বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

নামহীন পাঁচটি কবিতা : আদিত্য আনাম

0

নামগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি
হয়তো কবিতা খেয়ে ফেলেছে

 

১.

বাচাল শহর জেগে আছে কোলাহল নিয়ে
ইটের অরণ্য থেকে উড়ে যাচ্ছে হাহাকার
হাওয়ায় অনাগত দুর্ভিক্ষের বিষাক্ত লালা
ঝরছে বেদনাগুলো একা একা মুষলধারে।
মাতাল পা ধীরে ধীরে হাঁটো— পথেরা ঘুমাচ্ছে
জন্মের ক্লান্তিগুলো চোখের নিচে বসে আছে
তার পাশে ওৎ পেতে চেয়ে আছে অভিমান
সাবধানে পা ফেলো হে মাতাল অশান্ত পা।

বহুতল ভবনের পাশ দিয়ে অতল দুঃখ নিয়ে
কে কাকে উদ্দেশ্য করে গেয়ে যাচ্ছো গান?
এখানে কারো কান নেই, শুধু চোখ চেয়ে আছে
ঘৃণার ধারালো তীব্র লাল লাল চোখ—
দেয়ালে দেয়ালগুলো পিঠ ঠেকে দাঁড়িয়ে আছে
মুখের দরজা জানালা বন্ধ করে কথারা সব
পালিয়ে গেছে নর্দমার ভয়ংকর জঘন্য পথে।
হুইসেল বাজিয়ে আমাদের দিকে ধেঁয়ে আসছে
পতনের চূড়ান্ত সম্ভাব্য অসুখগুলো—মৃয়মান।


২.

শূন্যতার চোখে ঘুম নেই ঘুরছে প্রহরীর মতো
পাঁজরে প্রজাপতি খুন হয়ে পড়ে আছে।

মন থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পতনের রানওয়ে
শোক ও শাপ নরকের পাসপোর্ট হাতে নিয়ে
নেমে আসে আমার উদ্দেশ্যে

অথচ আমি কোথাও যেতে পারি না
পৃথিবী শিকল দিয়ে রেঁধে রেখেছে আমার পা।


৩.

ট্রয় নগরীর মতো একটি বিধ্বস্ত হৃদয় নিয়ে
আমি হেঁটে চলি মানুষের বনের মধ্য দিয়ে।
আমার চোখের ও শোকের দরজা খুলে
দলে দলে উড়ে যায় বিপন্ন ফড়িং।
পৃথিবীর কসাইখানায় আমি এক সিসিফাসের সন্তান
ঘৃণার পাথর টেনে তুলছি নিয়তির চূড়ান্ত চূঁড়ায়;
আমার বেদনাগুলো একেকটা উহুদ পাহাড়।

অথচ আমি এতোটাই ক্ষুদ্র যে একটি চড়ুইছানা
আমাকে ঠোঁটে নিয়ে অনায়াসে উড়ে যেতে পারবে।


৪.

নামগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি
হয়তো কবিতা খেয়ে ফেলেছে।
ক্ষুধা— তাকে হৃদয় থেকে মস্তিষ্কে তুলে আনার পর
কবিতা মস্তিষ্ক খেতে শুরু করল; পাঠক সাবধান!
সে আপনাকেও খেয়ে ফেলতে পারে।
সে খুব ক্ষুধার্ত আর উন্মাদ
আর যথেষ্ট বেপোরোয়া।
শব্দ করে নয় ধীরে ধীরে
মনে মনে তাকে জপতে থাকুন।
তাকে যেকোনো নামে ডাকা যাবে
সে কোনো মাইন্ড করবে না।
হৃদয় খুলে নিয়ে কবিতার কাছে যান
মস্তিষ্কের হর্ন এখানে বাজাবেন না
কবিতার ধ্যানের ক্ষতি হয়
সে ক্ষেপে গেলে নরক ছুঁড়ে মারবে।


৫.

‘ব্যর্থতা’ আর ‘ভুল’ আমার ক্লোজফ্রেন্ড
জন্মের পর থেকে আমরা একসাথে বড়ো হয়েছি
এক স্কুলে পড়েছি
খেলাধূলা, হাগামোতা, ঘুম ও সঙ্গম সব একসাথেই করেছি;
আমরা একসেকেন্ড কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারি না।
‘হতাশা’, ‘বিষণ্নতা’ আর ‘নিঃসঙ্গতা’
ওরা আমার আপনালোক
ওরাও আমাকে খুব ভালোবাসে; সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে।
‘দুঃখ’ আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে কিন্তু যায় না—
তাই তাকেও রেখে দিয়েছি আমাদের সাথে।
মাঝেমাঝে নরক থেকে আমাদের বাড়িতে চিঠি আসে,
চিঠিতে লেখা থাকে ‘মৃত্যু’ আসবে
(সে এখন ঘুমাচ্ছে এবং ঘুম থেকে উঠেই চলে আসবে)।
আমরা চিঠির জবাবে চিঠিতে লিখে দিই—

অতিথি আসবে আসুক
অতিথি নারায়ণ, তাকে চিঠি দিয়ে আসতে হবে না
তুমি যেকোনো সময় চলে এসো ‘মৃত্যুসোনা’!

 

 

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৮ নভেম্বর, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে। বগুড়া পুলিশ লাইন্স হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল থেকে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতিতে স্নাতক। প্রকাশিত বই: অন্তর্ভেদী অক্টোপাস [২০১৮], মাতালগুচ্ছ [২০১৯], টাকা, নাচো তো দেখি [২০১৯], উপেক্ষিত ক্রেঙ্কার [২০২০], বিপন্ন ডানার রঙ [পিডিএফ বই], দ্য লোনলি ট্রি উইদাউট বার্ডস; ফ্লাইং ইনসাইড হার সোল [পিডিএফ], ক্ষুধার্ত লাটিমের বয়ান [২০২২]।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।