গিদাইনস্ক : পোল্যান্ডের বন্দরনগরী
শাকুর মজিদ
বাল্টিক সাগরের বুক চিরে ১৯ ঘন্টার যাত্রা আমাদের শেষ হয় পোল্যান্ডের বন্দরনগরী গিদাইনস্কের তীরে।
স্টকহোম থেকে কাল বিকেলে আমাদের ফেরি ছেড়েছিল। কথা আছে আজ দুপুর সোয়া একটায় আমরা পৌঁছাব। এমনিতে এতো বড়ো সমুদ্রে জাহাজ যাত্রার অভিজ্ঞতা আমাদের কারোই ছিল না। অভিজ্ঞতাটুকু নেওয়াই শুধু উদ্দেশ্য ছিল না আমাদের, অন্য একটা বড়ো কারণও ছিল। নতুন পোল্যান্ডের নব জাগরণের কেন্দ্রতে ছিল এই নগর। এই বন্দরের এক ডক শ্রমিক একদিন এমনই এক নেতায় পরিণত হয়ে যান যে, কেবল শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারই নয়, খোদ দেশটির সর্বোচ্চ শাসন কর্তার পদেও তিনি অধিষ্ঠিত হন। সুতরাং সেই ঐতিহাসিক জনপদটি দেখা এবং সম্ভব হলে এই লোকটির সাথেও ঘন্টা খানেকের আলাপচারিতা যদি করাও যায়, মন্দ হয় না।
বাল্টিক সাগর যাত্রা আমাদের শেষ। এবার লেস ওয়ালেসার শহর দেখার আয়োজন শুরু হবে।
আমাদের ফেরি ঢুকে পড়ে মাতলাভা নদীর মুখে। এই মাতলাভা নদীটি ছুটে এসেছে এই গিদাইনস্ক সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত। পোল্যান্ডের প্রধান ভিসতুলা নদীর শাখা নদী লিনিওয়াকাও এসে মিশেছে বাল্টিক সাগরে গিদাইনস্ক বন্দরের অপর একটি চ্যানেল হিসেবে।
আর এই দুই নদীপথ দিয়েই পোল্যান্ডের ষাট শতাংশ এলাকা গিদাইনস্ক বন্দরের সাথে যুক্ত।
এই গিদাইনস্ক বন্দরটি উত্তর ইউরোপের দেশগুলোর সাথে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সংযোগের ট্রান্স ইউরোপিয়ান করিডোর ৬ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রায় সাড়ে ছয়শো হেক্টার জমির উপরে তৈরি হওয়া এই বন্দরের জলমহালের পরিমান ৪১৩ হেক্টর। বন্দর এলাকায় ঢুকতে চোখে পড়ে কন্টেনার আর কার্গো। গিদাইনস্ক বন্দরের কার্গো ব্যাবস্থাপনা ক্ষমতাও খারাপ না। প্রতিদিন ভিতরবন্দরে ১১.৫ মিলিয়ন টন আর বর্হিবন্দরে ৪৮.৫ মিলিয়ন টন মালামাল ওঠানামা হয়।
বাল্টিক সাগরের কূল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এই বন্দরনগরীটির ভিতর ছুটে চলে আমাদের নিয়ে বয়ে বেড়ানো এই ভ্যান।
এই লোকালয়টি মূলত ৩টা ছোটো ছোটো শহর নিয়ে। অপরটির নাম গিদিনিয়া। যদিও গিদাইনস্কই পুরো পোল্যান্ডের সবচেয়ে বড়ো নৌ-বন্দর। পুরো ত্রিশহর মিলিয়ে ৮ লাখের মতো লোকের বাস হলেও খোদ গিদাইনস্কে বাস করেন সাড়ে চার লাখের মতো অধিবাসী এবং তারা প্রায় সবাই পোলিশ। ভিনদেশী মানুষের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা। সম্ভবত একজন বাঙালি এ শহরে বাস করেন।
এই শহরটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে পোল্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়। যদিও ৯৯৭ সালে এটা পোলান্ডেরই অংশ ছিল। মাঝখানের ১৭৯৩ সালে এটার দখলদারিত্ব পেয়েছিল প্রুশিয়া, ১৮৭১ এ দখল পেল জার্মানী।
.
বাল্টিক তীরের বিকেল
পোল্যান্ড শীত প্রধান দেশ। মাইনাস ২৩ ডিগ্রি পর্যন্ত তার তাপমাত্রাও নামে। তবে সবসময় নয়। এপ্রিল থেকে শীত কাটা শুরু হয়। জুন-জুলাইতে বেশ ভালোই গরম পড়ে। ৩৪ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে। মধ্য এপ্রিল থেকে শীতের রেশ কাটিয়ে গাছপালায় নতুন পাতা গজায়। এ সময় পাতারা সবচেয়ে সুন্দর সবুজ রং ধারণ করে।
এটা একটা আবাসিক এলাকা। ৩-৪শ বছরের একটা পুরনো বাড়িকে হোটেলে রূপান্তর করা হয়েছে। উপর দিকে যে দিকেই চোখ যায়, কোমল সবুজ পাতার কিছু গাছ। নীল আকাশ, আকাশে সাদা সাদা মেঘ, বিকেলের সোনালি রোদ পড়েছে ৪শ বছরের পুরনো লালচে মাটির টালি দেয়া ছাদে, গাছের ডালে, সবুজ পাতার এক পিঠে।
.
সপোত : পোল্যান্ডের স্পা নগরী
সপোত এর এই সমুদ্রতীরটি নাকি কেবলমাত্র বিলাসী বিত্তবানদের জন্য। পোল্যান্ডের বড়োলোকেরা এই অঞ্চলে বাড়ি কিনে রাখেন। আর শীত শেষ হলে গরমের মৌসুমে এখানে এসে থাকেন। এই সমুদ্রমুখো বাড়িগুলোর সামনে দিয়ে দুই স্তরের রাস্তা গিয়েছে। একটিতে মানুষ চলাচল করবে, অপরটি সাইকেলের জন্য। গাড়ি চলা নিষেধ। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে কোনো গাড়ির চলাচল উপযোগী হবে না। সুতরাং গাড়ি থাকবে আধা মাইল দূরে মূল সড়কের সাথে। পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চড়তে হবে সমুদ্রপাড়ের রাস্তায়।
১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সপোতে আটত্রিশ হাজার মানুষের বাস। আট শতকে এই জনপদের গোড়াপত্তন হলেও শহরের মর্যদা পায় এই মাত্র সেদিন ১৯০১ সালে। সপোতের সৈকত এলাকায় যে বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে তার প্রায় অধিকাংশই হোটেল, মোটেল আর রিসোর্ট। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে বেরিয়ে আসার পরে পোল্যান্ডের ধর্নাঢ্য বিলাসী লোকজন সপোতের এই সৈকত এলাকায় সমুদ্রমুখি একটি বাড়ি কিনে রেখে দেন। পোল্যান্ডে যখন সামার শুরু হয় তখন তারা পরিবার পরিজন নিয়ে চলে আসেন সপোতে। আবার যখন শীত শুরু হয় তখন তারা বাড়িগুলো তালা বন্ধ করে চলে যান নিজের জায়গায়।
প্রতিটি বাড়ির সামনে থেকে একটি রাস্তা চলে এসেছে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত। আর রাস্তার দু’ধারে সারি সারি গাছ। যদিও এখন প্রতিটি গাছই ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। কারণ গ্রীষ্ম শুরু হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এখান থেকে নতুন পাতা এবং ডালপালা গজাবে।
বিকেল বেলা সপোতের সমুদ্রতীরটি বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। তীর বরাবর বালিয়াড়ির উপর শরীর সচেতন কিছু মানুষ দৌড়াদৌড়ি করেন। তবে বেশিরভাগ মানুষের আড্ডা বসে সেই কাঠের পিয়ারটির উপর। পুরো ইউরোপের সবচেয়ে লম্বা এই পিয়ারটির দৈর্ঘ্য ৫১৫ মিটার।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি সাপোতের উডেন পিয়ারে। এই কাঠের পিয়ারটিতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। যদিও গ্রীষ্ম শুরু হয়ে গেছে তার পরেও যে পরিমান গরম কাপড় গায়ে চড়াতে হয় সে পরিমান গরম কাপড় আমাদের দেশে কঠিন শীতেও আমরা গায়ে চাড়াই না।
বাল্টিক সাগরের গাঢ় নীল জলের বুকে সাঁতার কেটে চলে অসংখ্য রাজহাঁস। মাঝে মাঝে চখাও চোখে পড়ে। কিছু কিছু উৎসাহি পর্যটক নেমে পড়েন রাজহাঁসগুলোর সাথে ভাব জমাবার জন্য। এক মা তার শিশুটিকে শেখাচ্ছেন ক্যামন করে রাজহাঁসদের সাথে ভাব জমাতে হয়।
এই বিদেশ বিভুঁইয়ে এসে এরকম একটি জিনিস পেয়ে যাব ভাবতেই পারিনি। ‘দুষ্টু চড়ুই’ যেটিকে একান্তই আমাদের পাখি হিসেবে চিনি। কিন্তু মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার দেশ পোল্যান্ডে এসে চুড়ুইয়ের দেখা পাব, অবাক হতেই হয়। এই কাঠের পিয়ারটির মোট দৈর্ঘ্য ৬৫০ মিটার আর তার বাল্টিক সাগরের কুলের পানি থেকে ভিতরে ঢুকে গেছে ৪৫০ মিটার।
ইউরোপের দীর্ঘতম কাঠের পিয়ারটির উপরে হেঁটে বেড়াতে বেড়াতে আমাদের সময় শেষ হয়ে আসে। আমাদের ছুটতে হবে নতুন গন্তব্যে। আমরাও ফিরতে থাকি আমাদের কটেজের দিকে।
.
গিদাইনস্কের রাজবাড়ি
সপোত শহর থেকে আমাদের গাড়ি ছুটছে গিদাইনস্কের দিকে। আমরা যাব প্রাচীন রাজবাড়ির যে দালানটিতে এখন লেস ওয়ালেসার অফিস সেখানে।
আমারদের গাড়ি ছুটে চলে গিদাইনস্কের দিকে। প্রায় ১০০ বর্গমাইল আয়তনের এ শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল ১২৯৩ সালে। যেহেতু এটা জার্মানদের অধিভুক্ত ছিল ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত বেশরিভাগ জার্মানভাষীর বাস ছিল এখানে। সে কারণে জার্মানীর লোকালয়ের একটা ছায়া এই শহরেও দেখা যায়।
আমারদের গাড়ি ছুটে চলে গিদাইনস্কের দিকে। প্রায় ১০০ বর্গমাইল আয়তনের এ শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল ১২৯৩ সালে। যেহেতু এটা জার্মানদের অধিভুক্ত ছিল ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত বেশরিভাগ জার্মানভাষীর বাস ছিল এখানে। সে কারণে জার্মানীর লোকালয়ের একটা ছায়া এই শহরেও দেখা যায়। সে রকমই ঘরবাড়ি। বেশিরভাগই দোতলা। মূল সড়কের পাশে ৪-৫ তলার বেশি দালানকোটা নেই বললেই চলে। একেবারে নতুন যে সকল স্থাপনা গজিয়ে উঠেছে, তাতে কিছু কিছু কাচ আর স্টিলের ব্যবহার আছে। নতুন দালানকোটা বানানোর ক্ষেত্রে অনেক নিষধাজ্ঞাও আছে। শহরটি পুরনো, কিন্তু নোংরা নয়।
আমারদের গাড়ি এসে থামে মাতলাভা নদীর এপাড়ে। ভিতরে শুধুই পায়ে হাঁটা পথ। এই নদীর উপর যে ব্রিজটি আছে, আমরা সেটা পার হই। ডানে বামে নদী পাড়কে আটকে রাখার জন্য রিটেনিং ওয়াল দিয়ে রাখা হযেছে প্রায় ছয়শ বছর ধরে। এই নদীতে এখন আর জাহাজ বা নৌকা চলে না। তবে পাঁচ-ছয়শ বছরের পুরনো মডেলের পাল তোলা জাহাজ নোঙর করে রাখা আছে এক পাশে, এ জাহাজগুলো এখন ইঞ্জিনে চলে। এগুলো দিয়েও চলে যাওয়া যায় একেবারে বাল্টিক সাগরের মোহনা বরাবর, লেসওয়ালেসার সেই ডকইয়ার্ডে। পর্যটকদের নৌ-ভ্রমণের বিনোদন খোরাক দেয় এই জাহাজগুলো।
ব্রিজটা পার হতেই সামনে পড়ে চারটা সমান আকারের গেটওয়ালা এক দালান। বিশাল দালান। তার এলিভেশন অনেকটা গীর্জার ছাঁদে। এ গেটের নাম ‘গ্রীন গেট’।
ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এ গেট বানানো হয়েছিল তদানিন্তন রাজপরিবারের লোকজনের প্রবেশের জন্য। এই হাউজে প্রথম যার সম্ভাষণ ঘটেছিল ১৬৪৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, তিনি ছিলেন পোল্যান্ডের রাজকুমারী।
আমরা যে জায়গাটিতে এসে দাঁড়ালাম, এটাই ষোড়শ শতাব্দীতে বানানো সবচেয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকা। দু’পাশে সারি সারি দালান, মাঝখানে বেশ প্রশস্থ একটা খোলা ময়দান। এ ময়দানের শেষ প্রান্তে একটা উঁচু গীর্জা, গীর্জার দেয়ালে একটা ঘড়ি লাগানো।
আমরা যে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি এটি লংস্ট্রিট এলাকা। পোলিশ ভাষায় এ রাস্তার নাম উলিসা ড্লুগা। এ এলাকার বয়স প্রায় একহাজার বছর।
ত্রয়োদশ শতাব্দিতে অর্ধবৃত্তাকার বাজার এলাকাকে ঘিরে একটি রাস্তা বানানো হয়। শহরের বণিকেরা এই রাস্তার পাশে বসেই তাদের বাণিজ্য সারতেন। আর আস্তে আস্তে এই রাস্তাটিকে ঘিরেই গড়ে ওঠে একটি শহর। এটিই গিদাইনস্কের পুরাতন শহর। ১৩৩১ সালে প্রথম এই বাজারটির লিখিত নাম পাওয়া যায় ল্যাটিন শব্দে [Longa Platea] লোঙগা প্লেটি। আর জার্মানরা এই বাজারের নাম দেয় [Langgasse] ল্যাংগাছি। আর ১৫৫২ সাল থেকে পোলিশরা একে ডাকা শুরু করল [Ulica Dluga] উলিসা ডুলিগা বলে।
লং মার্কেটের আকাশ সীমাকে ছুয়ে দাঁড়িয়ে আছে টাউন হল স্পিয়ার। পঞ্চদশ শতকে নির্মিত হলেও এক অগ্নিকাণ্ডে ১৫৫৬ সালে টাওয়ারটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু ১৫৬১ সালে পোল্যান্ডের রাজা সিগিসমন্ড দ্বিতীয় অগাস্টিনের মূর্তি যখন নির্মান করা হয় তখন আরেকবার বানানো হলো টাউন হল স্পিয়ারটি।
টাউন হলের সামনেই একটি ভাস্কর্য। এটি নেপচুন ঝরনা। নেপচুন ভাস্কর্যটি স্থাপনের জন্য প্রথমে জার্মানীর অগাসবার্গ শহরকে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এটির জায়গা হয় গিদাইনস্কের লং মার্কেটের টাউন হলের সামনে। আর নেপচুন ফাউন্টেনের আলংকারীক অন্যান্য ভাস্কর্য এবং পোলিশ ঈগলগুলোর জন্ম মূল ভাস্কর্যের কিছুদিন পরে ১৬৩৭ সালে।
নেপচুন ঝরনা ঘুরে ফিরে দেখতে দেখতেই একদল পোলিশ শিশুর কার্যকলাপে আকৃষ্ট হই। আদতে তারাও আমাদের মতোই পর্যটক। এসেছে স্কুলের শিক্ষকদের সাথে। তারা যে ভবণটির সামনে বসেছে এটি আর্টাস কোর্ট। এটি বর্তমানের গিদাইনস্কের ইতিহাস জাদুঘরের একটি শাখাও।
এক সময় এটিই ছিল লং মার্কেট এলাকায় ব্যাবসা করতে আসা বণিকদের মিলনকেন্দ্র এবং সে সময়ে গিদাইনস্কের সামাজিক জীবণের প্রাণকেন্দ্রও ছিল এটি।
মধ্যযুগীয় কিংবদন্তী কিং আর্থারটনের নাম থেকেই এ নামটি এসেছে। সে সময় ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের অন্যান্য শহরে যে বাড়িগুলোতে নাইটস এবং অভিজাত লোকজন মিলিত হতেন সে বাড়িগুলোর নাম দেওয়া হতো কিং আর্থারটনের নামে। আর সে কারনেই হয়তো বা এখনও মানুষেরা মিলনস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে এই আর্টাস কোর্টকেই।
১৩৪৮ সালে আর্টাস কোটের নির্মান কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৩৫০ সালে। মাঝখানের উঠানটি এক জায়গায় শেষ হয়, সেখানে একটা সরু রাস্তা। দুটো ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করতে পারে এমন প্রশস্থতায় বানানো সড়কের দু’পাশে আবার দালান। এই দালানগুলো দেখে যতই ক্লাসিক্যাল মনে হোক না কেন, এগুলো আসলে বিগত ৫০-৬০ বছর আগে বানানো। তবে নতুন করে বানাতে গিয়ে তারা ১৭শ শতাব্দীর স্থাপত্যধারা থেকে একচুলও সরে আসেনি। দেয়ালের গায়ে সেখানে যেমন খাঁজকাটা পলেস্তারার কাজ ছিল এখানেও তেমন।
পোল্যান্ড খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দেশ। পোপ জন পল দ্বিতীয় এই পোল্যান্ডের সন্তান ছিলেন। সে কারণে, অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চলের মানুষেরা খ্রিষ্টধর্মপ্রাণ। তার প্রমাণ এই দালানগুলোও।
পোল্যান্ড খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দেশ। পোপ জন পল দ্বিতীয় এই পোল্যান্ডের সন্তান ছিলেন। সে কারণে, অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চলের মানুষেরা খ্রিষ্টধর্মপ্রাণ। তার প্রমাণ এই দালানগুলোও।
৪-৫ তালা উচ্চতার এই ঘরগুলো কিন্তু আয়তনে অনেক সরু। শীতের দিনে মাইনাস টেম্পারেচার থাকে এই শহরে। সবচেয়ে বেশি গরম হলে ১৭ ডিগ্রিতে ওঠে। সুতরাং দরোজা জানালা বন্ধ রাখাই সমীচিন। তবে তাপ ছাড়াই যেহেতু আলো পাওয়া যায়, সে কারণে কাচের জানালার বহুল ব্যবহার এখানে।
এই দালানগুলোর একটা চমৎকার বৈশিষ্ট্য আছে। প্রতিটি দালানে আলাদা আলাদা রং। এ রংগুলোর নানা রকমের গ্র্যাডিয়েন্ট এমন এক এলিভেশন তৈরি করেছে যেন দূর থেকে মনে হবে অনেক বড়ো ক্যানভাসে আঁকা মন্ড্রিয়ানের কোনো চিত্র।
এই রাজসিক দালানগুলোর প্রত্যেকটির ছাদের উপর নানা রকমের মানব মানবীর মূর্তি। তার সবই বাইবেলিয় চরিত্রের পুরুষ ও নারী। ঝান্ডা হাতে ডেভিডের মূর্তিটি চত্বরের মাঝখানে। প্রায় প্রতি ঘরের দরোজার কাছে মেরির মূর্তি বা ছবি।
একটা বাড়ির কারুকাজ থেকে চোখ সরানো যায় না। এটি গোল্ডেন হাউস। এ বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৬১৮ সালে। ধর্নাঢ্য ব্যাবসায়ী এবং সিটি মেয়র জন স্পিম্যান এবং তার স্ত্রী জুডিথ এর জন্য এই গোল্ডেন হাউজটি নির্মাণ করেন। আর এ ভবণটির ফ্যাসাদ জুড়ে ক্লিওপেট্রা, ওডিউপাস, এ্যাকিলিস এবং ওন্তেগনের ভাস্কর্যগুলো শোভা পাচ্ছে।
জন্ম ২২ নভেম্বর, ১৯৬৫। তিনি একজন বাংলাদেশি স্থপতি, নাট্যকার, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও চিত্রগ্রাহক। ভ্রমণকাহিনি ও জীবনী সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।