মহামাঝি
তোমারই সব
সবকিছু
বৈঠাও
কেবল
সাঁতার নিও না
চিঠি
আনন্দে আসন করে
এই তো বসেছি আমি
একবার চলে এসো
ফুলের গগন ফেলে
আমাকে বাঁচাবে বলে
মৃতেরা এসেছে ফিরে।
স্নানসর্বস্ব
দূর হতে গান আসে গানের খেয়ালে। তারকার ঘাম হতে গেঁজে ওঠে ঘুম।
এমন সংগীত তুমি একাকী বাজালে। যন্ত্রের প্রাণের মাঝে বরষা নিঝুম।
নিদ্রাচারী চাঁদ গেল বেপাড়ার ঘরে।কোকিলের কালো যায় জোছনার ভাগে।
নিদ্রা বিষাদের বোন টুটি চেপে ধরে। কিছুটা রমণ চাই সঙ্গমের আগে।
তার লোভে বিষ পান অন্ধকারে বসে।আঁধার তোমার কাছে রটাল সে কথা।
আত্মশব কাঁধে নিয়ে তারকারা খসে। শবদেহে আলো জ্বালা সঙ্গমের প্রথা।
এই ঘোর যন্ত্রঘোর, চোখ বুজে থাকা। শিয়রের কাছে বৃথা মোম জ্বেলে রাখা
উদ্দেশ্য
নত হতে আসি
কলস যেমন নত হয়ে
ভরে নেয় জল।
ঘুণরচিত শরীর
তোমার কাছে রাখি
নত হতে আসি
অস্তরাগ যেমন আসে
হোসেন মিয়ার ক্ষেতে
যেমন
ঝরে পড়ার আগে
মেঘ নেমে আসে
মন্দিরচূড়ার কাছে
নত হতে আসি
যেমন নত হয়
নগ্ন মানুষ চিতায় ওঠার আগে
সর্পশাসন
জানি, সাপের সঙ্গে দেখা হল তোমার।
আমি যে দিয়েছি
সর্পশাসিত মরু, সেখানে
হাঁটতে গিয়ে দেখা হল
সাপের সঙ্গে।
সে তোমাকে শোনায় হিসহিস,
কুণ্ডলীবিদ্যা আর
দৃষ্টিহীন অতীতের গল্প।
আমিও এসেছি, দ্যাখো
এই যে,
দংশনের দাগ
এই যে
নীলচক্ষু আর তৃষ্ণার্ত
করতল…
জানি সাপের সঙ্গে দেখা হল তোমার
দংশিতের কথা তুমি
ভুলে যাবে,
তোমার মাথার মণিটি এখন
নিয়ে যাবে সে
তখন তুমিও মরুদেশ, সর্পশাসিত
বিকেল
ঋতুচন্দ্রের গুঁড়ো ভেসে আসছে। আকাশের আঁশ খসে পড়ে যাচ্ছে।
সহস্র সোনার ত্রিভুজ নিয়ে বিদেশি স্বর্ণকার সকলের বুকে বুকে
পরিয়ে দিচ্ছে প্রেম।
ঠিক তখন মাঝিকে নৌকো থেকে ফেলে দিল শীৎকৃত জল।
এমন তো হবার কথা নয়
স্বভাবে ঘাতক বিকেল আজ এসব কী করে দেখাল?
এক হরিণী এসে শিকারীকে সাধে আপনা মাঁস
এক আতরঅলা দেখি
নাকেমুখে ছুঁড়ে দিচ্ছে কস্তূরী তার
এ বিকেল আমার? আমার একার?
অজন্তা হতে বিভঙ্গ এসে তোমাকে জড়াল
জল থেকে উঠে এসে সেই একাবোবা মাঝি
জলের গায়েই বিদেহী গানের স্বরলিপি ছড়ায়
ঘুমচাষী
কে এক মানুষ তার ঘুমের বীজের থলে হারিয়ে ফেলে শেষে
বটতলে কাঁদে আর বাতাসে ভাসিয়ে দেয় যতটা নিদ্রা তার
নয়নে লুকানো ছিল। সে কোন মানুষ? কোথা হতে এল এই
দগ্ধ চরাচরে?
নদীর কিনার ধরে নারীর কলস নিয়ে একাকী গান হেঁটে
গেলে অমন মানুষ, এমন জমাট বাঁধা নিকষ আলোছায়া
ঘুমের অতলে ডুবে ঐশ্বর্য তুলতে গিয়ে ফেরে না একেবারে
উবে গেল যেন
আমি তো তেমন নই, আমি তো নিদ্রার কথা বলিনি, তবে? তবে
কেন যে একাকী ছায়া দূরের বটের ছায়া আমাকে ডেকে যায়
আঁধার হবার আগে শরীরে শরীর তার ডাক শুনতে পাই, পেয়ে
লুপ্ত হয়ে যাই
প্যানিক
পেশায় হাতির মাহুত, এমন এক মানুষ যদি
কবিতা লিখত রাতের বেলা!
কলমের বদলে তার হাতে থাকত
সোনার অঙ্কুশ?
এমন কি আর বাস্তবে হয়?
বাস্তব তো আর কবিতা নয়।
এই যে মাহুতবন্ধু, এই যে পায়ের বেড়ি
এই যে আলাদা মন, আলাদা রাস্তার ধুলো
এসব তো আসে না দেখি
কবিতার বেশ্যাবাড়ি
তবুও
পেশায় হাতির মাহুত, এমন এক মানুষ যদি
কবিতা লেখে রাতের বেলা!
তখন দেখব দূরে
মস্তহস্তিটির চোখে
কামনা তিরতির করে
তার রচনায়
মানুষ এমনই নোনা
সহজ বাতাসকে তারা
অকারণ লবণাক্ত করে।
পাপকস্তূরী
আমার গন্ধে
মাতোয়ারা আমি—
আমি এক
বিশুদ্ধ হরিণ।
নাভিতে তোমার ঘ্রাণ
ফিরি করি
বনে বনে, অন্তরালে।
কিন্তু
এই ঘ্রাণসন্ত্রাস,
এ গন্ধশিকারী,
এই নবমীচাঁদ
নিয়ে
কোথায় লুকাব বলো,
বলে দাও ঠিকানা—
যেখানে নাভির দোষে
কেউ কাউকে মারে না
ঋতুচিত্র
মনের মৃতদেহকে
বসন্তঋতু বলে
পৃথিবীতে তার
কোনো দরকার নেই
তবু সে আসে
আসে ঘুরে ঘুরে
শরীরের কপাট খুলে
উঠোনে
মনের মড়া রাখে
শিস দিতে দিতে ফিরে যায়
অশোক দেবের জন্ম ১৯৬৯ সালে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। গত শতকের নয়ের দশক থেকে লিখছেন। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ পাঁচটি, একটি গল্পগ্রন্থ একটি উপন্যাস। সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য ত্রিপুরা সরকার তাঁকে সলিলকৃষ্ণ দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। পেশায় শিক্ষক।