মালা
তোমাকে লেখার মতো আলো নেই আর—
এখন হয়েছি নিষ্প্রদীপ
ইঁদারার জলে হলুদ চাঁদের ছায়া বালতি পড়ার শব্দে ফেটে যায়
অবেলায় স্নানের দৃশ্যে ফুটে ওঠা সব ফুলগুলি
আজও বিদ্ধ হয়ে আছে
তামার তারের মতো খর দৃষ্টিরেখায়—
তবু কোন তারার নিসর্গে সই,
হাতির মৃত্যু-দৃশ্যের মতো তুমি গোপন হয়েছ?
শিশমহল
যে কোনো লেখার আগে তোমাকেই মনে পড়ে।
দীর্ঘ এক পথ, যার একদিকে গোরস্থান—
অন্য দিকে মেঘলা আকাশ, অল্প কিছু চাঁদতারা —
তঞ্চকতার মতো ফুটে আছে ঘাসফুল, ব্যবহৃত বেলুন—
সরল মানুষ গ্রামদেশে, ব্যাবহার জানে না তাদের—
সারাদিন দৈত্যাকার মাকড়সা এক সূর্য, মাথার উপরে—
সেও জানে কখন কোথায় চলে যেতে হবে—
ফলে এই রাত্রি— আঞ্চলিক মহাফেজখানা—
আমি তার একান্ত প্রহরী—
যেন বৃদ্ধ বটগাছ, মাথার ভিতর
নীল ………… অসংখ্য জোনাকি
এলোমেলো
তীব্র গতিময় আর
আজও …….. অমীমাংসিত
গান
তোমাকে মনে না রেখে, তোমার প্রণয়টুকু
তুলে রাখি গানে—
যদি হই স্মৃতিভ্রষ্ট
তবুও সে রয়ে যাবে অন্য কোনোখানে।
দূরে স্থলপদ্মবনে,
ঘাসের উপর কলাপাতায় রাখা শেফালির মতো
মেয়েটির পায়ে
একফোঁটা শিশিরের জল হয়ে—
নূপুরের নীল ব্যথাবেদনার সুখে
ঝরে যাব ঘাসের নীলাভ দেহে,
……………………………. সুবাসিত স্তনে
ঝরে যাব বাতাসের বুকে
অথবা পাতার ’পরে ঝরা-শেফালির মনে।
তবু তো সে রয়ে যাবে অন্য কোনো গানে।
রূপকথা
খুব সহজ নয় তোমার কথা বলা, পাহাড় বর্ণনার ছলে
যেহেতু রাস্তার ধারে খাদের কিনারে
পরশপিপুল ফুলগুলিও নয় ততখানি গভীর—
যতখানি সুষুপ্তি ছেয়ে আছে নততলে কাঠের বাড়িটিকে ঘিরে—
এবং বাঁশের চোঙে রাখা আছে মদ—
বন্ধু-বান্ধবরা পান করে বাড়িটির ঝুল-বারান্দায় বসে—
বন্ধুত্বের রক্তে টলমল করে ওঠে ঝালমদ।
চূড়ার উপরে বনতুলসী ও লতাগুল্মের ভিতর
ভাঙ্গা দুর্গের অলিন্দে, ছিন্ন করে
বিষফলের মালা, রাজার নির্দেশ
প্রতিদিন তবু কেউ আলো জ্বেলে দিয়ে যায়…
ওই আলোর মতোই নৈর্ব্যক্তিক ও খেদহীন
তাঁতের শাড়িতে
তুমি
আর তোমার দিদির কথা কথা মনে পড়ে খুব।
মেয়েটি
বহুদিন উপেক্ষার পর, দুঃখ এসেছে আবার—
পৌরসভা থেকে দূরে
পরিত্যক্ত বাড়ির জানালা চেপে ধরা কচুবন, জলাঘাস…
মাথার উপরে তার যেরকম অনিবার্য একটি প্রান্তিক মেঘ—
দলছুট, ওরকম একটি মেয়ে—
কবেকার ঘুঘুর ডাকের মতো কোমল নির্জন
যে আমাকে দুঃখ দিতে কখনো চায়নি
তবু তার চোখের দিকে চেয়ে থেকে
সম্ভাব্য অসম্ভবকে চিনে ফেলে
দুপুরের নরম বাতাসে টগর ফুলের গাছ থেকে
বাড়িটির ভাঙ্গা চাতালের ’পরে ঝরে পড়ছে বিষণ্ণ সাদা ফুল
আমার দুঃখের আলো…
লেখালেখির শুরু নব্বই দশকের মাঝামাঝি। কবিতা লেখার পেডিগ্রি বলতে দৈবক্রমে বিনয় মজুমদারের প্রতিবেশী। ‘গান্ধার’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৮ সালের বইমেলায় অল্প কিছু কবিতা নিয়ে গান্ধার থেকেই প্রথম কবিতা সংকলন, ‘নম্র বৈশাখী ও নীলিমার অন্যান্য আয়োজন’ প্রকাশ হয়। বর্তমানে তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চারটি: ‘চন্দনপিঁড়ি’ (২০১৪) ‘অশ্রুতরবার’ (২০১৯) ‘সৌম্য যেভাবে আকাশ দেখেছিল’ (২০২০) এবং ‘অশ্রুত রবার ফুল’ (২০২১)।