নিখোঁজ সংবাদ
‘নিখোঁজ সংবাদ’ লেখা, তার নিচে ছবিটি আমার!
চুল—চোখ অবিকল, নাকটিও
…………………………….এমনকি জামার
ছেঁড়া হাতা, রঙ-ঢঙ মিলছে হুবহু!
জানলাম—হারিয়ে গেছি, লু হাওয়া বইছে হুহু হু…
‘হারানো বিজ্ঞপ্তি’ লেখা, তার নিচে চেনা চেনা মুখ!
আয়না হারায় যারা, চোখের অ-সুখ
…………………………………..আছে যার—
সমস্ত হারানো মুখের পাশে মুখ আঁকা তার।
জানলাম—হারিয়ে গেছি…
‘সন্ধান চাই’ পোস্টারে লিফলেটে
……………….শহরের সমস্ত দেয়াল গেছে ছেয়ে—
কে?—কেউ তো রয়েছে অখিলেশ
……………….আমার সন্ধান চেয়ে চেয়ে
গোপনে কাঁদছে কেউ…কে?
হারানো প্রেমিকা নাকি নিজেই খুঁজছি নিজেকে?
আত্মপ্রতিকৃতিঃ মোহাম্মদ জসিম ও বিগতজন্মের অপেক্ষারা
গ্রীক ও রোমান পুঁথি-পুস্তকে একজন সম্রাটের নাম পাওয়া যায় যিনি শাসন করতেন, কবিতা লিখতেন এবং প্রেম করতেন। তার নাম মোহাম্মদ জসিম—দ্বিমত করেননি কোন ঐতিহাসিক…
ইনকা সভ্যতায় পাওয়া গেল এক আশ্চর্য কাবিননামা—যেখানে মোহাম্মদ জসিম বলে একজন কবি বিয়ে করছেন একজন দেবদাসীকে…
এরিক ফন দ্যনিকেন জানিয়েছেন, তিনি মায়ান সভ্যতার একটি প্রস্তরফলকে দেখেছেন সুইসাইড নোট—লিখেছেন একজন নিঃসঙ্গ মানুষ… তার নামও মোহাম্মদ জসিম!
রাখালবাবু তার ব্যক্তিগত ডায়রিতে লিখেছেন মহেঞ্জোদারো সভ্যতার কথা—লিখেছেন আমি একটি কঙ্কাল দেখতে পেলাম যার আঙুলে রৌপ্যনির্মিত আঙটিতে খোদাই করা ছিল ম ও জ দুটো বর্ণ… সম্ভবত বর্ণদু’টি মোহাম্মদ জসিম নামটিকে নির্দেশ করে যিনি বাদশাহর গুপ্তচর ছিলেন।
অতএব—এবারই প্রথম নয়—তোমার খোঁজে ইতিহাসে বহুবার ঘুরে গেছি আমি, পৃথিবী আমার জন্য এখন আর বিদেশ নেই।
কাবিননামা
এই কাবিননামা লেখা হইতেছে মেঘের পৃষ্ঠায়—সম্ভাব্য বৃষ্টির সমর্থনে…
স্বপ্নে ও সম্মোহনে জর্জরিত, ঝড় ও ঝুমকোলতা দুলে ওঠা দোলসন্ধ্যেবেলার এই আয়োজনে সবাই একসাথে হেসে উঠবেন—মফস্বলের রাস্তা, রাস্তার গর্ত, মৃত্যুসংবাদ ও ভূতের ভয় পার হয়ে এসে এক গোছা চাবি ও সুখ ক্রয় করতে এসেছেন যিনি তার জন্য হাততালি।
হাজার দশেক দুঃখ ও বাষট্টিটি ব্যর্থতাসহ এক সহস্র স্বপ্ন দেনমোহরে এই বিবাহকর্ম সুসম্পন্ন হইতেছে
বলুন কবুল…
গুপ্তঘাতক
মৃত মুখোশের আত্মজীবনী ঘেঁটে পেয়ে গেছি বিস্মৃত মুখের এই অসম্ভব ভূগোল—অসমাপ্ত কথার জঞ্জাল থেকে পেয়েছি ছদ্মনাম—আততায়ী ও তার স্বীকারোক্তিগুলো; গোপন ইশারাগুলো ঝুলে আছে—ঘড়ির কাঁটায় তখনও তৃষ্ণার্ত স্বপ্নের প্ররোচনায় রাত জেগে সেলাই শিখছে কবিতারা…
আগুন আগুন স্বপ্নের মাই চুষে চুষে যে লোকটি পুড়িয়ে ফেলেছিল সমগ্র নিশ্বাস—তার কাছে কবিতার ছবক নিতে চাই।
আমি মুখোশের নেপথ্যে সেই লোকটিকে খুঁজছি…
শীতনিদ্রা
নিষিদ্ধ অতীতও তর্জমা করেছি কান্নায়—কবিতায়; অমিমাংসিত মায়াকান্নাগুলো মুছে দিয়ে শ্যাওলাজমা স্বপ্নের আটপৌড়ে শরীরে এঁকেছি অ-সুখের উল্কিমালা। ভাবছি স্মৃতিকাতর শব্দগুলোকে ছুটি দিয়ে দেবো। ইদানিং কোথাও থাকছি না আমি—অতৃপ্ত পাখিমন, পরিযায়ী গল্পের ডানায় ভর করে উড়ে উড়ে তোমার গোলাপী রেলিঙঘেরা ঝুলবারান্দায় শীতযাপনের ইতিহাসে ওম খুঁজে ফিরি—আমি সেই বিরহকাতর পাখিদের শেষ প্রজন্ম…
রাত্রির প্রবেশপথে মৃত্যুপ্রবণতা ছড়িয়ে রেখেও দিব্যি মাথা রাখলে বালিশের বিভৎস বুকে! বন্ধ চোখদুটো সংক্রমিত হলে মুগ্ধতা ছড়ানো স্বপ্নের ইশারায়—আঁধারের পর্দা টেনে আড়াল করেছো আমিময় সমূহ অতীত।
তোমার ঘুমের পাশে পরাবাস্তব ইঙ্গিত আছে…
জন্ম ৩ এপ্রিল ১৯৮৭ সালে, বরিশালে। প্রকাশিত বই : ‘ত্রয়োদশ দুঃস্বপ্ন’ (২০১২), ‘অসম্পাদিত মানুষের মিথ’ (২০১৮), ‘মিথ্যেরা সাত বোন’ (২০১৯), ‘তামাশামণ্ডপ, কোলাহল চিহ্নিত, অশ্বখুর ও অন্যান্য টগবগ’ (২০২০), ‘লাঞ্চ বিফোর দ্য ইউটার্ন’ (২০২১। সম্পাদিত পত্রিকা : ‘পৃষ্ঠা’।