বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

বাংলাদেশ ও অন্যান্য কবিতা : দিপংকর মারডুক

0

রুপান্তর


সে সিদ্ধান্তে দ্রবণীয় হতে গিয়ে উপস্থিত হলে রুপান্তর
তুমি; দ্যাখো, উদ্ভিদের কাছে জেগে আছি। নিরাপদ।
উঠি বহুবিধ ভীরু বৃষ্টিকে শূন্যস্থানে ফেলে…
এরা সমুদ্র পরবর্তী আতাগাছের রক্তক্ষরণ জানে না!
জানে আধিক্য বিস্তার করে কুলের উদগ্রীব পৌঁছে
যেতে। যেখানে নেই বীণা ও ব্রিজের সন্ধান।

আমন্ত্রণ শেষ হলে ডেকে নিও যাবতীয় সতত দুপুর
এখন ঠিক মৃত্যু নয়, আছে প্রত্যয় কিংবা উপযোগ;

যদি যেতে পারি এক শালিকবিষয়ক জরুরি খোঁজে
যা হতে—যেকোনো—কয়েক ফুসফুস ফুলিয়ে ফুলিয়ে

কিন্তু তুমি তো জানো
কে দেবে সুসময় নিশ্চয়তা, উন্মুক্ত শস্যদানার শরৎকাল
তবুও তিনটা সমবেত সন্তরণের পথে লালামিশ্রিত করে
প্রসঙ্গ তুলে আনব সেই সবুজ অন্তঃবৃত্তাকৃতি ডানার।


কবি ও প্রেমিক


প্রেমিক ও কবিকে দাম্পত্যের মুখে এনেছো তুমি!
ভূমিকার আড়ালে আছে যার উদ্যত সন্ধ্যা;
বৃষ্টির ক্রন্দন। বাতাসের তীব্রতা। মালতীর পরিপক্বতা।
তেমনি তবে, কবি হয়েছে সভ্যতার একক প্রতিদ্বন্দ্বী।

যদি-বা দ্যাখো তুমি, প্রেমিক হয়ে উঠেছে বামপন্থী
তোমার রহস্য শিশিরের চেয়ে মধ্যবর্তী কিংবা
সমআয়তন প্রতিক্রিয়াশীল, তারচে কেউ কেউ আরও
যাবে দূর হতে দূরত্বের পরমশূন্য তাপমাত্রা পরিত্যাগে।

যেকোনো প্রচণ্ড দিন কাটানোর পর কবি চাইতে পারে
নিরস্ত্র মহাবীর হতে
জ্বালিয়ে নিয়ে ফুলকি
লিখে দিতে সাদা কাগজের শতশতাংশ পৃষ্ঠা

অথচ
বিগত শোকসভায় সভাপতির বক্তব্যে কবি হারিয়েছে
যৌনতা, ক্রোধ, দ্রোহ এবং মৃতকোষের হৃদপিণ্ড

সুতরাং তুমি—প্রেমিক ও কবিকে দাম্পত্যের মুখে এনেছো!


বাংলাদেশ


ভাত খাওয়ানোর পর নিদেন মুগ্ধতায় পিটিয়ে মেরো না আমাকে
কিছুকাল আমি স্বপ্নমালায় বিদ্যা অর্জন করে থাকতে চাই
পরম আনন্দে, যদি মানসিক প্রতিভা বুঝতে পারো আমার
ছুড়ে ফেলে দাও সেই মধ্যযুগীয় পুষ্প মজ্জার মর্গে।
আগামীকাল দেশে দেশে আমার বাজিত বৃষ্টির ভূমিকা
রচনা করা হবে, বলা হবে আমার সমস্ত অন্ধকার ভাবনা।
যেখানে তৈরি থাকবে দিনের নির্মল খড়সা,
আলোড়ন কিংবা সীমান্ত উপকূলীয় যত সব অবিন্যাস।
অথচ কে আমি কাকাতুয়া চলেছি বাংলাদেশের মাটিতে
জননীর জন্মদাগে ফিরে আসব বলে প্রিয় মাতৃভূমিতে


এখন সে প্রজাপতি


দ্রুত সে প্রজাপতি হয়ে যায়
ডানার নিচে তার ভর করে অতীত আর ভবিষ্যৎ
তাকে আটকাব বলে হাতে রেখেছি দরজার খিল

যেন প্রস্থান—বরাবরই বৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
সবুজ স্টেশনের সিদ্ধান্তে আসা ছাতিমবৃক্ষ
যা ফুরিয়ে গেছে অবিরল পাতা থেকে গ্রহণের দিনে

কত বৃষ্টি, শ্রীজ্ঞান—প্রসারিত ধমনী খোঁজো?
যেখানে মেঘলার মতো সরল শরীর মন কাটে শঙ্খদাগে…

অথচ দ্বিতীয় গুচ্ছ বিয়োগচিহ্ন হয়ে বিয়োগান্তে
সরে গেছে অপমানক্ষয়মুক্তিগুলি নিঃশেষে সম্পূর্ণ দিয়ে, তবুও
তাকে কৃষ্ণচূড়াবীজের শীর্ষে রাখব বলে অন্ধকারেও
এনেছি সুরমানদীসম জলাবদ্ধতার পাশে ঝুমকোলতা ভীড়


মৃত্যু


একটি রেইন লিলি গাছ নড়ে উঠে
আমাদের মৃত্যু হয়!
এখন বুঝতে পারছি মৃতরা ফিরে আসে না
আসে মিলিটারির ট্রাকে করে ব্যথাজড়িত সময়;
মারা যাওয়া স্বজনে সান্ত্বনা বোঝাবার ভাষা নেই
আধুনিকসহ প্রাচীন কোনো অভিধানে;
শুধু পরিবর্তন হয় সাময়িকী, তালিকা—নদীর গতিপথ
অথচ স্থির বাঁচতে শেখার
নিমিত্ত নিয়েছিলাম আমরা।
এইসব সহজেই অতি সত্য রয়ে যায় চিরকাল!
এবং মমতা, রস, স্নেহ ও প্রাণসম মায়া জন্ম নেবে নতুন প্রাণে।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবিতা চর্চা করেন। সম্পাদনা করেন ‘হারপুন’ নামের একটি সাহিত্য পত্রিকা।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।