শুক্রবার, অক্টোবর ১৮

দুঃখতন্ত্র লেখকের উত্তরাধিকার : সুমন শাম্‌স

0

মানুষের জীবনের ভেতরেই যেন আরও এক অনন্ত সুরভিত রক্তরক্ষণ—কবির জীবন। দেশে দেশে, সময়ের বিচিত্র আবর্তে সভ্যতার চেনা অচেনা ঠিকানায় কবি বেড়ে ওঠে; রেখে যায় জীবনের অনন্য দর্শন। প্রেমে, বিদ্রোহে, বিচিত্র জিজ্ঞাসায় পৃথিবীতে কখনো পাথেয়, কখনো নমুনা হয়ে থেকে যায় কবির জীবন। তাই তো যাঁরা কবি, দুর্লঙ্ঘ একটা নিয়তি তাঁদের থাকে। যাকে অতিক্রম করা তো যায়-ই না, বরং সে নিয়তিই কবিকে অতিক্রম করতে করতে এক দুর্বহ অস্বস্তিতে পরিণত করে তোলে কবির জীবন। সে নিয়তি এক অনতিক্রম্য দুঃখবিলাস। যে দুঃখের কারণে গৌতমবুদ্ধ রাজ্যপাট ত্যাগ করে সন্ন্যাসকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন, সেই দুঃখই কবির আজীবনের তন্ত্র। কবির একার সন্ন্যাস। তবে কবির এ সন্ন্যাস না পাওয়ার সন্ন্যাস, ত্যাগের সন্ন্যাস। সকল মোহ আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্তি দেয় এ ত্যাগ, সমুদয় কাজের ফলাফল ভাবনা থেকে নিষ্কৃতি দেয় এ ত্যাগ। বৈরাগ্যতায় নয়; নিত্যসন্ন্যাসী এভাবেই কবিরা হয়। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় উল্লেখ আছে, ‘সর্বকর্মফলত্যাগং প্রাহুস্ত্যাগং বিচক্ষণাঃ।’ অর্থাৎ, সকল কর্মের ফল ত্যাগকে সন্ন্যাস বলে। নিত্যসন্ন্যাসী প্রসঙ্গেও গীতায় বলা হয়েছে, ‘জ্ঞেয় স নিত্যসন্ন্যাসী যো ন দ্বেষ্টি ন কাঙ্ক্ষতি।’ অর্থ হলো, যিনি কিছু আকাঙ্ক্ষা করেন না, রাগ-দ্বেষও করেন না, তাকে নিত্যসন্ন্যাসী জেনো। কবিগুরুও গীতবিতানে বললেন, ‘অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলো সেই তো তোমার আলো!/ সকল দ্বন্দ্ববিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো সেই তো তোমার ভালো।’

‘কবির বেদনাবিদ্ধ হৃদয়ই কবিতার জন্মভূমি’ বলে কবি তার অন্তর্ভুবনের চৈতন্য দ্বারা অবিরল দগ্ধ হন। এটি একান্ত তার নিজস্ব দহন। কবি সবার দুঃখের ভার নিজের কাঁধে নিয়ে বয়ে বেড়ান। বলবেন হয়তো কে তাকে দিলো এ দায়িত্ব? না কেউ দেয়নি। জন্মগত নিয়তিকে মেনে কবি নিজেই তুলে নেন এ দায়। যেমন মহাভারতের যুধিষ্ঠির চেয়েছিলেন নরকবাসীর আর্তি দেখে নরকবাস। অথচ কাঁধের দায় ঝেড়ে ফেলে আর সকলেই দুঃখ থেকে পালাতে চায়। চায় নিরন্তর সুখী হতে। শাস্ত্রও বলে সে কথাই, ‘ভারাদ্যপগমে সুখী সংবৃতোহহমিতিবৎ, দুঃখাভাবেন সুখিত্ব প্রত্যয়াৎ।’ কিন্তু ক্ষত-বিক্ষত অর্ফিয়াসের শরীর থেকে জন্ম নেওয়া জগতের সমুদয় দুঃখই যেন কবির উত্তরাধিকার। কবি তার আপন দুঃখ-নরকে সঞ্চরণশীল থাকেন প্রতিনিয়ত। সমষ্টির ভিড়ে থেকে সমষ্টির দায় মেনেই বাস করেন একাকিত্বে, নিঃসঙ্গতায়। এ কারণেই কবির থাকে একাকিত্বের অভিমান, ভালোবাসাহীন সময়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিরূপতাকে সহ্য করতে না পারার অভিমান। সে কারণেই এরা হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে! এইভাবে তারা কাটিয়ে দেয় একটা জীবন। এই জীবনের মধ্যে রয়েছে প্রকৃতির প্রাণ, অনন্ত জৌলুস। মাস্টার একহার্টের এই কথাটিই কবির জীবনসত্য, ‘সবচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণী যে তোমাকে বয়ে নিয়ে যাবে পূর্ণতার পানে— সে হচ্ছে দুঃখ।’ বুদ্ধদেব বসু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে দুঃখের অনুভূতি জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন, যা একলার, যা নির্জনের, সেটাই অসামান্য। সেটা যত তুচ্ছ কাল্পনিক হোক, বিশুদ্ধ কবিতার জন্ম হয় তা থেকেই।’

আলাওলের এই অভিজ্ঞানের ব্যাখ্যা হতে পারে রবীন্দ্রনাথের হাতে, ‘অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন, তার বক্ষে বেদনা অপার/ অগ্নিসম দেবতার দান/ ঊর্ধ্বে শিখা জ্বলে চিত্তে/ অহোরাত্রি দগ্ধ করে প্রাণ।’ কবির ব্যাপারে এমন মহোত্তম উচ্চারণের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয় কবিরা মূলতই অসাধারণ। অস্বাভাবিক তাহলে কোন অর্থে? পরিপ্রেক্ষিত আসলে প্রকৃত অর্থকে নির্মাণ করে। অস্বাভাবিকতা যেমন কোনো সময় বিকৃতিকে বোঝায়, আবার কোনো কোনো সময় মূল অবস্থার ব্যতিক্রমকে ইঙ্গিত করে। কবির অস্বাভাবিকতা তাহলে কোনটি? কেউ কেউ কৌতুক করে কবিকে পাগলও বলে থাকেন।

তাহলে কবিরা কি ‘অসাধারণ’ বা ‘অস্বাভাবিক’ মানুষ! কবিদের জীবন-যাপন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতুহলের অন্ত নেই। মধ্যযুগের কবি আলাওলের কবিতার একটি চরণ এ মুহূর্তে মনে পড়ে গেল, ‘কদাচিৎ নহে কবি সাধারণ মনুষ্য/ শাস্ত্রে কহে কবিগণ ঈশ্বরের শিষ্য।’ কবিদের সম্পর্কে তাঁর এ চরণদ্বয়ের সারবত্তা সৃজন করেছে আরেক সত্য। আলাওলের এই অভিজ্ঞানের ব্যাখ্যা হতে পারে রবীন্দ্রনাথের হাতে, ‘অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন, তার বক্ষে বেদনা অপার/ অগ্নিসম দেবতার দান/ ঊর্ধ্বে শিখা জ্বলে চিত্তে/ অহোরাত্রি দগ্ধ করে প্রাণ।’ কবির ব্যাপারে এমন মহোত্তম উচ্চারণের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয় কবিরা মূলতই অসাধারণ। অস্বাভাবিক তাহলে কোন অর্থে? পরিপ্রেক্ষিত আসলে প্রকৃত অর্থকে নির্মাণ করে। অস্বাভাবিকতা যেমন কোনো সময় বিকৃতিকে বোঝায়, আবার কোনো কোনো সময় মূল অবস্থার ব্যতিক্রমকে ইঙ্গিত করে। কবির অস্বাভাবিকতা তাহলে কোনটি? কেউ কেউ কৌতুক করে কবিকে পাগলও বলে থাকেন। বস্তুত, এ পাগলামি চিন্তাশক্তির লোপ না। এ পাগলামি সৃষ্টির, অজর নির্মাণের! সৃজনের মুহূর্তে সব কবিই অস্বাভাবিক, উন্মাদের শামিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর একটি কবিতায় লিখেছেন, ‘যে জন শুনেছে সে অনাদি ধ্বনি/ ভাসায়ে দিয়েছে হৃদয়-তরণি/ জানে না আপনা, জানে না ধরণী সংসার কোলাহল;/ সে জন পাগল, পরান বিকল/ ভবকুল হতে ছিঁড়িয়া শিকল/ ক্যামনে আসিছে ছাড়িয়া/ সকল ঠেকেছে চরণে তব।’ এই ‘তব’ মানে কবিতা বা কবিতার দেবী, যার আকর্ষণ থেকে মুক্তির উপায় নেই। ‘আজন্ম সাধনধন সুন্দরী আমার’ বলে এক কুহকিনীর প্রেমে আত্মাহুতি দিতে দিতেই একদিন ভবলীলা সাঙ্গ করে চলে যান উন্মাদ কবি। কবি হয়তো বিলীন হন; কিন্তু তার নির্মিত শিল্পপথ তাকে বাঁচিয়ে রাখে। কারণ আর দশজনের পথে না হেঁটে কবি হেঁটে যান অচেনা নির্জন পথে। সেই পথ তাকে দেয় অমরত্ব। তবে সে শিল্পপথ তৈরিতে কবিকে যে পরিমাণ রক্তনদী পাড়ি দিতে হয় তাতে কবির উচ্চারণ হয় এমনই, ‘কবির জীবন নয় পুষ্প ছাওয়া পথ, পেরেকের মতো কাঁটা সর্বত্র ছড়ানো/ এমনকি অগ্নিময় পথ অতিক্রম করে তাকে বহুদূর যেতে হয়/ বিপদের সঙ্গে লড়ে।’ তাই পায়ে অনুক্ষণ রক্ত ঝরিয়ে কাঁটা বিছানো পথে হেঁটে যাওয়াই কবির নিয়তি।

সে কারণেই বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে যত প্রকার সেলিব্রেটি রয়েছে, তার মধ্যে সবচাইতে দাপুটে হলেন একজন লেখক। গুপ্ত সাম্রারাজ্যের মহারাজা সমুদ্রগুপ্তের নাম ম্লান হয়ে যায়, কিন্তু মহাকবি কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কাব্য এখনো প্রবল প্রতিপত্তির দ্যুতি ছড়িয়ে যায়। বাংলার ইতিহাসে কত ডাকসাইটে রাজা-বাদশা-সুলতান কালের ধুলায় হারিয়ে গেছেন, কিন্তু বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ যুগে যুগে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে। ১৫৭০ সালে বাংলাদেশের সুলতান কে ছিলেন তা আমরা অনেকেই জানি না; কিন্তু একই সময়ে লেখা ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’র দস্যু কেনারামের পালা, মলুয়া, মহুয়া, চন্দ্রাবতী, দ্বিজ কানাই, নয়ান চাঁদ, কাজলরেখার নাম আমরা কেন ভুলতে পারি না? কারণ পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিকারের কিংবদন্তী যদি কেউ হয়ে থাকেন, তিনি হচ্ছেন একজন লেখক! মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজ্যপাট হারিয়ে গেছে, কিন্তু মহাকবি বাল্মীকির ‘রামায়ণ’ কখনো হারাবে না! সম্রাট আলেকজান্ডারের মাথার মুকুট এখন ধুলায় গড়ায়। কিন্তু অন্ধকবি হোমারের লেখা ‘ইলিয়ড’ বা ‘ওডেসি’ মহাকাব্য প্রতিটি পাঠকের মাথায় স্বর্ণমুকুটের মতো দ্যুতি ছড়ায়। তাই তো বলা হয়:

 

রাজ্যপাট ভেঙে যায়, খুন হয়
যাবতীয় বিদ্যাধর—
যদি লিখতে পারো
একটি অমর কবিতা
থেকে যাবে যাবচ্চন্দ্র দিবাকর!

 

সাহিত্য হলো অধ্যবসায় ও চর্চার বিষয়। ‘ডায়ালগস অব প্লেটো’তে সক্রেটিস পঠন-পাঠন ও অধ্যবসায়হীন কবিদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। কবিকে আসলে ওয়াকিবহাল থাকতে হয় নিজ সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্য, বিশ্বরাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতিসহ দর্শন, বিজ্ঞান সব বিষয়ে। কবি কেবল ভাবনার ঘোরেই বসবাস করেন না, তাকে পঠন-পাঠনসহ ভাবনার খোরাক জোগানোর জন্য সময় দিতে হয় বিস্তর। এক্ষেত্রে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হওয়াটা অসম্ভব নয়। কারণ, কাব্যানুশাসন’র টীকা লিখতে গিয়ে আলঙ্কারিক হেমচন্দ্র বলেছেন, ‘নাস্ত্য চৌরঃ কবিজন/ নাস্ত্য চৌরঃ বণিকজন।’ অর্থাৎ, বড়োবিদ্যাটি (চুরিবিদ্যা) বিলক্ষণ রপ্ত আছে স্যাকরার এবং কবিমাত্রেরই। আহমদ ছফা যেমনটা বলেন, ‘খনির লোহাকে ইস্পাত করতে হলে কিনা লোহার আকরের সঙ্গে পাথরের কয়লার গুঁড়ো মিশিয়ে বারবার গলিয়ে খাদসহ করতে হয়। তারপরই ইস্পাত তৈরি হয়। ইস্পাত বিশুদ্ধ লোহার চেয়ে অনেক দীর্ঘস্থায়ী, টেকসই এবং শক্ত। বিশুদ্ধ কবিতার মধ্যে এই ইস্পাতের কিছু গুণ অবশ্যই রয়েছে।… কবির একক ভাবনার সঙ্গে জাতি কিংবা বৈশ্বিক ভাবনার সংক্রমণ না ঘটলে তার আলাদা পরিচয় চিহ্ন ফুটে ওঠে না, ওঠা সম্ভব নয়।’ জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনেও তেমনটাই বলেছেন, ‘যারা কবির রচনাতে নির্ভেজাল অরিজিনালিটি খোঁজে তারা চিবাক মাকড়ের জাল, কারণ একমাত্র মাকড়ই তার জালটি তৈরি করে আপন পেটের মাল দিয়ে, ষোলআনা অরিজিনাল; আমি কিন্তু খেতে ভালোবাসি মধু, যদিও বেশ ভালোভাবেই জানি মধুভাণ্ডের প্রতিটি ফোঁটা ফুলের কাছ থেকে চোরাই করা মাল।’ সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে বীজ সংগ্রহ না করলে এখন আর কাব্যের কল্পতরু জন্মায় না—এ কথা সুধীন্দ্রনাথ দত্তের। এজন্য ত্রিশোত্তর কালের কবিরা বিশ্বসাহিত্যের তটভূমে বিচরণ করে কাব্যের বীজ আমদানি করেছিলেন। বুদ্ধদেব বসু আমদানি করেছিলেন মরিস, প্রি-র‌্যাফেলাইট কবিকুল থেকে বোদলেয়ার পর্যন্ত কবিদের কবিতার ভাবশৈলী; জীবনানন্দ দাশের বিচরণ ছিল ইয়েটস, এলিয়ট, কিটস, হুইটম্যান প্রমুখের কবিতায়; সুধীন্দ্রনাথ দত্ত প্রভাবিত হয়েছেন মালার্মে আর ভ্যালেরি দ্বারা; অমিয় চক্রবর্তী আচ্ছন্ন ছিলেন হপকিনস ও ওয়ালাস স্টিভেনস-এ। বিষ্ণুদে আবিষ্ট ছিলেন আরাগঁ, এলুয়ার, লোরকা, নেরুদা প্রমুখ সমগোত্রীয় কবিদের দ্বারা। সামগ্রিকভাবে তাঁদের ওপর ইউরাপীয় সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, চিত্রকলা প্রভৃতির প্রভাব তো ছিলই।  সুতরাং বিশদ পাঠে ও চর্চার ভেতর দিয়ে বিশ্বস্ত চৌহদ্দিতে কবিকে দাঁড়াতেই হয় এবং কবিতার মৌল উপাদানে সেই অভিজ্ঞতার সত্যাসত্য লেগে না থাকলে কবিতা বড়ো ঠুনকো হয়ে যায়। জীবনের সত্য-মিথ্যা-সংশয় এসবকিছু যখন কবিতায় সমসত্ত্বভাবে মানিয়ে যায়, তখনই কবিতার দিগন্তে সূর্য ওঠে। একারণেই বলা হয়ে থাকে, কবি অনুপ্রাণিত হলে তবেই সার্থক কবিতার সৃষ্টি হতে পারে। Poetry and the Primitive প্রবন্ধে কবি ও কবিতা বিষয়ে Gary Snyder লিখেছেন :

Poetry must sing or speak from authentic experience. Of all the streams of civilized tradition with roots in the Paleolithic, poetry is one of the few that can realistically claim an unchanged function and a relevance which will outlast most of the activities that surround us today. Poets, as few others, must live close to the world that primitive men are in; the world in its nakedness, which is fundamental for all of us birth, Love, death; The sear fact of being alive.

কবিতার কথায় কবি জীবনানন্দ দাশের মন্তব্য, ‘অভিজ্ঞতা যে সময় আমাদের হৃদয়কে ছেড়ে যায়, সে সব মুহূর্তে কবিতার জন্ম হয় না, পদ্য রচিত হয়।’ অভিজ্ঞতাই তাহলে কবির কাব্যযাত্রার পারের কড়ি। আর এ অভিজ্ঞতা দুভাবে অর্জিত হতে পারে— নিজের জীবন থেকে এবং পঠন-পাঠনের মাধ্যমে। বিশেষত, সাহিত্য পাঠের মাধ্যমেই আমাদের অভিজ্ঞতা সংবদ্ধ ও সংহত রূপ লাভ করে। কারণ, সাহিত্যের চেয়ে আর কোনো কিছুই মানুষকে দুরাগ্রহের বোকামি, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ, রাজনীতির উপদলীয়তা এবং একচেটিয়া জাতীয়তাবাদ থেকে কার্যকরভাবে সুরক্ষিত করতে পারে না। সাহিত্যের চেয়ে ভালো শিক্ষা আমাদের জন্য কেউই দিতে পারে না। নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবধান, মানুষের উত্তরাধিকারের চমৎকারিত্ব এবং নানামুখী সৃজনশীলতার মুখোমুখি হয়ে মানুষের স্পষ্ট প্রকাশের বিষয়গুলো সম্পর্কে সাহিত্য আমাদের জ্ঞান দেয়। ‘কেন সাহিত্য’ প্রবন্ধে মারিওভার্গাস য়োসা যেমনটি বললেন, ‘সাহিত্য হলো অভিজ্ঞতা অর্জনের উপায়। আমরা কী এবং কীভাবে, মানুষের শুদ্ধতা ও আমাদের মানবজীবনের অপূর্ণতা—এসব বিষয়েই অভিজ্ঞতা অর্জনের উপায়।’ পঠন-পাঠনের মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেন, ‘যাও! যাও! দেশে ও দেশের বাহিরে যত পার জ্ঞান কুড়াইয়া আন। জ্ঞানের মণিমানিক্যে তোমার মাথা ভূষিত কর।… পড়! পড়! নতুন পুরানো সকল বড় মনের সঙ্গে তোমার মন মিলিয়ে তোমার মনকে বড় কর।’ প্রকৃত অর্থে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকের সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জ্ঞানবিশ্বের বহুমাত্রিক পাঠই অন্যতম প্রধান ও অতি প্রয়োজনীয় কাজ। আসলে প্রতিটি সফল কবিতা তার ওপর অন্য কবিতার প্রভাবকে স্বীকার করে। প্রতিটি অসফল কবিতা নিজের ব্যর্থতা দিয়ে বোঝায় যে, তার লেখক আর কিছু বেশি কবিতা পড়লে হয়তো তারও আরেকটু ভালো হওয়ার সুযোগ ছিল। কবি যত কবিতা পড়বেন, যত রকমের কবিতা শিখবেন এবং অনুকরণ করবেন তার কবিতা তত ভালো হতে থাকবে। প্রচুর কবিতা পড়ে প্রচুর লেখার পর কবির কবিতা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ এবং নিজের মতো হয়ে উঠবে। এটাই সৃষ্টিশীলতার মূল লক্ষণ—কবিত্বের প্রকৃত মন্ত্র ও শক্তি। ‘কেউ যাহা জানে নাই—কোনো এক বাণী—/ আমি বহে আনি;/… কোনো এক নতুন কিছুর আছে প্রয়োজন/ তাই আমি আসিয়াছি, আমার মতন/ আর নাই কেউ।’— একদা জীবনানন্দ এই ঘোষণায় সচিকত করেছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার পাঠককে। বিপরীতে পাঠবিমুখ কবির রচনায় পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। কবি আর নতুন কবিতা লিখতে পারেন না। এ কারণে এজরা পাউন্ড কবিকে বলেন, ‘মিল্টনের রেটোরিকের চেয়ে দান্তে’র উপস্থাপনার সুনির্দিষ্টতাকে খেয়াল করুন। যতটা সম্ভব ওয়ার্ডসওয়ার্থ পড়ুন যতক্ষণ-না তা  অসহ্য রকমের নিস্তেজ মনে হয়। যদি কোনো কিছুর নির্যাস চান তাহলে স্যাফো, কাটুলাস, ভিলন পড়ুন; আর যদি আপনার ভাষা না থাকে তাহলে স্নিগ্ধ চসারকে পড়ুন।’

‘কেউ যাহা জানে নাই—কোনো এক বাণী—/ আমি বহে আনি;/… কোনো এক নতুন কিছুর আছে প্রয়োজন/ তাই আমি আসিয়াছি, আমার মতন/ আর নাই কেউ।’— একদা জীবনানন্দ এই ঘোষণায় সচিকত করেছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার পাঠককে। বিপরীতে পাঠবিমুখ কবির রচনায় পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। কবি আর নতুন কবিতা লিখতে পারেন না।

কবিকে অহরহই যাপন করতে হয় দ্বৈতজীবন। কবি উদাসীন হন। অনেকের ভিড়েও কবি একাকী হন। কবিতাকে কেন্দ্র করে কবি বিচ্ছিন্ন হন। কিন্তু আসলেই কি কবি বিচ্ছিন্ন কিংবা বিযুক্ত হচ্ছেন জীবনকেন্দ্রের প্রবহমানতা থেকে? মোটেও না। কবি নিঃসঙ্গ হন আবার সংশ্লিষ্ট এবং সংযুক্ত থাকেন, অনবরতই মিশে থাকেন জীবনকেন্দ্রে একটানা গুঞ্জনের মতো। আপাত বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও সংযুক্ত থাকার প্রয়াস তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে। একটা দ্বৈরথ, দ্বিধা, দ্বৈততা আর দোটানা নিয়ে তিনি সময় যাপন করেন। অহরহ দ্বন্দ্বের সংঘাতে তৈরি হয় ক্ষরণ। এই ক্ষরণ একজন কবি আমৃত্যু বয়ে বেড়ান। কিন্তু এ ক্ষরণ আর সবার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কেউ বোঝে না। বুঝতেও পারে না। এমনই তো হয়। এমনটাই হবার কথা। সৃষ্টিশীলতার সাধনায় কবি চির একাকী। নিত্যদিন বাহ্য-অনুষঙ্গ আর দৃশ্যমান প্রস্তুতির আড়ালে এমন এক অন্তর্লীন রসায়ন ঘটতে থাকে কবির একান্ত ব্যক্তিত্বে যে, অতি উৎসুক বান্ধবের পক্ষেও তার চিন-পরিচয় পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। স্বরাট ও বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি নিঃসন্দেহে এক পুঁজি-নির্দেশিত মিথ। কিন্তু সেই মিথের ছায়া যদি কোথাও রহস্যময়ভাবে সক্রিয় থেকেই থাকে, তো আছে সৃজনশীলতার প্রক্রিয়ার মধ্যে। তবে সৃষ্টিশীলতার প্রাঙ্গণটি একান্তই অনির্দিষ্ট, অচেনা, রহস্যময়। সহস্র ‘কেন’ আর কয়েকটি শব্দের পেছনে ছুটতে ছুটতে পার করাকে কেউ বলে কবি জীবন, কেউ বলে বেহিসেবি মন, কেউ বলে আত্মভোলা, কেউ বলে না কিছুই— কেবল আড়ালে, আবডালে ম্লান হাসে। কেউ করে মৃদু তিরস্কার। এইসব তিরস্কার, অবজ্ঞা ও গঞ্জনা নিয়ে একজন লোক একটা জীবন পার করে কবিতা নামক একগুচ্ছ শব্দের পেছনে। কাব্যদেহে, শব্দের সৌন্দর্যে সে প্রাণ দিতে চায়! সে অর্থে কবি এক মোহশূন্য আজন্ম সন্ন্যাসী। পিতার ঔরস থেকে মাতৃগর্ভে প্লাসেন্টোর অন্ধকারে; একজন পুরুষ ও নারী ভাগাভাগী করে বহন করে সবার মতো একজন কবিকেও। যেভাবে ছায়াপথ ও গ্যালাক্সিম-লী, ব্ল্যাকহোল ও নক্ষত্র-নিচয় ঈশ্বরকণার সঙ্গে ছিল: কবিও তেমনি এক অবিভাজ্য সত্তা এই বস্তুবিশ্বের সাথে। মাইটোসিস মিয়োসিসের মতো কবি মানবীয় তাবৎ সম্পর্ক থেকে কখনোই বিভাজিত হন না, হতে পারেন না। বুশ ও লাদেন, চেঙ্গিস ও তৈমুর, সাদা ও কালোর যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য প্রাণ, হিরোসিমা-নাগাসাকির জ্বলন্ত আগুনে গলে-পড়া মানুষের শরীর, আউৎসভিসের গ্যাস চুল্লিতে ইহুদীর রুদ্ধশ্বাস, বুকে বোমা বাঁধা ফিলিস্তিনি বালক, ইন্ডিয়ানার তামাক ক্ষেতে যক্ষ্মায় ধুঁকে মরা আবর ক্রীতদাস— মুক্তির জন্য, চির নিঃস্কৃতির জন্য কবিকেই আহ্বান করে। সেহেতু পথে যেতে যেতে রাস্তার উলঙ্গ শিশুটির কথা ভাবতে হয় কবিকে, নিরন্নের মলিন মুখের ভাষা পড়তে হয়, রাতে ঘুমাতে যাবার আগে উদ্বাস্তুর কথা মনে করে ঘুমের বিসর্জনও দিতে হয় কবিকেই। কবি মাহমুদ দারবিশ যেমন তার ‘থিঙ্কস অব আদার’ কবিতায় বলেন, যা তর্জমায় ধরা দেয় এভাবে :

 

যখন তুমি সকালের নাস্তা প্রস্তুত কর
মনে রেখ যারা খেতেই পায় না সেই বুভুক্ষুদের কথা
ভুলে যেও না তোমার কবুতরের আধার
পানির বিল পরিশোধের সময় মনে রেখ
যারা কেবল মেঘের স্নেহেই পালিত
যুদ্ধের মজুরি তোলার সময় ভুলে যেও না
যারা শান্তির জন্য কাজ করছে।
যখন তুমি ঘরে ফের— তোমার ‘সুইট হোম’
ভুলে যেও না শরণার্থী শিবিরের কথা
আকাশের নক্ষত্ররাজির কথা ভাবতে ভাবতে
যেভাবে তুমি ঘুমিতে পড়
যাদের ঘুমাবার কোনো জায়গাই নেই
মনে রেখ তাদেরও।
আর কবিতায় যেভাবে তুমি নিজেকে প্রকাশ কর
উপমা উৎপ্রেক্ষায়,
মনে রেখ তাদেরও, যারা হারিয়েছে কথা বলার অধিকার।

 

জ্বলে পুড়ে যাওয়া জীবনের ছাই ভস্ম নিয়ে বেঁচে থাকেন কবি। তাই কবিদের জীবন-যাপন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতুহলের অন্ত নেই। কবিদের ‘বোহেমিয়ান’ বলতেই সকলের আত্মতৃপ্তি। কিংবা ছন্নছাড়া। কবিদের মধ্যে যারা ‘বোহেমিয়ান’ জীবন যাপন করেছেন বা করছেন তা যে কবি হওয়ার কারণেই করেছেন বা করছেন তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। কারণ কবি নন এমন বহু লোকও সমাজে বিদ্যামান যারা বোহেমিয়ান স্বভাবের। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এমন কবি বিরল যিনি কেবল কাব্যচর্চাকেই জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছেন কিংবা অস্বাভাবিক জীবনাচারে অভ্যস্ত হয়েছেন। অন্য দশজন লোকের মতো কবিরাও আজ কোনো না কোনো চাকুরি বা ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত। অতীতেও এমনটাই ছিল। মধ্যযুগের ‘রাজকবিগণ’ চাকুরিজীবী বৈ কিছু ছিলেন না। মহাকবি মিল্টন ব্রিটিশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী ছিলেন; বায়রন ছিলেন লর্ড; রবীন্দ্রনাথ জমিদারির কাজকর্ম দেখাশোনা করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম এবং মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁদের খামখেয়ালির জন্য বিশেষায়িত হলেও তাঁরা প্রকৃত অর্থে বোহেমিয়ান ছিলেন না। সৃষ্টির মুহূর্তে সব কবিই তাঁদের মানসলোকে একই উন্মাদনা অনুভব করলেও সমাজ-জীবনে তাদের একেকজনের আচরণ ও জীবনমান একেক রকম।

উপনিষদ বলেছে সবকিছুই পূর্ণ, ‘পূর্ণমদ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যত।’ কিন্তু কবি পূর্ণতা খোঁজেন এক পরম শূন্যতার মাঝে থেকে। নিয়তির নির্মমতায় দারিদ্র্য এলেও মানসিকভাবে কবিকে থাকতে হয় এক আজন্ম উদ্ধত অগ্নিপুরুষ। শুদ্ধতম সাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ, কায়েস আহমেদসহ অনেকের লেখক-জীবনে গ্লামার ছিল না। প্রখর প্রতিভাধর লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্থিক অবস্থা ছিল তাথৈবচ। প্রাগৈতিহাসিক, জননী, চতুষ্কোণ, প্রতিবিম্ব, পুতুল নাচের ইতিকথা’র মতো কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টির পরেও এই মানুষটির জীবন কেটেছে বস্তিতে, বাঁশের বেড়া আর পলকা টিনের চালাঘরের বন্দিশালায়। মূলত কবিতা লিখে ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা হয় না কখনো। এ কর্মে সামনে এগোতে চাইলে টাকার চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলাই ভালো। কবিতা লিখে বিদ্যুৎ বিল দেবার মতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব হবে না। দেশের সবচেয়ে নামকরা সাহিত্যকাগজে কবিতা লিখে যে চেক পাবেন তা ভাঙিয়ে আপনি হয়তো পাড়ার মুদির দোকান থেকে বড়োজোর আধাব্যাগ সদাই করতে পারবেন। বরং কবিতা প্রকাশ করে আনন্দ পাওয়ার পাশাপাশি বড়োজোর আপনি সেই কাগজের দুটি কপি পেতে পারেন। কোনো কৃতজ্ঞ পাঠকের কাছ থেকে একটি চিঠি বা পোস্টকার্ড পেতে পারেন মাঝে মাঝে; আনন্দদায়ক বিস্ময় হয়ে আসবে সেসব। কবিতায় কোনো টাকা নেই। কারণ, আপনার অধিকাংশ প্রতিবেশী বা আমার অধিকাংশ প্রতিবেশীর কাছে কবিতার কোনো ব্যবহারিক মূল্য নেই। বাংলাদেশ তথা পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের দেশগুলোতে কবিকে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়; মগজে সর্বক্ষণ কবিতাক্রান্ত হয়েও পেটের দায়ে অন্য কাজ করতে হয় বলে। সোভিয়েত রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর লেনিন তাঁর এক ভাষণে বলেছিলেন: ‘আমাদের সমাজে শ্রেণিশোষণ বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু এই শোষণহীন সমাজব্যবস্থায়ও কেবল দুই শ্রেণির শোষক থাকবে… এটুকু বলে তিনি বেশ কিছুক্ষণের জন্য থেমে থাকলেন। তারপর লেনিন খুব ধীর লয়ে বললেন, একটি শোষকশ্রেণি আমাদের শিশুরা; আরেকটি কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীসমাজ। এরা কোনো কায়িম শ্রম না-করেও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে—এমনকি একটু বেশি মাত্রায়! কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী পদবাচ্য কারা, তা নির্ধারণ করে দেবে একটি কমিটি।’ পক্ষান্তরে এদেশে কবিদের নিয়ে এ ধরনের কমিটি গঠন কতটা সম্ভবপর তা সকলেরই জানা।

জীবদ্দশায় স্বীকৃতি না পাওয়া কবির চিরন্তন হাহাকার। কবিকে লিখতে হয়, না লিখে তার উপায় থাকে না। লেখার পর তা কী হলো, আদৌ হলো কি না, বাণীর মর্ম পৌঁছাল কি না পাঠকের অন্তরে তার জন্যও তার হাহাকারের অন্ত নেই। এ এক জীবন বটে! অনেকটা ব্যাখ্যার অতীত। পুরস্কারের আশা না থাকলেও কবিজীবনে তিরস্কারের অভাব হয় না। তবু কবি যা করেন তার যথাযথ মূল্য না পাওয়াটা কবির কাজকে দুঃসহ করে তোলে না। আমরা তো জানি এই পৃথিবী কতটা ভুলে ভরা। ভিনসেন্ট ভ্যান গগ-এর ব্যাপারেও এই পৃথিবী ভুল করেছিল যখন তাঁর ‘সানফ্লাওয়ার’ পেইন্টিংটি ১২৫ ডলারে কিনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। আবার যখন আজকে সেই ছবি ৩৫ বা ৪০ মিলিয়ন ডলারে কিনতে চায় সেখানেও একই ভুল করে পৃথিবী। শিল্প তৈরির আনন্দ নিয়ে লুইজ নেভেলসন-এর স্মৃতিকথা ডনস ও ডাস্কস থেকে একটি ছোটোঅংশ তুলে দিচ্ছি। নেভেলসন ছিলেন একজন ভাস্কর। কিন্তু একজন শিল্পীর জীবন নিয়ে তিনি যা বলেছেন তা কবির ক্ষেত্রেও খাটে। ‘আমি বরং আমার জানা অন্যকিছু করার চেয়ে চব্বিশ ঘণ্টাই স্টুডিওতে কাজ করব আর ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ব। কেননা, কাজ করাটা জীবন্ত। এটা পানির মতো; জীবন্ত এটা। জীবন্ত থাকার নির্যাস হচ্ছে কাজ আর কাজ। আমি আমার পৃথিবীকে তৈরি করে নিয়েছি আর বাইরে যে পৃথিবী দেখি তার চেয়ে আমার এই পৃথিবী অনেক অনেক ভালো।’ বেঁচে থাকার মূলকথা হচ্ছে কাজ করে যাওয়া। নেভেলসন বলেছেন, ’আর কবি হওয়ার মূলকথা হচ্ছে লেখা। প্রকাশনা বা পুরস্কার নয়।’ এ কারণেই জীবনানন্দ দাশ তার শেষ মুহূর্তে চৈতন্য ফিরে পেয়ে মেয়ে মঞ্জুশ্রীকে একটি প্রশ্নই করেছিলেন— ‘পেমেন এসেছে, পেমেন? ও যে বলে আমার কিছু হয় না।’ বন্ধু প্রেমেন্দ্র মিত্র তার কবিতা পড়ে সর্বদাই জীবনানন্দ দাশকে আশাহত করতেন। তাই কবি তাকে অন্তিম মুহূর্তেও জয় করতে চেয়েছিলেন। সাহিত্যিক এই বিরোধিতা তথা নেতি সমালোচনার স্বীকার কমবেশি সকল লেখককেই হতে হয়েছে এবং আজও হতে হয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ অভিমান করে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে লিখেছিলেন, ‘আমার প্রকাশ্য অপমানে গোটা দেশের লোকের চিত্তে বেদনা লাগে না, সুতরাং আমার প্রতি যাঁরা কুৎসা প্রয়োগ করেন তাঁদের ক্ষতি, বিপদ বা তিরস্কারের আশঙ্কা নেই… যারা আমার অন্ধ স্তাবক বলে কথিত, যাঁরা আমার সুহৃদ বলে গণ্য, তাঁরা আমার এই অপমানের কোনো প্রকাশ্য প্রতিকার করে থাকেন তারও কোনো প্রমাণ নেই। বুঝতে পারি প্রকাশ্য অপমান করতে অপরপক্ষের যত সাহস ও নৈপুণ্য, এপক্ষের তা নেই, তার প্রধান কারণ, তাঁরা মনে মনে জানেন দেশের লোকের সহযোগিতার “বল” তাঁদের দিকে নয়।’ (শনিবারের চিঠি, পৌষ ১৩৬৯)

যারা আমার অন্ধ স্তাবক বলে কথিত, যাঁরা আমার সুহৃদ বলে গণ্য, তাঁরা আমার এই অপমানের কোনো প্রকাশ্য প্রতিকার করে থাকেন তারও কোনো প্রমাণ নেই। বুঝতে পারি প্রকাশ্য অপমান করতে অপরপক্ষের যত সাহস ও নৈপুণ্য, এপক্ষের তা নেই, তার প্রধান কারণ, তাঁরা মনে মনে জানেন দেশের লোকের সহযোগিতার “বল” তাঁদের দিকে নয়।’ (শনিবারের চিঠি, পৌষ ১৩৬৯)

রবীন্দ্র দুষণের এই মহাভাগীরা হলেন— দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, সুরেশ সমাজপতি, বিপিনচন্দ্র পাল, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, স্যার যদুনাথ সরকার, সজনীকান্ত দাস, নীরদ চৌধুরী। তাঁদের সাথে যুক্ত হয়েছেন শিষ্য সমতুল্য বেশ কিছু অখ্যাত রবীন্দ্র বিদ্বেষী লেখকরাও। শিকারীর মতো উত্তেজনায় কলম ধরে বসে পড়তেন। বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁরা শুধু দেশে নন বিদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে নিমর্ম সমালোচনা করেছেন। শিবনারায়ণ রায় তাঁর চিত্রকলা ও সাহিত্য সম্বন্ধে বলতে গিয়ে প্রবল বিষোদ্গার করেছেন।

একজন কবির আরেকটি দুর্বিষহ ভাগ্যলেখা হলো চরিত্রদোষ। আগ বাড়িয়ে কেউ কেউ কবিকে দুশ্চরিত্রও বলে থাকেন। কবির প্রেম ও রোমান্টিক মনোভাবই এর জন্য চূড়ান্তভাবে দায়ী। যদিও পৃথিবীর কোনো মানব-মানবীই প্রেম-রোমান্টিকতা মুক্ত নন। তবুও। কবি আলাওল তাঁর পদ্মাবতী কাব্যে লিখেছেন:

 

প্রেম রূপ-মূল, প্রেম বিরহের মূল
অমৃত জড়িয়া বিষ করিল আকুল।
পরম প্রেমেরসিদ্ধ অগাধ গভীর
ক্ষণেকে ভাঁওরে ফেলে সমুদ্রের নীর।

 

আবার জগৎবিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসের উক্তি হচ্ছে, Love is an appetite of generation by the mediation of beauty. ফলে কৈশোর পেরোবার কালে মানবীর দ্ব্যর্থ ইশারার প্রেম কবির অমোঘ নিয়তি। চর্যাপদের সিদ্ধাচার্যগণ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের বড়ু চণ্ডীদাস, বৈষ্ণব পদাবলির পদকর্তাগণ, রেড়ির প্রদীপ জ্বেলে মনসার ভাসান রচয়িতা বিজয়গুপ্ত— বাংলার ধ্রুপদী এই অনিবার্য কবিগণ কেউ-ই এড়াতে পারেননি স্পর্ধিত প্রণয়ের হাতছানি। মহাকবি গ্যোটে তাই বলেছেন, ‘প্রেম বিধুরতা থেকেই মূলত একজন কবির জন্ম। প্রেম মূলত মানব মনের সংবেদনশীল অনুভূতি। নর-নারীর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় যার জৈবিক পরিণতি, প্রেমে রূপান্তর।’ তবে কবিদের অনেকেই এক প্রেমে তুষ্ট হতে পারেননি। যেমন গ্যেটেও নন। সতেরো বছর বয়সে গ্যেটে যে মেয়ের প্রেমে পড়েন তার নাম আন্না ক্যাথেরিনা। দ্বিতীয় প্রেম ফ্রেডরিকে ব্রিয়নের সাথে। এরপর যথাক্রমে লিলি শোয়েনেমান, শার্লোট ফোনস্টাইন, ক্রিশ্চিয়ানা ভালপাইয়াস। ক্রিশ্চিয়ানাই ছিলেন গ্যেটের প্রিয়তমা স্ত্রী। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ৭৩ বছর বয়সে গ্যেটে কিশোরী উলরিকের প্রেমে পড়ে যান। তিনি উলরিককে বিয়ের প্রস্তাব দেন। উলরিকে সরাসরি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান না করে আকারে-ইঙ্গিতে তার অনিচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। বৃদ্ধ বয়সের এই ব্যর্থ প্রেম নিয়ে গ্যেটে লেখেন মারিয়েন বাড্ এলিচ্ছি। বাঙালির গ্যেটে খ্যাত রবীন্দ্রনাথও এর ব্যতিক্রম নন। কবির জীবনে আসা প্রথম নারীটির নাম কাদম্বরী দেবী। কবির অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী। কবিগুরু শেষজীবনে আকৃষ্ট হয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রতি। কবি তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘বিজয়া’। কবিগুরু তাঁকে একটি কাব্যও উৎসর্গ করেছিলেন। কবিগুরুর জীবনে আরও দু’জন নারী এসেছিলেন। তাঁদের একজনের নাম আনা তরখড় এবং অন্যজনের নাম রাণু মুখোপাধ্যায়। কবি নজরুলের জীবনেও এসেছিলেন দুজন নারী— নার্গিস ও প্রমীলা। যা হোক, কবিদের এসব প্রেম ও প্রেমমূলক লেখাজোখা নিয়ে অনেকক্ষেত্রে আজকাল আবার দেখা যায় চরম দাম্পত্য কলহ ও শেষমেষ বিবাহবিচ্ছেদ।

বিষাক্ত নিয়তি কোনো দিক থেকেই কবিকে বিনাদংশনে ছাড়ে না। কবি কী লিখবেন, কার জন্য লিখবেন, কীভাবে লিখবেন—ধ্যানীর মতো এসবও তাকে নির্ধারণ করে নিতে হয়। কাব্য কী, কিসে কবিতা হয়, কবি ঠিক কাকে বলব এই নিয়ে আজও বাদানুবাদের সমাপ্তি নেই। কবি ও কবিতার ব্যাপারে দুনিয়াজুড়ে হরেকরকম দৃষ্টিভঙ্গি চালু আছে। এর মধ্যে মোটা দাগে দুটি ধারাকে এভাবে চিহ্নিত করা যায়— প্রথমটি কবিতার ভাষায় কবির একাধিপত্য এবং পাঠের ক্ষেত্রে কবিতার ইতিহাসকেই পরমমূল্য দেয়; দ্বিতীয়টি কবিতার জন্ম ও ভোগ দুটিকেই জনগোষ্ঠীর ভাষা ও জীবনাচারের সাথে মিলিয়ে দেখে। এ কারণে প্রাত্যহিক দিন কবিকে যাপন করতেই হয়। শুধু এজন্য নয় যে, কবিও সামাজিক মানুষই বটে; বরং সত্য হলো, প্রাত্যহিকতার বিচিত্র আয়োজন ছাড়া কবিতার রসদই বা আর কোথায়? কিন্তু সেই প্রাত্যহিক দিনই যেন তার জীবনে পরম সত্য না হয়ে ওঠে। তবুও পরমের সাধনা তাকে করতে হবে এই যাপনের মধ্যেই। পঙ্কেই সে থাকবে, কিন্তু এই পাঁকে আটকা পড়বে না। কেবল শুষে নিবে সকল শাঁস। যথাসময়ে বেরিয়ে যাবে ফাঁদ কেটে।

কবিকে জীবনের বৃত্ত ভাঙতেই হয়। ছকের পর ছক মাড়াতে হয়। যদি লোভাতুর কবি কোনো বিশেষ ছকে গা এলিয়ে দেন আরামে, তবে সম্ভবত ঘনিয়ে আসে তার মৃত্যু। তার রচনায় পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। আমরা প্রায়শই বিভিন্ন কবির কিছু সংখ্যক কবিতাকে বা কাব্যগ্রন্থকে এক ঘরানার রচনা বলে চিহ্নিত করে থাকি; প্রায়শই অনুযোগ বা অভিযোগের সুরে বলে থাকি, এ কবি আর নতুন কবিতা লিখতে পারছেন না। নিত্য জীবনের এবং অনুষঙ্গী মানস-কাঠামোর ছককে অতিক্রম করে যেতে না পারাই বুঝি এর কারণ। এক্ষেত্রে কবিতায় ব্যবহৃত ভাষা ও প্রকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সহজ করে বললে কবিতার সরলতা ও জটিলতা বিষয়টি এখানে চলে আসে। বেশিরভাগ কবিই তাঁদের কবিতাকে জটিল করে তোলেন। কারণ তাঁরা ভাবেন কবি হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে জটিল কবিতাই লিখতে হবে। কিন্তু একটি পরিষ্কার এবং সহজবোধ্য কবিতা প্রতিদিনের পাঠকের কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে। আমি তো মনে করি পাঠকের প্রতি মায়া, উদারতা এবং বিনয় দেখিয়ে লেখালেখি করা আমাদের ধর্মবিশেষ।

মার্কিন ঔপন্যাসিক রোনাল্ড সুকেনিক বলেন, ‘লেখালেখির নিয়মগুলো প্রথমে নিজের মতো আয়ত্ত করে নিয়ে পরে প্রয়োজন মতো ভাঙতে হবে।’ আসলে এই নিজের মতো প্রথমে আয়ত্ত করে নিতে গেলেই ঘটে দুর্বিপাক। কেননা সহজ করে গভীর বিষয় বলতে পারাটা লেখকের অনেক বড়ো শক্তি। এ শক্তি সে দীর্ঘকাল চর্চার পরই পেয়ে থাকে।

কবির একান্ত ব্যক্তিগত কোনো ভাষা থাকে না। জনগোষ্ঠীর ভাষাই তার ভাষা। অবশ্য ব্যক্তিগত মুদ্রা থাকাই সম্ভব। জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতার অংশই কবির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতাই রূপায়িত হয় কবির হাতে। সামগ্রিক ভাষা ও অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থেকে উপাদানগুলোর নির্বাচনেই কবির ব্যক্তিত্বের প্রাথমিক ছাপ ফুটে ওঠে; যদিও চূড়ান্ত কবিত্ব নিশ্চয়ই বিচ্ছিন্ন উপাদানগুলোতে থাকে না। একজন কবির কবিতা যে তার জনগোষ্ঠীকে আলোড়িত করে যায়, তার কারণ তার ব্যবহৃত ভাষায় শ্রোতার অন্তত প্রাথমিক অধিগম্যতা, আর তার আকাঙ্ক্ষার সীমার সঙ্গে শ্রোতার প্রাথমিক পরিচয়। এটুকু আনুকূল্য না থাকলে কবিতা পাঠকের অধিগম্যতার বাইরে থেকে যেতে বাধ্য। মার্কিন ঔপন্যাসিক রোনাল্ড সুকেনিক বলেন, ‘লেখালেখির নিয়মগুলো প্রথমে নিজের মতো আয়ত্ত করে নিয়ে পরে প্রয়োজন মতো ভাঙতে হবে।’ আসলে এই নিজের মতো প্রথমে আয়ত্ত করে নিতে গেলেই ঘটে দুর্বিপাক। কেননা সহজ করে গভীর বিষয় বলতে পারাটা লেখকের অনেক বড়ো শক্তি। এ শক্তি সে দীর্ঘকাল চর্চার পরই পেয়ে থাকে। তাই নতুন কবিদের অধিকাংশেরই অবধারিত নিয়তির মতো কবিতায় প্রকাশ জটিলতা বাসা বাঁধে। এ নিয়ে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের মতো অনেকেরই মনোবেদনা থাকলেও জটিলতার এ পথ থেকে সহজে ফেরা হয় না। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কবিতার কী ও কেন বইটিতে কবির এই মনস্তাত্ত্বিক বিষাদ থেকে পরিত্রাণের পথ করে দিয়েছেন।

ধর্ম ও যুক্তির দ্বৈরথ কবির জীবনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। ধর্ম ও যুক্তি পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন। দুজনের কখনোই বনিবনা হয় না। ধর্ম যা সংগত মনে করে, যুক্তি তাকে অংসগত ভেবে নাকোচ করে দেয়। এ দ্বৈরথে কবি অবশেষে যুক্তিকেই মান্য করেন। অনবরত জিজ্ঞাসা ও অনুসন্ধানের মধ্যে কবি জীবনের পরিচয় খোঁজেন। যে যুগে তাঁর জন্ম সে যুগের চেতনায় লালিত হয়ে এবং যে ইতিহাস তিনি জানতেন সে ইতিহাসকে পরিপূর্ণ ব্যবহার করে তিনি তাঁর যুগের এবং ইতিহাসের নতুন অর্থ নির্ণয় করেন। মানব-প্রকৃতিকে উপলদ্ধি করা এবং সে প্রকৃতির জ্ঞাত ও অজ্ঞাত সর্বপ্রকার বোধের সঞ্চারণকে জানা মানুষের পক্ষে সম্ভবপর হয়েছে কবির জন্য। মানুষের সত্যিকারের রূপ-নির্ণয়ের চেষ্টা, তার সর্বপ্রকার গণতান্ত্রিক জিজ্ঞাসার প্রহেলিকাকে উন্মোচন করা কবির সর্বপ্রধান কীর্তি। সেইসাথে জন্ম-মৃত্যু, স্রষ্টা ও সৃষ্টির রহস্যভেদ করার চেষ্টা কবির চিরন্তন অনুধ্যানের বিষয়। আর এ কারণে কবিকে নাস্তিক উপাধিও গ্রহণ করতে হয় হাসিমুখে। তবুও কবি থেমে থাকেন না মোটেও। কারণ কেবল কবিই পারেন জীবনের পার থেকে দেখে নিতে মৃত্যুর ওপার।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ৫ আগস্ট ১৯৮৭ সালে রাজশাহীতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে পিএইচডি ফেলো। একাডেমিক কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন মেয়র শিক্ষা পদক (২০০৫) ও রাবি কলা অনুষদ শিক্ষাবৃত্তি (২০১৩)। সম্পাদনা করেছেন লিটল ম্যাগাজিন ‘ধ্রুব’। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন শালুক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯), ওমর আলী সাহিত্য সম্মাননা (২০১৯), কাব্যশ্রী পুরস্কার (২০২২) এবং অনুপ্রাণন লেখক সম্মাননা (২০২৩)। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া ও গান মিলিয়ে বর্তমানে গ্রন্থসংখ্যা ২০টি। বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি কাজ করছেন বাংলাদেশ বেতারের একজন নিয়মিত ঘোষক ও গীতিকার হিসেবে। এছাড়াও গীতিকার হিসেবে কাজ করেছেন ভারতীয় মিউজিক কোম্পানি হিন্দুস্তান রেকর্ড’র সাথে। টিভি নাটক ও টেলিফিল্মের জন্যও নিয়মিত গান লিখছেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।