‘The idea that politics and sport should be kept apart is laughable in Italy.’ —Benito Mussolini
৯ জুন ২০১৬ সালে বিবিসি বাংলার একটি খবর ছিল এরকম, ‘ডেনমার্কে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য একটি আলাদা ফুটবল লীগ আয়োজনের পরিকল্পনা চলছে। এর উদ্দেশ্য আশ্রয় প্রার্থীরা যাতে ভালোভাবে সমাজের সঙ্গে মিশতে পারে। পূর্ব ডেনমার্কের চারটি কেন্দ্রের আশ্রয় প্রার্থীরা এই লীগে অংশ নেবে।’
আজ থেকে প্রায় তেইশ বছর আগে যখন আমার বয়স ছিল ১০; তার ২ কিংবা ১ বছর আগে পরে আমরা প্লেটোর ইদিওস থেকে বেরিয়ে বাস্তবিক বল দিয়ে ফুটবল খেলতে শুরু করেছি। তার আগে কখনও কাগজ মুড়ি দিয়ে অথবা জাম্বুরাকে ফুটবল সদৃশ বানিয়ে খেলতাম। আমার মতো বেশিরভাগেরই শৈশব সম্ভবত এভাবেই কেটেছে। এটা একটা সাধারণ গল্প। ফুটবল খেলতে গিয়ে আমরা বন্ধু বানিয়েছি, আবার শত্রুও বানিয়েছি। আমাদের এই গল্পের সাথে উপরের খবরটির একটা ঈষৎ মিল আছে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের সামাজিকীকরণে ফুটবলের এই ব্যবহার অভিনব মনে হলেও, আমাদের মনোজগৎ আসলে এমন হেজিমনি দ্বারাই আক্রান্ত। নিজেদের টেক্সটের কেন্দ্রে রেখে ভাবলে বুঝতে পারব আমরা সমাজের উপযোগী হচ্ছি খেলার মাঠে গিয়ে। তবে খেলা বলতে এই লেখায় আমরা ‘কমন’ নিচ্ছি ফুটবল। এখন থেকে পুরো লেখায় খেলা অর্থে ফুটবলই লেখা হবে। অর্থাৎ ফুটবল এমনিতে নিজেই একটি রাজনৈতিক টুলস। যার বাটন বেশিরভাগ সময় শাসক গোষ্ঠির হাতেই ছিল। তবে শোষিতরাও কখনও কখনও ফুটবলের ভাষায় নিজেদের হাজির-নজির করেছে। তবে ইতিহাস বলছে এখন পর্যন্ত ফুটবলের সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক ব্যবহার করেছে সামরিক সরকারগুলো। এখানে একটা নোক্তা দেই।
২.
১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ আমি দেখিনি। দেখার কথাও না। আর্জেন্টিনার সাকুল্যে পাওয়া দুই বিশ্বকাপের একটি সেই বছর পাওয়া। কিন্তু এই বিশ্বকাপেই ফুটবলের সবচেয়ে নোংরা রাজনৈতিক ব্যবহার করেছিল আর্জেন্টিনার তৎকালীন জেনারেল ভিদেলার সামরিক সরকার। শুধুমাত্র তার স্বৈরশাসনকে জায়েজ করতে সেবার যেকোনো মূল্যে বিশ্বকাপ জয়ের ছক বানিয়েছিলেন ভিদেলা। ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের হাতে একটা আফিম তুলে দেওয়াই ছিল তার উদ্দেশ্য। বিশ্বকাপের চেয়ে ভালো আর কী বা হতে পারে? তিনি তখন ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপকে তার ক্ষমতায় থাকার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। এবার ৭৮ এর বিশ্বকাপের ওপর কিছুটা আলো ফেলা যাক।
এদোয়ার্দো গালিয়ানো তার ‘সকার ইন সান শ্যাডো’ বইয়ে ১৯৭৮ বিশ্বকাপের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘বুয়েন্স আয়ার্সের মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে যখন বিশ্বকাপের উদ্বোধন করছিলেন জেনারেল ভিদেলা। তার কয়েক কদম দূরে একটা স্কুলে নৌবাহিনীর মেশিন দিয়ে পূর্ণ উদ্যোমে চালিত হচ্ছিল টর্চার ও কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। আর কয়েক মাইল পিছনে বন্দিদেরকে জীবিত অবস্থায় সমুদ্রে ছুড়ে ফেলা হচ্ছিল। ফুটবল এভাবে ভুলিয়ে দিয়েছিল এমন ভয়াবহ দুঃশাসন।’
পোল্যান্ডকে ৩-১ এ হারানোর পর সমীকরণটা ছিল এমন, পেরুর বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনাকে কমপক্ষে ৫ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। ব্রাজিল পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারায়। কিন্তু ৩ ঘণ্টা পরে সন্ধ্যায় ঘটে যায় অন্য এক অকল্পনীয় ঘটনা। সে সময় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পর দক্ষিণ আমেরিকার শক্তিধর দেশ পেরু আর্জেন্টিনার কাছে ৬ গোল খেয়ে হেরে যায়।
সে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি ফাইনাল বলে কিছু ছিল না। তখনকার নিয়মানুযায়ী ১৬টি দল থেকে ৮টি দল পরের রাউন্ডে উন্নীত হতো। নকআউট পদ্ধতি বলে কিছু ছিল না। দলগুলো দুটো গ্রুপে ভাগ হয়ে রাউন্ড রবিন লিগ ফরম্যাটে পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখি হতো। এ দুই গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুটি দল সরাসরি ফাইনালে চলে যাওয়ার নিয়ম ছিল। কোনো সেমিফাইনালও অনুষ্ঠিত হতো না। সেবার একই গ্রুপে ছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। গ্রুপের শেষ ম্যাচের আগে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দুই দলেরই পয়েন্ট ছিল ৩। আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচটি ছিল পেরুর বিরুদ্ধে এবং ব্রাজিলের ম্যাচ ছিল পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে। দুটি ম্যাচ একই সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। আর্জেন্টিনার খেলার ৩ ঘণ্টা আগে ব্রাজিলের খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। পোল্যান্ডকে ৩-১ এ হারানোর পর সমীকরণটা ছিল এমন, পেরুর বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনাকে কমপক্ষে ৫ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। ব্রাজিল পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারায়। কিন্তু ৩ ঘণ্টা পরে সন্ধ্যায় ঘটে যায় অন্য এক অকল্পনীয় ঘটনা। সে সময় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পর দক্ষিণ আমেরিকার শক্তিধর দেশ পেরু আর্জেন্টিনার কাছে ৬ গোল খেয়ে হেরে যায়।
আর্জেন্টিনার জেনারেল ভিদেলার সামরিক সরকার এবং পেরুর জেনারেল ফ্রান্সিসকো বার্মুদেজের সামরিক সরকারের মধ্যে ফুটবল খেলার জয়-পরাজয়ের ব্যবধানের বিষয়ে গোপন চুক্তি হয় বলে তখন প্রচারিত হয়। সে বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না হেরেও ফাইনালে যেতে পারেনি ব্রাজিল।
২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিলেতের ‘ডেইলি মেইল’ পত্রিকায় একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যেখানে বলা হয়, পেরুর তৎকালীন সিনেটর জেনারো লেডেসমা বুয়েন্স আয়ার্সের এক আদালতে নিশ্চিত করেছেন, ৭৮ বিশ্বকাপের পেরু বনাম আর্জেন্টিনার ম্যাচটি পাতানো ছিল। দুই স্বৈরশাসক আগে থেকেই ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে নেয়। শুধু তাই নয়, অভিযোগ আছে ফাইনালের আগে নেদারল্যান্ডসের হোটেলের বাইরে কনসার্ট করে সারারাত ঘুমুতে দেওয়া হয়নি। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ডাচ প্লেয়াররা সামরিক শাসককে স্যালুট জানাতে অস্বীকৃতি জানানোও সে বিশ্বকাপের ঐতিহাসিক ঘটনা। ফুটবলের পলিটিক্যাল উদাহরণ এর চেয়ে বেশি আর কী হতে পারে? যারা খেলার সাথে রাজনীতি মেশাতে চান না তাদের জন্য নিশ্চয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ ইশারা রয়েছে। আরও একটি নোক্তা। শুধু এটুকুই নয়, ডাচ কিংবদন্তি ইউহান ক্রুইফ সেবার বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। পরে তিনি জানান, তার পরিবারকে অপহরণ করার চেষ্টার কারণে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
৩.
ক্রিকেটের উন্মাতাল বিজ্ঞাপনের আগে ফুটবল ছিল এ দেশের মানুষের প্রথম পছন্দ। আবাহনী-মোহামেডানের রক্তপাতের বর্ণনা বাহুল্য হবে। যেমন বাহুল্য মনে হবে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নিয়ে বর্ণনা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২৪ জুলাইয়ে জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে পশ্চিম বঙের নদীয়া জেলায় কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে কৃষ্ণনগর একাদশের বিপক্ষে প্রথম খেলতে নামে বাংলাদেশ। ২-২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে কেউ জেতেনি। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয় অন্য কারণে। সমালোচনার মুখে নদীয়ার জেলা প্রশাসক বরখাস্ত হন অফিসিয়াল দল খেলানোয়। এমনকি ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ) নদীয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগি পদ বাতিল করে দেয়। অবস্থা ছিল এমনই। আমাদের ফুটবলের ব্যবহারটা এখানে জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে উদগত। কিন্তু আন্তর্জাতিক চেতনায় আঘাত দিয়ে শাস্তি পেলেন নদীয়া জেলা প্রশাসক। জাতীয়তাবাদ মূলত ফুটবলের সাথে এক সুতোই গাঁথা। ঠিক এ কারণেই ম্যারাডোনার মুখে সব সময় ফকল্যান্ড লেগে থাকত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা খেলতে গেলে প্রথমেই আসে ‘ফকল্যান্ড’।
এই জায়গায় আমরা অ্যন্তোনিও গ্রামসি এবং মিশেল ফুকোর হেজিমনির কথা বলতে পারি। হেজিমনি তৈরিতে হাসপাতাল, স্কুল, জেলখানা এসবের সাথে ফুটবলও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুকো পাগলদের ওপর ক্ষমতা বিস্তারে চার্চ এবং চিকিৎসকের কথা বলেছেন। ফুটবল তেমনই একটা টুলস। এদুয়ার্দো গালিয়ানো তার বইয়ে ‘ফ্যানাটিক’ দর্শককে নিয়ে লিখতে গিয়ে লিখেছেন, ‘অন্ধ সেই ভক্তকে মাঠে দেখা যায় গগণবিধারি চিৎকার করতে। তারা হাজির হয় আক্রমণাত্মক জিনিসপত্র এবং দলের পতাকা জড়ানো অবস্থায়। দলের জার্সির রঙে সে নিজের মুখ রাঙিয়ে মাঠে আসে। আসার পথে সে যথেষ্ট শোরগোল এবং হইচই করতে করতেই আসে। সে কখনও একা আসে না। উচ্ছৃঙ্খল দর্শকেরই একজন সে।’ তাঁর চরিত্র ভয়াবহভাবে উগ্র ও সাম্প্রদায়িক হতে পারে।
শুধু তাই নয়, খেলোয়াড়দের মারার পর তারা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিল, ‘মাঠে খেলোয়াড়দের প্রত্যয়ের অভাব কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’ এক্ষেত্রে ফুটবলকে আর দশটা ফেনোমেনা থেকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ আছে কি? গালেয়ানো যেমনটা বলেছিলেন, ‘হিংস্রতা ফুটবলকে সেভাবে কলঙ্কিত করেছে, যেভাবে এটি পৃথিবীর অন্য সবকিছুকে করেছে।’
‘হাউ সকার এক্সপ্লেইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইয়ে ফুটবলের এই দিকের উন্মোচন করতে গিয়ে ফ্রাঙ্কলিন ফুয়ের লিখেছেন, কীভাবে রেড স্টার বেলগ্রেডের সমর্থকেরা তাদের খেলোয়াড়দের মাঠে নেমে পিটিয়ে এসেছিল। শুধু তাই নয়, খেলোয়াড়দের মারার পর তারা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিল, ‘মাঠে খেলোয়াড়দের প্রত্যয়ের অভাব কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’ এক্ষেত্রে ফুটবলকে আর দশটা ফেনোমেনা থেকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ আছে কি? গালেয়ানো যেমনটা বলেছিলেন, ‘হিংস্রতা ফুটবলকে সেভাবে কলঙ্কিত করেছে, যেভাবে এটি পৃথিবীর অন্য সবকিছুকে করেছে।’
এই ঘৃণার জন্ম কোথা থেকে? তবে আশার কথা আমার সেই বন্ধু ঘৃণাতেই থেমেছেন। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে তো আমাদের দেশে খুনোখুনির ঘটনাও আছে। এগুলো যেকোনোভাবে আমাদের জাতীয় চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত।
৪.
ওপরে যা লিখলাম তা টিকা লেখার মতো। কিন্তু ফুটবল এতটাই ঘটনাময় যে, ঘটনা এবং তথ্যকে আড়াল করে এর ভূমিকা লেখা দায়। আমার এক বন্ধু একবার বলেছিলেন, তিনি ব্রাজিলকে ঘৃণা করেন। এতে আমি ভয় পেয়েছি। কারণ, ব্রাজিল তো ভারত-পাকিস্তান না। পাকিস্তান বা ভারতকে ঘৃণা করার ঐতিহাসিক এবং সাম্প্রতিক কারণ আছে। কিন্তু ব্রাজিল? এ আরেক আজব ঘটনা। শুধু দেশীয় ভক্তদের ওপর বিরক্ত হয়ে আমার সেই বন্ধু এই অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন যে, ব্রাজিল মানেই খারাপ। নিশ্চয়ই তেমন উদাহরণ ব্রাজিল ভক্তদের মধ্যেও আছে। যারা মনে প্রাণে ‘আর্জেন্টিনা’ নামক দেশটির বিলুপ্তি কামনা করেন। এই ঘৃণার জন্ম কোথা থেকে? তবে আশার কথা আমার সেই বন্ধু ঘৃণাতেই থেমেছেন। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে তো আমাদের দেশে খুনোখুনির ঘটনাও আছে। এগুলো যেকোনোভাবে আমাদের জাতীয় চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত। ‘যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’। এতো আমাদেরই প্রবাদ। এখানে ‘অপরকে’ সর্বোতভাবে পরিতেজ্য ভাবা হয়। যে আমার মতো না তাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করে দাও। এই ‘আদারনেস’ আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে সামাজিক জীবন সবখানেই সমানে প্রবাহিত। যা হলুদ আর নীলকে আলাদা করে দেয়। আমরা কখনও ভাবতেই পারি না হলুদ আর নীল এক সাথে থাকতে পারে। আমরা ধরেই নেই হলুদ তা, যা কখনও নীল নয়। পোস্টমর্ডানিজমকে যতই গালাগাল করা হোক। ধারাবাহিকভাবে সেই দৃষ্টিভঙ্গিই এখন আমাদের ‘দৃষ্টিভঙ্গিকে’ কোনো না কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এর ফল যে কতটা ভয়ংকর কিংবা শুভ হতে পারে তা সময়ই বলে দেবে।
তবে এর অন্য দিকও আছে। ফুটবল অথবা একজন ফুটবলারের হেজিমনি এতটাই জোরালো যে কখনও কখনও তা একটি যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারে। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৯ সালে। নাইজেরিয়ায় খেলতে গিয়েছিল সান্তোস। পেলের খেলা দেখতে ৪৮ ঘন্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল নাইজেরিয়া ও বায়াফ্রা।
৫.
ফুটবলের সাথে নাৎসিজিমের সম্পর্কের কথাও আলাদাভাবে বলা যায়। হিটলারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল তৎকালীন জার্মান ফুটবল ফেডারেশন। হিটলার ক্ষমতা পোক্ত করার পর সমস্ত ইহুদি খেলোয়াড় এবং ক্লাব মালিকদের বাদ দিয়েছিল। যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে প্রায় ৪০ হাজার ইহুদি কোনো না কোনোভাবে ফুটবলের সাথে জড়িত ছিল। মানে, হিটলারের ভয়ংকর দুঃশাসন ও স্বৈরাচারকে বৈধ করতে ফুটবল একটি গুরুত্বপূর্ণ টুলস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকি প্রাক্তন সৈনিকদের ব্রিটিশ সংগঠনের একটি সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে ব্রিটেনের অধিকাংশ শিশু, কিশোর-কিশোরী জানে হিটলার জার্মানীর ফুটবল কোচ ছিলেন।
আরেকটি টিকা দিয়ে এই টিকা ভাষ্যময় লেখাটি শেষ করব। ম্যাথিয়াজ শিন্ডলার, অস্ট্রিয়ার এই কিংবদন্তি প্লেয়ার জার্মান অস্ট্রিয়া দখল করার পর সংযুক্ত জার্মান টিমে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। শেষবার জার্মান একাদশের সঙ্গে অস্টমার্কের হয়ে খেলতে নামেন একটি প্রদর্শনী ম্যাচে। সেই ম্যাচে বারবার গোলের কাছের থেকে এমন ভাবে ঘুরে ঘুরে আসেন গোল না করে, যাতে তিনি বুঝিয়ে দেন খেলার ফলাফল ঠিক করেই দেওয়া আছে জার্মান কর্তৃপক্ষের দ্বারা। সেই শিন্ডলারই আবার ১৪ই মে ১৯৩৮-এ বার্লিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে হিটলারকে ‘নাজি স্যালুট’ জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তিনিও নিশ্চয় জাতীয়তাবাদী এবং রাজনৈতিক চেতনার বাইরে গিয়ে এমন দুঃসাহস দেখাননি!
নোট: এটি ২০১৫ সালে লেখা। একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিতও হয়েছিল। সেই পোর্টাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লেখাটির অস্তিত্ব আর কোথাও ছিল না। প্রাসঙ্গিকতা থাকায় লেখাটি নতুন করে সম্পাদনা করে এখানে দেওয়া হলো।
কবি ও কথাসাহিত্যিক
জন্ম ১৯৮৮, চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত বই : সূর্যাস্তগামী মাছ (কবিতা) ব্রায়ান অ্যাডামস ও মারমেইড বিষ্যুদবার (কবিতা) শেফালি কি জানে (না কবিতা, না গল্প, না উপন্যাস) ক্ল্যাপস ক্ল্যাপস (কবিতা) দ্য রেইনি সিজন (কবিতা) প্রিয় দাঁত ব্যথা (কবিতা) বিষাদের মা কান্তারা (উপন্যাস) সন্তান প্রসবকালীন গান (কবিতা)