মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩

টোকন ঠাকুরের ধারাবাহিক : জার্নি অব কাঁটা : ৪র্থ পর্ব

0

ফরাসগঞ্জের জীবনযাপন ছিল আমার জন্য কিছুটা আবিষ্কারমূলক, ফলে তা রোমাঞ্চকরও বটে! ইনডোরের একটা ঘটনা বলি, আমি যে ঘরে ঘুমাতাম তার বিপরীত দিকে ছিল এমন একটি ঘর, দুই ঘরের মাঝে একটি কাঠের দরজা ছিল আগে, সেটি বন্ধ করে দেওয়া। এ-ঘর ও-ঘর কথাবার্তার শব্দ সব শোনা যায়। সেই বিপরীত ঘরের ভাড়াটিয়া ফারুক ভাই। ফারুক ভাই প্রায় পঞ্চাশ বছরের এমন একজন লোক, যে সারাদিন রেডিওতে পুরনো দিনের সিনেমার গান শোনে আর গানের তালে তালে কাজ করে। গানের বক্তব্যকে প্রোপারলি রেসপন্স করে। ঘরের পাশেই ঘর, তাই ফারুক ভাইয়ের রেডিওর গান আমাকেও শুনতে হয়। ননস্টপ রেডিও অন। দিনের বেলা ঘুমাতে চাইলে মাঝেমধ্যে আমি আমার রুম থেকেই বিরক্ত হয়ে বলতাম, ‘ফারুক ভাই, রেডিওর ভল্যুমটা একটু কমায়ে দেন।’ লোকটি কিনে আনা সিটকাপড় বাছাই করত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বাংলা সিনেমার গানের সঙ্গে ফারুক ভাই চেতনাগতভাবেই মিশে যেত। যেমন, রেডিওতে চলছে একটি গান, ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও/ আমি তো এখন আর নই কারো।’ মদ খেয়ে নায়ক ছবিতে এই গানে ঠোঁট মিলিয়েছে। তাই যেই না শুরু হলো ‘হয় যদি বদনাম… আমি তো এখন আর নই কারো…’ এ পর্যন্ত গাওয়ামাত্রই ফারুক ভাই চরম এক আত্মবিশ্বাসের চিৎকার দেয় গানের ফাঁকে, ‘সাব্বাস ব্যাটা সাব্বাস।’ তারপর বাকি গান বেজে চলল। ফারুক ভাইয়ের সেলাই মেশিনের শব্দ পাওয়া যায়। রেডিওতে গান বাজতেই থাকে। একটা গান শুরু হলো, ‘টাকা তুমি সময় মতো আইলা না…’ ফারুক ভাই তার মুখে সাউন্ড করল, ‘ঠিকই।’ গান বাজল, ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নয়…’ ফারুক ভাই শব্দ করে সমর্থন দেয়, ‘একদম ঠিক’। গান বাজে, ‘আমার মনের নোঙর পইড়া রইছে হায় রে সারেং বাড়ির ঘাটে…’ ফারুক ভাই তখন আর শব্দ করে না। এই সময় ফারুক ভাইয়ের মুখে কী রকম অভিব্যক্তি আসে, তা আমার দেখা হয়নি। কারণ, সে তো দেয়ালের অপজিটে, অন্য রুমে। মাঝখানে দেয়ালের মাঝামঝি একদা দরজা ছিল, এখন কাঠ দিয়ে তা বন্ধ করা। গজেন’দাকে আমি বলি, ‘গজেন’দা, আমি সারারাত ঘুমাইনি, এখন একটু ঘুমাব। তুমি যাও, ফারুক ভাইকে রেডিওটা অফ করে রাখতে বলো কিছুক্ষণ।’ গজেন’দা বলে, ‘এ কথা কি বলা যায়?’

‘তাইলে ভল্যুমটা যদ্দুর সম্ভব কমাতে বলে আসো।’


mojammel bhai bulbul bidhan

প্রয়াত মোজাম্মেল হোসেন ও বুলবুল চৌধুরীর সঙ্গে টোকন ঠাকুর


‘তা বলা যায়।’ গজেন’দা গিয়ে ফারুক ভাইকে বলে। ফারুক ভাই রেডিওর ভলিউম কমায় কিন্তু আমি বুঝতে পারি, রেডিও ভলিউমের নব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যা ছিল তাই করে রাখে লোকটা। একদিন রেগে গিয়ে কী করলাম ফারুক ভাইকে উলটো ট্রিটমেন্ট দেওয়ার জন্য আমি আমার ল্যাপটপে সর্বোচ্চ সাউন্ড দিয়ে ছেড়ে দিলাম চলতি হিন্দি কোনো ছবির গান। আমি জানি, ফারুক ভাই শোনে পুরনো দিনের বাংলা ছবির গান। এভাবে একটা কাউন্টার অ্যাটাক আর কী! ব্যাপারটা হিন্দি দিয়ে বাংলার উপরে চেপে বসতে চাওয়া হয়তো। বাসার কাছের একটা হোটেল ঠিক করে নিয়ে সেখানে আমি ও গজেন’দা কিছুদিন খেয়েছি দুপুর ও রাতে। সকালের নাস্তা করতাম হাতে বানানো চালের রুটি ও হালুয়া দিয়ে। সেটা আরেকটা হোটেলে। পুরান ঢাকার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানকার খাবার-দাবার। নবাবী এক্সপ্রেশন আছে। বিরিয়ানি, বোরহানি, কাচ্চি, তেহারি, কাবাব, টিক্কা, বটি, চাপ, পরোটা। আহ! নতুন ঢাকায় থাকা লোকেরা জানেই না, পুরান ঢাকার সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্য কত! আমি ফরাসগঞ্জে গিয়ে তাঁবু না গাড়লে আমিও জানতাম না। অথচ ঢাকায় থাকি কতবছর! ফরাসগঞ্জ ও এর আশেপাশে সারাদিন ঘোরাঘুরি করি। ছবি তুলি। সন্ধ্যায় জয় নিয়ে যায় কোথায় কোথায়। সন্ধ্যায়, মিলব্যারাকের পেছনে, বুড়িগঙ্গা পাড়ে প্রচুর তরুণ-তরুণী ছেলেমেয়েদের জটলা হয়। প্রচুর মোটরবাইক। আমি দেখি আর ভাবি, এরা তো শাহবাগে যায় না, টিএসসি যায় না। এখান থেকে লক্ষ্মীবাজার-জগন্নাথই তো বেশ কিছুটা দূর, তারপর রায়সাহেব বাজার বা সংক্ষিপ্ত উচ্চারণে ‘রাইছাবাজার’, তারপর নবাবপুর পার হয়ে গুলিস্তান। গুলিস্তান কতদূর! গুলিস্তান নামে যে সিনেমা হলটা ছিল, সেটা এখন নেই। অথচ জায়গার নাম গুলিস্তান টিকে গেল। সিনেমা ‘ডি প্যারাডিসো’র কথা মনে পড়ল। প্যারাডিসোও ভেঙে ফেলা হয়েছিল। গুলিস্তান সিনেমা হল এখন ইতিহাস। বাস্তবে নেই হয়ে গেছে। এদিকে আমি আগে কখনো দেখিনি বুড়িগঙ্গার আকাশে সন্ধ্যা কী রকম রক্তিম মায়া তৈরি করে! অনেকটা ভিড়ভাট্টাহীন নিস্তরঙ্গ ফরিদাবাদের দিকে হাঁটতে হাঁটতে যাই। ফরিদাবাদের পরেই পোস্তগোলা। পোস্তগোলার পরে ঢাকা শেষ, এখন অবশ্য নব পর্যায়ে বিস্তৃত হচ্ছে শহর। লেখক বুলবুল চৌধুরীর বাড়ি শিংটোলা-এক্রামপুর মোড়ের কাছে। ধ্রুব এষ ও আমি আগে, একদা প্রচুর বুলবুল ভাইয়ের বাড়িতে গেছি। আমি একলাও গেছি অনেক। বুলবুল ভাই ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত তামাকসেবী। এ নিয়ে তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনো সমস্যা নেই। বুলবুল ভাইয়ের ছোটোভাই পিটু ভাইও তামাকসেবী। তিনি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা। বুলবুল ভাইয়ের স্ত্রীর রান্না করা খাবার কত খেয়েছি। এই লেখক কর্কট রোগে মারা গেলেন বছর দুয়েক আগে। মনে আছে, একদিন আমি বুলবুল ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললাম, ‘আমার একটি পুরনো বাড়ি দরকার। দেড় শ বছরের কম পুরনো হলে হবে না। তবে বাড়িতে একটি উঠোন থাকতে হবে। উঠোন পাকা করে ফেলেছে যে বাড়ির, সেই বাড়িতে হবে না, মাটির উঠোন লাগবে, তুলসিগাছ ও কিছু পাতাবাহারগাছ লাগাতে হবে। উঠোনে একটি কুয়ো থাকবে; বুলবুল ভাই, আপনি তো পুরান ঢাকার মানুষ। আপনি আমার জন্য কি করতে পারবেন?’ বুলবুল ভাই হাতের কাজ চালান। হাতে বানানো সিগারেট বানান। বলেন, ‘আরে মিয়া, বন বন আগে। আপনে যা শুনাইলেন, এইরকম বাড়ি তো আগে অনেক ছিল, এখন দিনকাল বদলাইছে, বাড়িঘরদোর সব ডেভেলপারদের হাতে চলে যাচ্ছে। আমগোটাও যাইব।’ বুলবুল ভাই তামাকে টান দেন। ধোয়া ছাড়েন। বলেন, ‘ভাবতাছি কী করা যায়! আমার এক বন্ধু ছিল বাইচা আছে না মইরা গেছে জানি না। বহুতবছর দেখা-সাক্ষাৎ নাই। চলেন মিয়া, দেখি, খবর লই।’

এতে কী হলো? কী হলো বলব? বলি। যত সুললিত-কুসুমিত-সুষুমিত শব্দ দিয়েই বলি না কেন, যতই ভাষার শ্লীলতার মধ্যে থেকে বলি না কেন, প্রকৃত তাৎপর্য বোঝা যাবে জনভাষা হাজির করলে। জনভাষায় স্ল্যাং। সে তো পশ্চাৎদেশ নয়, পাছাও না, পুরান ঢাকায় বলে হোগা। হোগা মেরেছে। অর্থাৎ বুয়া আমার গুয়া মেরে গেল।

বুলবুল চৌধুরী তাঁর বাড়ি শিংটোলা থেকে আমাকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে রিকশা নেন। রিকশা সূত্রাপুর থানা মোড় পার হয়ে তদানীন্তন গ্র্যান্ড এরিয়া বা ইদানীন্তন গেণ্ডারিয়া থানা বিল্ডিং পার হয়ে যেতে থাকে মামুর মাজারের দিকে, ফরিদাবাদের দিকে। এইদিকে এর আগে কখনো যাওয়া পড়েনি আমার। কিছু কাঠের দোকান, কিছু স’মিল পার হয়ে বুলবুল ভাই আমাকে নিয়ে যান তাঁর প্রাচীন বন্ধু মোজাম্মেল হোসেনের কাছে। আমাকে পরিচয় করায়ে দেন। সিনেমা বানাব শুনে মোজাম্মেল ভাইয়ের একটা বাড়তি আগ্রহ দেখা যায়। তাঁর স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আলাপ হয়। বুলবুল ভাই ও মোজাম্মেল ভাই দুই বন্ধু অনেকদিন পরে নিজেদের সামনাসামনি পেয়ে তাদের প্রজন্মের বা তাঁদের আগের কে কে এখনো বেঁচে আছেন আর কে কে মরে গেছেন, সে আলাপে মত্ত হন। মানুষ কেমন ফুরায়ে যাওয়ার ব্যাপার, মানুষ কেমন হারায়ে যাওয়ার ব্যাপার! মোজাম্মেল ভাইয়েরা আদিতে কোলকাতার লোক। দেশভাগ তাঁদের ঢাকায় নিয়ে এসেছে। কোলকাতায় তাঁদের অনেক সহায় সম্পত্তি ছিল, এখনো সেগুলো আছে তাঁর ওখানকার শরিকদের দখলে। মোজাম্মেল ভাইয়ের বাবা যখন ১৯৪৭-এ ঢাকায় চলে আসেন এবং এই ফরিদাবাদে বাড়ি করেন, বাড়ির জমি ছিল ১০ বিঘা। সে সময়, সেই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে ‘এ বাড়িতে একবার বঙ্গবন্ধুও এসেছেন’, বলেন মোজাম্মেল ভাই। ২০১৬-১৭ সালেও সেই বাড়ির এলাকা প্রায় দুই বিঘা সমান, এখানেও শরিকি গোলমাল আছে। অমীমাংসা, তাই একতলাই রয়ে গেছে বাড়ি। মামলা চলছে ভাইয়ে ভাইয়ে, ভাতিজা ভাতিজায়। পরে ‘কাঁটা’র একজন সহকারী ও ব্যক্তিগতভাবে আমার বন্ধু রুবেল কুদ্দুস ও আমি বেশ কয়েকবার গেছি ফরিদাবাদে। মোজাম্মেল ভাই কাঁটার কন্ডিশন অনুযায়ী আমাকে নিয়ে ফরিদাবাদের বিভিন্ন বাড়িতে যান। পুরনো দোতলা বাড়ি দেখান। হয়তো বাড়িটি পুরনো। ঠিক আছে। বাড়িতে হয়তো একটা উঠোনও আছে কিন্তু উঠোনটা পাকা করা। আমার লাগবে উঠোন, অবশ্যই মাটি থাকতে হবে কিছু অংশে হলেও। আবার কোনো বাড়ি হয়তো চিত্রনাট্যের সেট অনুযায়ী খুব ঠিক আছে কিন্তু উঠোন ভরাট করে সেখানে সদ্যই ঘর উঠেছে। অতএব, হবে না। ‘হবে না’ কীভাবে ‘হয়’, তাই হচ্ছে ছবি, সিনেমা। লেখক ইমদাদুল হক মিলন যখন প্রথম যৌবনে এইদিকে থাকতেন, মোজাম্মেল ভাই তাঁর সেই সময়ের বন্ধুদের একজন, যেমন মোজাম্মেল ভাইয়ের আরেক বন্ধু শেখ আবদুল হাকিম। মাসুদ রানা সিরিজ বা সেবা থেকে প্রকাশিত অসংখ্য রহস্যোপন্যাসের লেখক। যৌবনে মোজাম্মেল ভাই ফুটবল ও ভলিবল খেলতেন। কিন্তু এখন বয়স হয়ে গেছে, কথা বলেন দরকারের চেয়ে কিছুটা বেশিই হয়তো-বা। এককালের হারানো সাম্রাজ্যের কথা বলেন আর আমাকে নিয়ে ঘোরেন বিভিন্ন পুরান বাড়িতে, যা তাঁর এককালের বন্ধুদেরই বাড়ি। শৌখিন মানুষ ছিলেন মোজাম্মেল ভাই। এত বাড়ি দেখি কিন্তু সব কিছু একসঙ্গে মিলছে না। আমরাও হাল ছাড়ছি না। রুবেলের মোটরবাইক ছিল বলেই যখন-তখন পুরান ঢাকায় চলে যেতে পারতাম এলিফ্যান্ট রোড থেকে। অসুস্থ ছিলেন, একদিন মোজাম্মেল ভাই মারা গেলেন। তাঁর স্ত্রী আমাকে ফোন করে জানলেন। বন্ধু মৃত্যুর কথা আমি আর বুলবুল ভাইকে জানাইনি। একদিন মারা গেলেন বুলবুল ভাইও। অনেক স্মৃতির ঝাঁপি আছে আমার তাঁদের সঙ্গে, কাঁটা প্রোজেক্টের সঙ্গে। অনেক ঋণ। কাঁটার চিত্রনাট্যে একটা চরিত্রের নাম রেখেছিলাম মোজাম্মেল হোসেন।


nulnul mojammel

দুই বন্ধু প্রয়াত মোজাম্মেল হোসেন ও বুলবুল চৌধুরী


মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান কাঁটার সিনেমাটোগ্রাফার হতে যাচ্ছে, এমনটা মনে হলো এক সময়। আমাদের খুব মিলল। আরিফ চারুকলার ছাত্র ছিল। খুব ভালো কাজ করে। আমার শংকরের বাসা থেকে কত কত দিন শীতভোরে আরিফের মোটরবাইকে চড়ে সূত্রাপুর, ফরাসগঞ্জ বা কাগজিটোলা চলে আসতাম, কাঁটার লোকেশন দেখার কাজে। হয়তো সকাল ৬টায় আমরা শীতে কাঁপতে কাঁপতে পুরান ঢাকায় এসে পৌঁছতাম। স্টিল তোলা হতো বিভিন্ন বাড়ির, গলির। আটটার দিকে হয়তো আমরা গেণ্ডারিয়ায় বসে নাস্তা করতাম। আরেকটু ঘোরাঘুরি করে ফিরে যেতাম শংকরে, আরিফ আমাকে পৌঁছে দিত ওর বাইকে। আরিফের সঙ্গে ভবিষ্যতে আমার একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ আসবে, এই আশা রাখছি। শংকরে থাকতে একদিন মিথুন এলো। হাসান শরীফ মিথুন। এডিটর বন্ধু সামির আহমেদের গাঁও প্রোডাকশনে ভিডিও সম্পাদনার কাজ শেখে। মিথুন চলচ্চিত্রের ছাত্র ছিল, একটি প্রাউভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাঁটা স্ক্রিপ্টের একটি ভার্সন পড়ে মিথুন এতই ফিদা হলো যে, টানা কয়েকদিন থেকে গেল আমার সঙ্গে, শংকরে। মিথুনও যুক্ত হয়ে গেল কাঁটাতে। ঢাকায় বসে লেখা স্ক্রিপ্ট ঢাকার বাইরে গিয়ে পড়লে কেমন লাগে—এই প্রশ্নে আমি ও মিথুন চলে গেলাম রংপুর। কয়েকদিন থাকলাম ওখানে। পরদিন সর্বনাশা তিস্তা দেখতে গেছি। সত্যিই সর্বনাশা, সত্যিই সুন্দর তিস্তা, তিস্তা নদী। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, তাজহাট জমিদার বাড়ি, কারমাইকেল কলেজ দেখতে গেলাম। সাঁওতাল পল্লিতেও গেছি। কবি রিষিণ পরিমলের ছাত্রছাত্রী সিরাজুম মুনিরা, নাদিয়া জান্নাত, এসকে রায়দের সঙ্গে আলাপ হলো রংপুরে। আমি ও মিথুন থাকলাম একটা রেস্ট হাউসে। কাঁটা চিত্রনাট্য নিয়ে বসলাম পরপর ৪ রাত। ওদিকে মিথুনের হৃদয়ে আচমকা এক দেখাতেই সিডর ঘটিয়ে গেল আমাকে পুষ্পার্ঘ দিয়ে দেখা করতে আসা মেয়ে নাদিয়া। স্রেফ ক্রাশ। কী করা যাবে? ক্রাশ খাওয়া মানুষের মনের উথালপাথাল অধিকার। ক্রাশ জ্ঞানকাণ্ড কিছুটা লুপ্ত করে দিয়ে পাগলামি করিয়ে নেয়। অবশ্য তা নিয়ে তো এখানে আর এগুনো যাবে না। এখন এডিটর মিথুন ঝিনাইদহের মেয়েকে বিয়ে করে সংসার করছে। আমরা রংপুর থেকে সেই ভরা বৃষ্টির দিনে ঢাকায় ফিরলাম। আমি শংকরে থাকাকালীনই একদিন মারা গেলেন সৈয়দ শামসুল হক। আঘাত পেলাম। হক ভাই সিনেমা বা টোটাল আর্টের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার দারুণ কিছু বোঝাপড়া ছিল। খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম হক ভাইয়ের সঙ্গে আর দেখা হবে না ভেবে। আর শংকর থেকে ফরাসগঞ্জ চলে আসার দুইদিন আগে এক কাণ্ড ঘটল আমার বাসায়। ঠিক হলো, পিকআপ ভ্যানে বাসার মামামাল বহন করা হবে শংকর থেকে ফরাসগঞ্জে। সেই বাবদ ধার্য করা ১৩ হাজার টাকা ছিল আমার বাসায়, ওয়ার্ড্রোবের ভেতর, আমি বাথরুমে ঢুকলে বুয়া সেটি চুরি করে নিল। এতে কী হলো? কী হলো বলব? বলি। যত সুললিত-কুসুমিত-সুষুমিত শব্দ দিয়েই বলি না কেন, যতই ভাষার শ্লীলতার মধ্যে থেকে বলি না কেন, প্রকৃত তাৎপর্য বোঝা যাবে জনভাষা হাজির করলে। জনভাষায় স্ল্যাং। সে তো পশ্চাৎদেশ নয়, পাছাও না, পুরান ঢাকায় বলে হোগা। হোগা মেরেছে। অর্থাৎ বুয়া আমার গুয়া মেরে গেল। তাহলে এত মালামাল ফরাসগঞ্জে নেব কী করে? সেই মুহূর্তে হাতে বা ব্যাংক একাউন্টে কিছুই অবশিষ্ট নেই আমার। এদিকে শংকর ছাড়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। গজেন’দাকে বললাম, ‘এখন?’

গজেন’দা বলল, ‘ও আমার দেকেই সন্দ হছল, অচেনা মেয়েছেলে তো বিশ্বাস করা যায় না। একন টাকা জুগাড় করো। পিকআপআলারে কিন্তু বলা হয়ে গেছে।’


rasel bidhan 8

‘নৃ’র পরিচালক প্রয়াত রাসেল আহমেদ


আমি অনলাইন পোর্টাল রাইজিং বিডির তাপস রায়কে বললাম, বুয়া কী করেছে আর আমি আগামীকাল ফরাসগঞ্জে কীভাবে শিফট করব, সেই কথা। আমাকে কিছু টাকা অ্যাডভান্স করে দেওয়া যায় কি না, যাতে আমার শংকর ছেড়ে ফরাসগঞ্জে যাওয়াটা স্মুথলি হয় আর কী! পরে গদ্য লিখে ধাপে ধাপে শোধ করে দেব। তাই হলো। আমি ও গজেন’দা আমার বাসার সমস্ত মালামাল নিয়ে ফরাসগঞ্জের তীরে ভিড়ে গেলাম। কাঁটা টিমের মিটিং শুরু হলো বুড়িগঙ্গার পাড়ে। মিটিংয়ে অপুদের বাড়ির দোতলার বৈঠকি ঘর বা ড্রইংরুম সারাদিন ব্যবহার করতাম আমরা। পুরো স্ক্রিপ্ট পাঠ হতো। সকাল দুপুর সন্ধ্যা হয়ে যেত। স্ক্রিপ্ট পাঠ করত দীপক সুমন, আমিনুর রহমান মুকুল। মাসুক হেলাল, নাহিদ মাসুদ, রাসেল আহমেদ, ইথেল, ড্যানী, লীনা, শুভ, দীপন’দা থাকত সেসব মিটিংয়ে। গজেন’দা রান্না করে, সেই রান্না খাই আমরা দুপুরে। দুপুর তো বিকেল হয়ে যায়। কথা হয়, ইথেল দেখবে কস্টিউম, তার সহকারী থাকবে লীনা। প্রপস দেখবে নাফিস বা বিন্দু। ড্যানী ক্যামেরা চালাবে। মাসুক ভাই থাকবেন আর্ট ডিরেক্টর। মুকুল বা সুমন অভিনেতা। অভিনয় করবে। এ সময় রাসেল রিয়েলি আমাকে বা কাঁটাকে ধরতে পারছিল খুব ভালো করে। তাই রাসেল আহমেদকে কাঁটার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে নিতে ভালো লাগল আমার। যদিও রাসেল ওর নির্মাণের প্রথম কাজ ‘নৃ’ শুটিং শেষ করে সম্পাদনাও শেষ করেছিল। যদিও রাসেল ঢাকা থেকে বরিশালে টিম নিয়ে গিয়ে কাজ করল বছর তিনেক সময় ব্যয় করে, টাকা খরচ করে, তবু ‘নৃ’ শেষ হয়নি। যদিও সম্পাদনা তো রাসেল জীবিত থাকতেই হয়ে গেছে। এখন বাকি কী? ডাবিং, সাউন্ড (ফোলি-অ্যাম্বিয়েন্স), ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং কালার কারেকশন। তারপর টাইটেল বসালেই তো শেষ। যদিও তা হয়নি। যদিও তা হলো না। যদিও খুব মনোযোগ দিয়ে ডিটেইলে শুট করে আনা ফুটেজ ‘নৃ’র। যদিও রাসেল আর নেই। রাসেল আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকের শিকার। রাসেল ও ওর বউ ইথেল, ড্যানী ও ওর বউ লীনা সবাই আদাবর-মনসুরাবাদ থেকে চলে গেল রামপুরার দিকে। রাসেলের নামে মামলা করল এক পাওনাদার মহিলা। টাকা পরিশোধের মামলা। রাসেলকে অভয় দিলাম। সেটা ডিল হচ্ছিল আদাবর থানায়। আজ ভাবলেও অবাক লাগে, আমি থাকি ফরাসগঞ্জ, সূত্রাপুর থানার পাশে, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি থেকেই এ জায়গা বেশ কিছুটা দূরে, শাহবাগকে কেন্দ্র করে দেখলে। সিনেমা কী জিনিস, কাঁটার জন্য রাসেল-ইথেল-ড্যানী-লীনা প্রথম দিকে আসত আদাবরের মনসুরাবাদ থেকে, পরে আসত রামপুরা থেকে। মাসুক হেলাল আসতেন মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে। নাহিদ মাসুদ ও দীপক সুমন আসত লালমাটিয়া থেকে। আমিনুর রহমান মুকুল আসত মগবাজার থেকে। শুভ আসত জিগাতলা থেকে। জ্যামের শহরে এত দূর দূরান্ত থেকে সবাই চলে আসত ফরাসগঞ্জে সারা দিনের জন্য। কী এক টান! শিল্পের টান। এবং শহীদুল জহিরের কাঁটার জন্য ভালোবাসা। এবং আমার জন্যও তাদের ভালোবাসা। তাদের জন্যও আমার ভালোবাসা থেকে যাবে সবসময়। তো আমাদের ঈয়ন, যে কিনা ‘নৃ’র নৃপতি, রাসেলের আরেক সহযোগী-কাণ্ডারি, ঈয়ন আমাকে ফোন করল রাত নটায়, আমি গেছি পল্টনে, তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা সন্দিপ বিশ্বাস ও লক্ষ্মীর বাসায় খাওয়াদাওয়া করতে। খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল সে রাতে। বৃষ্টি থামলেই আমি বের হবো, ফরাসগঞ্জে ফিরব—এ রকম সময় ফোন এলো শরীফ খিয়াম আহমেদ ঈয়নের। ঈয়ন বলল, ‘রাসেল ভাই মারা গেছে, একটু আগে। আমরা লাশ বরিশাল নিয়ে যাচ্ছি। আপনি কোথায়?’ খুব চোট পেলাম এই খবরে। একটি ছবির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর নির্মাতার ভাবনার খুব কাছাকাছি পৌঁছে অবস্থান নেয়। রাসেলের সঙ্গে আমার সে রকম বোঝাপড়া হচ্ছিল। ও এভাবে হঠাৎ মরে গেল? ‘নৃ’র কী হবে? ইথেলের কী হবে? আহ জীবন! তুমি এভাবে এমন করে ভেঙে দাও, কষ্ট হয়। কান্না আসে। রাসেল, আমি তোমার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারিনি। রাসেল আহমেদ অমৃতের পুত্র, ওর হঠাৎ মৃত্যু আমাকে আঘাত করল খুব। পুরো কাঁটা টিমটাই বিষণ্ণ হয়ে থাকল কদিন। অন্য দিকে, প্রায় নির্মাণ শেষ, এ অবস্থায় ‘নৃ’ ছবিটিও এতিম হয়ে গেল। সবাই জানে, এতিমের দেখার কেউ থাকে না, এতিম বাচ্চা সেভাবে সঠিক বিকশিত হতে পারে না। রাসেল চলে গেল, ‘নৃ’কে দেখার কেউ থাকল? রাসেলের মৃত্যুশোকের আবহে প্রথম কদিন মনে হলো থাকল, কিন্তু আদতে থাকল না। সবার জীবন ব্যস্ত হয়ে গেছে। জীবনকে জীবনই ডেকে নিয়ে যাচ্ছে জীবনের প্রয়োজনে। তাই ৬/৭ বছর আগে চলে গেছে রাসেল, ‘নৃ’ আর মুক্তি পায়নি। ‘নৃ’র অভিনেত্রী তামান্না গত বছর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে অন্য একটা ছবিতে অভিনয় করে, অথচ ওর প্রথম কাজ ‘নৃ’ অবমুক্ত হলো না। কারোর জীবনই থেমে নেই, থেমে থাকবেই বা কিসের ভরসায়? জানি না, এখন ইথেল কোথায়? নাজিম হিকমত বলেছিলেন, বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড়ো জোর একবছর। আর এখন তো একুশ শতক। তদুপরি ডিজিটাল প্রলোভন। অনলাইনে ডিল হচ্ছে ঘাসের ডগার শিশিরবিন্দু, সংবেদনশীলতা।

উত্তরা সাড়ে বারোর এক ঝকঝকে রেস্টুরেন্টে বসে প্রোডিউসারের সঙ্গে কথা হলো। তিনি হাজি মানুষ। কথাবার্তার মধ্যেই আমি যা টের পাওয়ার পাচ্ছি, পাশে বসা গজেন’দাকে চিমটি কাটছি। চিমটির অর্থ, এ আমারে কোথায় আনলে গজেন’দা?’ সত্যিকারের বাংলা সিনেমার প্রোডিউসার তিনি। বললেন, ‘আপনার সিনেমা আমি কিন্না নিমু। আপনি বানাইবেন, অর্ধেক টেকা আমি দিমু। বানানোর পর প্রথম তিন মাস আমি চালামু, তারপর আপনের সিনেমা আপনারে দিয়া দিমু। দুধ আর সর আমি খামু, খালি বাটিটা আপনার হাতে ধরাইয়া দিমু।

এরই মধ্যে গজেন’দা আমাকে উত্তরায় নিয়ে গেল একদিন, এফডিসি ঘরানার এক প্রোডিউসারের সঙ্গে মিট করানোর জন্য। সারাদিন অপেক্ষা করিয়ে সন্ধ্যায় তিনি এলেন। উত্তরা সাড়ে বারোর এক ঝকঝকে রেস্টুরেন্টে বসে প্রোডিউসারের সঙ্গে কথা হলো। তিনি হাজি মানুষ। কথাবার্তার মধ্যেই আমি যা টের পাওয়ার পাচ্ছি, পাশে বসা গজেন’দাকে চিমটি কাটছি। চিমটির অর্থ, এ আমারে কোথায় আনলে গজেন’দা?’ সত্যিকারের বাংলা সিনেমার প্রোডিউসার তিনি। বললেন, ‘আপনার সিনেমা আমি কিন্না নিমু। আপনি বানাইবেন, অর্ধেক টেকা আমি দিমু। বানানোর পর প্রথম তিন মাস আমি চালামু, তারপর আপনের সিনেমা আপনারে দিয়া দিমু। দুধ আর সর আমি খামু, খালি বাটিটা আপনার হাতে ধরাইয়া দিমু। আমরা ভাইবোনরা বাটি খালি কইরা মার হাতে ধরাইয়া দিতাম ছোটোবেলায়। এহন কন, কত টেকা লাগব আপনের?’

গজেন’দা বুঝতে পারছে আমার মানসিক অবস্থা, তাও কাঁটা হোক, হয়তো এই অভিপ্রায়ে উৎসাহী হলো হাজি সাহেবের কথায়। আগেই বলেছি, হাজি সাহেব বাংলা সিনেমার রিয়েল প্রোডিউসার। বললেন, ‘কারে লাগব আপনের? ছাকিব খানরে লাগব? আমার ঘরের ৯টা ছবি করাইছি ওরে দিয়া। ডিপজলরে লাগব? ওই যে, আমার গাড়ির মইধ্যে অখন বসা আছে। কথা কইবেন? এইখানে কথা কইবেন, নাকি কাকরাইলে আমার অফিসে বইসা কথা কইবেন?’

ফরাসগঞ্জে ফিরে আমি গজেন’দার ওপরে এক চোট রাগারাগি করলাম—’এ তুমি আমারে কনে নিয়ে গিছলে, গজেন’দা?’ ‘ও বাংলা সিনেমার প্রোডিউসাররা ওই রকমই হয়। তুমি তো জান না। কত কষ্ট করে আমি উনার শিডিউল পাইছি? আর এর জন্যি আমার কার ধত্তি হইছিল?’ পরের শনিবার পুনরায় দেখা হওয়ার কথা, সেই রিয়েল প্রোডিউসারের সঙ্গে। আমি শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফোন বন্ধ রাখলাম। এ নিয়ে গজেন’দার আফসোস। ‘তুমি পাইয়ে ছাড়ে দিলে!’ আর আমিও যা অভিজ্ঞতা পেলাম, কো-প্রোডিউসিংয়ে যাব না, অন্তত এই প্রোজেক্টে, সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। আমি নিজেই শতভাগ প্রোডিউসার থাকব, কাঁটার। যত কষ্টই হোক, সময় লাগলে লাগুক, দেড় কোটি টাকা আমিই যোগাড় করব। সরকারের সেখানে থাকবে মাত্র ৩৫ লাখ, যার ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আমি নিয়েছি শুধু। সেটা ছিল তিন ধাপের প্রথম কিস্তি। আর দুই কিস্তির টাকা পাওনা আছে। বাকি এক কোটি টাকা আমি নিজেই জোগাড় করব কাঁটার জন্য। নিশ্চয়ই আমার সেরকম কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী আছে ঢাকা শহরে, এরকম আস্থা জন্মাল নিজের মধ্যে। অতএব, কাঁটা আমিই প্রোডিউস করব, অন্য কারো কাছে আর যাব না। অনেক গেছি। শিক্ষা হইছে। অবশ্য এরকম পিরিয়ড বেইজড গল্প যখন বেছে নিয়েছি তখন বেশি কষ্ট হবে, তা তো মেনে নিয়েই কাজ করতে উৎসাহী হয়েছি আমি, তাই না? আপনি বলুন তো, এদেশের ইতিহাস বয়ে চলেছে কতদিন, আর বাংলাদেশে আপনি কয়টা পিরিওডিক্যাল ছবি নির্মিত হতে দেখেছেন বা কয়টা পিরিওডিক্যাল ছবি দেখেছেন আপনার জীবনে? গরিবদের আবার পিরিয়ড কী? জমির দলিল ছাড়া আর কিছুই কি সংগ্রহে থাকে গরিবদের? বাংলাদেশ গরিবদের দেশ। কিন্তু শহীদুল জহিরের কাঁটা গল্পের ছবির বাজেট দেড় কোটি তো ছাড়াবেই। এতে করে, আমাকে কী আর গরিব প্রোডিউসার বলা যাবে?


vuter goli 11

ভূতের গলিতে…


ফরাসগঞ্জে থাকি। এত বছর পায়ের নিচে দাবড়ে বেড়ানো শাহবাগকে মনে হয় ভুলেই গেছি। একদিন ডাইলপট্টিতে গরম পুরি খাই আমি ও শিবু কুমার শীল। একদিন কচি খন্দকারকে দেখি কোনো টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের জন্য ফরাসগঞ্জ এসেছে। কচি ভাইকে দেখে মনে হলো, নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে অনেক দিন পরে দেখা হলো ফরাসগঞ্জে। কচি ভাইকে দেখাতে নিয়ে গেলাম আমার আস্তানা। একদিন আস্তানায় এলো নির্মাতা সন্দিপ বিশ্বাস। একদিন এলো নির্মাতা প্রশান্ত অধিকারী। ওরা একদিন করে থেকে গেল আস্তানায়। এরই মধ্যে গজেন’দা অস্থির হয়ে ওঠে— ‘শুটিং করবা কবে? আমি তো আর পারিনে।’ কাঁটাতে গজেন’দার একটি চরিত্রে অভিনয় আছে। গজেন’দা হঠাৎ হঠাৎ কোথায় যেন চলে যায় আর ফেরে দু-চারদিন পর। সম্পর্কে একটুখানি টানাটানি যাচ্ছে। আমি নতুন আরেকজন কাজের সহকারী নিয়োগ দিলাম—মোহাম্মদ সেলিমকে। সেলিমের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। আমার সঙ্গে ওর কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। আমার কাছে সেলিমের অধিকার খাটানোর আছে। সেলিম আর আমি একদিন গেলাম অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের বাসায়। ফরাসগঞ্জে আমার বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্ব এই প্রবীণ অভিনেতার বাসা। এটিএম ভাইয়ের সঙ্গে অনেক গল্প হলো। প্রচুর বই তাঁর বসার ঘরে। কাঁটা নিয়ে অনেক গল্প হলো। খুব উৎসাহী হলেন তিনি। কাঁটাতে যে চরিত্রের নাম বাড়িওয়ালা আবদুল আজিজ ব্যাপারী, সেই চরিত্রে তাঁকে কিছুটা ভেবেছিলাম তখন। একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছিলেন এটিএম ভাই, আমাকেও দিচ্ছিলেন। আলোচনায় বাংলাদেশ, আহমদ ছফা ইত্যাদি উঠে এলো। এটিএম ভাই যে কবিতা লিখতেন, জানা ছিল না আমার। তাঁর কবিতা রণেশ দাশগুপ্ত সম্পাদিত সংবাদ সাময়িকীর মতো তখনকার তুলনামূলক এলিট কাগজে ছাপা হতো। পরে অভিনয়ের চাপেই আর কবিতায় সময় দিতে পারেননি, বললেন। বললেন, ‘তুমিই টোকন ঠাকুর, তোমার কবিতা তো পত্রিকায় পড়ি।’ সেলিম আমাদের ছবি তুলছিল অনেক। এটিএম ভাই জানতে চান, ‘তা আজিজ ব্যাপারীর বাড়ি পাইছ?’

বললাম, ‘না, এখনো পাইনি। খুজতিছি।’

এটিএম শামসুজ্জামান ভাই কাঁটার গল্প শুনে তখন এতটাই উত্তেজিত, বললেন, ‘আছে। কালীচরণ সাহা লেনে আছে এরকম বাড়ি। মিলব্যারাকের পাশে। সেই বাড়ি আমার এক বন্ধুর, হিন্দু বন্ধু, ভালো মানুষ। যাবা, চলো দেখাইয়ে আনি তোমারে। যাবা? মাটির উঠোন আছে ওগো বাইত্তে।’

কিন্তু সেদিন আর কালীচরণ সাহা লেনে যাওয়া আমাদের যাওয়া হলো না। পরদিন আমি সিলেট গেলাম, বেঙ্গল সাহিত্য উৎসবে। অনেক বড়ো আয়োজন। সিলেটে অনেক আনন্দ হলো। ঢাকা-কোলকাতার দুই শ সৃষ্টিশীল মানুষের সম্মিলন। আমার বন্ধু প্রশান্ত মৃধার সঙ্গে দেখা হলো। কাঁটা সংক্রান্ত আলোচনা চলল একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বসে। প্রশান্ত কাঁটা পটভূমির একটা তথ্য আমাকে দিন তারিখসহ মনে করিয়ে দিল। খুব দরকার ছিল সেই মনে করানোর। ঢাকায়, ফরাসগঞ্জে ফিরে চিত্রনাট্য নিয়ে বসে গেলাম। এমন একটি তথ্য দিল কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা, সেই অনুযায়ী চিত্রনাট্যে পরিমার্জনা করতে লাগল আমার প্রায় পনেরো দিন। হাসান শরীফ মিথুন সেই কারেকশন ল্যাপটপে রিকম্পোজ করল বা করে যাচ্ছিল তখনকার দিনে। সিলেটে কবি আসাদ চৌধুরী ও কবি রুবী রহমানকে বেঙ্গল সাহিত্য উৎসবের অবকাশে আমি জিজ্ঞাসা করেছি, ‘ঢাকায় ৬৪ সালে যে হিন্দু-মুসলমানের অপ্রীতিকর উত্তেজনা বা লোকে যাকে বলে দাঙ্গা, তা শুরু হইছিল কেন? কীভাবে? ইন্ডিয়ার কোন ঘটনার জন্য ঢাকা বা বাংলাদেশেও এই উত্তেজনা এভাবে ছড়িয়ে পড়ে? আর কেনই বা ৬৪ সালের সেই ঘটনার আদ্যোপান্ত খুব বেশি জানা যায় না? প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায় না। বইপত্র প্রায় নেই। পাঠক, আপনি বা আপনারা কি জানেন এর নেপথ্য কাহিনি? আমিও জানার চেষ্টা করেছি। কাশ্মীরের একটি চুরিই কারণ ছিল সেই দাঙ্গার?

আমরা কাঁটাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারি কি না, এরকম একটা সন্ধিতে পৌঁছুতে ফরাসগঞ্জে এলেন নায়লা আজাদ নূপুর। গুণী মানুষ। অভিনেত্রী, কোরিওগ্রাফার। প্রোডাকশন ডিজাইন নিয়েও কথা হচ্ছিল আমাদের। একদা সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর ‘ঘুড্ডি’র সেই চিত্তাকর্ষক নূপুর আপা। আমার বাসা থেকে কয়েকবাড়ি পরে, একটা জায়গা দেখালেন তিনি, বললেন, ‘ঢাকায় প্রথম কোকের দোকান ছিল এখানে। ৬৩ সালে। তখন আমরা অনেক ছোটো। আমাদের বাড়িটাও ছিল ফরাসগঞ্জেই।’

‘তার মানে আপনি ফরাসগঞ্জে বড়ো হয়েছেন?’

‘কিছুদিন’।

আরও অনেকেই এসেছে, ফরাসগঞ্জে আমি কোথায় অবস্থান করছি, আস্তানা কোথায় আমার, কী করছি আমি— এসব দেখতে। অপুদের বাড়ির ভেতরের যে দিকটায় আমি থাকতাম, দেখে তারা বিশ্বাস করতে পারত না। অবাক হতো। অবাক হওয়ার কারণ, ‘এখানে মানুষ থাকে কী করে? এত ভাঙাচোরা একটা পুরনো বাড়ি, যেভাবে চিপা দিয়ে ঘাড় নিচু করে প্রবেশ করতে হয়! মাঝেমধ্যেই আমাকে ফোন করতেন কবি, অনুবাদক মনজুরে মওলা। তিনি এরশাদ সরকারের সময় সচিব ছিলেন। বাংলা একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম সৃষ্টিশীল মহাপরিচালক আমি মনে করি কবি মনজুরে মওলাই। রবীন্দ্রনাথ ও শেকস্‌পিয়র বিষয়ে মওলা ভাইয়ের মতো পণ্ডিত মানুষ আমি সচরাচর দেখিনি। তাঁর বাসার নাম ‘অম্বর’। আজিমপুর। বেশ আগে থেকেই অবসর জীবনে আছেন। বাসায় হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। বয়স আশি পেরিয়ে যাওয়া কবি মনজুরে মওলা ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডায় বসলে কয়েক ঘণ্টা কীভাবে পার হয়ে যায়, ঠাহর থাকে না। একদিন ফরাসগঞ্জ থেকে আজিমপুর গেলাম। আড্ডা শুরু হয়। মওলা ভাই হুইল চেয়ার থেকে দাঁড়াতে চাইলে তাঁর কাজের লোক এসে তাঁকে তুলে ধরে। শারীরিক এই পরিস্থিতিতেও মনজুরে মওলা অক্লান্ত, বলেন, ‘তা কীসের সিনেমা বানাচ্ছ তুমি? কবিতা কি কম লিখছ আজকাল?’

বললাম, ‘গল্পের নাম কাঁটা।’ শহীদুল জহিরের লেখা।’

মওলা ভাই বলেন, ‘হ্যাঁ, আজকাল তোমাদের মতো ছেলেরা ওর নাম নিচ্ছে খুব।’

বলি, ‘এত ভালো গদ্য, এত সুস্বাদু…এত ম্যাজিক।’

মওলা ভাই বলেন, ‘শোনো, অনেক আগে আমার অফিসে একদিন এক ছোকরা এলো। বলল, স্যার, আমি আপনার মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে চাই, আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই। কাজ শিখতে চাই। আমি বললাম, ভালো কথা। তা তুমি এখন আছ কোথায়? তখন সে বলল অন্য একটি মিনিস্ট্রির কথা। তারপর আমার মিনিস্ট্রিতে ওকে নিয়ে এলাম। জানলাম, সেই ছোকরার নাম শহীদুল হক, লেখালেখি করে।’


monjure mowla bidhan

কবি, অনুবাদক মনজুরে মওলা ও টোকন ঠাকুর


শহীদুল হকই শহীদুল জহির। শহীদুল জহিরই আবদুস সাত্তার। আব্দুস সাত্তারই আব্দুল ওয়াহিদ। আব্দুল ওয়াহিদই আব্দুল করিম কিংবা আব্দুল করিমই আবু ইব্রাহীম। কিংবা শহীদুল জহির ৩৬ নম্বর ভূতের গলির বাড়ির বাড়িওয়ালা আব্দুল আজিজ ব্যাপারী। যিনি সিঙ্গেল তবে তার একজন কাজের বুয়া আছে, ছুটা বুয়া নিজামের মা; আর তাঁর বাড়িতে সুবোধ-স্বপ্না ভাড়াটিয়া হয়ে থাকে। তখন মওলা ভাই বলেন, ‘তা সিনেমায় আমাকে অভিনয়ের সুযোগ দাও, আমি তো এখন সারাদিনই হুইল চেয়ারে থাকি। নিজে থেকে হাঁটাচলা করতে পারি না।’

বললাম, ‘আপনি কি ক্যারেকটার করবেন মওলা ভাই? পঙ্গু বা অসহায় দিন মুজুর?’

এবার মনজুরে মওলা বলেন, ‘তোমার সিনেমায় টারজান চরিত্র নেই? আমাকে টারজান করতে দাও, এ-গাছ থেকে ও-গাছে দোল খাব। জঙ্গলে দৌড়ে বেড়াব। আছে এরকম কোনো চরিত্র কাঁটাতে?’ বলেই, মওলা ভাই হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরিয়ে দেন। হুইলে বসে নিজেকে নিয়ে মজা করেন তিনি। অনেক কথা হতো আমাদের, কিন্তু করোনার থাবায় তিনি চলে গেলেন। দুঃখ, কাঁটা মওলা ভাই দেখতে পারলেন না। আহ, নিজের হুইল চেয়ারে থাকাকে তিনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে কথা বলতেন। বললাম, ‘খালি মুখে কি আড্ডা হয় নাকি?’ মওলা ভাই বললেন, ‘আনিয়ে রেখেছি। তুষারও আসবে। তোমরা খেয়ো, আমি দেখব।’ সেদিন কবি তুষার দাশ এলেন।

নাফিস বা বিন্দু একজন অভিনেতা, কিন্তু ফরাসগঞ্জে আমি আসার পরপরই বিন্দু আমাকে বিশেষভাবে সাপোর্ট দেয়। সেই বর্ষার সময়ে বিন্দু জুরাইন থেকে ফরাশগঞ্জে চলে আসত। পরে গিয়ে ওর বউকে নিয়ে নিজেও চলে এলো অপুদের বাড়িতে, কাঁটার কাজের জন্য। দোতলার একটি রুমে ভাড়াটিয়া হয়ে উঠল ওরা। সে এক অন্যরকম সময়। পরে ওদের বাচ্চা হলো, সেই বাচ্চার নাম আমি রাখি সেটা বিন্দুর বউ খুব চেয়েছে কিন্তু আমি কাঁটা নিয়ে এতই মগ্ন থেকেছি, কথা দিয়েও কথা রাখতে পারিনি। বাচ্চার নাম রাখতে পারিনি। এক ঈদের দিন, কোথাও কোনো খাবারের দোকান খোলা নেই, বাড্ডা থেকে আসার সময় মিথুন আমার জন্য খাবার নিয়ে এলো। একদিন সূত্রাপুর থেকে মালঞ্চ বাসে করে শাহবাগ যাচ্ছি। বাসে, পেছনের এক সিট থেকে আমাকে নাম ধরে ডাকল কেউ। তাকিয়ে দেখি এক তরুণ। বলল, ‘আমি আপনাকে চিনি টোকন’দা। আপনি এদিকে কোথায়?’

আমি কাঁটার কথা বললাম। অপুদের বাড়িতে উঠেছি, সে কথা বললাম। যাকে বললাম বা যে আমাকে ডাক দিয়েছিল, সে সৌরভ কর্মকার। প্রোডাকশনের নির্মাণের লোক। সৌরভ সেই থেকে কাঁটায় যুক্ত হয়ে গেল। শুটিং পর্বে সৌরভ কাঁটাতে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়। সৌরভের মা গেণ্ডারিয়া উদীচীর সংগঠক, কবি ও অভিনেত্রী শিখা কর্মকার। তিনিও কাঁটাতে অভিনয় করেছেন। অনেক পুরনো দিনের প্রপস দিয়েছেন, কস্টিউম দিয়েছেন, সেগুলো এমনভাবে কার্টুন করে রাখা হয়েছে যে, এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি। হবে। যার যা আছে, যার কাছে যা ঋণ আমার, ফিরে যাবে তার তার কাছে। এত বড়ো একটা ডিপ লেন্থের প্রোডাকশন কাঁটা, সামলে ওঠাও চাট্টিখানি কথা নয়। পাঁচ শর অধিক পাত্রপাত্রী কাঁটাতে। তিনটি সময় ছবিতে, এক, ১৯৮৯-৯০ সাল। দুই, ১৯৭১ সাল। এবং তিন, ১৯৬৪ সাল। ছবিটি দর্শক দেখবে এবছর, ২০২৩ সালে।


Subodh

ঢাকার দেয়ালে গ্রাফিত্তিচিত্রে সুবোধ; সুবোধচন্দ্র দাস


২০১৬ বা ১৭ সালের দিকে ঢাকা শহরের দেয়ালে দেয়ালে একটি চরিত্র উপস্থিত হলো গ্রাফিত্তিচিত্রের মাধ্যমে। চরিত্রের নাম সুবোধ। ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, সময় এখন পক্ষে না’ এরকম লেখা দেখা যাচ্ছিল সেই গ্রাফিত্তিচিত্রে। সুবোধকে নিয়ে তখন বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় কলাম লেখা শুরু হলো। টেলিভিশনে টক শো হচ্ছিল খুব। চায়ের আড্ডায় ঢুকে পড়ল সুবোধ। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে কোলকাতার দেয়ালেও সুবোধকে দেখা গেল। কে এই সুবোধ? কে এই সুবোধ গ্রাফিত্তির নেপথ্য শিল্পী? নানারকম কানাঘুষো ছিল তখনো, এখনো আছে। সত্যিই তো, কে সুবোধ? সুবোধ কি সুবোধচন্দ্র দাস? নদীপাড়ের গ্রাম থেকে আসা সুবোধের বউয়ের নাম কি স্বপ্নারানী দাস? সুবোধের একটা ছোটো ভাই আছে না? ওর নাম পরাণ। সুবোধের ছোটো ভাইয়ের নাম সবসময় পরাণই হয়। আমরা তাই দেখেছি। ভূতের গলির মহল্লাবাসিরা তাই জানে। কিন্তু সুবোধের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী? আচ্ছা, কাঁটা গল্পের অন্যতম চরিত্র সুবোধ, একজন নয়, একাধিক। একই নামে একাধিক ব্যক্তি থাকে নাকি? থাকে। কাঁটাতে আছে। তা থাকল যদি, এই গ্রাফিত্তির সম্পর্কে আমার যোগাযোগ কী? পরিচিতদের ভেতর থেকে কেউ কেউ আমাকে বলেছে, ‘তোমাকে রিম্যান্ডে নিলেই সব সত্য বের হয়ে আসবে।’ তবে হ্যাঁ, আমি তো এইটুকু বলতেই পারি, দেয়ালে গ্রাফিত্তির সুবোধকে আমরা আঁকানো সুবোধ হিসেবে দেখেছি। চিনেছি। সুবোধ—একটা বক্তব্য। ইউটিউবের ভাষায় বললে, ‘সুবোধ একটা কনটেন্ট। কিন্তু কাঁটাতে সুবোধ বা একাধিক সুবোধ কেন, তা তো ছবি দেখেই বুঝতে হবে, তাই না? কাঁটা সিনেমায় যখন আপনি দেখবেন সুবোধকে, সুবোধও আপনাকে দেখে নেবে। কেন না, আপনি যেমন সিনেমার দর্শক, একই সঙ্গে আপনিও ভূতের গলির একজন বাসিন্দা বটে!


আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ১ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ২য় পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৩য় পর্ব


শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১ ডিসেম্বর, ১৯৭২, ঝিনাইদহ। বেড়ে ওঠা, বসবাস:  ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা ও ঢাকা। একাডেমিক (সর্বশেষ) পড়ালেখা: চারুকলা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রন্থ প্রকাশনা: কবিতার বই কয়েকটি, গদ্যের বই কয়েকটি। সম্পাদিত গ্রন্থ: ২টি। ছবি নির্মাণ: ‘ব্ল্যাকআউট’ (২০০৬) আনরিলিজড। ‘রাজপুত্তুর’ (২০১৪), ‘কাঁটা’ (২০২৩) । পেশা: আর্ট-কালচার চষে বেড়ানো।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।