একুশে বইমেলা ২০২৩-এ প্রকাশিত হয়েছে আমার দু’টি কবিতার বই। চৈতন্য প্রকাশনী থেকে আসছে ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’, এবং ভাষাচিত্র থেকে আসছে ‘স্বনির্বাচিত কবিতা’। ‘স্বনির্বাচিত কবিতা’ বইটি এ বছর প্রকাশিত হয়েছে একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানের তিনটি প্রকাশনী সংস্থা থেকে― ভারতের আগরতলা থেকে ‘নীহারিকা’, কলকাতা থেকে ‘কবিতা আশ্রম’ এবং ঢাকা থেকে ‘ভাষাচিত্র’ বইটি প্রকাশ করেছে। একুশে বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চৈতন্যের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’, যার স্টল নম্বর ৪৭-৪৮। আর ‘স্বনির্বাচিত কবিতা’ ভাষাচিত্রের প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে, যার প্যাভিলিয়ন নম্বর ৩২। বই দু’টির প্রচ্ছদ করেছেন কবি ও চিত্রশিল্পী রাজীব দত্ত।
‘স্বনির্বাচিত কবিতা’ গ্রন্থটির ছোট একটা গল্প আছে। ২০২২ সালের নভেম্বরের কথা। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ‘নীহারিকা’ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী তীর্থঙ্কর দাস যখন আমাকে এফবি মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠালেন এবং আমার একটি কবিতার বই প্রকাশ করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন, আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম― আপনি কেন আমার বই প্রকাশ করতে চান? ত্রিপুরায় কি আমার কবিতার পাঠক আছে? আমার বই করে তো আপনি বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবেন না। তখন তীর্থঙ্কর যে উত্তরটি দিয়েছিলেন, সেটি শুনে আমার বিস্ময় আরও বেড়েছিল। তিনি বলেছিলেন― ‘দাদা, সবার বই তো আমি লাভের জন্য করি না। আপনার বইটি আমি ভালোবেসেই করতে চাচ্ছি।’ আমি ভালোবাসায় কাতর মানুষ। রাজি হয়ে গেলাম।
এরপর ডিসেম্বরে পাণ্ডুলিপি পাঠালাম। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে পাণ্ডুলিপি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়। এরমধ্যে ত্রিপুরার ধর্মনগরে একটি সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। আসা, যাওয়ার পথে যথারীতি নীহারিকার অফিসে আড্ডা, পাণ্ডুলিপির প্রুফ দেখা, এইসব চলছিল। হঠাৎ একদিন তীর্থঙ্কর জানালেন, বইটি তিনি নীহারিকাসহ আরও দু’টি প্রকাশনা সংস্থা থেকে একই সময়ে একযোগে প্রকাশের উদ্যোগ নিতে চান। শুনে আমি থমকালাম, এমনটিও হতে পারে! তীর্থঙ্কর জানালেন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা জগতে এর উদাহরণ থাকলেও থাকতে পারে, আমার জানামতে বাংলা প্রকাশনা জগতে এটিই প্রথম। তিনি জানালেন এটি তাঁর একটি দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন যে, যৌথ উদ্যোগে একই বই একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে প্রকাশ করবেন। আমার এই গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে তিনি তাঁর সেই স্বপ্ন বান্তবায়নের যাত্রা শুরু করতে চান। ‘স্বনির্বাচিত কবিতা’ প্রকাশের মাধ্যমে সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন করলো আগরতলার ‘নীহারিকা’, কলকাতার ‘কবিতা আশ্রম’ এবং বাংলাদেশের ‘ভাষাচিত্র’। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটিই আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
‘স্বনির্বাচিত কবিতা’ বইটি ১৯৯৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত― গত চব্বিশ বছরে প্রকাশিত আমার ছয়টি কাব্যগ্রন্থের নির্বাচিত কবিতার সংকলন। বাঁক ফেরার অভিজ্ঞতা (দোয়েল প্রকাশনী, ১৯৯৯), চূড়ায় হারানো কণ্ঠ (মঙ্গলসন্ধ্যা, ২০০৩), মায়াদ্বীপ (ঐতিহ্য, ২০১৫), কৃষক ও কবির সেমিনার (অভিযান, ২০২০), সহজিয়া প্রেমের কবিতা (অভিযান, ২০২১) এবং নৈরাজ্যবাদী হাওয়া (চৈতন্য, ২০২৩) থেকে নেওয়া হয়েছে এই সংকলনের কবিতাগুলো।
‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ বইয়ে ৫৬টি কবিতা আছে। যে প্রাত্যহিক জীবন-যাপন, প্রতি মুহূর্তের আমার যে যাপিত জীবন, কেবল উপরিতলের প্রাত্যহিক গতানুগতিক ভাসমান যে জীবন, তা থেকে বের হয়ে এসে জীবন-প্রশ্নের দিকে পৌঁছাবার যে তাগিদ নিজের মধ্যে অনুভব করি, সেই অনুভবই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে এই কবিতাগুলো। সময়কে ধরে, সময়োত্তীর্ণ একটা স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা থাকে আমার কবিতায়। আমার লেখা আমার নিজের সঙ্গে নিজের, এবং একই সঙ্গে জগতের অন্য সকল বস্তু-প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে আমার ইন্টারেকশন। হ্যাঁ এটা সত্য যে, লেখালেখিতে শিল্প সৃষ্টির একটা বিষয় থাকে, যা এক সময় আমার মধ্যে প্রবল ছিল, তখন ‘শিল্পের জন্য শিল্প’, নাকি ‘জীবনের জন্য শিল্প’ এসব নিয়ে খুব ভাবতাম। এখন আমার মনে হয় বাস্তব ও কল্পনা, জীবন ও শিল্প কেউ কারো কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। জীবন মানেই লড়াই, এই পৃথিবীতে লড়াই করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। আমার কাছে লেখাটাও আমার লড়াইয়েরই একটি অংশ, অপ্রত্যক্ষ লড়াই।
মূলত কবি। জন্ম ঢাকায়, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭০। পৈতৃক নিবাস, সোনারগাঁয়ের ললাটি গ্রামে। পড়াশুনা কম্পিউটার বিজ্ঞানে, দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই; এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে, চোন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ‘হিউম্যান রাইটস’ বিষয়ে মাস্টার্স। কবিতায় হাতেখড়ি নব্বই দশকের শুরুতে। থাকেন নিজ গ্রাম সোনারগাঁয়। পেশা ফ্রি-ল্যান্স গবেষক। তিনি একজন মুক্ত-চিন্তক, সংস্কৃতিকর্মী, কাজ করেন মানুষের অধিকার নিয়ে। শখ ভ্রমণ, সুযোগ পেলেই ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশ। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘বাঁক ফেরার অভিজ্ঞতা’ (দোয়েল প্রকাশনী, ১৯৯৯) ‘চূড়ায় হারানো কণ্ঠ’ (মঙ্গলসন্ধ্যা, ২০০৩), ‘মায়াদ্বীপ’ (ঐতিহ্য, ২০১৫), ‘কৃষক ও কবির সেমিনার’ (অভিযান, ২০২০), ‘সহজিয়া প্রেমের কবিতা’ (অভিযান, ২০২১), ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ (চৈতন্য, ২০২৩), ‘স্বনির্বাচিত কবিতা’ (ভাষাচিত্র, ২০২৩)। সম্পাদিত গ্রন্থ: ‘মঙ্গলসন্ধ্যা প্রেমের কবিতা’ (ধ্রুবপদ, ২০১৭)। অন্যান্য গ্রন্থ: ‘এশিয়ার বারটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ (ইংরেজি গ্রন্থ, মে এইটিন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, দক্ষিণ কোরিয়া, ২০১৫), ‘বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম স্মরণগ্রন্থ’ (ঐতিহ্য, একুশে বইমেলা, ২০২০)। পুরস্কার ও সম্মাননা: ‘চন্দ্রাবতী সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার’ (কবিতায়, ২০২১), শালুক সম্মাননা (২০১৯)।