শুক্রবার, নভেম্বর ২২

মধ্য-পশ্চিমের দিনগুলি : অমিত চক্রবর্তী

0

*

আজ রিফাত চৌধুরীর সাথে দেখা হলো। একটা শাদা শেভি সিলভারাডো চালাচ্ছেন বিশ্বের রাস্তায়। কালো চশমায় চোখ ঢাকা। বিশাল এই পিক-আপ ট্রাকের ভেতর উনাকে এতোটা মানিয়ে গিয়েছে যে মনে হচ্ছে কবি রিফাত চৌধুরী একটা বিরাট ব্যাপার। সামনা-সামনি দেখে বোঝার মতো এটা নয়, একটা সিলভারাডো প্রয়োজন। উনার পাশেই কালো চশমায় আরো দুইজন। উনার বাবা-মা সম্ভবত। যাদের দুইজনের নামই জুঁইফুল চৌধুরী। এরকম উনি বলেন নাই, তবে লিখেছেন। কবিরা যেভাবে অহরহ মিথ্যা কথা লিখে থাকে আর কি।

*

এইখানে দুপুর এতোটা দীর্ঘ। জিহোভার স্বাক্ষী মহিলাটা হেঁটে যাচ্ছে শুধু নির্জন রাস্তায়। স্তনাবনত কাঁধ ঝুঁকে গ্যাছে মাটির দিকে ক্রমশ। মাথা নিচু করে সে হাঁটছে, ঘাড় তার পোড়াচ্ছে রোদ, ফিরোজা স্কার্ফের নিচে। ঈশ্বরপুত্রের চিঠিগুলোর ভারে, স্বর্গের সৌরভময় বাগানের প্রতিশ্রুতির ওজনে তার স্কন্ধ ক্রমে বিলীয়মান। এই দুপুরে, রোদালোর তলোয়ারে, সামান্য রক্তচিহ্নের মতো হয়ে সে হাঁটছে। গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে পাতালের দিকে…

*

শীত। একের’পরেক বাড়ি ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাতাহীন, রুক্ষ গাছগুলি। বাদামি কাগজের ব্যাগ, ঝরাপাতাভর্তি, সারি করে রাখা আছে পথের কিনারে। আর ইতস্তত কাঠবিড়ালী যত। পরখ করে দেখছে। এরকম দিনে লোহার বলের মত ভারী আমার মাথায় কারো হাত প্রত্যাশা করি। গাছে গাছে ইতস্তত কাঠবিড়ালীর মতন কোমল।

শীত দীর্ঘ হোক। এই মৌসুম উত্তরের মহিলারা ফাজ বানিয়ে কাটাক। গরম কোকোর গন্ধে ভরে থাকুক তাদের নিরাভা রান্নাঘরগুলি সারাদিন…

*

আর্বিতে, প্যাঁচানো আলু খেতে খেতে আমরা ভল্লুক দেখলাম, মানুষের পেছন-উঠানে। মানুষ যারা শহরের থেকে অনেক দূরে, জঙ্গলের কাছাকাছি বসবাস করতে পছন্দ করে। নিজেই জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে আনে, ঘরে এনে আগুন জ্বালাবার উপযুক্ত আকৃতি দ্যায়— তাদের পেছন-উঠানে অনেক তুষারের উপর ভল্লুক বেড়াতে আসে। আবার শহরে বলশালী শরীরচর্চাকারী ওর মেয়ে-বন্ধুর শরীরে চর্চা করছে ভায়োলেন্স, আর ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘর থেকে ঘরে শটগান হাতে, অদৃশ্য কাউকে হুমকি দিতে দিতে হত্যার। এইসব ভয়াবহ দৃশ্য তুষারের আস্তরন ভেদ করে, আমার চামড়া ভেদ করে কোথাও ঢুকতে পারে না— লক্ষ্য করলাম— প্যাঁচানো আলুকে চাইলে স্পৃং এর মতো টেনে লম্বা করা যায়, এটার স্থিতিস্থাপকতা রয়েছে।

*

উনিশ পৃষ্ঠা লিখা হয়ে গ্যালো এইখানে আসার পর। মূলতঃ তুষার, আপেলগাছ কিম্বা সাইডভিউ মিররের মেঘ লিখা হলো কেবল। আর অজস্র কাঠবিড়ালী… অটাম শেষ। আরেকটা শীত চলে আসছে। সন্ধ্যার দিকে ওদের একটা দল উঠে আসে, পাশের বাসার বারান্দায়। ফেলে রাখা ফলের কার্টুনগুলোতে ঢুকে পড়ে। ওদেরও কি শীত লাগে? মাংশের টিন কিনে মানুষেরা বাড়ি ফেরে। শীতের প্রস্তুতি। আমিও কিনে আনি শুকনো খাবার। পাস্তা, ম্যাকারনি আর বিবিধ মাফিন। উনিশ পৃষ্টার পর আর কিছু লিখা হয় না । যেমন— মুক্তসড়কের স্নো, কাত হয়ে যাওয়া সেমি- এইসব দৃশ্য, ট্রমা। উনিশ পৃষ্টার পর নীরবতা। মিশি গান হয়ে আমি, নীরবতার ভেতর। মিশিগান হয়ে কারা ঝর্ণা দেখতে যায়, এমন আবহাওয়ায়?

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবি। জন্ম: ২৯ নভেম্বর, সিলেট। বর্তমান নিবাস যুক্তরাষ্ট্র। পেশায় মোটর প্রকৌশলী। যন্ত্র প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থঃ আন্তোনিয়োর মেঘ (২০১৬) তারাবাক্সে বসে লেখা (২০১৯) মকিংবার্ড (২০২০)। যোগাযোগ: ac05074@gmail.com

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।