শনিবার, নভেম্বর ২৩

নির্বাচিত দশ কবিতা : দেবাশিস তেওয়ারী

0

বাকিটুকু সময়ের


সকল কর্মের ইচ্ছা বন্ধনে প্রোথিত
সকল জটিল কর্ম প্রীতি দিয়ে ঘেরা
সকল প্রীতির ঊর্ধ্বে রঙদার তুলি
বিস্ময় বিবেকহীন চাপায় অন্যেরা !

মশলাভূত মাখা থাকে মাথার ভিতরে
ঘুমিয়ে নিথর সব এইবার ঝুলি
উপরে সিলিং টানছে যন্ত্রণার ঘোরে
মায়ার কুম্ভীপাক ছাড়তে চায় না মন
দেহ থেকে আত্মা থেকে ক্রমে সরে সরে
বিদায় প্রমাণ জ্ঞানে পরমার্থ ভুলি
সকল কর্মের ইচ্ছা জটিল বন্ধন
বাকিটুকু সময়ের রঙদার তুলি ।


প্রীতিইচ্ছা


প্রীতিইচ্ছা— জীবন— আমুদে
ভরাঘট উপচে উঠছে সুদে

প্রহেলিকা— সমূহ— দোপায়া
রামেন্দর, চরম বেহায়া

লজ্জাবতী— রামলালা বোধ
উপচে উঠছে সমূহ বিরোধ

স্বাদেগন্ধে লেফাফা পাঠাও
প্রীতিইচ্ছা সুদেমূলে খাও

খরচা কত ? কে মেটাবে দাম ?
প্রীতিইচ্ছা— পূর্ণ-মনস্কাম


হাড়কালি মায়ার সংসার


লেখার হাতের রস ধুয়ে দেয় অক্ষরের ব্যধি। মাথার আড়ালে থাকা মস্তকের ঘাম হিসেব মাখে না। সেও চায় পরাঙ্মুখ ঘুম। রাত্রির সংশয় আর আমাকে টানে না। চারিদিকে ঘুনপোকা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, নামছে, নানাপ্রদ হাসি। বিশেষণে মুড়ে থাকা ঘুম, সেও আজ স্বপ্ন দ্যাখে,স্বপ্ন মেখে থাকে। আমার ভোরের স্বপ্নে ভেসে যায় মজা নদী, পোড়াকাঠ, অস্থিচূর্ণ, চিতাভস্ম, আকাঙ্ক্ষার লেলিহান শিখা, স্বজাতীর শ্রাদ্ধ-কীর্তন। গনগনে ধোঁয়ার ভিতর থেকে উড়ে যায় কালোরক্ত, অক্ষরের সেতু। যন্ত্রণার পদপ্রান্তে অনর্গল ঘুরতে থাকে আমার অবুঝ বাড়ি, অন্নহীন হাড়কালি— মায়ার সংসার !


অবস্থান


স্রোত ঠেলে জ্বলে ওঠে আলে,
সমূহ লজ্জার ইচ্ছে তুলে নেয় পথশ্রম
যতটুকু যন্ত্রণা খসালে !
যন্ত্রণার ঘনমেঘে বৃষ্টির পুষ্পিত ইচ্ছে মাখা থাকে অবনতি— প্রেম— বৈকালে

এভাবে দাঁড়িয়ে কান্না মেখে লাভ নেই,
ইচ্ছের নদীকে তোমরা কোথায় বসালে ?


পার্থ মানে


পার্থ নুয়া, পার্থ হাসি
পার্থকে মুই ভালোই বাসি

বাসতে বাসতে হাসল নদী
তল পেয়ে যাই আবার যদি

তলের নীচে শুকায় শহর
রাধামাধব— বংশী লহ

বাঁশির নীচে লুকায় রাত
পার্থ নুয়ার খাস্ বরাত

নুয়া-হাসি— সর্বনাম
বাড়ির কাছেই কর্ম-ধাম

কাজের নুয়া ঘোরায় চাকা
পার্থ মানে পাপুর কাকা


গোধূলি মানে


গোধূলি স্বপ্ন দ্যাখে।
গোধূলি মৃত্যুর কুঞ্জ ছায়া
পার করতে করতে হাঁটে
পথপ্রান্তে পান্থশালা পড়ে থাকে
ক্ষয়ের অধিক ।
মৃত্যুর ধর্ম আছে
মৃত্যুও বিধর্মী হতে পারে,
ক্ষয়ের বেদনাকুঞ্জে জেগে উঠলে সম্মোহন
ঘন ঘন বারিপাতে
বেড়ে ওঠে সাধনার
বলয় ইশারা ।
গোধূলি স্বপ্ন দ্যাখে
গোধূলি মানে তো চিমটে, কড়া স্বাদ
কাঁকড়ার দাড়া ।


প্রচণ্ড হেরম্ববোধ


প্রচণ্ড হেরম্ববোধ নিঃসংশয় পড়ে আছে জলে
উপরে পাদুকা, ভাসছে, জলকণা, শূন্য অতিদূর
অর্থের যে অপচয় তার নানা রহস্যের ডালি
ভরে ভরে উঠছে আর পাকে পাকে গন্ধ ভুর ভুর

বের হচ্ছে, যে জটিল পরওয়ার— থমকে যাওয়া ভয়ে
এখনি দাঁড়িয়ে ছিল, এইমাত্র দুমড়ে-মুচড়ে পলে
মেখে নীল পরাকাষ্ঠা, আবার জিগির তুলছে— ধুম্
আর তার স্বরগুলো স্তরে স্তরে ক্রমে ক্ষয়ে ক্ষয়ে
পালিয়ে রোদ্দুর মাখছে, শীতের অপ্রতিরোধ্য ঘুম
অর্থের নানান ফালি পিষে মরছে অনর্থের কলে
প্রচণ্ড হেরম্ববোধ নিঃসংশয় পড়ে থাকে জলে ।


সকল সঞ্চয় বোধ


সকল সঞ্চয় বোধ জমে আছে স্ব-হেতু সত্তায়
সকল সত্তার তীর্থে জমে ওঠে ভাঙা নদীসাঁকো
সকল সাঁকোর অর্থ জমিয়ে দ্যাখায় তিরোধান
ভ্রূকুটি ভাঙে না লজ্জা পার হয়ে যায় ছোটো বাঁকও !

সকল বাঁকের নাম লেখা আছে পৃষ্ঠার হৃদয়ে
সফল হৃদয়তীর্থ নামতে পারে বেদনার পাঁকে
ফলত আয়ুর ধাম, নদীসাঁকো, কিছুই জানে না
সকল সঞ্চয় বোধ স্ব-হেতু সত্তায় জমে থাকে !


বাতি রে বাতি


বাতি রে বাতি
আমরা করি খাতির
খাদের নীচে ছোট্টো পাতা
রাস্তা জনজাতির
উড়ছে পাতা, পাড়ছে পাতা
মাথার উপর ঘুরছে জাঁতা
জাঁতার নীচে গণৎকার
সংসার তো মায়ার জার
জার মানে তো কুয়োর ব্যাঙ
কে যে কাকে মারবে ল্যাঙ
সেসব বোঝা খুব জটিল
ব্যাঙে ব্যাঙে কখন মিল
মিলের মাথায় ফুলকলি
পাক খেয়ে যায় ঘোর কলি


সত্যমিথ্যা


পিটার নাৎসির দুর্গ ভেঙ্কটেশ নাম
উপমেয় শব্দটাকে মিথ্যে ভাবিলাম

ভাবার অনেক দৃষ্টি গোধূলি লক্ষণ
ঝনাৎঝনাৎ শব্দে ছিঁড়ে যায় মন

মনের অনেক নীচে আপাদমস্তক
যেখানে অনেক রাস্তা হেঁটে যায় লোক

লোকের সত্যটুকু ভীষণ ঝাঁঝালো
সমস্যার উপমন্যু জ্বেলে দিল আলো

আলোর প্রদোষে কাঁপে মিথ্যের গোধূলি
মিথ্যে দেখে ভুলে যাই সত্যের সে ঠুলি

কেননা সত্য বড় তির্যক বাহারি
তুলনায় মিথ্যেটুকু— ইজি ধরতে পারি

ইজি ধরবার নেই ডান কিংবা বাম
পিটার নাৎসির দুর্গ ভেঙ্কটেশ নাম

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৪ ই জানুয়ারি ১৯৮২। থাকেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার চাপড়া থানার শ্রীবাসপল্লীতে। খুব অল্পবয়স থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ। ২০০২ সালে শারদ ‘দেশ’-এর মধ্য দিয়ে বৃহত্তর পাঠক সমাজে আত্মপ্রকাশ। তার পর-পরই আকাশবাণী কলকাতায় কবিতা পাঠের আমন্ত্রণ। পূর্বে শারদীয় ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকার আমন্ত্রিত কবি ছিলেন। এখন নিয়মিত শারদ ‘দেশ’-এর আমন্ত্রিত কবি। এ-যাবৎ লিখেছেন আনন্দবাজার পত্রিকা, দেশ, শিলাদিত্য, প্রসাদ, নন্দন, শুকতারা, নবকল্লোল, কবিসম্মেলন, কবিতা পাক্ষিক প্রভৃতি কাগজে। সাপ্তাহিক বর্তমান ম্যাগাজিনে প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'কাছের পাঁচিলগুলো', ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। আনন্দ পাবলিশার্স (সিগনেট প্রেস) থেকে কবির দু'টি কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে। এ-যাবৎ কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ষোলটি। পেশায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। নেশা : বই পড়া ও হেঁটে ঘোরা।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।