১৯৫৮-’৫৯ সালের কথা। সুশীল মজুমদারের পরিচালনায় ‘হসপিটাল’ ছবির লোকেশন খোঁজা হচ্ছে। বম্বে থেকে অশোককুমার আসবেন। হিরোইন সুচিত্রা সেনের সঙ্গে একটি রোমান্টিক গানের দৃশ্যগ্রহণ দিয়ে শুরু হবে ছবির কাজ। পরিচালকের ইচ্ছে সেটা একটা সুন্দর লেকে বোটিং-এর দৃশ্য হবে। ছবিতে গান বেশি নেই। এই একটা এবং আরেকটা গান সংগীত পরিচালক অমল মুখোপাধ্যায় পরম যত্নে বম্বের নামি গায়িকা গীতা দত্তকে দিয়ে গাইয়েছেন— ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়’ যা লিখে দিয়েছেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার— তারই দৃশ্যগ্রহণ হবে ওই লেকে। এর আগে ‘হারানো সুর’ ছবির ‘তুমি যে আমার’— ওই গীতা দত্তের কণ্ঠেই সুপারহিট হয়েছে। তখনকার দিনে একেকটি ছবি দর্শকধন্য হবার মূলে গানের একটা বড়ো ভূমিকা ছিল। নীহাররঞ্জন গুপ্তের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিতব্য এই ছবির কাজের শুরুতেই পরিচালক ম্যাডাম সেনকে ভেবে রেখেছিলেন। নায়ক চরিত্রে অনেক ভেবেচিন্তে অশোককুমারকে ভাবা হয়েছিল। ম্যাডাম সেনের পাশে পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই অমন নায়ককে মেনে নিতে অনেকেরই আপত্তি ছিল। কিন্তু অশোকবাবু নিজেই টালিগঞ্জে এসে কাজ করতে ইচ্ছাপ্রকাশ করায় সুশীলবাবু আর দ্বিধা করেননি। সুশীলবাবু নিজেও ওই ছবিতে অভিনয় করবেন। পরিচালনা করার পাশাপাশি অশোককুমারের মতো একজন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার লোভ তাঁর মনেও খানিকটা ছিল যে! মনে রাখা দরকার বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অশোককুমার অর্থাৎ দাদামণি তখন খুব জনপ্রিয়। চল্লিশের দশকে কানন দেবীর সঙ্গে তাঁর অভিনয় সমৃদ্ধ ‘চন্দ্রশেখর’ ছবির কথা অনেকেই মনে রেখেছেন। কিন্তু তখন তিনি বম্বের ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কলকাতায় আসতে পারেননি। তাই এত দিন পরে অমন একটি ছবির কাজে সুচিত্রা সেন অশোককুমার জুটির কাজকে ঘিরে তখন সিনেমাপাড়ায় খুব কৌতূহলের উদ্রেক করেছিল। বলাবাহুল্য পত্র পত্রিকার কল্যাণে তার ঢেউ অল্পবিস্তর আমজনতার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছিল।
যা হোক, যথাসময়ে গীতা দত্তের কণ্ঠে ওই গানটা রেকর্ড হয়ে যাবার পরে পিকচারাইজেশনের জন্য লোকেশন খোঁজার ধুম পড়ে গেল। ইউনিটের একজন জানালেন ঝাড়গ্রামের কাছে নাকি একটি অসাধারণ লেকের সন্ধান পাওয়া গেছে। পরিচালকের বাড়িতেই কয়েকজন একত্র হয়েছিলেন ছবি সংক্রান্ত কিছু আলোচনার জন্য। তিনি ওখানেই সেদিন ওই লেক সম্পর্কে সদ্যপ্রাপ্ত তাঁর ভাইপোর লেখা একটা চিঠি সবাইকে পড়ে শোনালেন।
`পূজনীয় কাকা,
তোমাদের ছবির জন্য একটা চমৎকার লেকের সন্ধান আমি পেয়েছি। ঝাড়গ্রাম থেকে বেশি দূরে নয়। সুন্দর এক আরণ্যক পরিবেশে পাহাড়ঘেরা এই লেকের নাম ‘খাঁদারানি’। নাম শুনে একেবারেই নাক সিটকোবে না কিন্তু! আমাদের দেশে এমন বিচিত্র নামের অনেক জায়গা আছে। যা হোক তোমাদের কাজ হলেই তো হল! চারদিকে পাহাড় আর শাল-পিয়ালের জঙ্গল, তারমধ্যে বিশাল এক জলাশয়। শীতের সময় সেখানে এসে হাজির হয় অজস্র পরিযায়ী পাখির দল। তারা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে— প্রত্যেক বছর। অসাধারণ এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঠিকানা ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি এলাকার এই খাঁদারানি। একে ঠিক হ্রদ বলা যাবে না, তবে পুকুর বা দিঘিও এটা। বরং প্রাকৃতিক জলাশয় বলাই ভাল। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ঘেরা এই এলাকার তুলনা খানিকটা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটির সঙ্গে করা যায়। তবে পাথুরে পাহাড়ের মধ্যিখানে এমন একটি বিস্তীর্ণ জলের আধার ভূ-ভারতে খুব কম আছে বলে আমার ধারণা। এখানে এলে তোমার মন ভাল হয়ে যাবে কাকা। শহরের কোলাহল থেকে দূরে পাহাড়ি ঝরনার জলে সৃষ্টি এই প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্যিই অনুপম। প্রকৃতি যেন তার সবটুকু দিয়ে একে সাজিয়ে দিয়েছে। হ্রদের মতোই এই বিশাল জলাশয়ের বিস্তৃতি। জঙ্গলমহলের সবুজ বনাঞ্চল ঘেরা এমন অপরূপ জলাশয়টা তোমাদের পছন্দ হবে বলেই আমার বিশ্বাস। তোমরা তো এমন একটি শান্ত নির্জন জলাশয়ই খুঁজছ! একবার তোমাদের দলবলকে নিয়ে এখানে এসে দেখেই যাও না! ইতি
তোমার ভ্যাবলা’
এই পর্যন্ত পড়ে পত্রপাঠক সোমেনবাবু একটু থামলেন। তিনি ইচ্ছে করে পত্রপ্রেরকের নামটা সমবেত সবাইকে জানাতে চাইছিলেন না। অনমিত্র যার পোশাকি নাম, তার ডাকনামটা যে কেন অমন বিদঘুটে, কে জানে! তবে ওই চিঠির নিচেই একটা পুনশ্চ ছিল। সেটিও তিনি আর সমবেত শ্রোতাদের পড়ে শোনালেন না। নিজেই সেটা মনে মনে পড়লেন।
‘পুনশ্চ: আমার একটা বিনীত অনুরোধ তোমার কাছে রইল। সেটি হল, এখানে সুটিং হলে আমাকে তোমাদের ইউনিটে আমাকে একটু জায়গা দিও। আমি যেন ম্যাডামের দেখভালের দায়িত্ব পাই। তুমি তো জানো, শ্রীমতী সেনের অভিনয় আমি কী পরিমাণ পছন্দ করি! তাছাড়া বাংলা তথা ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অমন স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের অধিকারী আমি যে আর কাউকেই মনে করি না। তাই তোমাকে করজোড়ে অনুরধ করছি আমাকে তোমাদের ইউনিটে একটু জায়গা দিও। আমি কোনও টাকা-পয়সা চাই না। কয়েকটা দিন কেবলমাত্র খুব কাছ থেকে আমার পছন্দের নায়িকাকে দেখতে চাই।’
পরিচালক সুশীলবাবু বললেন, আগে ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করি। অশোককুমারকেও বলব। ওঁদের অনুমতি ছাড়া এক পাও নড়া যাবে না। আগামীকাল অশোকবাবু কলকাতায় আসবেন, ম্যাডামের ল্যান্সডাউনের বাড়িতে স্ক্রিপ্ট পড়া হবে। তখনই কথাটা পাড়ব। সময় হাতে বেশি নেই। ম্যাডাম খুব ব্যস্ত, অশোকবাবুও। ওই গানের দৃশ্যগ্রহণ দিয়েই আমাদের ছবির কাজ শুরু হবে।
চিঠি পড়া হয়ে গেলেই সমবেত জনগণ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল। সবাই মিলে জায়গাটা দেখে আসার বায়না ধরল। পরিচালক সুশীলবাবু বললেন, আগে ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করি। অশোককুমারকেও বলব। ওঁদের অনুমতি ছাড়া এক পাও নড়া যাবে না। আগামীকাল অশোকবাবু কলকাতায় আসবেন, ম্যাডামের ল্যান্সডাউনের বাড়িতে স্ক্রিপ্ট পড়া হবে। তখনই কথাটা পাড়ব। সময় হাতে বেশি নেই। ম্যাডাম খুব ব্যস্ত, অশোকবাবুও। ওই গানের দৃশ্যগ্রহণ দিয়েই আমাদের ছবির কাজ শুরু হবে। এইসব কথা যখন হচ্ছে, তখনই একজন এসে খবর দিল, ম্যাডামের ফোন এসেছে। এ যেন মেঘ না চাইতে জল। সুশীলবাবু দ্রুত চলে গেলেন ফোন ধরতে। কিছুক্ষণ বাদেই তিনি মুখ গোমড়া করে তিনি ঘরে ঢুকলেন। ‘না কিছুতেই ম্যাডাম ঝাড়গ্রামে যেতে চাইছেন না। ওই খাঁদারানি নামটাই তাঁর পছন্দ নয়। আমাদের অন্য লোকেশন খুঁজতে হবে। ম্যাডাম একবার যখন না বলেছেন, তাঁকে কিছুতেই রাজি করানো যাবে না। তাঁকে তো আমি চিনি বহুদিন ধরে। এমনি খুব ভাল, কিন্তু একবার বেঁকে বসলেই মুশকিল। হয়তো ছবির কাজটাই ছেড়ে দেবেন। আমি এক্ষুনি অন্য জায়গায় ফোন করছি। আজকালের মধ্যেই একটা লোকেশন ঠিক করতেই হবে। অশোকবাবুর হাতে সময় নেই। ম্যাডামও খুব ব্যস্ত। তাছাড়া ওখানে তো বোটিং-এর কোনও ব্যবস্থা নেই। সেটার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। অতএব এমন জায়গা খুঁজে বার করতে হবে যেখানে ভাল বোটিং-এর ব্যবস্থা আছে।’
অশোকবাবু স্ক্রিপ্ট শুনে পরের দিনই একটা জরুরি কাজে বম্বে চলে যান। ঠিক হয় পনেরো দিন পরেই তিনি ফিরে আসবেন এবং কিছু দিন এখানে থেকে ছবির বেশিরভাগ কাজ শেষ করে যাবেন। ইতোমধ্যে অনেক খোঁজাখুঁজির পরে রাঁচির কাছে তোপচাচি লেকে ওই গানের দৃশ্যের শুটিংটা হবে বলে স্থির করা হলো। এদিকে সোমেনবাবু পড়লেন বিপাকে। তিনি যে তার ভাইপোকে ইউনিটে নেবেন বলে পরিচালককে বলে রেখেছেন। তাছাড়া ছেলেটা গায়ে-গতরে বড়ো হলেও আসলে খুবই ছেলেমানুষ। সুচিত্রা সেনের বড়ো ভক্ত। ওঁর সান্নিধ্য পাবার আশায় আগে অনেকবার সিনেমাপাড়ায় আসতে চেয়েছে। আর কোনো উদ্দেশ্যে নয়, কেবলমাত্র একটু কাছে থেকে ম্যাডামকে দেখবে। কিন্তু সোমেনবাবু কিছুতেই ওই ঝুঁকি নেননি। ম্যাডামের মুড যে কখন কীরকম হয় বলা কঠিন। তাছাড়া তাঁর সঙ্গে কাজ করার এই প্রথম সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তাই তিনি ভেবেচিন্তে তার ভাইপোকে একটা উপায় বাতলে দিলেন। ঠিক হলো ভাইপোর চারচাকা গাড়ি চালানোর বিদ্যেটাকে এবার কাজে লাগাবেন। বললেন যতশীঘ্র সম্ভব রাচিতে গিয়ে একটা ভালো গাড়ির ব্যবস্থা করতে। ম্যাডামের গাড়ি চালানোর দায়িত্ব তাকেই তিনি দিতে পারবেন। ওখানকার আউটডোর শুটিংয়ের ব্যবস্থাপনার বেশ কিছু দায়িত্ব তিনি পেয়েছেন। তারমধ্যে একটা বড়ো ব্যাপার হয় এই পরিবহন। কথাটা জানতে পেরেই অনমিত্র ছুটল রাঁচিতে। একটা ভালো গাড়ির ব্যবস্থাও করে ফেলল। সিন্ডিকেট থেকে একটা অনুমতিও আদায় করে নিল কিছু খরচাপাতি করে। ঠিক হলো শুটিংয়ের আগের দিন সে আসবে তার গাড়ি নিয়ে। তিন দিন যে ওরা ওখানে থাকবেন, সেই সময়ে ম্যাডামের গাড়ি চালানোর দায়িত্ব তাঁর। ওই গাড়িতে আর কেউ উঠবে না। শুধু ম্যাডাম আর চালক হিসেবে সে। এইসব কথা ভাবতেই কেমন একটা রোমাঞ্চবোধ করল অনমিত্র।
যথাসময়ে যথানির্দিষ্ট দিনে রাঁচিতে এসে ট্রেনটা থামল। ইউনিটের লোকজনের সঙ্গে সুচিত্রা সেন এবং অশোককুমার নামলেন। খবরটা কীভাবে যেন রটে গিয়েছিল। সময়টা গভীর রাত হলেও স্টেশনে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড়। স্বপ্নের নায়ক-নায়িকাকে এক ঝলক দেখার সুযোগ কেউ হারাতে চাইল না। হিন্দি সিনেমার এক সুপার স্টারের সঙ্গে সুচিত্রা সেনকে দেখতে পাওয়া তো রীতিমতো সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিছু দিন আগে দেবদাস ছবির পার্বতীর ভূমিকায় অভিনয় করে সারা ভারতে সাড়া ফেলে দিয়েছেন যে নায়িকা তাঁকে দেখতে আসার জন্য এই ভিড় তো হবেই। রাঁচি জায়গাটা অবাঙ্গালি অধ্যুষিত হলেও ওখানে প্রচুর বাঙ্গালি থাকেন। তাই দুই সম্প্রদায়ের লোকের ভিড় সমানভাবেই হলো। যথাসময়ে ম্যাডাম কালো চশমা চোখে গাড়ি থেকে নামলেন। পুলিশ কর্ডন করে তাঁকে গাড়ি অব্দি পৌঁছে দিলো। অনমিত্র গাড়ির দরোজা খুলে দিল। ম্যাডাম বসলেন। একটা হাল্কা সুগন্ধির সুবাস গাড়িতে একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ল। গাড়ি এগিয়ে চলল। ওখান থেকে গেস্ট হাউস আধ ঘন্টার পথ। অনমিত্র সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ির স্পিড কম দেখে ম্যাডাম শুধু একবার বললেন আরেকটু জোরে চালান ভাই। স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে কী বলবে কী বলবে ভাবতে ভাবতেই গেস্ট হাউজটা এসে গেল। অনমিত্র গাড়ি থেকে নেমে দরোজা খুলে দিলো। ম্যাডাম নামলেন। চোখে চশমা নেই। কিছু না ভেবে অনমিত্র ম্যাডামকে ঢিপ করে একটা প্রণাম করল। ম্যাডাম মনে হয় একটু বিরক্তই হলেন। কোনো কথা না বলে গটগট করে গেস্ট হাউজের দিকে এগিয়ে গেলেন। অনমিত্র তাঁর গমনপথের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ।
এখন ওই ল্যান্সডাউন রোডের বিশাল বাড়িতে একাই থাকেন শ্রীমতী সেন। তিনি প্রাণমন ঢেলে অভিনয় জগতেই থাকতে চান। সারা ভারতে তাঁর অজস্র গুণগ্রাহী। বম্বে থেকে প্রচুর ডাক আসছে। কিছু দিন বাদেই সপ্তপদী এবং সাত পাকে বাঁধা ছবির শুটিং।
পরদিন দুপুরে শুটিং। সকাল থেকেই প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে। কয়েকবার স্পটে যাওয়া হয়েছে। অনমিত্র অবশ্য ম্যাডামকে নিয়ে যাবার জন্য বেলা একটা থেকে তৈরি হয়ে আছে। তোপচাচি লেকে সেদিন লোকে লোকারণ্য। তারই মধ্যে শুটিংয়ের কাজ চলল। দূর থেকে জুম করে অনেক শট নেওয়া হলো। গীতা দত্তের গানের সঙ্গে চমৎকার লিপ দিলেন শ্রীমতী সেন। মুনমুন বিদেশে। স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এখন ওই ল্যান্সডাউন রোডের বিশাল বাড়িতে একাই থাকেন শ্রীমতী সেন। তিনি প্রাণমন ঢেলে অভিনয় জগতেই থাকতে চান। সারা ভারতে তাঁর অজস্র গুণগ্রাহী। বম্বে থেকে প্রচুর ডাক আসছে। কিছু দিন বাদেই সপ্তপদী এবং সাত পাকে বাঁধা ছবির শুটিং। দুটো ভিন্নধর্মী ছবি। সৌমিত্রর সঙ্গে এই প্রথম কাজ করবেন ম্যাডাম। বয়সে তিন বছর ছোটো হলেও চশমা পরিয়ে তাঁর একটা নতুন লুক তৈরি করেছেন পরিচালক অসিত সেন। অধ্যাপকের এক আদর্শ চেহারা। নেপথ্যে গান যখন বাজছিল, ম্যাডাম কি এসব কথাই মনে মনে ভাবছিলেন! নাকি তাঁর মদ্যপ স্বামীর অকথ্য অত্যাচারের কথা! তখনকার উলটোরথ, সিনেমা জগৎ আর জলসা পত্রিকার কল্যাণে নায়ক নায়িকাদের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক গপ্পোই তখন সবার জানা। তাছাড়া কাকার সৌজন্যে সে ওই জগতের অনেকের কেচ্ছা কাহিনি অনমিত্র অনেক আগেই অবগত হয়েছে। তবে ম্যাডাম সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক গল্প সে সহ্য করতে পারত না। দূর থেকে শুটিং দেখতে দেখতে অনেক কথাই ভাবছিল অনমিত্র। সে কী তাঁর স্বপ্নের নায়িকার এত কাছাকাছি না এলেই কি ভালো করত! কিন্তু এখন তো আর করার কিছু নেই। এখন ভালোয় ভালোয় শুটিংটা শেষ হলে হয়। আজই ওটা শেষ করতে চাইছেন পরিচালক। বাড়তি একটা দিন কিছুতেই থাকতে চাইছেন না ম্যাডাম। কৃত্রিম কিছু আলোর ব্যবস্থা করতে অবশেষে শুটিং-পর্ব অনেক রাত অব্দি চলল। এক সময় পরিচালক ঘোষণা করলেন—প্যাক আপ। রাতেই জানা গেল পরদিন সকালেই অশোককুমার রাঁচি থেকে ফ্লাইট ধরে বম্বে ফিরবেন একটা বিশেষ কাজে। ম্যাডাম সেনও ঠিক করেছেন তিনিও ফ্লাইট ধরে কলকাতায় ফিরে যাবেন। অনমিত্র দুজনকে এক গাড়িতে নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেবে। কল টাইম সকাল আটটা। কদিন এইসব সিনেমাওয়ালাদের সঙ্গে থেকে এই শব্দটা সে বেশ রপ্ত করে ফেলেছে।
সকাল আটটার আগেই পৌঁছে গেছে অনমিত্র। ম্যাডাম সেদিন আগেই এসে গেলেন, তার কিছুক্ষণ পরে অশোককুমার। গাড়ি চলল। কুড়ি মিনিটের পথ হুশ করে শেষ হয়ে গেল। গাড়ি পৌঁছে গেল রাঁচি এয়ারপোর্ট।
জন্ম (১৯৪৭) খুলনায়। লেখক ও সম্পাদক হিসেবে তিনি সুপরিচিত। দীর্ঘকাল সম্পাদকীয় সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিলেন ‘বিজ্ঞাপন পর্ব’ এবং ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকার সঙ্গে। সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০। প্রিয় বিষয় সংগীত, নাটক ও নৃত্য। তাকে ‘দুই বাংলার নিরর্গল সেতু’ আখ্যা দিয়েছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। বর্তমান বাসস্থান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনার হৃদয়পুরে। পেশায় ছিলেন গ্রন্থাগারিক। ‘একটি গৃহের কথা’ শিরোনামে স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন।