শনিবার, নভেম্বর ২৩

নির্বাচিত দশ কবিতা : কৌশিক বাজারী

0

মুকুরে রেখেছ মুখ, কপালে নিয়তি
…..কাঁচুলিতে বেঁধেছো দুর্যোগ
প্রতীক্ষা রেখেছো পথে, কুঞ্জকুটীরে
……অভিসারে রেখেছ বিপ্লব
নির্জন ভূর্জে একা রচনা করেছ শুভ-প্রেম
তোমার প্রেমের মঞ্চে তিনি এসে বাজাবেন
………..গান, রাগানুগা…।

 


কদম্ব কাননে ঘোরে চোর এক, সিঁধেল কানাই।
এমনই বেহায়া চোর, এত বেশরম
চুরি করে নিয়ে যায় স্নান দৃশ্য, রাধার শরম…
(স্নান সেরে ফিরে যায় পটুয়ার ছবি)
চোরা আঁখে, আড় দিঠে, খোঁজে সে চোরায়…,
(হেমেন বাবুর ছবি আড় দিঠে চায়…)
সিক্ত বসন রাধা, ধীরে চলে যায়…

 


সচেতনে যেও বঁধু ইস্টিশান ঘাটে, ওভারব্রিজের নীচে
মড়া শুয়ে আছে, সে মড়ার বাঁকা ভুরু, আঁকা চোখ
শিয়রে ময়ূরপুচ্ছ নাচে…
কলসি ডুবাও রাধা, দেখো জল খল খল হাসে
সাবধানে যেও বঁধু, ঘোরকালো পরকীয়া মড়া উঠে বসে
ফিশপ্লেট খোলা আছে, অদূরে রেলের বাঁশি বাজে…

 


—শ্রীকৃষ্ণ শৃঙ্গারে অঙ্গ হয়েছে অঙ্গার, দেখ শ্রীরাই কিশোরী,
কিমুখে যাইবি ফিরে আয়ানের ঘরে অবেলায় ?

—শরম-ধরম-লাজ ভাসিয়েছি কালিন্দীর জলে …

……সেই চিহ্ন নাভিমূলে, স্তনবৃন্তে, হৃদে, এ কলঙ্ক প্রোথিত গভীরে
তবু , কর্কটযন্ত্রনা পৃথ্বীর উপশম হৈছে কি ?
উপশম চিহ্ন এই দাগ।
সখী, লেগেছে তা , …লাগা চুনরি মে দাগ
………………লাগা চুনরি মে দাগ…

 

১০
কৃত্তিকার মৃদু আলো নিভে গেছে যমুনার কোলে
বাতাসে শিশির ওড়ে, কুহেলিকা ছেয়েছে প্রাঙ্গণ
শয্যায় ঘুমঘোরে গৃহিনী শ্রীমতী
স্বপ্নে মুস্কুরাহট কার প্রতি? কার প্রতি আশনায় ওর?
(তাহার রূপের নাই ওর, তাহার গুণের নাই ওর…!)
কী কথা তাহার সাথে, তার সঙ্গে, কীসের ছেনালি?
আয়ান গোয়ালা তবে অপুরুষ!
ঝনঝন ভেঙে যায় আয়ানের হৃদি আর অর্ধরাতে শ্রীমতীর ঘুম…

 

১৪
—দেখো শ্যাম, এ কোন অচিন নদ, বালুকা বিস্তার বারোমাস
দেখো তার শীর্ণজলধার, বাঁকে বাঁকে একলা দাঁড়ায়ে ঐ
……………….শীর্ণ মন্দির গুলি কার
এই দেশ লাল রুক্ষ রাঢ়, শীর্ণকায় ধেনু গুলি দেখো
রাখালেরা ততোধিক মলিন কাঙাল
……………তবু বাঁশী তার বেজে ওঠে সুরে

—এসো রাই, ধূলার শয্যা পাতো, বালুকা বেলায় রাখো হৃদি
মাটির গভীরে যাই, লিখে রাখি লীলা কৃষ্ণ-রাই ।

বহুকাল বাদে কেউ জাগাবে কি মৃত্তিকা খননে দুটি হাড়…?

 

১৭
হেরো শ্যাম, ছেয়েছে দুর্দিন ওই কুজ্ঝটিকা ঈশান প্রান্তরে
গোধুলির ধুলো ওড়ে, রক্তিম আকাশে ওড়ে অশনি ও বাজ
এসো, গোবর্ধনগিরিধারী, কালীয়দমনরূপী কালা
এসো আজ, মসিহার বেশে এই গোধুলি বেলায়
কেউ না চিনুক, এই আমি ঠিক চিনেছি তোমায়
আজ আর শ্যাম ডেকে ফাঁসাবো না জনিও নিশ্চয়…
পৌর ঝরনার ধারে বসে আছি, কাঁখে নিয়ে কলসি জারিকেন
র্যা শনের কার্ড আছে, রাধা ঘোষ—এই নামে
বিবাহ হয়নিকো…আমি কারও নই কানু বিনা…

 

১৮
গোধূলির ধেণুগুলি গোষ্ঠের পথে গেছে ফিরে
কোমল পল্লবের স্তূপে বসে আছে ধেণু-বৎসগুলি
মায়াময় আঁখি হতে অশ্রুর মতো অবিরল, জল
খোঁজে তাকে, সে কোথায়, ঊর্ধ্বমুখে মা বলে ডাকে
সেই শ্যামল বালকে
–এই দৃশ্যে বালিকার অশ্রু ছলোছল।
গোঠের রাখাল এসো ফিরে, খাটালে দুধের ভিড়
স্কুল-ছুট রাধা আজ বাজারের ব্যাগ হাতে
কাঁদিছে তোমায়…

 

২১
জ্বলেছে অনন্ত অগ্নি, ব্যাধ এসে বিঁধেছে শরীর
আছাড়ি পিছাড়ি অশ্রু বাঁধ নাহি মানে রুক্মিণীর
যদুপল্লি নীরব, অস্থির…

অতিদূর অন্য এক গাঁয়, অন্য এক পৃথিবীর সৌর-আধার
স্মৃতির গর্ভ ঠেলে অন্য কেউ নারী
বৃদ্ধের শিয়রে দাঁড়ায়…

জন্ম ভেঙে যায়…
মৃত্যু
ভেঙে যায়…

 

২২
কদম্ব নামেই তবু বেজে ওঠে বাঁশি, গরু নয়, মাঠে চরে ধেণু, ওই দূর শ্যামদীঘি আসলে তো যমুনার ঘাট। আয়ান গোয়ালার বউ জলকে যায় বাঁকা পথে। এই পথে একদিন কদম্বের ভূত তার চেপেছিল ঘাড়ে, সেই ভয়…। থমথমে সন্ধেবেলা হাওয়া বয়, নিঝুম কদম্বের ডালে বাজে বাঁশি।

কে বাজায়?

…ও পাড়ার ঘোষেদের মুখচোরা ছেলে,… গতমাসে দিয়েছিল দড়ি
আমার কানা-ই ভালো, সখী, কৃষ্ণনামে আঁধার লেগেছে…

 

২৪
কৃষ্ণ এসে দাঁড়িয়েছে দ্বারে, বহুরূপী সাজে এক মলিন বালক।
নীল রঙে সাজিয়েছে অঙ্গ তার, ঢাকিয়াছে শ্যামল শরীর
চূড়ায় ময়ূরপুচ্ছ, গলায় রত্নহার, ফিরায় রোদ্দুরে জরিপাড়
পোড়া দেশে কৃষ্ণ এসে পাতিয়াছে হাত, কী দেব ও হাতে!
আমার বালিকা কন্যার হাত কখনো কি ছোঁয়াব ও-হাতে?
গোপাল মন্দির আছে ঘরে, তবুও সে দোরে দোরে ভিখ মাগে
বহুরূপী সাজে
আমার কন্যার সুখ-লাগি
দুটি টাকা দিই সেই কালো রোগা হাতে…

 

( কৌশিক বাজারীরর ‘মাধুরীর সঙ্গে নাই কেউ’ নামক পুস্তিকা থেকে)

 

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ২৫শে শ্রাবণ, ১৯৭৪, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহর। শিক্ষা : প্রথাগত শিক্ষায় স্নাতক, তাছাড়া অশিক্ষিত প্রায়...। পেশা : কিছু না। সত্যিই... প্রকাশিত বই : পরিণামহীন, শিরোনামহীন (২০০৬) [কবিতা] নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু (২০১৫ ডিসেম্বর) [কবিতা]

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।