীর্তন দল আনা হলো। তারা একটি ভজন গাইবে। সেই আধা বাংলা ভজনের সঙ্গে কীর্তন দলের পূর্ব পরিচয় ছিল না। কারণ, তারা করে বাংলা কীর্তন। কিন্তু আমাদের গাওয়াতে হবে একটি আধা-বাংলা আধা সংস্কৃত ধরনের ভজন। আমার মনে হচ্ছিল, ওরা পারবে। ওদের দিয়েই পারাতে হবে। দুই ঘণ্টা রিহার্সেলের পর আমরা শুটে গেলাম। সেট করা হলো বিহারীলাল জিউ মন্দির, ফরাসগঞ্জে। ভজন শুনতে মন্দিরে বসে থাকবে প্রায় একশো নারী-পুরুষের বিরাট বহর। কোথায় পাব তাদের? এমনিতে তারা হয়তো কীর্তন-ভজনে অনাগ্রহী নয়, কিন্তু শুটিং তো! বারবার শট কাটা যায়, ক্যামেরা নানান পজিশনে নিতে হয়, অনেক সময় ক্যামেরার সামনে কাজ করা মানুষের জন্য তা কিছুটা বিরক্তিকরও বটে। কিন্তু সে সব মাথায় রাখলে তো হবে না। আর্টিস্ট জয়ের বাসা তখন মন্দিরের সামনেই, আর জয় আমাকে সাপোর্ট-সঙ্গ দিচ্ছে যখন আমি এই ফরাসগঞ্জে ছিলাম আবাসিকভাবে, তখন থেকেই। জয়কে বললাম, ‘তুমি আমারে একশো নারীপুরুষ দিবা। তোমার পাড়ায় শুটিং হচ্ছে। একশো জনের একবেলা খাওয়া-দাওয়াও আছে। জয় সেই মোতাবেক ব্যবস্থা করল। শ-খানেক নারীপুরুষ পেয়ে গেলাম, মন্দিরের ভেতরে তাদের বসানো হলো। কেরানীগঞ্জের সেই কীর্তন দলকে বসালাম নারী-পুরুষের ঠিক মাঝখানে। নারীদের দলে বসে থাকবে স্বপ্নারানী দাস। আমার ভাগ্নি বর্ষা ছুটিতে ঢাকায় এসেছিল ত্রিশাল কাজী নজরুল বিশ্ববিয়ালয় থেকে, বর্ষাও বসে গেল কীর্তন দলে। অন্যদিকে, সুবোধচন্দ্র দাস বসে থাকবে সম্মিলিত পুরুষের দলে। মন্দিরের গায়ে যে গ্রিল, সেই গ্রিল আমার পছন্দ হচ্ছিল না বলে সমস্ত গ্রিল ঢেকে দিতে ব্যবহার করা হলো অনেক শাড়ি। সেই শাড়ি ছিল ‘দেশাল’ থেকে আনা শাড়িরই একটা অংশ। মন্দিরের একপাশের দেওয়ালে ডিজিটাল প্যানা প্রিন্টে সাঁটানো ছিল রাধাকৃষ্ণ। কাঁটার আর্ট ডিরেক্টর দীপন’দাকে বললাম, ‘দীপন’দা, ৮৯-৯০ সালেও তো ডিজিটাল প্রিন্ট আসেনি। ক্যানভাসে ধরেন রাধাকৃষ্ণকে। ক্যানভাস কেনা ছিল ঢাকা নিউ মার্কেট থেকে, দীপন’দা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রাধাকৃষ্ণকে রং-ব্রাশে নামিয়ে দিলেন। রাধাকৃষ্ণ অবশ্য সেই দেওয়ালের প্যানাপ্রিন্টের রাধাকৃষ্ণকে দেখেই দীপন’দা অ্যাক্রেলিকে আঁকালেন। রাধাকৃষ্ণকে রাখা হলো কীর্তন দল বরাবর, ব্যাকড্রপ করে। সেই আধা বাংলা-আধা সংস্কৃত ভজন, ‘সখি মধুরিমাময়ী বাণী কহো গৌর হরি’ শুট হতে লাগল প্রায় তিন ঘণ্টা।


p 22. 1

মন্দিরের দেওয়ালে ডিজিটাল প্রিন্ট রাধাকৃষ্ণ, দীপন দা’কে বললাম, কাঁটার জন্যে ম্যানুয়ালি আঁকতে হবে


এত এত মানুষ কাঁটার স্ক্রিনে আছে, তা আজ ভাবলেও অবাক লাগে। অবশ্য তখন এক ঘোর, ঘোর আমার মনে, সেই ঘোর ছড়িয়ে দিয়েছি কাঁটা টিমের ভেতরে। নইলে হতো না। কীর্তন দলের প্রধান বললেন, আমরা তো এ কীর্তন গাইনে। পারব তো?

বললাম, ‘পারবেন।’

‘আমার দলের অন্যরা পারবে তো?’

বললাম, ‘পারবে, একটু রিহার্সেল করে নেন মনোযোগ দিয়ে।’

মোবাইল ফোনের নেট লাইন থেকে সেই ভজন শুনিয়ে শুনিয়ে, মুখস্ত করিয়ে তবেই সুরসহ তোলা হলো তাদের গলায়। এমন কি মন্দিরে আসা নারীপুরুষের দলের ভেতরে নারীরা তো আগেই গলায় তুলে নিলেন ‘কহো গৌর হরি…’। আর্টিস্ট জয়দেবকে আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানানোর নেই, কারণ, ও আমার নিজের লোক। কাঁটা টিমের লোক। জয় পুরো শুট টাইমটা থাকল আমাদের সঙ্গেই। একদিন এই মন্দিরেই, আমি ও গজেন’দা খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম যখন, জয় সেদিন আমাকে চিনে ফেলছিল এবং লাইন থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে মন্দিরের ভেতরের একটি ঘরের সামনে বসতে দেয় এবং খাবারের ব্যবস্থা করে। কদিন আমি ও গজেন’দা সেভাবেই খাচ্ছিলাম মন্দিরে। সে এক অভিজ্ঞতা বটে! ফরাসগঞ্জে, অপুদের বাড়িতে যখন আমি ভাড়াটিয়া হয়ে উঠেছিলাম, প্রায় প্রতিদিনই জয়ের সঙ্গে অনেক কথা হতো আমার। জয় আমাকে কিছু বাড়ির, ‘ছাত ভাইগো বাড়ির পরের বাড়ির পরের বাড়ি’, কালীচরণ সাহা স্ট্রিটের কিছু বাড়িতে শুটিংয়ের জন্য অনুমতির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কারণ, জয় ছিল ফরাসগঞ্জের নেটিভ বয়। তারপর আমি ফরাসগঞ্জ থেকে মগবাজার চলে যাই এবং মগবাজার কাঁটা ক্যাম্প করি। তারপর আসি নারিন্দায়। নারিন্দায় থাকাকালীন জয় গেছে আমাদের কাঁটা ক্যাম্পে, অপুও গেছে। আজ এসেছি সেই ফরাসগঞ্জে, যেখানে আমি পুরান ঢাকার আবাসিক হয়ে উঠেছিলাম কাঁটা ছবিটির জন্য। বিহারীলাল জিউ মন্দিরের শুটিং শেষ হলো ভালোভাবেই। মন্দির কমিটির লোকদের মন্দির বুঝিয়ে দিয়ে, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমরা ফিরে আসি। কাঁটার একটা গানই লিপ সিং হবে, সেটি এই মন্দিরের শুট করা ভজন—‘সখি মধুরিমাময়ী বাণী কহো গৌর হরি…’। সত্যি, বিহারী লাল জিউ মন্দির কমিটির কাছে কাঁটা টিম অনেক সাপোর্ট পেয়েছে। শুটিং মানেই তো সব উল্টেপাল্টে যায় মুহূর্তেই। তাঁরা মেনে নিয়েছেন চোখ বুজে। আমি কৃতজ্ঞ থাকব সারা জীবন। এখনো, আমি সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, মামুর মাজারের মোড় বা ফরাসগঞ্জে গেলেই, একা একা একবার ঢু দিয়ে আসি মন্দিরে। কৃতজ্ঞতা থেকেই যাই।


p 22. 9

নৌকায় উঠতে পারেনি বউটি, স্বামী উঠে পড়েছিল বলে বউটি খুবই মাইন্ড করেছে…


বিহারী লাল জিউ মন্দিরে খোদাই করে লেখা আছে অনেক মানুষের নাম, যারা শহীদ হয়েছেন ২৭শে মার্চ ১৯৭১ সালে। ২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট নাম দিয়ে পাকিস্তানি আর্মি ঢাকায় নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা সেনানিবাস থেকে মাঝরাতে বেরিয়ে আসে, এসে পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, পুরান ঢাকায় গণহত্যা সম্পাদন করে। ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সারা দিন কারফিউ জারি রাখে ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরে। ২৭শে মার্চ অর্ধবেলা কারফিউ শিথিল করা হয়। তাই ২৭শে মার্চ ভূতের গলির মহল্লাবাসিরা জীবন বাঁচানোর তাগিদে ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে চায়। সেই পলায়নপর দলে সুবোধ-স্বপ্নাও ছিল, ছিল আরও অনেক নারীপুরুষ, শিশু-কিশোর-কিশোরী-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও। কিন্তু শিথিল কারফিউ থাকা সত্বেও সূত্রাপুর-ফরাসগঞ্জ-গেণ্ডারিয়া এলাকায় পলায়নপর নারীপুরুষের উপর অতর্কিতে গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। অনেকেই মারা যান। যারা মারা যান, তাদের একটা বড়ো অংশের তালিকা এখনো বিহারীলাল জিউ মন্দিরের ভেতরে খোদাই করে লেখা আছে। আবার অনেকেই বুড়িগঙ্গা পার হয়ে গ্রামের দিকে চলে যেতে নৌকায় চড়ে বসে। সুবোধ-স্বপ্নাও সেই দলে ছিল। আবার কেউ কেউ নৌকায় উঠতে পারে না। এক দম্পতিকে আমরা দেখি, যেখানে স্বামীটি দৌড়ে গিয়ে নৌকায় উঠতে পারলেও, তার বউটি উঠতে পারে না। ঠিক সেই মুহূর্তে ভূতের গলির মহল্লাবাসিদের নিয়ে নৌকা ছেড়ে দিচ্ছিল দেখে সেই স্বামীটি কি করবে না করবে বুঝতে পারে না। এসব অনুগল্প। নানান অনুগল্প এসে কাঁটার মূল গল্পকে ঘনীভূত করেছে।

খুবই হতাশা নিয়ে সেই বউ নদীর পাড়ের দিকে উঠতে থাকে এবং তার পেছনে পেছনে ব্রিফকেস হাতে ভয়ে ঘটিয়ে ফেলা এক নিদারুণ বোকামিতে জড়িয়ে যাওয়া স্বামীটি হাঁটতে থাকে। মুন্সিগঞ্জের পদ্মাতীরে এই দৃশ্যটি করেছিলাম আমরা, কারণ, ১৯৭১ এর মতো বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ে এখন আর কোনো গ্রাম নেই। সমস্তটাই প্রায় শহর। শহরের এক্সটেনশন শহর। শহর ক্রমশ গিলে ফেলছে আমাদের গ্রামগুলো। বাংলাদেশের গ্রামগুলো। নদীও দখলবাজদের খপ্পরে পড়ে গেছে। হায় রে আমার নদীমাতৃক দেশ, ‘হায় রে আমার মন মাতানো দেশ!’


p 22. 3

মন্দিরে বাজে ভজন,’সখি মধুরিমাময়ী বাণী, কহো গৌর হরি…’


ভূতের গলির আজিজ ব্যাপারীর বাড়িতে কবুতররা সবসময় বাকবাকুম করে। দিনেই বেশি করে, রাতেও তো করে। তবে রাতে অতটা বাকবাকুম করে না। কোনো কোনো কবুতর ডাকে, ভালোবাসার সঙ্গীটি হারিয়েছে যে, সে ডাকে। তার ডাক বেদনা মথিত করে। এমন কি সকালেও, সারা রাত সঙ্গমতৃপ্ত কবুতর যেভাবে ডাকে, সঙ্গমহীন কবুতর কি সেভাবে ডাকে? ধরেন, কোনো কবুতর যদি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হয়, কোনো কবুতর একই সময়ে বিনয় মজুমদার। কোনো কবুতর হেরোইন বা ড্যান্ডি খাওয়া যুবকদের মতো ঝিম পাড়ে, কোনো কবুতর উল্লাস করে। এক কবুতর আরেক কবুতরকে বলে, চিয়ার্স। এক কবুতর আরেক কবুতরকে বলে, ‘কি রে দোস্ত, মনখারাপ করিসনে। একদিন, তোরেও কেউ সত্যিকারের ভালোবাসা দেবে।’ আলটিমেটলি, প্রায় সময় বাকবাকুমই শোনা যায় আজিজ ব্যাপারীর বাড়িতে। সেই জন্য আমরা পঞ্চাশটি কবুতর পুষেছি আজিজ ব্যাপারীর বাড়ির ছাদে। সেই কবুতর কাঁটার একটি বিরাট অংশ, যেমন ভিজুয়ালি, তেমন অ্যাম্বিয়েন্সেও। যেমন, শ্রীমতী ডায়না, বিড়ালিনী, সেও ভিজুয়াল যেমন, সাউন্ডে আরও বেশি উপস্থিত থাকে বাড়িতে। বিড়াল কবুতরকে আক্রমণ করতে চায়। কিন্তু ব্যাপারীর বাড়িতে বিড়ালের যেমন থাকার অধিকার আছে, কবুতরেরও সমান অধিকার আছে। সুবোধের বউ স্বপ্নারও প্রশ্রয় আছে যেমন কবুতরের প্রতি, বিড়ালের প্রতিও। এই হচ্ছে জীবনের আনন্দ-দ্বন্দ্ব-দ্বেষ ও ভালোবাসাও।

ব্যাপারীর বাড়ির উঠোনের পাতকুয়া, সেও তো একটা ম্যাজিক্যাল ক্যারেক্টার, কাঁটায়, সেটা বারবার দেখা যাবে। পাকিস্তানি আর্মিরা বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ছে দেখে জীবন বাঁচাতে যখন মহল্লাবাসি সম্মিলিতভাবে মিলাদ পরা শুরু করে, সেই মিলাদ থেকে উঠিয়ে তাদের উদ্দেশে মওলানা আবুবকর নির্দেশ দেয়, ‘আন্নেরা কুয়ার পাড়ে লাইন ধইরা বেগগুন খারান।’ ভয়ানক দৃশ্য। মওলানা আদিতে নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষ। ১৯৭১ সালে ভূতের গলিতে গঠিত হওয়া শান্তি কমিটির নেতা তিনি। হয়তো ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগেই সে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছিল এবং পাক-ভারত যুদ্ধের ফলে ঘোষিত ও কার্যকর করা শত্রু সম্পত্তি আইনের আওতায় পুরান ঢাকার ভূতের গলির একটি বাড়ি দখল করে নেয়। যে বাড়ির মালিক ছিল কোনো হিন্দু এবং আইনি বাস্তবতায় হিন্দু তখন শত্রু। তারপর থেকে মওলানা আবুবকর ভূতের গলির বাসিন্দা হয়ে গেলেও, তার মাতৃভাষা নোয়াখালির উচ্চারণ থেকে সে বেরুতে পারেনি। এইজন্য, ভূতের গলির মহল্লাবাসিদের কার বাড়ি কোনটা, সে জানে না। তার চার রাজাকার মহল্লায় খোঁজখবর করে বেড়ায়, ‘আপনাগো বাড়ির কেউ কি মুক্তিগো খাতায় নাম লেখাইছে?’


p 22. 12

ড্রোন, ক্যামেরা ও আমরা, মুন্সিগঞ্জের পদ্মাপাড়ে


আজিজ ব্যাপারীর বাড়ির পাতকুয়া থেকে একজোড়া লাশ তোলা হয়। মহল্লবাসিরাই তোলে সেই লাশ। লাশ তোলা হয় কুয়া থেকে, লাশ নিয়ে যায় ভ্যানওয়ালা, একই লাশ? না। লাশের কিছু কারবারি আছে কাঁটায় সেই লাশ কুয়ার জলকাদায় ভেজা। একটা বউ, বউয়ের পা আলতারাঙা, পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে লাশ। লাশ হোগলাপাতার পাটিতে জড়ানো। এই লাশ কাদের? কাঁটা দেখতে দেখতে আপনি লাশের পরিচয় পাবেন। লাশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা হবে সবার। লাশ এড়িয়ে যেতে পারবেন না। কারণ, যে জন্মেছে, সে লাশ হবেই একদিন। কাঁটার লাশ দেখতে দেখতে নিজের লাশ হওয়া কি মনে পড়বে আপনার? পড়বে কি পড়বে না, তা কে জানে?

তন্ময় পপ আর্ট করতে ভালোবাসে। তন্ময় আমাদের চারুকলার ছাত্র ছিল। ‘আঞ্জুমান’ ছবির হোডিং করেছে তন্ময়। ছবিটি চলছিল ১৯৭১ এর যুদ্ধের সময়, যে হলে সিনেমার টিকিট বিক্রির চাকরি করে সুবোধ চন্দ্র দাস। সাতক্ষীরা থেকে এসে সুবোধ ওর বউ স্বপ্নারানী দাসকে নিয়ে মহাবিপদে পড়ে যায়। ঢাকা থেকে পালানোরও আর সুযোগ থাকে না। এদিকে ‘মিলিটারিরা আন্দাগুন্দা মানুষ মারতাছে, তয় হালাগো মেইন টার্গেট হিন্দু’ এরকম একটি তথ্য পাওয়ার পর আর কী হতে পারে তাদের জীবনে?


p 22. 5

৯৭১, যুদ্ধের সময়েও ছবি চলছে, উর্দু ভাষায় নির্মিত ছবির নাম, ‘আঞ্জুমান’। আর্টিস্ট : তন্ময়


‘আঞ্জুমান’ ছবির একটা গান দর্শক কিছুটা শুনতে পাবে কাঁটাতে, রুনা লায়লার কণ্ঠে। সিনেমার ভেতরে সিনেমা চলে কাঁটাতে। এভাবেই চিত্রনাট্য লিখেছি। সুবোধকে আমরা দেখব, সে বিচলিত, বিভ্রান্ত। কী করবে সে এক অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার মধ্যে পড়ে গিয়ে? মাথায় টুপি পরে, মুখে দাঁড়ি রেখে চলা দিন আসে তার। যা সে কোনো দিন ভাবেনি, তাই তাকে করতে হয়। ঘরে তার বউ যেমন হাত শাঁখাবিহীন, কপাল সিঁদুরবিহীন বসবাস করে। বালিশের তলায় লুকিয়ে রাখে ‘সহজ নামাজ শিক্ষা’। কলেমা তৈয়ব মুখস্ত করে। মহল্লাবাসি এই ঘটনা দেখতে পেয়ে যেমন কৌতূহলী হয়, আবার সান্ত্বনাও দেয়।

ঢাকার বাইরে মুন্সিগঞ্জে আমরা দুইবার গেছি আউটডোর করতে, একবার গেছি নরসিংদীতে। মুন্সিগঞ্জে গেছি নদী ধরতে, সর্ষে ফুলের খেত ধরতে; নরসিংদীতে গেছি মাঠ ধরতে, মাটির রাস্তা ধরতে, রেল লাইনের উপরে চাঁদ ধরতে এবং সন্ধ্যেবেলা উঠোনে কলাগাছ পুঁতে হ্যাজাকের আলোয় সুবোধ-স্বপ্নার বিয়ে ধরতে। ১৯৭০ সালের এক সন্ধ্যালগ্নের বিয়ে, কাজেই মাটির বাড়িতে এটা করব ভেবেছিলাম। খুঁজে খুঁজে পেলাম জিনার্দীতে। মাটির রাস্তা ধরেছি ঘোড়াশালের ওদিকের এক গ্রামে। সেই গ্রামে শুটিংয়ের সময়ের একটা ঘটনার কথা বলি। মাঠের ভেতরে ফাঁকা মাটির রাস্তা, সেই রাস্তায় ট্রলি ফেলা হয়েছে। কয়েক জন ছোকরা এলো মোটর বাইক চালিয়ে। তাদের হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তারা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় মাস্তান-ক্যাডার। একটি ছেলে এগিয়ে এসে জানতে চাইল, ‘এইখানে শুটিং করতেছেন, ভাইরে চেনেনে?’


p 22. 2

প্রায় পঞ্চাশটা কবুতর কাঁটা ছবিতে সবসময় বাকবাকুম বাকবাকুম করে


বললাম, ‘ভাই কে?’

আরেকটি ছেলেকে দেখিয়ে সেই ছেলেটি বলল, ‘ভাইয়ের অর্ডার ছাড়া এই গ্রামের পাখি ওই গ্রামে যাইতে পারে না।’

বললাম, ‘আমরা তো পাখি না। মানুষ।’

কিছু টাকাপয়সার একটা ভাও করতে এসেছে ওরা, বুঝেছি। বললাম, ‘তা ভাইয়ের পরিচয় কি বললেন না তো?’

‘ভাই এই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি।’

‘ও আচ্ছা। এই মাটির রাস্তায় ছাত্রলীগ নেতার কাজ কী?’

এবার ভাই এগিয়ে এলেন। বললেন, ‘এইখানে শুটিং করতেছেন। এটা আমার এলাকা, জানেন?’

বললাম, ‘গোটা বাংলাদেশই আমার এলাকা, আমার নিজের এলাকা মানেই বাংলাদেশের পুরোটা।’

একটু হিচিং হিচিং ভাব। আরে আমার কি আর সেই ক্ষমতা আছে, যে ক্ষমতা ছেলেটি দেখাচ্ছে? আমি খুবই সাধারণ একজন নাগরিক। এই দেশ সাধারণ নাগরিকদের দেশ নয়, ক্ষমতাবানদের ক্যাডারদের দেশ। জানি। তাই মাত্র কয়েক জন ছেলে, অথচ একটা হুমকি তৈরি করার চেষ্টা করছে। পূর্বেও, শুটিংয়ে এরকম অভিজ্ঞতা আমার আছে। বললাম, ‘তা ভাই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা, আমি তো আপনাকে বাধা দিতে পারব না, আপনাকে আমি ফোনে এখন কথা বলাব ঘোড়াশাল থানার ওসি, লোকাল এমপির সঙ্গে। আর বললাম, আপনি চাইলে আপনার সেন্ট্রাল নেতাদের সঙ্গেও কথা বলাতে পারি। বলবেন?’


p 22. 10

‘আন্নেরা কুয়ার পাড়ে লাইন ধইরা খাড়ান…’ একটা ভয়ংকর দৃশ্যের ইঙ্গিত


আমাদের শুটিংয়ের আগেই আমরা এমপিকে একটা লেটার দিয়েছি। লোকাল থানার ওসিকে একটা লেটার দিয়েছি। ফরমালি যা করতে হয়, করেছি। সে তো কাঁটা টিমকে দিয়ে করিয়েই রেখেছি। আমি ফোনেও কথা বলে রেখেছি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। আমার কথা শুনে ইউনিয়ন ছাত্রনেতা ইউটার্ন করল। নেতা ছেলেটি তার সঙ্গের ছেলেদের চিৎকার দিয়ে অর্ডার দিলো, ‘এই, ভাইয়ের শুটিং। দেখবি, কেউ যেন ডিস্টার্ব করতে না পারে।’

বললাম, ‘ড্রোন উড়বে, আপনারা দুই কিলো দূরে চলে যান।’

‘ঠিক আছে ভাই। আমরা যাচ্ছি। কেউ ঝামেলা করলে খালি আমারে কইবেন।’

বললাম, ‘ফোন নম্বর দিয়ে যান। দরকার হলে ফোন করব আপনাকে।’

ছেলেটি ফোন নম্বর দিলো। চলে গেল। আমরা নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে গেলাম।

এখন কথা হচ্ছে, যে সুবোধকে আমরা বিয়ে করাতে নিয়ে গেছি নরসিংদীর জিনার্দিতে, সেই সুবোধের নাম কৃতিরঞ্জন বসু। কৃতীর বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর থানার পাল্লা গ্রামে। আমরা ঢাকা থেকে নরসিংদীর উদ্দেশে বাস ভাড়া করে চলে এসেছি সকাল ৭টায়। এই কৃতীর বাবার লাশ সেদিন বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। বারডেমে বাবার লাশ রেখে ছেলে এসেছে বিয়ের দৃশ্যের শুটিং করতে? এতটা নির্মম আমি হতে পেরেছি? ওই দিন ছিল কাঁটার লাস্ট শুট ডে। এবং আউটডোর। বাস ভাড়া করা হয়েছে, টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ড্রোন ভাড়া করা হয়েছে। ক্যামেরা ভাড়া করা হয়েছে। লাইট নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রপস, কস্টিউম সব রেডি। সকাল ৬টা নাগাদ কাঁটাবন মোড় থেকে বাস ছাড়বে। টিম প্রায় পঞ্চাশজনের মতো। সুবোধ চরিত্রের জন্য দাঁড়িগোঁফ যা ছিল, সব ক্লিন করা হয়েছে রাত ১০টা নাগাদ। কৃতীর বাবা জ্যোতিরঞ্জন বসু তখন মনোয়ারা হসপিটালে ভর্তি আছেন, তাঁর বয়স ৭২ বছর, হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা ও চাষাবাদে জীবন কাটিয়েছেন, সন্তানদের বড়ো করে তুলেছেন। জ্যোতিরঞ্জন বসু নিজেও জানতেন কাঁটার গল্পটি। তিনি বলতেন, ‘এ তো আমদেরই জীবনের গল্প।’ কৃতী এ সব জানিয়েছে আমাকে, অনেক আগেই। মাগুরার মহম্মদপুর থানার দীঘলিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত পাল্লা গ্রামেই তাঁর বসবাস। অসুস্থ থাকায় তিনি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর মনোয়ারা হসপিটালে ভর্তি ছিলেন। রাত ১১টায় কৃতী ফোন করে জানাল সেই মর্মান্তিক সংবাদ— ‘বাবা নেই।’


p 22. 7

পা দেখে কি বোঝা যায়, কাদের পা ভ্যানের ওপর হোগলাপাতার পাটিতে জড়িয়ে রাখা?


তাহলে সকালে শুটিংযাত্রার কী হবে? প্রায় সবই তো বুকিং দেওয়া হয়েই আছে। টাকাও দেওয়া আছে। আমার মাথায় বাজ পড়ল। আমি রাত ১২টায় মনোয়ারা হসপিটালে গেলাম। ভাবলাম, একটা প্রস্তাব দেবো ওদের পরিবারকে। কিন্তু কীভাবে যে প্রস্তাবটি দেবো, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মারাত্মক একটা ব্যাপার। সকালে কৃতীর ভাই-বোনেরা বাবার লাশ মনোয়ারা হসপিটাল থেকে নিয়ে মাগুরার উদ্দেশে রওয়ানা হবে এবং গ্রামেই সৎকার করবে। আমি মনোয়ারা হসপিটালের ওয়েটিং রুমে বসে ছিলাম। মাথায় তখন ভাবনা, কাল শুটিং হবে কি না, আমরা নরসিংদী যাব কি না—আজ সিদ্ধান্ত ওদের পরিবারের। আমার কিচ্ছু বলার নেই। কোনো রাগ করার নেই। কৃতী যদি শুটিংয়ে যেতে না চায়, তাইলে যাব না আমরা। কৃতী যদি যেতে চায় কিন্তু ওর মা ভাইবোন যদি যেতে না করে, আমি সেই না মেনে নেব। বাবা তো! আমি শুধু ভাবছিলাম, বুকিং এর টাকা তো পাওয়া যাবে না আর। কৃতী এলো। বাবার মৃত্যুর কষ্ট ওর চোখে মুখে আটকে আছে। আমি কিছুই না বলে চুপ করে বসে থাকলাম।

একটু পর ওর ভাই এলো। আমি মনে মনে একটা কথা ভাবছিলাম, যা ভাবছিলাম, সেই কথা এসে কৃতীর ভাই আমাকে বলল। বলল, ‘মা বলল, ওদের শুটিংয়ের সব নাকি বুকিং করা হয়ে আছে। ওর বাবা তো কাঁটা ছবির কথা সব জানত। শুটিং বন্ধ করার দরকার নেই। একদিন লাশ হাসপাতালে রেখে পরদিন মাগুরায় নিয়ে নিয়ে সৎকার করলে তো শুটিংটা হয়ে যাচ্ছে।’

কৃতীর মা আমারও মা। মা বুঝেছেন সন্তানের ব্যথা। তাই মা যা বললেন, তা হচ্ছে, শো মাস্ট গো অন। গভীর কৃতজ্ঞতায় মাথা নত হলো আমার। কৃতীর মা, ভাই-বোনের কাছে কাঁটা টিমের চিরকালীন কৃতজ্ঞতা, কারণ, এরকম পরিস্থিতিতে খুবই স্বাভাবিক ছিল শুটিং বন্ধ করা। আমাদের তা করতে হলো না। কৃতীর পরিবার যা করেছে, ঢাকা শহরের আর কারো পরিবার করত কি না, আমি জানি না। এটা খুবই রেয়ার ব্যাপার। কিন্তু মনোয়ারাতে মরচুয়ারি নেই। বারডেমে আছে। রাত ১২টার পর, সেই মৃত্যুময় শোকার্ত সময়ে বারডেমে যোগাযোগ করা হলো। ঠিক হলো যে, লাশ মনোয়ারা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হবে বারডেমে। সেখানকার হিমঘরে থাকবে ২৪ ঘণ্টা। আমরা নরসিংদীতে সারা দিন শুটিং করে, রাতে কৃতীর বিয়ের দৃশ্য শুট করেই ঢাকায় রওয়ানা দেবো। কৃতী ঢাকায় ফিরে ওর ভাইদের সঙ্গে মিলিত হবে, তারপর বাবার লাশ নিয়ে মাগুরায় ফিরবে। চাট্টিখানি কথা নয়, যা এখানে লিখে যাচ্ছি এখন। একবার ভেবে দেখুন তো, আপনি এই অবস্থায় শুটিংয়ে যেতে পারতেন? আপনি পারলেও, আপনার ভাই-বোন বা মা অনুমতি দিত? কৃতী পেরেছে। ওর পরিবারের দায়বদ্ধতা সেদিন আমি অনুভব করেছি। কৃতীকেও আবার নতুন করে চিনেছি। এমনিতে কাজের জন্য আমার মেজাজ খারাপ হয়, আমি তখন যাচ্ছেতাই বলে গালিগালাজ করি, অকথ্য বলি, সেটা কৃতীর চেয়ে বেশি আর করিনি কাউকে। কারণ, ওকে ভালোবাসি। ওর কাছে দাবি বেশি, ‘ওরে, বুঝিসনে ক্যা?’ একদা নাট্যনির্দেশক ও প্রিয়জন কামালউদ্দিন কবির ওর কথা আমাকে ফোনে বলেছিলেন, সেই কাঁটা টিমের অডিশনকালে। তখন একটা ছোটো চরিত্র করতে দেবো ওকে, এই ভাবনা ছিল। কিন্তু ওর যোগ্যতাতেই ও সুবোধ হয়ে গেল। আমার অন্তরলালিত নির্মাণের একটা চরিত্র। অনেক বড়ো ধরনের অভিনেতাকে দিয়ে যে চরিত্র করাব, চিত্রনাট্য রচনাকালে যে ভাবনা ছিল আমার, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেই ভাবনা ফলিত হলো কৃতিরঞ্জন বসুর মধ্যে। কৃতীকে নিয়ে তো আমি বাজি ধরেছি। কাঁটা দেখতে বসে দর্শক জানবে, আমি বাজিতে হেরেছি না জিতেছি।


kritir baba

পিতাহি পরমন্তপঃ জ্যোতিরঞ্জন বসু ও পুত্র কৃতিরঞ্জন বসু


আমি জানালাম, ‘তাহলে লাশ মনোয়ারা থেকে বারডেমে নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুলেন্স খরচ আর মরচুয়ারিতে চব্বিশ ঘণ্টা রাখার খরচ কাঁটা প্রোডাকশন থেকে দেওয়া হবে।’ এবং কৃতীকে বললাম, ‘তুমি পরিবারের সঙ্গে থাকো রাতটুকু। সকাল ৬টায় কাঁটাবন মোড়ে চলে আসো। রাত ১টার দিকে মনোয়ারা থেকে ফিরলাম আমি, আমার সঙ্গে দীপন’দা, কাঁটার আর্ট ডিরেক্টর।

পরদিন সকাল ৬টায় আমাদের বাস ছাড়ার কথা কিন্তু ছোটো সুবোধ সোহেল তৌফিক ছিল রামপুরাতে, ফোন ধরছিল না। মরার মতো ঘুমোচ্ছিল। দেড় ঘণ্টা পর ওকে পাওয়া গেল। সকাল পাঁচটায় কল ছিল। বেজে গেল সাড়ে ছয়। সাতটায় আমাদের বাস কাঁটাবন থেকে ছাড়তে পারল। আমরা ৮টায় পৌঁছুব ঘোড়াশাল, পৌঁছুলাম ৯টায়। ঘোড়াশালে নেমেই দেখলাম, একটি লোক ঘোড়ায় চড়ে আছেন। সেই ইতিহাস খোদাই করে লিখিত আছে ভাস্কর্যের পাদদেশে। অর্থাৎ অশ্ব ও অশ্বারোহী আমাদের চোখের সামনে, পাথর-সিমেন্টের ভাস্কর্য। অশ্ব বলছে, ‘চি হি চি হি। অশ্বারোহী বলছে, থামা চলবে না…’

মাঝরাতে কাজ শেষ হলো জিনার্দিতে। ঢাকায় ফিরতে ফিরতে রাত ৪টা, আমরা যে যার বাসায় পৌঁছুলাম, কৃতী চলে গেল গাবতলি। আমাদের ঢাকায় ফেরা দেরি হচ্ছে দেখে শ্রীমান জ্যোতিরঞ্জন বসুর লাশ নিয়ে পরিবারের বাকিরা চলে গেছে মাগুরায়। বাসায় ফিরলেও, ঘুম আসছিল না আমার। সকাল আটটার দিকে কৃতীর ফোন থেকে একটি মেসেজ এলো আমার ফোনে, সেখানে কৃতী লিখেছে, ‘প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশার মধ্যে বসে আছি মধুমতী নদীর ঘাটের এপারে, নৌকা ওপারে। কেউ ওপার থেকে ওই নৌকায় এপারে এলেই আমি তারপর মধুমতী পার হবো। জানি না, কখন বাড়িতে পৌঁছুব।’

পরের পর্বে চোখ রাখুন। আগের পর্বগুলো পড়ে আসতে পারেন চাইলে। ওকে। দেখা হবে পরের পর্বে।


আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ১ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ২য় পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৩য় পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৪র্থ পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৫ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৬ষ্ঠ পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৭ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৮ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৯ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ১০ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১১
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১২
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৩
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৪
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৫
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৬
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৭
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৮
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৯
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ২০
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ২১


কাঁটা প্রোডাকশন ফটোগ্রাফি : হোসেইন আতাহার

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১ ডিসেম্বর, ১৯৭২, ঝিনাইদহ। বেড়ে ওঠা, বসবাস:  ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা ও ঢাকা। একাডেমিক (সর্বশেষ) পড়ালেখা: চারুকলা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রন্থ প্রকাশনা: কবিতার বই কয়েকটি, গদ্যের বই কয়েকটি। সম্পাদিত গ্রন্থ: ২টি। ছবি নির্মাণ: ‘ব্ল্যাকআউট’ (২০০৬) আনরিলিজড। ‘রাজপুত্তুর’ (২০১৪), ‘কাঁটা’ (২০২৩) । পেশা: আর্ট-কালচার চষে বেড়ানো।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।