ফুলশয্যার গাছ
গন্ধম নামক গাছটিকে আমি জানি না তাহারে আমি চিনি না—তাহার গন্ধ রুপরস আর বাহারিফুল ফলের ভয়মিশ্রিত আর্কষণ নানাভাবে আমাকে ভাবায়! হয়তো এই গাছটির ক্ষমতা সর্ম্পকে আমার ধারণা নেই—অথচ এই গাছটি আমাকে দারুণভাবে চেনে—জেনেছি এর ঘ্রাণ অদৃশ্যের সাতকাহন পৃথিবীকে মাতাল কোরেছে অবিস্মরীয়কাল থেকে। আরো বুঝেছি গন্ধমগাছের নিষিদ্ধ ফল আদম— হাওয়ার শাস্তিমিথ আর চিত্রকল্পে ঈশ্বরের মধুরতায় বপন করা। আহা! কী বিস্ময়—গাছ নিষিদ্ধ নয় পাতা নয় ফুলও নয়
মৃত্যুবোধের অমরতায় আবার যদি সেই গাছ পৃথিবীরবুকে পাওয়া যেতো অপার সুখমিশ্রিত ভাবনায় তার ফুলসুবাসে আমি আরেক জীবন পেতাম প্রিয় ফুলশয্যার রাতে!
মধুরা শতরঞ্জি
একটি ছাতিমগাছে কিছু শরমের অন্ধকার
কয়েকজন ফাগুনফুলের মেয়ে—
তুমি সমুদ্র থেকে সাহস তুলে আনো মনে
পেছনে কাঁপছে অনুভব—
অর্ফিয়ুস মেখে তেরে আসছে সঙ্গনদী—তুমি পেছনে তাকিয়ো না লক্ষিটি!
স্রোতের চিহ্ন ফেলে বালিতে মধুরা খোঁজো—সায়ংকালের দুঃখ
সামনের নদীটি জানে—বালিয়াডির অশ্রূতকালের ছাতিমকাহিনি
শতরঞ্জি বিছানায় ফুলের আত্মকথা শরীর জ্বেলে শতরুপা মেয়েটি ঘুমিয়ে থাকে
আর বেঁচে থাকে ইজমকলার দ্যোতনা টার্নার ‘লিথোগ্রাফি’তে একটি পুষেরাখা পৃথিবী
একটি ধ্বনিত নূপুররেখার বুনন বিকেল
নির্ঝরের ধারে গোলাপ বাগান-অপহারি অন্ধকার ছাড়িয়ে বৈষ্ণব সন্ধ্যায় অনালোকের জানালা খোলা কাছে ধর্মকামি বেড়াল নদীর বাঁকে যুক্তিচ্ছেদ গভীর ঘুমে জেগে ওঠে। আমরা জলাশয়ের চুম্বক মাপি হঠাৎ ট্রেনের শব্দে বাস্তব স্মৃতির ধূসরসমষ্টি
অতপর রাত্রি চিহ্নিত নয়, এ নূপুরি অচেনা রঙের স্বরে আলো জমছে
সময় পোশাক বদলিয়ে আর শ্রাবন্তির মেঘ কাটিয়ে মাধবিলতা শাদা
নদীর বাঁক ইচ্ছেকৃত নয়—
ধ্বনিজন্মে গোলাপ দেশকাল এবং জাতিস্বর স্বপ্নভাঙার অভিমানীরোদের বিকেল
গোলাপই ভূমণ্ডলে রাত্রি নামায়
কবিতার নদীটি প্রেমিক দুর্বোধ্য মাতাল চন্দ্রবোধ পাখির কোলাহল—
আর কবিতার নারীটি প্রেমিকা নদীর আঁকাবাঁকা বিস্ময়ের প্রতিস্বে নির্জনতা
লুম্পেন হাসি
ক্ষণ এবং ভাতের যুদ্ধ যৌনতা নয়—
তাই বেদেনী বাতাসে বাজারের হাত্তালি কেঁপে কেঁপে ওঠে
দূর—বহুদূর থেকে দূরত্ব আরো সরে সরে যায়
প্রদোষে জীবনের অমিত্রঅক্ষর উষ্ণতাবোধে হেঁটে যায় ভাবনাচূর্ণ শুদ্রসন্ধ্যায়
এটা ট্রান্সট্রোমারের কবিতা নয়—
তোমার শীতের অরণ্য বরফগুলো পাঠিয়ে দিও পাখির দেশে পাহারের দেশে
চিত্রকল্পের মননে মুদ্রা আখ্যান জ্বলে জলতাবুর ছায়াঘরে
ঘড়ির ঘুম ভাঙে মেগাস্থিনিসের হাসি
জেনো—সকল খেলায় মুদ্রা পাওয়া যায় না!
ছলচাতুরি
আজ আমাদের দেখা হতে পারতো ধর্মের দূরত্বে
আজ আমাদের দেখা নাও হতে পারতো উদ্ভ্রান্ত সন্ধ্যায়
কবি ও প্রাবন্ধিক। পেশা: শিক্ষকতা। নব্বই দশকের কবি। জন্ম ২২ নভেম্বর ১৯৬৯ খ্রি.। প্রকাশিত গ্রন্থ: ১৩টি। সাম্প্রতিক গ্রন্থ: ‘প্রেমদ্রোহী এলিজিগুচ্ছ’, (২০২২), ‘মেঘপুরাণের যতিচিহ্ন’, (২০২১, কলকাতা)।