শুক্রবার, নভেম্বর ২২

নতুন দশ কবিতা : সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ

0

পদ্মাসে তু


এ-নাপাক এঁটে দিচ্ছে তোমায় আমায় আর মধ্যে স্বর্ণদ্বীপ,
যে-দ্বীপে বসত করে দু’দল হবিট যারা বেগুনি ও নীল,
বছরে এক-রাত তারা দীপাবলি খ্যালে, পিসি, দক্ষিণ সীমায়

কুমারী ভাসায়, যার দাঁত ওঠে নি দুধ ওঠে নি, বোজানো ঝিনুক।
সেতুর পিয়ার-তলে তাগের পায়ার, পিসি, চীনের মাটির
অক্ষৌহিণী সেনা; কিন্তু সেতু খুলে গেলে আর জ্বলবে না-তো দীপ

দক্ষিণের ঘাটে, আর বাজবে না ঝাঁঝর কাঁসি কড়াৎ পিড়িং…

মুখোমুখি মহাজঙ্গে আমরা আজি পদ্মাজলে বেগুনি ও নীল
হিংসায়, ও পিসি, মিথ্যা-অজুহাতে ছেড়ে-যাওয়া খোলানো ঝিনুক,

বাচ্চাদের শ্যাওলা-গায়ে নিবে যাওয়া— স্বর্ণদ্বীপ— চীনের মাটির
পারো-তো মাঝখানে এসো, পারো-তো উত্তর করো আমার সীমায়!

উড়ে আবছা পুড়ে আবছা রুহ্-আফজা-লোহিম দুই কড়াৎ পিড়িং…

 

১৫-জানুয়ারি-২০২১


দ্বা সুপর্ণা


আমি তোমায় গাই, কিন্তু তুমি আমায় গাও না?
গাও কি না-গাও জানতে দিতেও চাও না?

তুমি-কি আমাকে দ্যাখো? আমি দেখি তোমার অভাব।
অভাব-স্বভাব তুমি য়িগড্রাসিল-ডালে দাও শিস্,
যেন কোনো ঋণাত্মক বিশ্বে ব’সে গাইছ জেনেসিস,
ধনাত্মক বিশ্বে চোখ মেলছে কত কহ্লার-কলাপ

রৌদ্রবর্ণ, জ্যোৎস্নাবর্ণ। ও কাতিব, লেখো কার ব্লার্ব?
নাকি এপিটাফ? আমি দুধের-দাঁতের সেঁকো-বিষ
বাকলে ইঞ্জেক্ট করি, স্টেথোস্কোপে: ভূতের ফিসফিস—
জাহান্নাম না জান্নাত এই আর্বরিয়াল আরাফ?

ও দ্বিতীয়া, আমাদের তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চমেরা
কলকল বেরিয়ে আসছে জননের জ্বালামুখ থেকে
বিকলাঙ্গ; কেননা অর্ধেক— হয় গজায়ই নি, নয়

অর্ধেক তোমার বিশ্বে; হায়-রে, কারও এমনও ক্যামেরা
থাকত যদি— একই ফিল্মে নেগেটিভ-পজিটিভ এঁকে
রাখা যেত, করা যেত আমাদের একসাথে নির্ণয়…

 

২০-ফেব্রুয়ারি-২০২১


মোর ভাবনারে


ভাবতে-ভাবতে সন্ধ্যা হ’ল ভাষা
নিত্য চলে নৃত্য
ভাবনগরে তিন পাগলে খাসা
গব্য-গব্য ঘৃত্য

ও দাদা, এ-যে ঘৃতকে ঘৃত্য বলচে
চেপে যা, ভালো রাঁধে
ভৃত্য শুনতে শুনিস-নি তো, মিত্র?
ও দাদা, ওকি ভ নাকি ঘ?
ম — উ-কারটা অপানপথে গলচে।

আমি ভাবছি
বা আমি ভাবছি যে আমি ভাবছি
মানে ভাব নিচ্ছি
বা আমি ভাবছি না যে আমি ভাবছি
বা আমি ভাবছি যে আমি ভাবছি না

মধ্যে থেকে চান-সুরুজ ট’লে যাইছে লাট খাইছে
ধমন চমন মালপোয়া (চালু) আটকাইছে কিডা
কেউ কোনোদিকে লামছে নাই থামছে নাই
গলা ছাইড়ে কানতেছেন এশ্বর
যেন ভাঙ্গি পড়ি যাবে ঝুরঝুর আকাশ
নানা বাগ্‌যুদ্ধির মধ্যি করোনা


করোনার


আমার পথ থেকে সরো না জি
আঁই সিডাইঙ্গা, তুঁই রোহিঙ্গা নি?
পথ হোক না-হোক আমি ভাবছি
মানে ভাবছি যে আমি ভাবছি
এত ভাব, ছি!

নাকি ভাবছি না যে ভাবছি না
অ্যাস্ট্রাজেনেকার কথা শোনেন-নি সেনেকা
টিপিং পয়েন্টে কমণ্ডলু

এত ছায়া এত ছায়া এত-এত ছায়া
ছায়ারা যাঃ যাঃ যাঃ ছায়ারা যাঃ
মুই জলে নাবব
ভাবব ও ভাবব
ভাব

 

১১-এপ্রিল-২০২১


নির্দীপ


এ-বন, এ-যে পোড়া কাঠি-কাঠি,
কারণ এ নয়, যে, সে ফিরে গেছে এসে,
কারণ বরং, ইয়ে, মোটে আসে-নি সে,
এসেছিল তারই কোনো যমজ প্যাঁকাটি।
বালিয়াড়ি সাঁতরাও, বালিয়াড়ি সাঁতরা, রে ফাতরা!
কত দুধ দেবে গেলে শতধারে গলে আলকাতরা?
মাথা নাড়ে শ্যাওড়ারা, খাড়া হয় ধনেশের নাক,
বাংলাদেশের বুকে যাক ঢুকে যাক, যাক ঢুকে যাক, যাক ঢুকে যাক
পোয়া-পোয়া-ভর পোয়ামাছ,
হাজার-হাজার নীল-নিয়ন-জ্বালানো পোয়ামাছ।

সে-কি এসেছিল, নাকি তার মায়া?
না কায়ার পিছে সে-ই ছিল ছায়া?
কেউ খেয়ালই করে-নি আর আমিও না,
ফলে এই বিভাবরী হাজার-নিয়না:
আয়ে না বালম, হায়, কা করু সজনি…
এয়েছিল, খরখরে তালুর তলায়
চেপে ধ’রে রেখে জ্বালামুখ,
আমি তার তালামুখ খোলার আগেই সাত-পাতালে তলায়
কামাখ্যা, যোনির ঝিনুক।

দুয়ারে নায়রি, গাও তোলো পালকি,
দূরে যায়, উত্তরে, মেরা মালকিন,
আমার ভাষায় তারে করো পরকাশ,
রুমি! তুমি সবই জানো, সে আমার শ্বাস,
আমার যকৃৎ, প্লীহা, ছিনায় সে খুন,
আমার উনুনে সে-তো নীলাভ আগুন
নিবে গেছে কাল।
চকচক ঠকঠক নাচে কঙ্কাল।

 

২১-এপ্রিল-২০২১


প্যান্ডেমোনিয়াম


আমার ফ্রেন্ডলিস্টে হের্ অ্যাডল্ফ হিটলার,
জগদীশচন্দ্র বসু— অব্যক্তের নেক্সট এডিশন
ইনবক্সে পাঠায়ে হ্যাশে প্রুফ দেখতি ক’লেন,
আমি তাঁকে ব্লকানোর পাক্কা ডিসিশন

নিব কি নিব না, অমনি চিয়াং কাইশেক
বন্ধুত্বের হ্যান্ড বাড়ান, এইসব চ্যাংব্যাং
দেখলেই, ব্লগার ফ্রেন্ড মৌলানা আজাদ
ইমোজি পাঠান, যার ভাবার্থ ঘ্যাচাং।

আমি কইলে আপাততঃ সুস্মিতা সেনের
ইনবক্স স্প্যামাতে ব্যস্ত শেরোপরি শের
বাংলায় তরজমা ক’রে, মির্জা-তো বুঝবে না,
অভ্রের জঙ্গলে তন্বী-সুনন্দার শের।

রাইমা সেনের নামও শোনেন-নি বললেন
ইন্যাক্টিভ নানা-ফ্রেন্ড কলকাতার রবীন্দ্র ঠাকুর—
পরদিনই দেখি-কি, আল্লাহ! চুলদাড়ি-কুচকুচা-
-কালা সেল্ফি! নানা, নানা সাহেবের চেয়েও চতুর!

সমীরণে ভঙ্গ দেই, ধ্বজ, সেও ওড়ে না মকরে,
দশমূলারিষ্ট থেকে সারিবাদি বা মশারি বাঁধি
লুই-কাহ্নের সংসদ্ ভবনে, তিনশ’ বামাতি আলেম—
শক্তি- ও সাধনাহীন কাঁচা-পাকা কাঁদি

দোলে আগে, ঝোলে পিছে, সরপুঁটির ঝোলে
সাঁতরায় বাইগুন, না না, প্রাণনাথ, কলিগে ও লীগে
সপ্তকাণ্ড কণ্ডূয়ন, বারোমাসি মাসি—
সীমারের বাপে করে সীমারের স্ত্রীকে।

 

২৫-এপ্রিল-২০২১


বনহুর


বৈকালে ব্রেকফাস্ট সারি’ রাতের লাঞ্চের চাউল মাপি
তৎক্ষণ এত্তেলা দেন লাইভে আসি’ মুফক্কর ভাবি

ভায়ের করোনা, তারে লিমা বীন গিলায় রাখতেছে,
ও নেগেটিভ লাগবে— লৌন চোকাবেন গয়না বেচে।

ব্লাড-কি ইমেলে দিব? নাকি ওয়ালে পোস্টালে পাবেন?
নেক্সট মান্থে, জানালেন, আসতেছেন কোপেন হাগেন।

খৈনি খাই-নি কস্মিন্‌কাল, বাবা জর্দা, দোক্তা, সদাপ্রভু,
আমারই কিসমত কেনে ভাবিদের অভাবিতা তবু?

এখন কোনাই যাই, কোণ্ঠেয়ে পলাই, চৌকি ক’নে?
এহেন আজাবে ঐটা ওহি নাকি গগনে-গগনে?

লামতে-লামতে বড় হয়, ছিল মাছি, হয়া গেল মাছ,
পরি-শেষে পঙ্খি আর পঙ্কিরাজে নির্দ্বন্দ্ব সমাস।

লামলেন ডিগবাজি দিয়া, কোমরে টিনের তলোয়ার—
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকলে মিলিয়ন জুটত ফলোয়ার…

ভীমসেন হাঁকেন যোশী: কুত্র তুমি, পুত্র রহমান?
উত্তিষ্ঠ! রেস্কিউ করতে যাওয়া লাগবে নুরিকে। মহান্

সর্দার হামারা, আছি; আপোনার হুকুম-বর্দার।
আরোহ করহ— উনি এরশাদ করেন— খবরদার!

পাঙ্খাটা বাঁচায়া! আমরা অ্যাস্ট্রাডল কনকেভ আকাশে,
পাঙ্খা-তো গলিয়া গেল টরন্টো, বা উক্ত ধারেকাছে।

ধর্মপত্নী উপবিষ্ঠা পাকা-ঘাসে মাসুদ খানের,
মুফক্কর ভাবি তথা, খোয়া গেছে তাঁর এক-কানের

কানেট। পরনে তাঁর মোরগ-পেখম।

 

০১-মে-২০২১


নির্বাণদীপে কিমু তৈলদানম্


একদা এক ভিন্‌-গোলার্ধে
নির্বাপিতদীপ সায়ঙ্কাল,
বসল মুখোমুখি দু’-কঙ্কাল,
আমার ঢাই, তাই তোমার দেড়।

সন্ধ্যা— ছিমছাম আশ্বিনের:
স্তব্ধ, রক্তের আইলা-ঝড়,
ছিল না কাল, কথা নাই আজও,
কেবল— আর ভালবাসছি নে।

আঙুল গ’লে যায়, সিন্ধুজল
বরফ, থমথমে গুম্ফাতে,
আশ্বিনের চাঁদ ঘুম কাটে,
আজকে আমরার রদবদল,

আজকে আমরার অস্বীকার,
সত্য-মিথ্যার চিহ্নলোপ,
এই সময়— এই ভিন্ন লোক—
জন্ম-মৃত্যুর হ্রস্বীকার…

আশ্বিনের চাঁদ ফাঁদ পাতে
নির্বাপিতদীপ গুম্ফাতে।

 

০৪-মে-২০২১


শ্রীরাগ


এখন দু’জনই তোমরা আমার, কোনো সঙ্ঘাত নাই।
তোমাদের লাল-হায়ের মতোই সন্ধ্যার আকাশ— স্থির।

আমরা এখন বিশ্বনকশা বাগানে হাঁটতে যাই।
আমার এ-হাত তুমি ধরো আর ও-হাতও ধরো তুমি,

যেন দু’-কুকুর— আলাদা জিহ্বা, জবান, আলাদা ল্যাজ-
নাড়া। মাঝখানে হাঁটে শারীরিক, আখেরি আয়াত এক:

ভালবাসো পড়োশিনিকে তোমার, যেরকম নিজেকে।
নিজেকে— অর্থ: তোমাদের যোগফলের বর্গমূল—

কী ক’রে আমার নেয়ামত তুমি করবে অস্বীকার?

 

৩১-জুলাই-২০২১


পিতৃঋণ


আনন্দ, তোমার বাবা মধ্যরাতে ও কার কবরে
আগর জ্বালাতে যায়? তাকে তুমি ঘরে ফিরে একা

থাকতে বলো। দেহাতিরা জোনাকির স্নানের টিকেট
কিনতে লম্বা লাইন লাগিয়েছে; কিন্তু , আনন্দ, তোমার

বাবা তবু হেঁটে যায় গড় মন্দারনে, লাউডগারা
আড়মোড়া ভাঙার ফাঁকে টুক ক’রে গতজন্ম থেকে

প’ড়ে নেয় গায়ত্রী বা কোনোএক বিপুল জোনাকি-
মায়ের সবুজ শ্রুতি;— কবরের মাটি ফুঁড়ে আভা

ছড়ায় বাবার মুখে, বাবারা বাবার দেশে একা,
ও আনন্দ, অনন্ত বসন্তে তাকে হারাতে দিয়ো না।

 

২৯-অগাস্ট-২০২১

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ৭ জানুয়ারি, ১৯৬৫; ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। পেশায় আইটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে, সেলজ অ্যান্ড প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। প্রকাশিত বই: কবিতা— তনুমধ্যা , পুলিপোলাও, কবিতাসংগ্রহ, দিগম্বর চম্পূ, গর্দিশে চশমে সিয়া, ঝালিয়া, মর্নিং গ্লোরি, ভেরোনিকার রুমাল , হাওয়া-হরিণের চাঁদমারি, আমাকে ধারণ করো অগ্নিপুচ্ছ মেঘ, Ragatime। উপন্যাস— কালকেতু ও ফুল্লরা । গল্প— মাতৃমূর্তি ক্যাথিড্রাল । অনুবাদ— অন্তউড়ি [পদ্য রূপান্তরে চর্যাপদ] নির্বাচিত ইয়েটস [ডব্ল্যু বি ইয়েটস-এর নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ], এলিয়টের প’ড়ো জমি [টি এস এলিয়ট-এর দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড ও দ্য লাভ সং অব জে অ্যালফ্রেড প্রুফ্রক-এর অনুবাদ], কবিতা ডাউন আন্ডার [অস্ট্রেলিয় কবিতার অনুবাদ, অংকুর সাহা ও সৌম্য দাশগুপ্ত’র সাথে যৌথ] স্বর্ণদ্বীপিতা [বিশ্ব-কবিতার অনুবাদ] ই-মেইল : augustine.gomes@gmail.com

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।