গ্রামে পাওয়া বাস
তুমি তোমার বিক্ষত বাগান দেখাও, যেন পাহাড়ের ধ্বনি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, সুর।
রাতে যখন ঘুমুতে যাই, দেখি চাঁদের আলো বিছানায়, অর্ধেক চেরির ডাল নিয়েছে নির্বিঘ্নে!
কেউ পারে কি সরাতে ওভাবে? যেভাবে ঘুমন্ত বাস কে নিয়ে যায় অনেকে শশ্রূষার দিকে—
কিছু দুর্মর আছে শেকল ছাড়া অন্য প্রতিধ্বনি দ্যায় না।
নতুন সুষমায় ফিরে
গহীন বিন্যাসে নিজেকে নিবেদন করি,
ঈষৎ মেঘাচ্ছন্ন সচ্ছ পাখিটির দিনে—।
যখন নিদ্রাও নয় সেই প্রয়োজন!
দেহের অবনমিক ভিত, পাহাড়ের খাদও নয়।
মোটোর কারের মতো পাখি—ছোটো নৌকা,
বধির পিস্তল ঘুরে একা একা, সন্নিকটে!
তখনও বৃক্ষরা দৃষ্টিহীন; বৃক্ষরা আকস্মিক নির্বাসন ঝোঁক।
শাদা তুলার অফুরান-জানুতে নির্জনতা।
কোন কোন অন্তমিশ্রিত বনের ধীর— হলুদশ্রী ঝরায় শেষে,
ধানিসিঁড়ি নদীতে আরক্ত জাহাজটি লাল কুঁড়িতে ছাওয়া।
একমুঠো গোলাপ এসে রেখে যায় হৃদয়ে দুস্প্রাপ্য চিরুনি!
প্রকৃতি
দোলন-লতার করতলে—
কতল হওয়া উদ্যত বন-মোরগের মতোন
সেজে আছে বুনোফুলের কেয়ারি!
ছোপ ছোপ সারাদিন—।
সে প্রস্তর-শিমুল নিয়ে ঘরে ফিরি।
পরিশ্রুত কাঠের গন্ধ; জমিনের দেউল দ্বারে—
চরণশাখা, ছাতাঝুরি জামদানি থেকে,
অবিরল পালক খসে। ফুলিদানি কিংবা
ফুলিদানি বহন করার জন্য, একটা হাতী!
পত্রলী গাড়সবুজ—বিদ্যুৎ। পাখিদের কীটদষ্ট
সত্য! চঞ্চু ঘষে নেওয়া নক্ষত্র; অধরে।
লাল জিঞ্জির নিয়ে অবিনশ্বর আলোড়ন;
বনের গভীরে—। খোপার স্বচ্ছ রূপালী বিদ্যুৎ
খেলা করে; ক্রমমুক্তির মোরগ এলোচুলে!
কাবিলের জ্যামিতি
তা ছাড়া তোমার প্রেম কাবিল! যন্ত্রণা ছাড়াও যা শৈল্পিক।
প্রতিটি পাপের নূপুর কিন্তু রূপময় সন্ধ্যার এমনই উজ্জলতা ভুলবার নয়!
এমুর হলুদ সবুজ পাথরে অশ্রান্ত শিশির, হাওয়ায় দুলছে জাড়ুলের জিভ!
এর নিচে রাধিকার পরাঘুমরত লেলিহান লঙ্কার যুগ যুগ ধরে।
ভেনাসের উন্নত নারীকে পেলেও, ব্যর্থ পাপ আর হিমবাহ পাওয়া যাবে—
তা ছাড়া তোমার প্রেম কাবিল! সকল উঁচু দরোজা, এসব ভুবনে—
আমাদের নিয়ে যাবে, শিকারের যন্ত্রণা থেকে উত্থিত কবুতরগুলো—
পথে শূন্যময়ীর রূপ
তোমার হাতে ছাতা গুটানো দেখে, বেত সকুঞ্জ গোলাপ তনুরুহ ওদের কথা মনে পড়ছিল।
বুনো ঝার থেকে অনবিদ্ধ মুক্তোর মতোন তুমি, স্থানে-অস্থানে নেই।
সুমন্ধ ধনুক ঘিরে অন্তকরণ চমকাতে লাগল, উঁচু দালানের কটিদেশ থেকে
কাচের টুকরোগুলো কত আলাদা আর নীলাভ! অশোকে জ্বলছে অন্য হরিৎ।
অজ্ঞাত কিছু কালো সর্প নখের অনুরুক্ত। মাঠের দৈর্ঘ্য ভুলে, নিতল মহিষের—সমস্ত অক্ষর
পুষ্পহার ফেলে; সুবর্ণের মর্মছেঁড়া শ্বেতবিধুর— কাগজসন্ন্যাসী ভোরে, এলে কি তুমি?
সালমীর শোভা সকল দলঘাস ধীরে ধীরে তোমাকে বোঝে। তুমি এক হিম দেরাদুন।
মুক্ত করুণ প্রার্থনার সমতূল্য শাহীন। পথের ধুলোপড়া বাগানগুলো শীতের সরাইখানার শয্যার মতোন।
নিমগ্ন পাখিদের আলোড়িত রক্তক্রন্দন নিয়ে; শরীরে দূরে অদূরে হামাওরান, তুর্কী—!
ফুল্ল ক্রমান্বয়ে ধরাশয়ী করতে পারে তোমাকেও।
কবি ও গদ্যকার। জন্ম:২২শে নভেম্বর ১৯৮৯। প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ : ‘দীর্ঘ দিঘির বর্ণনা’, প্রকাশনী বোধ। প্রকাশিতব্য দ্বিতিয় কাব্যগ্রন্থ : ‘বুদ্ধনীল বিকাল’।